অ্যাপোলো ষড়যন্ত্র তত্ত্বের দাবি অনুযায়ী, অ্যাপোলো কর্মসূচির কিছু বা সমস্ত অংশ এবং তৎসম্পর্কিত চাঁদে অবতরণ আদতে নাসা ও অন্যান্য সংগঠন দ্বারা আয়োজিত ধোঁকাবাজি। এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বের অন্যতম দাবি হচ্ছে যে ছয়টি মানব অবতরণ (১৯৬৯–১৯৭২) একধরনের জালিয়াতি এবং এই অবতরণ অভিযানে শামিল ১২ জন নভোচারী আদতে চাঁদে অবতরণই করেননি। ১৯৭০-এর দশকের মধ্যভাগ থেকে বিভিন্ন দল ও ব্যক্তি এই দাবি প্রচার করে এসেছে যে নাসা ও অন্যান্য সংগঠন ইচ্ছা করে জনগণকে বিশ্বাস করাতে চেয়েছিল যে চাঁদে অবতরণ সত্যিই হয়েছে।
তৃতীয় পক্ষ থেকে অ্যাপোলো চন্দ্র অবতরণের অনেক প্রমাণ রয়েছে এবং বিবরণসহ অ্যাপোলো সম্পর্কিত বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব খণ্ডন করা হয়েছে।[১] ২০০০-এর দশকের শেষভাগ থেকে লুনার রেকনেসান্স অরবিটার (এলআরও) বিভিন্ন অ্যাপোলো অবতরণ স্থানের উচ্চ মানের চিত্র তুলেছে এবং এই চিত্রগুলোতে অ্যাপোলো লুনার মডিউলের ডিসেন্ট স্টেজ ও নভোচারীদের ছাপ স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে।[২][৩] ২০১২ সালে প্রকাশিত ধারাবাহিক চিত্রে ছয়টি অ্যাপোলো অভিযানে খাড়া করা মার্কিন পতাকার মধ্যে পাঁচটি পতাকা এখনও রয়েছে। অ্যাপোলো ১১ এর ব্যতিক্রম, যা লুনার মডিউলের অ্যাসেন্ট প্রপালশন সিস্টেমের জন্য চন্দ্রপৃষ্ঠে নুয়ে পড়েছিল।[৪][৫]
ধোঁকাবাজির দাবি ও তার খণ্ডন
অ্যাপোলো সম্পর্কিত অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব রচনা করা হয়েছে এবং এদের দাবি যে হয় চাঁদে অবতরণ হয়নি এবং নাসা কর্মীবৃন্দ মিথ্যাবাদী, কিংবা অবতরণ হলেও যেভাবে রিপোর্ট করা হয়েছে সেভাবে হয়নি। ষড়যন্ত্র তত্ত্ববিদগণ অ্যাপোলো অভিযানের ঐতিহাসিক নথিতে আপাত ফাঁক বা অসঙ্গতির উপর জোড় দিচ্ছেন। এই তত্ত্বের অন্যতম ধারণা হচ্ছে যে এই সমগ্র মানব অবতরণ কর্মসূচির আগাগোড়া এক ধোঁকাবাজি। কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্ববিদদের দাবি যে তখন মানুষদের চাঁদে পাঠানোর মতো প্রযুক্তি ছিল না, কিংবা ভ্যান অ্যালেন বিকিরণ বেষ্টনী, সৌর শিখা, সৌর ঝড়, করোনাল মাস ইজেকশন ও মহাজাগতিক রশ্মির জন্য এরকম অভিযান অসম্ভব।[৬]
আলোকচিত্র ও চলচ্চিত্রে অস্বাভাবিকতা
অ্যাপোলো ষড়যন্ত্র তত্ত্ববিদগণ নাসা চিত্রের উপর বেশি করে জোড় দেন। তাঁরা চাঁদে তোলা আলোকচিত্র ও চলচ্চিত্রে অস্বাভাবিকতার দিকে আলোকপাত করেন। তবে আলোকচিত্রের বিশেষজ্ঞরা, যাঁদের মধ্যে নাসার সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন বিশেষজ্ঞও রয়েছেন, বলেছেন যে এই অস্বাভাবিকতাগুলো বাস্তব চাঁদে অবতরণের কাঙ্ক্ষিত ফলাফলের সাথে সঙ্গত, এবং এগুলো স্টুডিও বা পরিবর্তিত চিত্রের সাথে সঙ্গত নয়। কিছু প্রধান দাবি ও পাল্টা দাবিগুলোকে নিচে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে:
