গুণ্ডিচা মন্দির

গুণ্ডিচা মন্দির
ଗୁଣ୍ଡିଚା ମନ୍ଦିର
গুণ্ডিচা মন্দির
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলাপুরী
ঈশ্বরজগন্নাথ
উৎসবসমূহরথযাত্রা
পরিচালনা সংস্থাশ্রী জগন্নাথ মন্দির কার্যালয়, পুরী
অবস্থান
অবস্থানবড়শঙ্খ
রাজ্যওড়িশা
দেশ ভারত
গুণ্ডিচা মন্দির ওড়িশা-এ অবস্থিত
গুণ্ডিচা মন্দির
ওড়িশায় গুণ্ডিচা মন্দিরের অবস্থান
স্থানাঙ্ক১৯°৪৮′৫৯.৬৩″ উত্তর ৮৫°৪৮′২৩.৫২″ পূর্ব / ১৯.৮১৬৫৬৩৯° উত্তর ৮৫.৮০৬৫৩৩৩° পূর্ব / 19.8165639; 85.8065333
মন্দিরএকটি
ওয়েবসাইট
http://www.jagannath.nic.in/

গুণ্ডিচা মন্দির (ওড়িয়া: ଗୁଣ୍ଡିଚା ମନ୍ଦିର, প্রতিবর্ণী. গুণ্ডিচা মন্দির), হলো পূর্ব ভারতের ওড়িশা রাজ্যে অবস্থিত পুরী শহরের উত্তর কোণে অবস্থিত একটি হিন্দু মন্দির৷ প্রতি বছরে আষাঢ় মাসে পুরী শহরের রথযাত্রায় অংশগ্রহণ করা হিন্দুদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও পূণ্যার্জনের বিষয়৷ গুণ্ডিচা মন্দিরে সারা বছরের অন্য সময়ে লোকসমাগম না হলেও জগন্নাথ, তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা বলরাম ও কনিষ্ঠ ভগিনী সুভদ্রা রথযাত্রার এই সাতটি পূর্ণদিবস ও যাত্রারম্ভের ও যাত্রাশেষের কিছু সময় ধরে এই মন্দিরেই অবস্থান করেন৷ স্থানীয়ভাবে এটিকে জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি বলে অভিহিত করেন এবং বছরের এইকটা দিন গুণ্ডিচা মন্দিরে বেশ জনসমাগম ঘটে৷

মন্দির ও মন্দিরশৈলী

গুণ্ডিচা মন্দির জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি বা বাগানবাড়ি নামেও পরিচিত৷ মন্দিরটি একটি সুরম্য বাগানের মাঝে অবস্থিত এবং তা চারিদিকে উঁচু পরিখাবেষ্ঠিত৷ এটি শ্রীজগন্নাথদেবের মূল মন্দির তথা "শ্রীমন্দির"-এর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ মন্দির দুটি "বড় দণ্ড" তথা পুরীর রাজপথের দুই প্রান্তে অবস্থিত এবং এই পথেই শ্রীজগন্নাথদেবের রথযাত্রাটি সম্পন্ন হয়ে থাকে৷

মন্দিরটি হালকা ধূসর বেলেপাথর দ্বারা নির্মিত এবং শিল্পগতভাবে দেউলযুক্ত একটি নিপুন কলিঙ্গ স্থাপত্য শৈলীর অন্যতম প্রকৃৃষ্ট উদাহরণ৷[] যুগ্ম স্থাপত্যটি চারটি খণ্ডে বিভক্ত যথা: "বিমান" (মূল স্থাপত্য যা পবিত্রমূর্তি ও গর্ভগৃহ ধারণ করে), "জগমোহন" (সমাবেশ দালান), "নাটমণ্ডপ" (উৎসব মঞ্চ) এবং "ভোগমণ্ডপ" (দেবতাকে ভোগ উৎসর্গের দালান)৷ এছাড়াও মন্দিরটির সাথে একটি সরু পথের মাধ্যমে পাচনশালা যুক্ত৷[] মন্দিরটি একটি সুন্দর বাগানের মাঝে অবস্থিত,[] যা জগন্নাথদেবের বাগানবাড়ী বা ঈশ্বরের গ্রীষ্মকালীন বাগান অপগম নামেও পরিচিত৷[] বাগানসহ সমগ্র মন্দিরচত্বরটি উঁটু পরিখাবেষ্ঠিত৷

মন্দিরটির গর্ভগৃৃহের মঞ্চটি সমতল এবং তল থেকে ৪ ফুট উঁচুতে অবস্থিত৷ ১৯ ফুট দীর্ঘ ক্লোরাইড গ্রুপ ও ফাইলোসিলিকেট খনিজ নির্মিত রত্নবেদীর ওপর বার্ষিক অনুষ্ঠানের সময় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি স্থাপন করা হয়৷[] মন্দিরটির দুটি ফটক রয়েছে৷ পশ্চিমপ্রান্তে অবস্থিত দরজাটি মন্দিরের মূল দরজা এবং এই দরজা দিয়েই মূর্তিগুলি রথযাত্রার সময় মন্দিরে প্রবেশ করে৷ মন্দিরের পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত দরজাটি "নাকচন দরজা" নামে পরিচিত এবং এই দরজা দিয়ে রথযাত্রার শেষ দিনে মূর্তিগুলিকে পুনরায় রথে চাপিয়ে মূলমন্দিরের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া হয়৷[]

