মহামারাক্কালা কুরুকুলাসুরিয়া পাতাবেন্দিগে ধনঞ্জয় পেরেরা (সিংহলি: අකිල ධනංජය; জন্ম: ৪ অক্টোবর, ১৯৯৩) পানাদুরায় জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা ও পেশাদার শ্রীলঙ্কান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য তিনি। শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সকল স্তরে (টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আই) অংশগ্রহণ করে চলেছেন। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে কোল্টস দলের প্রতিনিধিত্ব করছেন। বিশেষ প্রাধিকারপ্রাপ্ত ক্রিকেটের আসরে ওয়েয়াম্বা ইউনাইটেড, চেন্নাই সুপার কিংস, খুলনা টাইটান্স, মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের পক্ষে খেলেন। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলে থাকেন। বামহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে অফ ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শিতা প্রদর্শন করে চলেছেন আকিলা ধনঞ্জয়।
ঘরোয়া ক্রিকেট
শ্রীলঙ্কা প্রিমিয়ার লিগের উদ্বোধনী আসরে ওয়েয়াম্বা ইউনাইটেডের পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন। বিশেষ প্রাধিকারপ্রাপ্ত দলটিতে নিজস্ব দ্বিতীয় খেলায় নাগেনাহিরা নাগাসের মুখোমুখি হন। বলে গতি সঞ্চালন, গুগলি ও বৈচিত্র আনয়ণে ব্যাটসম্যানদেরকে বিভ্রান্তি ফেলে ৩/১৮ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন।[১] ঐ খেলায় তার দল জয়লাভ করেছিল।
২০১৩ সালের আইপিএল নিলামে চেন্নাই সুপার কিংসে $২০,০০০ ডলারের চুক্তিতে উপনীত হন।[২] ২০১৮ সালে আইপিএল নিলামে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে চলে যান।[৩]
মার্চ, ২০১৮ সালে সুপার ফোর প্রভিন্সিয়াল টুর্নামেন্টে গালে দলের পক্ষে খেলেন।[৪][৫] আগস্ট, ২০১৮ সালে এসএলসি টি২০ লিগে কলম্বোর পক্ষে খেলেন।[৬]
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ তারিখে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। শ্রীলঙ্কার সকল স্তরের ক্রিকেটে দলের প্রধান স্পিনারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
মূলতঃ বামহাতি ব্যাটসম্যান ও অফ ব্রেক বোলার তিনি। লেগ ব্রেক, গুগলি, ক্যারম বল, দুসরা ও অফ স্পিনসহ সাত ধরনের বোলিং কৌশল রপ্ত করেছেন। জালবদ্ধ স্থানে জাতীয় দলের তৎকালীন অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনেকে বিস্ময়াভূত করেন। ফলশ্রুতিতে, জাতীয় দলে তাকে রাখা হয়।[৭] ঐ সময়ে আকিলা ধনঞ্জয় কোন প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট, লিস্ট এ, টি২০ কিংবা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পক্ষে ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেননি। ফলে, শুধুমাত্র জালবদ্ধ স্থানের দক্ষতা প্রদর্শনের মাধ্যমে জাতীয় দলে তার অন্তর্ভূক্তির প্রশ্নে বেশ বিতর্কের সৃষ্টি হয়।[৮]
২০১২ সালের আইসিসি বিশ্ব টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতায় শ্রীলঙ্কা দলে অন্তর্ভুক্ত হন।[৯] ১৮ বছর বয়সে পাল্লেকেলেতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে অভিষেক ঘটে তার। ঐ খেলায় নিউজিল্যান্ডীয় উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান রব নিকোলের কাছ থেকে পূর্ণ শক্তিমত্তায় ফিরে আসা বল তার মুখের বামদিকে আঘাত হানে। এক্স-রে ও এমআরআই স্ক্যানে তার বামদিকের চিবুকে ফাঁটল ধরা পড়ে। ফলশ্রুতিতে, গ্রুপ পর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলায় অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকতে হয়।[১০]
পাঁচ বছর পর শ্রীলঙ্কার ওডিআই দলে খেলার জন্যে আমন্ত্রিত হন। ২০১৭ সালে জিম্বাবুয়ে দল শ্রীলঙ্কা সফরে তিনি খেলেন।[১১] ৩০ জুন, ২০১৭ তারিখে গালেতে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম খেলায় ক্রেগ আরভিনকে আউট করে প্রথম ওডিআই উইকেট লাভ করেন।[১২] ২৪ আগস্ট, ২০১৭ তারিখে পাল্লেকেলে ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সফরকারী ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে পাঁচ-উইকেট পান। মাত্র ১৩ বলের ব্যবধানে এ কৃতিত্ব ওডিআইয়ে যে-কোন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারের সেরা বোলিং নৈপুণ্য। তাসত্ত্বেও, খেলায় ভারত দল ৩ উইকেটে জয় পায়। ৬/৫৪ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েও তার দল পরাজয়ের স্বাদ গ্রহণ করেন।[১৩][১৪] অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের কারণে খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০১৭ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওডিআই সিরিজে অংশ নেন। ১৩ অক্টোবর, ২০১৭ তারিখে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত দিবা-রাত্রির প্রথম ওডিআইয়ে নিজস্ব প্রথম অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেন। ৭২ বলে অপরাজিত ৫০ রানের ইনিংসটির কল্যাণে শ্রীলঙ্কা দল ২০০ রানের কোটা স্পর্শ করতে সহায়তা করলেও তার দল পরাজিত হয়েছিল।[১৫]
