উসমানিস্তানচৌধুরী রহমত আলি কর্তৃক প্রস্তাবিত একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের পরিকল্পনা। ব্রিটিশ ভারতের হায়দ্রাবাদ রাজ্য নিয়ে এই রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা ভারত ত্যাগের পূর্বে ভারতে স্বাধীন রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। তবে স্বাধীনতার পর তাদের স্বাধীন থাকার গঠিত নতুন পাকিস্তান অধিরাজ্য বা ভারত অধিরাজ্য দু'রাষ্ট্রের যেকোনো একটিতে তাদের যোগদানের সুযোগ দেয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে রাজ্যগুলোর স্বাধীন থাকার সুযোগ ছিল। হায়দ্রাবাদের নিজাম প্রথমে কোনো রাষ্ট্রে যোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি হায়দ্রাবাদ রাজ্যকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে রাখতে চেয়েছিলেন।[১] তবে ভারত সরকার তার এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেন। হায়দ্রাবাদ চতুর্দিক থেকে ভারত কর্তৃক আবদ্ধ ছিল এবং এর কোনো সমুদ্র সীমা ছিল না। তাই স্বাধীন হায়দ্রাবাদ ভারতের পক্ষে সুবিধাজনক ছিল না। ভারতীয় সেনাবাহিনী ১৯৪৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর হায়দ্রাবাদ আক্রমণ করে। নিজাম এই হামলা প্রতিহত করতে অক্ষম ছিলেন ফলে পরাজিত হন। তাই হায়দ্রাবাদকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হওয়া তাকে মেনে নিতে হয়। সাবেক এই দেশীয় রাজ্য ১৯৫৬ সালে পুনর্গঠিত হয়। বর্তমানে এর অংশগুলো ভারতের অঙ্গরাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ, বোম্বে রাজ্য (পরে মহারাষ্ট্র ও গুজরাত হিসেবে ভাগ হয়) এবং কর্ণাটকের মধ্যে বন্টিত রয়েছে।
ইতিহাস
ব্রিটিশরা ভারত ত্যাগের সময় ভারতের অভ্যন্তরে অনেক দেশীয় স্বাধীন রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। এসকল রাজ্যকে ভারত বা পাকিস্তান যেকোনো একটিতে যোগ দেয়ার সুযোগ দেয়া হয় এবং ভারত স্বাধীনতা আইন ১৯৪৭ এর ২.৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী চাইলে স্বাধীন থাকার সুযোগও ছিল।
হায়দ্রাবাদ ছিল মুসলিম শাসকের অধীন হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য। এর শাসক ছিলেন নিজামউসমান আলি খান এবং রাজনীতি মুসলিম অভিজাতদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত।[২] মুসলিম নেতৃবৃন্দ ও নিজামপন্থি মুসলিম দল ইত্তেহাদ উল মুসলিমিন ভারত ও পাকিস্তানের মত হায়দ্রাবাদের স্বাধীন থাকার পক্ষে জোর দেয়। ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন নিজামকে পাকিস্তানে যোগ না দিতে পরামর্শ দেন।
শেষপর্যন্ত নিজাম স্বাধীন থাকার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি একটি ফরমানের মাধ্যমে ঘোষণা করেন যে হায়দ্রাবাদ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে থাকবে এবং ভারতীয় ইউনিয়নের যোগ দেবে না।[১] তবে ভারত সরকার তার এই ফরমান প্রত্যাখ্যান করে এবং এর আইনত বৈধতা নেই বলে দাবি করে।
১৯৪৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনী হায়দ্রাবাদে প্রবেশ করে। নিজাম উসমান আলি খান ভারতকে প্রতিহত করতে সক্ষম ছিলেন না তাই আত্মসমর্পণে বাধ্য হন। হায়দ্রাবাদ পরাজিত হয় এবং ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে। একারণে চৌধুরী রহমত আলির পরিকল্পনা অনুযায়ী উসমানিস্তান বাস্তবায়িত হয়নি।
চৌধুরী রহমত আলি ভারত উপমহাদেশে মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে প্রস্তাব উত্থাপন করেন তার মধ্যে উসমানিস্তান ছিল অন্যতম। এছাড়াও ভারতের পশ্চিম অঞ্চলে পাকিস্তান ও পূর্ব অঞ্চলে বাঙ্গালিস্তান গঠনের কথা বলা হয়। ১৯৪৭ সালের ৩ জুন ব্রিটিশরা বিভাগ পরিকল্পনা ঘোষণা করলে তিনি তার বিপক্ষে অবস্থান নেন এবং পাকিস্তান পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান।
↑ কখLumby, E.W.R. (১৯৫৪), The Transfer of Power in India, 1945–1947, London: George Allen and Unwinউদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑
Talbot, Phillips (১৯৪৯), "Kashmir and Hyderabad", World Politics, Cambridge University Press, 1 (3): 321–332, জেস্টোর2009033, ডিওআই:10.2307/2009033উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)