আষাঢ় মাসের রথযাত্রার সাতদিন যাবৎ এই গুণ্ডিচা মন্দিরেই জগন্নাথ বলরাম ও সুভদ্রার আরাধনা করা হয়৷ কিন্তু বছরের অন্যান্য সময়ে মন্দিরটি প্রায় শূণ্য থাকে৷ দেশী দর্শনার্থী বা পর্যটকরা নির্ধারিত প্রবেশমূল্য দিয়ে মন্দিরটি দর্শনের অনুমতি পেয়ে থাকেন৷ বিদেশীদের ক্ষেত্রে, তারা সাধারণত এই মন্দিরে ঢোকার অনুমতি না পেলেও রথযাত্রা চলাকালীন সকলের প্রবেশ অবাধ থাকে৷[] মন্দিরটি পুরী জগন্নাথ মন্দিরের পরিচালনা পর্ষদ তথা শ্রীজগন্নাথ মন্দির কার্যালয়ের অধীনস্থ৷ একটি তুলনামূলক ছোটো সেবায়েতগোষ্ঠী সারাবছর মন্দিরটির রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে৷[]

রথ যাত্রা

হিন্দু বর্ষপঞ্জী অনুসারে আষাঢ় মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয় দিনে নিয়ম মতো রথযাত্রা অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়৷[] রথযাত্রার ঠিক একদিন আগে থেকে জগন্নাথ, বলরামসুভদ্রার থাকার উপযুক্ত করে তোলার জন্য ধর্মীয়ভাবে গুণ্ডিচা মন্দির পরিচ্ছন্নকরণ চলে৷[][]

রথযাত্রা শুরু হওয়ার প্রথম দিন আলাদা আলাদা রথে চড়িয়ে দেবমূর্তি তিনটি মূল মন্দির থেকে গুণ্ডিচা মন্দিরে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়৷ এটিই জগন্নাথ পুরী বা মাহেশ্বরী পুরীর বিশ্বচর্চিত বিখ্যাত রথযাত্রা৷ তিনটি মূর্তিকে তিনটি আলাদা উঁচু রথে চড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়৷ রথে প্রতীকীভাবে ঘোড়া কাষ্ঠনির্মিত মূর্তি থাকলেও রথের রশি সমবেত ভক্তগণরাই টেনে নিয়ে যান৷ প্রতিটি মূর্তির জন্য যেই রথগুলিকে রথযাত্রার অনুষ্ঠানে সামিল করা হয় তা হল: কেন্দ্রীয় রথ, যার নাম "নন্দীঘোষ", স্বয়ং শ্রীজগন্নাথ এই রথে অধিষ্ঠিত থাকেন, দ্বিতীয় রথটি হলো জগন্নাথজ্যেষ্ঠ শ্রীবলরামের, যার নাম "তালধ্বজ" এবং তৃতীয় রথটি তাদের কনিষ্ঠ ভগিনী সুভদ্রার জন্য, যার নাম "দর্পদলন"৷ রথতিনটি সন্ধ্যায় রাতের অন্ধকার নামার পূর্বেই "বড় দণ্ড" বা পুরীর রাজপথ ধরে রথ তিনটি মূল জগন্নাথ দেবের মন্দির থেকে তিন কিলোমিটার দূর গুণ্ডিচা মন্দিরে পৌঁছোয়৷ প্রথম দিনে মূর্তি তিনটি রথেই থাকে এবং রথযাত্রার দ্বিতীয় দিন প্রথা মতো তাদের গুণ্ডিচা মন্দিরে প্রবেশ করানো হয়৷ তারাা প্রবেশের পর থেকে আগামী সাতদিন যাবৎ গুণ্ডিচা মন্দিরেই অবস্থান করেন৷[][]

রথযাত্রার ধর্মানুষ্ঠান

আরাধনা

ঐতিহ্যগতভাবে মূল জগন্নাথ মন্দিরে অব্রাহ্মণ দলিত সম্প্রদায়ের সেবায়েতরা পূজা করে থাকেন এবং ব্রাহ্মণরা এই পেশা থেকে দূরে থাকেন, গুণ্ডিচা মন্দিরের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হয় এবং এক্ষেত্রে ব্রাহ্মণরাই তিনমূর্তির পূজা করে থাকেন৷ জগন্নাথ দেবের মূলমন্দিরে বিষ্ণুপ্রিয়া শ্রীলক্ষ্মীর দূত হিসাবে যেমন "দেবদাসী"রা জগন্নাথ দেবের আরতি করেন এবং তাদের পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে থাকেন ঠিক তেমনই গুণ্ডিচা মন্দিরের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হয় না৷ রথ যাত্রার সময় মূলমন্দিরের লক্ষ্মীমূর্তিটিকে প্রথা মতো সংগ্রহশালার পেছনের কক্ষটিতে রাখা হয়৷ গুণ্ডিচা মন্দিরে দেবদাসীদের করা অনুষ্ঠান এবং তাদের অংশগ্রহণ একটি পৃৃৃথক প্রসঙ্গকে সূচিত করে৷ অপর একটি অপ্রত্যহকৃত নিয়মটি হলো, শীতক হিসাবে দিনে দুবার মূর্তি তিনটিকে চন্দন লেপিত করা হয়৷ ঠিক এরকমই গুণ্ডিচা দেবীর জন্য প্রত্যহ করা হয়ে থাকে৷[] ঐ মন্দিরে থাকাকালীন মূর্তি তিনটিকে প্রত্যহ নতুন নতুন বস্ত্রে সজ্জিত করা হয়৷[]