১৯৯৮ সালে নিম্নমানের স্ক্যান করা চিত্র – এখানে ক্রসহেয়ার ও লাল স্ট্রাইপের কিছু অংশ আবছা হয়ে গিয়েছে।
২০০৪ সালে উচ্চমানের স্ক্যান করা চিত্র – এখানে ক্রসহেয়ার ও লাল স্ট্রাইপ উভয় দৃশ্যমান।
দাবি: কিছু আলোকচিত্রে ক্রসহেয়ারগুলো বস্তুর পিছনে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। চাঁদে ব্যবহৃত ক্যামেরাগুলোতে রেজো পাত বসানো থাকত, যেখানে এই ক্রসহেয়ারগুলো ছিল, যার ফলে আলোকচিত্রে কোনো বস্তুকে ক্রসহেয়ারের "সামনে" আসা অসম্ভব। ষড়যন্ত্র তত্ত্ববিদরা এই প্রমাণ দেখিয়ে দাবি করে যে এই বস্তুগুলোকে আলোকচিত্রের উপর "বসানো" হয়েছে, যার ফলে এই ক্রসহেয়ারগুলো আড়াল হয়ে যাচ্ছে।
পাল্টা দাবি: এই ঘটনাটি কেবল অনুলিপি ও স্ক্যান করা আলোকচিত্রে পাওয়া যায়, কিন্তু আসল চিত্রে পাওয়া যায় না। ওভারএক্সপোজারের জন্য এই ঘটনা লক্ষ করা যায়: এই ইমালসনের উজ্জ্বল সাদা অংশ পাতলা কালো ক্রসহেয়ারগুলোকে আবছা করে দিয়েছে। এই ক্রসহেয়ারগুলো কেবল ০.০০৪ ইঞ্চি (০.১০ মিলিমিটার) পুরু, এবং ইমালসন দ্বারা এই ক্রসহেয়ারের অর্ধাংশকে আবছা করলেই একে সম্পূর্ণভাবে অস্পষ্ট করা যায়। এছাড়া অনেক আলোকচিত্রে ক্রসহেয়ারের মাঝের অংশ "ওয়াশ-আউট" হয়ে গিয়েছে কিন্তু এর বাকি অংশ যেমন ছিল তেমনই রয়ে গিয়েছে। মার্কিন পতাকার কিছু আলোকচিত্রে লাল স্ট্রাইপে একটি ক্রসহেয়ারের কিছু অংশ দেখতে পাওয়া যায়, কিন্তু সাদা স্ট্রাইপে ঐ একই ক্রসহেয়ারের কিছু অংশ অস্পষ্ট হয়ে যায়। মার্কিন পতাকায় সাদা স্ট্রাইপ "বসানো"-র কোনো কারণই থাকার কথা নয়।[৭]
দাবি: ক্রসহেয়ারগুলো অনেকসময় ঘোরানো বা ভুল জায়গায় থাকে।
পাল্টা দাবি: সৌন্দর্য্য বাড়ানোর জন্য জনপ্রিয় চিত্রগুলোকে ক্রপ করা বা ঘোরানো হয়।[৭]
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে স্পেস শাটল আটলান্টিসের দীর্ঘ আলোকসম্পাতকালের চিত্র (f/২.৮-এ ১.৬ সেকেন্ড, আইএসও ১০০০০)। এখানে কিছু তারা দৃশ্যমান এবং পৃথিবী চাঁদের আলোয় আলোকিত।
দাবি: কোনো অ্যাপোলো আলোকচিত্রে তারা নেই; অ্যাপোলো ১১ নভোচারীরা অভিযান-পরবর্তী প্রেস কনফারেন্সে বলেছিলেন যে চাঁদে হাঁটার সময় তাঁদের কোনো তারা দেখতে পাওয়ার কথা মনে পড়ছিল না।[৮] ষড়যন্ত্র তত্ত্ববিদদের দাবি যে নাসা আলোকচিত্রগুলোতে তারা যোগ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল কারণ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই তারাগুলোর অবস্থান ও লম্বন দিয়ে যাচাই করবেন যে আদৌ এই চিত্রগুলো চাঁদ বা পৃথিবী থেকে তোলা হয়েছিল।
