ব্রিটিশ শাসনামলে ইংরেজ জরিপকারী মেজর জেমস রেনোল তৎকালীন বাংলাদেশের যে মানচিত্র অঙ্কন করেছিলেন তাতে চাঁদপুর নামে একটি জনপদের সন্ধান পাওয়া যায়। তখন চাঁদপুরের দক্ষিণে বর্তমান নদীগর্ভে বিলীন নরসিংহপুরে ছিল চাঁদপুরের অফিস আদালত। তখন পদ্মা-মেঘনা সংগমস্থল ছিল বর্তমান চাঁদপুর শহরের ষাট মাইল দক্ষিণে। ধীরে ধীরে নদী সমগ্র এলাকাকে গ্রাস করে। ১৭৭৯ সালে রেনোলের মানচিত্রে ত্রিপুরা জেলার সাথে নরসিংহপুরস্থ চাঁদপুরের অবস্থান সঠিকভাবে চিহ্নিত করা হয়।
নামকরণ
চাঁদপুরের নামকরণ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। বার ভূঁইয়াদের আমলে চাঁদপুর অঞ্চল ছিল বিক্রমপুরের জমিদার চাঁদ রায়ের দখলে। এই অঞ্চলে তিনি একটি শাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ঐতিহাসিক জেএম সেনগুপ্তের মতে চাঁদ রায়ের নামানুসারে এই অঞ্চলের নাম হয় চাঁদপুর। অন্যমতে, চাঁদপুর শহর সংলগ্ন কোড়ালিয়া গ্রামের চাঁদ ফকিরের নাম অনুসারে এই অঞ্চলের নাম হয় চাঁদপুর।
প্রতিষ্ঠাকাল
১৮৭৮ সালে তৎকালীন ত্রিপুরা জেলার অংশ বিশেষ নিয়ে চাঁদপুর মহকুমা গঠিত হয়। রেলওয়ে বিভাগের সাহেবদের আনাগোনা, ২২টি বিখ্যাত পাট কোম্পানির ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ইত্যাদি কারণে মেঘনা-ডাকাতিয়ার মোহনার উভয় প্রান্তে চাঁদপুর লোকালয়ে তারা একটি পৌরসভা স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল। তারই ফলশ্রুতিতে মহকুমা স্থাপনের ১৮ বছর পর ও আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের শাখা লাইনটি স্থাপনের ১১ বছর পর সরকারি আদেশে ১৮৯৬ সালের ১ অক্টোবর চাঁদপুর প্রথমে গ শ্রেণীর পৌরসভা হিসেবে যাত্রা শুরু করে। প্রথমে ৯ জন সদস্য নিয়ে (৪ জন ইংরেজ ও ৫ জন স্থানীয় গণ্যমান্য নাগরিক) পৌর পরিষদ গঠিত হয়। তাদের সবাই ইংরেজ ভাইসরয় কর্তৃক নিযুক্ত হতেন। পরবর্তী সময়ে শুধুমাত্র হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদানকারীগণের সরাসরি ভোটে পৌর পরিষদ নির্বাচিত হত। তার কিছু সময় পর হোল্ডিংয়ে বসবাসকারী আবাসিকদের মধ্যে যারা ন্যূনতম এন্ট্রান্স পাশ ছিলেন তারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন এবং ভোট প্রদান করতে পারতেন। ১৯২০ সালের আগে কোনো ভোটের ব্যবস্থা ছিল না। পৌর পরিষদ ইংরেজ ভাইসরয় কর্তৃক নিযুক্ত হত। পৌরসভা নির্বাচিত নাগরিক, যাদের ভোটাধিকার ছিল তাদের ভোটে ১৯২০ সনেরমনীমোহন রায় প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চাঁদপুর পৌরসভাকে ১৯৮৪ সালের ১ নভেম্বর খ শ্রেণীতে এবং ১৯৮৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ক শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়। ২০০৮ সালের ১৪ মে চেয়ারম্যান পদবী পরিবর্তন করে মেয়র নামকরণ করা হয় এবং কমিশনার পদবী পরিবর্তন করে কাউন্সিলর করা হয়। প্রথম মেয়র হিসেবে জনাব নাছির উদ্দিন আহমেদ দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ ১১৯ বছরের বিশেষ সময়ে কয়েকজন প্রশাসক দায়িত্ব পালন করেন। ১১ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ১২তম নির্বাচনে ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল ১ম মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ঐতিহ্য
ঐতিহ্যগতভাবেই চাঁদপুরকে প্রাচ্যের ড্যান্ডি বলা হত। নদীমাতৃক বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর নদী বন্দর ও প্রসিদ্ধ বাণিজ্য নগরায়ন হিসেবে এই মহকুমার খ্যাতি ছিল পৃথিবী ব্যাপী। রূপালী ইলিশের রাজধানী হিসেবে চাঁদপুরের সুনাম এখনও বহমান।
২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চাঁদপুর পৌরসভার সাক্ষরতার হার ৮০.০৫%।[১] এ পৌরসভায় ৪টি কলেজ, ১৭টি স্কুল এন্ড কলেজ, ১৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৪৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
চাঁদপুর শহরে দুটি রেলস্টেশন আছে। এই দুইটি স্টেশন থেকে লাকসাম ও চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ট্রেন ছেড়ে যায়। শহরে দুইটি বাস টার্মিনাল আছে একটি স্বর্ণখোলা জেলা বাস টার্মিনাল।এখান থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, সিলেট, খাগড়াছড়ি, গাজীপুর, নোয়াখালী, রংপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, লক্ষীপুর ও ফেনীর উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়।অন্যটি বাবুরহাট বাস টার্মিনাল, যেখান থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়। শহরের মাদ্রাসা রোডে দেশের অন্যতম ব্যস্ত ও বৃহত্তম চাঁদপুর নদী বন্দর অবস্থিত। এখান থেকে সরাসরি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সুরেশ্বর ও হাটুরিয়ার উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছেড়ে যায়। এছাড়া লোকালে বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর জেলার উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছেড়ে যায়।
↑ কখগঘ"ইউনিয়ন পরিসংখ্যান সংক্রান্ত জাতীয় তথ্য"(পিডিএফ)। web.archive.org। Wayback Machine। Archived from the original on ৮ ডিসেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৯।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: বট: আসল-ইউআরএলের অবস্থা অজানা (link)