হেরা পঞ্চমী
শ্রী জগন্নাথের মূল মন্দির থেকে নন্দীঘোষ রথে চেপে রওনা হওয়ার দৃশ্য

শুক্ল পক্ষের পঞ্চমী তিথিতে গুণ্ডিচা মন্দিরে রথযাত্রার একটি বিশেষ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়, যা হেরা পঞ্চমী নামে পরিচিত৷ হেরা শব্দের আক্ষরিক অর্থ দর্শন করা বা দেখা৷[১০] এই অনুষ্ঠানটিতে অংশ নেওয়ার জন্য রথযাত্রার পূণ্যতিথিতে আসা প্রচুর ভক্ত অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন৷ জগন্নাথ দেব গুণ্ডিচা মন্দির পরিদর্শনে এলেও তার স্ত্রী শ্রীলক্ষ্মী পুরীর মূল মন্দিরেই অবস্থান করেন৷ হেরা পঞ্চমীর দিন লক্ষ্মী প্রচণ্ড মূর্তি ধারণ করে এবং গুণ্ডিচা মন্দিরে সুবর্ণ মহালক্ষ্মী মূর্তি রূপ ধারণ করে৷ তাঁকে একটি পালকিতে করে মূলমন্দির থেকে ভক্ত সমাগমের সাথে গুণ্ডিচা মন্দিরে আনয়ন করা হয়৷ যেই ব্রাহ্মণ লক্ষ্মীমূর্তিকে স্বাগত জানান তিনিই তাঁকে জগন্নাথ মূর্তির নিকট নিয়ে যান এবং বাকী দিনগুলি তার পূজার্চনা করেন৷ মন্দিরের নির্দিষ্ট বেদীতে লক্ষ্মী-জগন্নাথ মূর্তি দুটি মুখোমুখি রাখা হয়, এসময়ে ভক্তগন দলে দলে যুগলমূর্তি দর্শনে মন্দিরে ভীড় জমান৷ মনে করা হয় এই সময়ে শ্রীলক্ষ্মী তাকে মন্দিরে ফেরত যেতে বললে জগন্নাথ তাকে "আজ্ঞা মালা" (সম্মতি জানীয়ে মাল্য দান) দান করেন, যা লক্ষ্মীদেবী গ্রহণ করে তা সহ সন্ধ্যার মধ্যে মূল মন্দিরে প্রবেশ করেন৷ দেবী লক্ষ্মীর অনুরোধ সত্ত্বেও জগন্নাথ দেব মূলমন্দিরে ফেরত যেতে রাজী না হওয়ার তিনি ক্ষুব্ধ হন এবং তার এক সহচরীকে জগন্নাথের রথের একটি অংশ ভেঙে দিতে আদেশ করেন৷ জগন্নাথের রথ "নন্দীঘোষ"কে সামান্য খুঁতযুক্ত করার নিয়মটিকে "রথভঙ্গ" বলে উল্লেখ করা হয়৷[১০][১১] এবং এই সময়ে দেবী লক্ষ্মী গুণ্ডিচা মন্দিরের নিকটবর্তী একটি তেঁতুল গাছ থেকে পর্যালোচনা করেন৷ এরপর তিনি সেখান থেকে গোপনে অপর একটি পথে পুরীর মূল মন্দিরে ফেরত যান, পথটি "হেরা গোহরী" পথ নামে পরিচিত৷ সাধারণের কাছে এটি দেবী লক্ষ্মীর অভিমানের বহিঃপ্রকাশ বলে খ্যাত৷[১০][১১]

দক্ষিণ মোড়

"দক্ষিণ মোড়" (দক্ষিণ দিকে বাঁক নেওয়া) অনুষ্ঠানটি "হেরা পঞ্চমী"র পরের দিন অর্থাৎ রথযাত্রার ষষ্টদিনে পালন হয়৷ জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা মূর্তি তিনটিকে এইদিন মন্দিরের বাইরে আনা হয় এবং গুণ্ডিচা মন্দিরের পশ্চিম দিকের মূল দ্বারটির মুখোমুখি রাখা হয়৷ বহুদা যাত্রা বা রথ নিয়ে মূল জগন্নাথ মন্দিরে ফেরত যাওয়ার আয়োজন শুরু হয়ে যায় এবং গুণ্ডিচা মন্দিরের পূর্ব প্রান্তের "নাকচন দ্বার"-এ দক্ষিণমুখী হয়ে থাকে৷ দক্ষিণ মুখী হওয়ার কারণ মূল মন্দিরটি গুণ্ডিচা মন্দিরের দক্ষিণে অবস্থিত৷ জনশ্রুতি আছে লঙ্কার রাক্ষস রাজা বিভীষণ এই দিনে এতদূর থেকে জগন্নাথ দেবের দর্শন পান৷ ভক্তগণ মনে করে যে ব্যক্তি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন তিনি বিষ্ণুশরণে মুক্তির পথ খুঁজে পান৷[১২]