বাংলাদেশ গমন, ২০১৭-১৮
২০১৭-১৮ মৌসুমে শ্রীলঙ্কা দলের সাথে বাংলাদেশ গমন করেন। ঐ সফরে শ্রীলঙ্কার টেস্ট দলের সদস্যরূপে অন্তর্ভুক্ত হন।[১৬] ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ তারিখে শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অভিষেক ঘটে তার। স্বাগিতক বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ তার প্রথম শিকারে পরিণত হন। ১১০ রানে গুটিয়ে ফেলা বাংলাদেশ দলের ইনিংসে তিনি ৩/২০ লাভ করেন।[১৭] দ্বিতীয় ইনিংসে ৫/২৪ লাভ করেন। এরফলে তৃতীয় শ্রীলঙ্কান হিসেবে অভিষেকে ও ১৯৯৯ সালের পর প্রথম শ্রীলঙ্কান হিসেবে পাঁচ-উইকেট লাভের কৃতিত্ব দেখান।[১৮] খেলায়
তিনি ৪৪ রান খরচায় ৮ উইকেট পান। অভিষেক খেলায় এটি কোন শ্রীলঙ্কান খেলোয়াড়ের সেরা বোলিং পরিসংখ্যানের রেকর্ড গড়েন। অজন্তা মেন্ডিসের ১৪৪ রান খরচায় ৮ উইকেটের পর দ্বিতীয় শ্রীলঙ্কান হিসেবে তিনি এ কৃতিত্বের অধিকারী হন।[১৯] টেস্ট অভিষেকে অন্যতম বোলার হিসেবে মিতব্যয়ী বোলিং করেন। অভিষেক টেস্টে কমপক্ষে ৮ উইকেট লাভকারী বোলার হিসেবে ৫.৫০ গড়ে তিনি আলবার্ট ট্রটের রেকর্ড নিজের করে নেন।[২০][২১]
মে, ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট কর্তৃপক্ষ ২০১৮-১৯ মৌসুমকে ঘিরে ৩৩জন ক্রিকেটারকে জাতীয় পর্যায়ে চুক্তিতে উপনীত করে। এতে আকিলা ধনঞ্জয়কেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[২২][২৩] ২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা দল শ্রীলঙ্কা গমন করে। ২০ জুলাই, ২০১৮ তারিখে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। প্রথম ইনিংসে রঙ্গনা হেরাথের সাথে ৭৪ রানের জুটি গড়ে দলকে ৩৩৮ রানে নিয়ে যান। ৪৩ রানে অপরাজিত অবস্থায় মাঠ ছাড়েন। নিজস্ব তৃতীয় টেস্টে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ-উইকেট লাভ করেন।[২৪] দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসে আরও দুই উইকেট পান। খেলায় স্বাগতিক দল ১৯৯ রানে জয় তুলে নেয় ও ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে।[২৫]
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ওডিআইয়ে ৬/২৯ পান। ব্যক্তিগত সেরা বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করানোর ফলে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা দল মাত্র ১২১ রানে গুটিয়ে যায়। ২৫ ওভারের মধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ গড়ে ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বনিম্ন রান তুলে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তার এ বোলিং পরিসংখ্যান যে-কোন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারের সেরা। শ্রীলঙ্কা খেলায় ১৭৮ রানে জয় পায়। অসামান্য বোলিংয়ের কারণে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান তিনি। সুন্দর ক্রীড়াশৈলী স্বত্ত্বেও দক্ষিণ আফ্রিকা ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।[২৬]
ব্যক্তিগত জীবন
পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী আকিলা ধনঞ্জয় পানাদুরায় মহানামা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। কাঠমিস্ত্রীর সন্তান আকিলা ধনঞ্জয় পানাদুরা ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। ২২ আগস্ট, ২০১৭ তারিখে দীর্ঘদিনের বান্ধবী নেথালি তেক্ষিনি’র সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। এর দুই দিন পরই ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওডিআইয়ে খেলার জন্যে শ্রীলঙ্কা দলে আমন্ত্রণ বার্তা পান।[২৭][২৮] মোরাতুয়ার রামাদিয়া র্যান মাল হলিডে রিসোর্টে বিবাহ সম্পন্ন হয়। রঙ্গনা হেরাথ ও অজন্তা মেন্ডিস - স্পিনারদ্বয় এতে উপস্থিত ছিলেন ও প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে স্বাক্ষর করেন।[২৯]
তথ্যসূত্র
আরও দেখুন
বহিঃসংযোগ