রাস লীলা

দক্ষিণ মোড় অনুষ্ঠানটি জগন্নাথ দেবের তিনদিন ব্যপী রাসলীলার শুভ সূচনাকে নির্দেশিত করে৷[১২] এই রীতিটির বিবরণ ভাগবত পুরাণ এবং গীত গোবিন্দমে এরকম পাওয়া যায় যে শ্রীকৃষ্ণ তার সখী রাধা ও অন্যান্য গোপীদের সাথে বৃৃন্দাবনে প্রমোদনৃৃত্য করতেন৷ জগন্নাথের গুণ্ডিচা মন্দিরে অবস্থানের শেষ তিনদিন ধরে তাকে মন্দিরের রাসমন্ডপে নিয়ে আসা হয় যেখানে তিনদিন ধরে তার সামনে গীতগোবিন্দমের মন্ত্রোচ্চারণ করে তাকে তুষ্ট করা হয়৷ রাসলীলার সময়ে জগন্নাথকে শ্রীকৃৃষ্ণ রূপে চিন্তা করে কৃষ্ণ ও গোপীদের ঘটনার বিবরণ দেওয়া হয়৷ পুরাতন দিনে দেবদাসীরা গীতগোবিন্দের মন্ত্রোচ্চারণ করলেও বর্তমানে মন্দিরের সেবায়েতরাই এই কাজ করে থাকেন৷ বৈষ্ণবরা জগন্নাথের অবস্থানকালে গুণ্ডিচা মন্দিরকে পবিত্র বৃন্দাবন হিসাবে মান্যতা দেয়৷[১৩]

সন্ধ্যাদর্শন ও মহাপ্রসাদ

রীতি অনুসারে যখন জগন্নাথ দেব গুণ্ডিচা মন্দিরে অবস্থান করেন তখন মূল মন্দিরের রান্নাঘরে সমস্তরকম রান্নাবান্না ও জগন্নাথের মহাপ্রসাদ তৈরী বন্ধ থাকে৷ মহাপ্রসাদ হলো দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদিত খাদ্যদ্যব্যাদি যা নিবেদনৈর পর ভক্তবৃৃৃন্দের মধ্যে বিতরণ করা হয়৷ এই মহাপ্রসাদে ভাত, ডাল, বিভিন্ন তরকারী সহ নিরামিষ সমস্ত পদ থাকে৷ এসময়ে গুণ্ডিচা মন্দিরের রান্নাঘর সংস্কার করা হয় ও তিন দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে মহাপ্রসাদ রান্না করা হয়৷ উল্টোরথের শেষের দ্বিতীয় দিন তিনমূর্তিকে বিশেষ করে জগন্নাথ দর্শন করার ও আরতি করার বিশেষ ও শুভদিন হিসাবে গণ্য করা হয়, যা সন্ধ্যারতি ও সন্ধ্যাদর্শন নামে পরিচিত৷ এই দিন অগণিত পূণ্যার্থী মন্দির চত্বরে উপস্থিত হয়ে মহাভোগ প্রসাদরূপে গ্রহণ করেন৷[১৪][১৫]

বহুদা যাত্রা
গুণ্ডিচা মন্দিরের নাকচন দ্বার

গুণ্ডিচা মন্দিরে সাতটি পূর্ণদিবস যাপন করে জগন্নাথ, বলরামসুভদ্রার পুরীর মূলমন্দিরে ফেরত যাওয়ার ঘটনাকে স্থানীয়রা "বহুদা যাত্রা" বলে যা বাংলায় "উল্টোরথ" নামেও পরিচিত৷[১৬]"পাহাণ্ডি" অনুষ্ঠানের সময়ে শঙ্খধ্বনি, কাঁসরের শব্দখোল-করতাল সহযোগে মূর্তিগুলিকে গুণ্ডিচা মন্দিরের নাকচন দ্বার দিয়ে বাইরে নিয়ে আসা হয়৷[১৭] ওড়িশি এবং গোটিপুয় নৃত্য শিল্পীরা মূর্তির সামনে সুরের তালের তাদের সংশ্লিষ্ট নৃৃত্য প্রদর্শন করে৷ আবার "বানাটি" নামক ঐতিহ্যবাহী যুদ্ধরীতি শিল্পটিও (মার্শাল আর্টস) প্রদর্শন করা হয় মূর্তির সামনে৷ দেবমূর্তিগুলি যেই রথে করে আনা হয়েছিলো সেই রথেই আবার তোলা হয় এবং আগের মতোই ভক্তগণ সেই রথের দড়ি টেনে পৌঁছে দেয় মূল মন্দিরে৷ রথারোহিত অবস্থাতে জগন্নাথ বলরাম ও সুভদ্রার দর্শন পাওয়াকে ভক্তগণ মঙ্গলকর হিসাবে মনে করে থাকেন৷[১৬]

পৌরাণিক কাহিনী

গুণ্ডিচা মন্দিরের পশ্চিম দিকের মূলদ্বার

জগন্নাথ দেব এবং তার ভ্রাতা, ভগিনীকে নিয়ে রথ যাত্রা এবং গুণ্ডিচা মন্দিরে সাতদিন অবস্থান করা এবং আবার মূলমন্দিরে ফিরে আসা নিয়ে নানা মুনির নানা মত৷

একটি ঘটনা জগন্নাথ মন্দিরর নির্মাতা মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্নের স্ত্রী গুণ্ডিচা দেবীকে উদ্দেশ্য করে রয়েছে৷ রাণী গুণ্ডিচার নামেই সংশ্লিষ্ট মন্দিরটি নির্মিত৷ দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা জগন্নাথ মূর্তি তৈরী করার সময় রাণী গুণ্ডিচা বন্ধ দরজার বাইরে থেকে বারণ অমান্য করে উঁকি মারেন৷ অর্ধেক তৈরী জগন্নাথ মূর্তি দেখে মুগ্ধ হয়ে তিনি তার স্বামীকে মূর্তি স্থাপনার জন্য একটি সুদর্শন মন্দির তৈরী করে বাৎসরিক রথযাত্রার ব্যবস্থা করতে বলেন৷ আরেকটি মতে জগন্নাথদেব তার জন্য তৈরী মন্দির দেখে সন্তুষ্ট হন এই রাণী গুণ্ডিচাকে আশ্বস্ত করেন যে তিনি তার বাড়ীতে আসবেন৷, যেটি বর্তমানে গুণ্ডিচা মন্দির নামে খ্যাত৷[][][১৮]

অপর একটি জনশ্রুতি অনুসারে, যখন জগন্নাথ দেব (যিনি শ্রীবিষ্ণুর অবতার কৃষ্ণেরই অংশ) গুণ্ডিচা মন্দিরে সাত দিন থাকার সময়ে ইচ্ছা করে পরিকল্পনা মাফিক তার স্ত্রী দেবী লক্ষ্মীকে মূল মন্দিরের সংগ্রহকক্ষে বন্দিনী করে রেখে আসেন৷ আবার গুণ্ডিচা মন্দিরে তিনি তার প্রিয় গোপীগণের দ্বারা আহ্লাদিত হন, ঠিক যেমন তিনি এবং তার গোপীশ্রেষ্ঠা রাধা বৃন্দাবনে রাসলীলা করতেন৷ এই অনুষ্ঠানের সময়ে মন্দিরের সেবারত দেবদাসীদের গোপী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে৷ জগন্নাথ তার কামার্ত অবলীলা সাঙ্গ করে তার মূল মন্দিরে ফেরত এলে লক্ষ্মীদেবী তার সাথে মন্দিরের সিংহদুয়ারে সাক্ষাৎ করেন এবং তার ওপর কিছু অলৌকিক শক্তি প্রয়োগ করেন৷ ফলে জগন্নাথ গুণ্ডিচা মন্দিরে পলায়নের ঘটনা এবং সেখানে তার সাথে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা ভুলে তার স্ত্রীয়ের সাথে পুণর্মিলিত হন এর স্বামীস্নেহ ভোগ করেন৷[১৮]

অপর একটি ঘটনা রয়েছে গুণ্ডিচা নামের পেছনে৷ "গুণ্ডিচা" ছিলেন স্থানীয় দেবী, যিনি দেবী দুর্গার রূপ হিসাবে পরিগণিত হন এবং গুটিবসন্ত রোগ নিরামক৷ ওড়িয়া ভাষাতে "গুণ্ডি" শব্দটির অর্থ গুটিবসন্ত, যা বাংলা "গুটি" শব্দটি থেকে এসেছে বলে মনে করা হয়৷ এবং বাংলার গুটিবসন্ত নিরাময়ের দেবী "গুটিকা ঠাকুরাণী" এবং ওড়িয়া "গুণ্ডিচা"কে একই ব্যক্তিত্ব বলে মনে করা হয়৷[] গুণ্ডিচাকে কৃৃষ্ণ-জগন্নাথের মাসি বলেও অভিহিত করা হয়, ভাই-বোনের সাথে তিনি তার মাসির বাড়িতে বছরে একবার দেখা করতে আসেন৷[]

আরো একটি জনশ্রুতি শোনা যায় চৈতন্য মহাপ্রভুর অলৌকিক অন্তর্ধান বিষয়ে, ভবিষ্যপুরাণ অনুসারে যিনি কৃৃৃষ্ণেরই অবতার৷ তিনি গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের প্রবর্তক এবং জগন্নাথ অষ্টকমের সুরকার হিসাবে পরিচিত৷ তিনি বহুবছর ধরে পুরীতে বাস করেন এবং জগন্নাথ দেবের চন্দনযাত্রারথযাত্রার সময়ে অন্যান্য ভক্তবৃৃন্দের সাথে ভজন, কীর্তন করতেন বলে জানা যায়৷ জানা যায় যে, চৈতন্য মহাপ্রভু দেবতার এবং লীলাখেলা এবং প্রেমরসে প্রায়শই উল্লাসিত হতেন এবং ভাবাবেগে মুর্ছা যেতেন৷ তিনি প্রত্যহ গরুড়স্তম্ভের (গরুড় অঙ্কিত স্তম্ভ) পেছনে দাঁড়িয়ে জগন্নাথদেবের কাছে প্রার্থনা করতেন এবং অশ্রুধারা করতেন৷ রাজার সম্মতি নিয়ে চৈতন্য মহাপ্রভু একদা রথযাত্রার আগের দিন গুণ্ডিচা মন্দির পরিষ্কার করার দায়িত্ব নেন৷ এই রীতিটি বর্তমানেও রথযাত্রার আগের দিন গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মাবলম্বীরা পালন করে থাকেন৷ কথিত রয়েছে যে চৈতন্য মহাপ্রভু একদা তার সঙ্গীসাথীর চোখ এড়িয়ে গুণ্ডিচা মন্দিরের দিকে রওনা হন এবং তাকে শেষবার জগন্নাথের "মণিকোঠা"র দিকে যেতে দেখা যায়৷ এরপর থেকে তাকে আর কখনো দেখা যায়নি৷ শ্রীচেতন্যের এই অলৌকিক অন্তর্ধান আজ অবধি ব্যাখ্যার অতীত এবং তাকে নিয়ে রচিত কোনো বইতেই এই ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় না৷ বিশ্বাস করা হয় যে, তিনি মন্দিরে শ্রীজগন্নাথের কাষ্ঠমূর্তিতে বিলীন হয়ে যান৷[১৮]

তথ্যসূত্র

  1. "Tourism in Sonepur" 
  2. "Shree Kshestra"। ১৭ জুলাই ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুলাই ২০১৯ 
  3. Sehgal, Sunil (১৯৯৯)। Encyclopaedia of Hinduism, Volume 4। Sarup & Sons। পৃষ্ঠা 1077। আইএসবিএন 9788176250641। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১২ 
  4. Panda, Namita (২২ জুন ২০১২)। "Ready for the Trinity"The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১২ 
  5. Panda, Swarnaprava (জুলাই ২০০৬)। "Rathayatra of Puri" (পিডিএফ)Orissa Review: 25–27। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১২ 
  6. "The Car Festival of Lord Jagannath, Unique in many respect" (পিডিএফ)। Official Website of Government of Odisha। ৪ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১২ 
  7. Sharma, Dr. Shiv (২০০৮)। O India - A Travel Guide। Diamond Pocket Books (P) Ltd। পৃষ্ঠা 327। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১২ 
  8. "details of the temple"। ৭ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুলাই ২০১৯ 
  9. Carman, John B.; Marglin, Frédérique Apffel (১৯৮৫)। Purity and Auspiciousness in Indian Society। BRILL। পৃষ্ঠা 77। আইএসবিএন 9789004077898 
  10. "Lakshmi anger rocks Gundicha temple"The Telegraph। জুন ২৬, ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১২ 
  11. Kanungo, Siddharth। "The car festival of Lord Jagannath unique in many respect" (পিডিএফ)Srimandir: 61। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১২ 
  12. "Holiday high at aunt's abode"The Telegraph। ২৭ জুন ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১২ 
  13. Ghosh, Pika (২০০৫)। Temple To Love: Architecture And Devotion In Seventeenth-Century Bengal। Indiana University Press। পৃষ্ঠা 49। 
  14. Mohanty, Subhashish (৭ জুলাই ২০১১)। "Lord's food served at Gundicha"The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১২ 
  15. "Sandhya darshan: Lakhs throng Gundicha temple"The New Indian Express। ২৯ জুন ২০১২। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১২ 
  16. "Lords Leave Sri Gundicha Temple As Chariots Start Rolling"। Public Trust of India। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১২ 
  17. Mohapatra, Debabrata (২৯ জুন ২০১২)। "Bahuda Yatra euphoria smothers terror threat"Times of India। ২৬ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১২ 
  18. Ghosh, Pika (২০০৫)। Temple To Love: Architecture And Devotion In Seventeenth-Century Bengal। Indiana University Press। পৃষ্ঠা 49–50। আইএসবিএন 9780253344878 

বহিঃসংযোগ

Read other articles:

Peta pembagian administratif tingkat pertama Guatemala Pembagian administratif Guatemala terdiri atas 22 departemen pada tingkat pertama dan 332 munisipalitas pada tingkat kedua. lbsPembagian administratif Amerika Amerika Utara Amerika Selatan Negara berdaulat Amerika Serikat Antigua dan Barbuda Argentina Bahama Barbados Belize Bolivia Brasil Chili Dominica Republik Dominika Ekuador El Salvador Grenada Guatemala Guyana Haiti Honduras Jamaika Kanada Kolombia Kosta Rika Kuba Meksiko Nikaragua P...

 

Keluaran 6Kitab Keluaran lengkap pada Kodeks Leningrad, dibuat tahun 1008.KitabKitab KeluaranKategoriTauratBagian Alkitab KristenPerjanjian LamaUrutan dalamKitab Kristen2← pasal 5 pasal 7 → Keluaran 6 (disingkat Kel 6) adalah pasal keenam Kitab Keluaran dalam Alkitab Ibrani dan Perjanjian Lama di Alkitab Kristen. Termasuk dalam kumpulan kitab Taurat yang disusun oleh Musa.[1] Pasal ini berisi kisah pengutusan Musa oleh Tuhan ke hadapan Firaun di tanah Mesir.[2] Tek...

 

Painting by Caravaggio David with the Head of GoliathArtistCaravaggioYearc. 1607TypeOil on woodDimensions90.5 cm × 116.5 cm (35.6 in × 45.9 in)LocationKunsthistorisches Museum, Vienna David with the Head of Goliath, dated c. 1607, is a painting by the Italian artist Caravaggio (1571–1610), housed in the Kunsthistorisches Museum Gemäldegalerie, Vienna. Peter Robb believes it was acquired by the conde de Villamediana in Naples between 1611 an...

<< Februari >> Mi Sn Sl Ra Ka Ju Sa 01 02 03 04 05 06 07 08 09 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28   2023 Februa atau Lupercalia, suatu festival penyucian di Romawi Kuno. Februari adalah nama dari bulan kedua dalam setahun pada tarikh Kalender Gregorius dan Julius.[1] Bulan Februari memiliki 28 hari pada tahun-tahun biasa dan 29 hari pada tahun-tahun kabisat. Tanggal 29 Februari, yang hanya muncul sekali dalam empat tahun, dikenal dengan nama hari...

 

Bernard Ładysz Data i miejsce urodzenia 24 lipca 1922 Wilno Data i miejsce śmierci 25 lipca 2020 Warszawa Typ głosu bas-baryton Gatunki opera Zawód solista operowy, aktor Aktywność 1941–2020 Wydawnictwo Columbia Odznaczenia Multimedia w Wikimedia Commons Cytaty w Wikicytatach Bernard Ładysz podpułkownik Data i miejsce urodzenia 24 lipca 1922 Wilno Data i miejsce śmierci 25 lipca 2020 Warszawa Przebieg służby Lata służby 1939–1944, 1946–1950 Siły zbrojne...

 

Ökosoziales Forum Österreich & Europa Gründung 1968 Sitz Wien Vorsitz Stephan Pernkopf Website oekosozial.at Der österreichische Verein Ökosoziales Forum engagiert sich regional, national und international für nachhaltige und faire Rahmenbedingungen in der globalisierten Wirtschaft. Das Ökosoziale Forum ist eine überparteiliche Plattform in verschiedenen Ländern, mit dem Ziel, die Idee der Ökosozialen Marktwirtschaft bekannt zu machen und in konkretes Handeln umzusetzen. Aktuell...

Шамсул МайдінНародився 16 квітня 1966(1966-04-16) (57 років)СінгапурКраїна  СінгапурДіяльність футбольний суддяКонфесія іслам  Медіафайли у Вікісховищі Шамсул Майдін (нар. 16 квітня 1966, Сінгапур) — сінгапурський футбольний арбітр. Арбітр ФІФА з 1996 по 2007 рік. Кар'єра Офіцій...

 

Para otros usos de este término, véase Proteína G (desambiguación). Proteína G heterotrimérica mostrando en azul la subunidad αt/αi y en rojo y verde la βγ.[1]​ Las proteínas G (Proteína fijadora de nucleótido de Guanina) son una familia de proteínas transductores de señales desde el receptor al que están acopladas hasta una o más proteínas efectoras y dependen del nucleótido guanosin trifosfato (GTP) para su activación.[2]​ Los receptores acoplados a la prote...

 

أحمد براق أردوغان معلومات شخصية الميلاد 4 يوليو 1979 (العمر 44 سنة)إسطنبول،  تركيا مواطنة تركيا  الديانة الإسلام الزوجة سما كتنكي الأب رجب طيب أردوغان الأم أمينة أردوغان الحياة العملية المدرسة الأم جامعة إسطنبول المهنة مالك سفن  [لغات أخرى]‏  اللغة الأم التركية...

Zoologi Cabang Antropologi · Antrozoologi · ApiologiAraknologi · Artropodologi · CetologiConchologi · Entomologi · EtologiHelminthologi · Herpetologi · IktiologiMalacologi · Mammalogi · MyrmecologiNematologi · Neuroetologi · OrnitologiPaleozoologi · Planktologi · PrimatologiZoosemiotik Zoologis terkemuka Karl Ernst von Baer · Geor...

 

Cúp FA Thái LanMùa giải hiện tại: 2023–24 Thai FA CupThành lập1980Quốc gia Thái LanSố đội97Đội vô địch hiện tạiBuriram United (2022–23)Vô địch nhiều nhấtBuriram United (6 lần)Đối tác truyền hìnhTrue VisionsTrang webhttp://www.fat.or.th/web/FACup.php Cúp FA Thái Lan hay còn gọi Thai FA Cup (tiếng Thái: ไทยเอฟเอคัพ), tên chính thức đầy đủ sẽ là Cúp Hiệp hội bóng đá Thái Lan là...

 

1965 Indian filmAnandhiTheatrical release posterDirected byP. NeelakantanWritten byM. S. SolaimuthuProduced byA. L. SrinivasanStarringS. S. Rajendran C. R. VijayakumariCinematographyM. KarnanEdited byR. DevarajanMusic byM. S. ViswanathanProductioncompanyALS ProductionsRelease date 25 December 1965 (1965-12-25) Running time145 minutesCountryIndiaLanguageTamil Anandhi (/ɑːnʌnðɪ/) is a 1965 Indian Tamil-language drama film, directed by P. Neelakantan, and written by M. S. Sol...

Former prison in Shrewsbury, Shropshire, United Kingdom Shrewsbury PrisonMain entrance to Shrewsbury PrisonLocationShrewsbury, ShropshireStatusOpen to the publicSecurity classAdult Male/Category B&COpened1877/1878Closed2013Managed byThe Campbell GroupGovernorGerry HendryWebsitehttps://www.shrewsburyprison.com Inside A Wing at Shrewsbury Prison HM Prison Shrewsbury was a Category B/C men's prison in Shrewsbury, Shropshire, England. It was decommissioned in March 2013, and is now open to th...

 

Artikel ini sebatang kara, artinya tidak ada artikel lain yang memiliki pranala balik ke halaman ini.Bantulah menambah pranala ke artikel ini dari artikel yang berhubungan atau coba peralatan pencari pranala.Tag ini diberikan pada Maret 2023. Rosalía Arteaga (nama lahir Rosalía Arteaga Serrano de Córdova) merupakan politikus asal Ekuador yang menjabat sebagai presiden Ekuador pada tahun 1997, lahir pada 5 Desember 1956 di Cuenca, Ekuador.[1] Ia menjadi presiden wanita pertama di Ek...

 

This article is about the Canadian university association. For the Finnish American football league, see Vaahteraliiga. Maple League of UniversitiesLocationCanadaMembership Acadia UniversityBishop's UniversityMount Allison UniversitySt. Francis Xavier UniversityExecutive directorJack Rice[1]Websitemapleleague.ca The Maple League of Universities, previously known as the U4, is an association of four universities in eastern Canada. The four member schools, Acadia University, Bishop's Un...

Volkerenlijst naar Genesis 10 De Volkenlijst is een lijst uit het Bijbelboek Genesis 10. Hier wordt beschreven wie de afstammelingen van Noachs zonen Sem, Cham en Jafet waren en hoe ze met elkaar verwant waren. De lijst bevat 70 namen en een groot aantal daarvan is als etnoniemen en toponiemen belangrijk voor de Bijbelse geografie.[1] Tot de 19e eeuw werd deze lijst in landen waar het christendom dominant was letterlijk genomen. Tegenwoordig zijn het de christenfundamentalisten die da...

 

Religious oath made by some Catholics In the Catholic Church, the vow of obedience is one of the three vows of professing to live according to the evangelical counsels. It forms part of the religious vows that are made both by members of the religious institutes and diocesan hermits. Description This is stipulated in the candidate's respective Church law, for example in the Roman Catholic Church, the 1983 Code of Canon Law (see canons 573, 601, 603.2) the candidate's respective rule, for exam...

 

Artikel ini sebatang kara, artinya tidak ada artikel lain yang memiliki pranala balik ke halaman ini.Bantulah menambah pranala ke artikel ini dari artikel yang berhubungan atau coba peralatan pencari pranala.Tag ini diberikan pada April 2019. Pat & StanPat et StanleyGenreAnimated television seriesPembuatPierre CoffinSutradaraPierre CoffinPatrick Delage (movie)Pengisi suara(Inggris) Dan GreenDavid WillsSean SchemmelBella HudsonEvelyn LantoBryan TylerNegara asalPrancisBahasa asliPrancisIngg...

1937 film by Alfred Hitchcock Young and InnocentTheatrical release posterDirected byAlfred HitchcockWritten by Gerald Savory (dialogue) Alma Reville (continuity) Screenplay by Charles Bennett Edwin Greenwood Anthony Armstrong Based onA Shilling for Candles1936 novelby Josephine Tey[1]Produced byEdward Black (uncredited)Starring Nova Pilbeam Derrick De Marney CinematographyBernard KnowlesEdited byCharles FrendMusic by Jack Beaver (uncredited) Louis Levy (uncredited) ProductioncompanyGa...

 

Video game remake 2023 video gameDead SpaceDeveloper(s)Motive Studio[a]Publisher(s)Electronic ArtsDirector(s)Roman Campos-OriolaEric BaptizatProducer(s)Philippe DucharmeProgrammer(s)David RobillardArtist(s)Mike YazijianWriter(s)Joanna BerryComposer(s)Trevor GureckisSeriesDead SpaceEngineFrostbitePlatform(s)PlayStation 5WindowsXbox Series X/SReleaseJanuary 27, 2023Genre(s)Survival horrorMode(s)Single-player Dead Space is a 2023 survival horror game developed by Motive Studio and publis...

 

Strategi Solo vs Squad di Free Fire: Cara Menang Mudah!