পাল্টা দাবি ১: ঐ অ্যাপোলো ১১ নভোচারীরা চান্দ্র দিনের বেলায় খালি চোখে তারা দেখার কথা বলছিলেন। তাঁরা মহাকাশযানের ন্যাভিগেশন অপটিক্স দিয়ে নিয়মিত তারা পর্যবেক্ষণ করতেন এবং অ্যাপোলো পিংসকে এর সাথে সামঞ্জস্য রাখা হতো।[৯]
পাল্টা দাবি ২:স্পেস শাটল, মির মহাকাশ স্টেশন, ভূপর্যবেক্ষণ চিত্র, এমনকি রাতের বেলায় আয়োজিত ক্রীড়া অনুষ্ঠানের চিত্রেও তারা দেখতে পাওয়া যায় না। মহাকাশে পৃথিবী–চাঁদ ব্যবস্থায় সূর্যের আলো এবং ভূপৃষ্ঠে মেঘমুক্ত মধ্যাহ্নের সময় সূর্যের আলো প্রায় সমান উজ্জ্বল। সুতরাং সূর্যের আলোয় আলোকিত কোনো বস্তুর চিত্র তোলার সময় ক্যামেরাকে ডেলাইট এক্সপোজারে সেট করা হয়। তারার কম আলো দৃশ্যমান চিত্রের জন্য যথেষ্ট আলোকসম্পাতকাল দেয় না। সমস্ত মানব অবতরণ চান্দ্র দিনের বেলায় হয়েছিল, সুতরাং সূর্য এবং চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত সূর্যালোকের জন্য অন্যান্য তারার ঔজ্জ্বল্য নগণ্য হয়ে গিয়েছিল। নভোচারীদের চোখগুলো তাঁদের চারিদিকের সূর্যালোকিত ভূমিরূপে অভ্যস্ত এবং তাঁরা তুলনায় ক্ষীণ উজ্জ্বল তারা দেখতে পারতেন না।[১০][১১] তবে চাঁদের ছায়ার মধ্যে থাকলে নভোচারীরা খালি চোখে তারা দেখতে পারতেন।[১২][১৩]
পাল্টা দাবি ৬: নভোচারী অ্যালান শেপার্ডঅ্যাপোলো ১৪ অভিযান চলাকালীন চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে শুক্র গ্রহ বা শুকতারার আলোকচিত্র তুলেছিলেন, যা সূর্য ব্যতীত অন্যান্য নক্ষত্রের চেয়ে উজ্জ্বল।[১৪]
মূল এএস-১৬-১০৭-১৭৪৪৬ চিত্র। বড় করে দেখলে কোনো C-আকৃতির বস্তু দেখতে পাওয়া যাবে না।
এএস-১৬-১০৭-১৭৪৪৬ চিত্রের পরবর্তী মুদ্রিত সংস্করণ।
দাবি: একটি আলোকচিত্রে পাথরে ও ভূমিতে প্রায় একইরকম দেখতে দুটি C রয়েছে। এগুলো সম্ভত চিহ্নিত স্টুডিও প্রপ।
পাল্টা দাবি: খুব সম্ভবত মুদ্রণ ত্রুটির জন্য আলোকচিত্রে C-আকৃতির বস্তুগুলো ফুটে উঠেছে এবং ক্যামেরার মূল ফিল্মে এই বস্তুগুলো নেই। এটা মনে করা হয় যে এই C-আকৃতির বস্তুগুলো আদতে চুলের পাকানো অংশ।[১৫][১৬]
পাল্টা দাবি: অবতরণ যানের ক্যামেরা এই ভিডিওটি তুলেছিল। অ্যাপোলো লুনার মডিউলের মডিউলারাইজড ইকুইপমেন্ট স্টোয়েজ অ্যাসেম্বলিতে (মেসা) বসানো অ্যাপোলো টিভি ক্যামেরা অবতরণ যানের বাইরের দৃশ্য প্রদান করত। অবতরণ যানের সিঁড়ির ধাপে থাকার সময় আর্মস্ট্রং পাশে মেসা ডিপ্লয় করেছিলেন, যার ফলে টিভি ক্যামেরাসহ বিভিন্ন জিনিস বেরিয়ে এসেছিল। এই টিভি ক্যামেরার সুইচ অন করা হয়েছিল এবং পৃথিবীতে এক সংকেত প্রেরণ করা হয়েছিল। এর মানে, পৃথিবীর প্রায় ৬০ কোটি লোক কেবল কিঞ্চিৎ বিলম্বসহ এই লাইভ ফিড দেখতে পারতো। পরবর্তী অ্যাপোলো অভিযানে অনুরূপ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল।[১৭][১৮][১৯][২০] এছাড়া লুনার মডিউলের জানালায় বসানো স্বয়ংক্রিয় ১৬মিমি মুভি ক্যামেরা দিয়েও এই ঘটনার ভিডিও তোলা হয়েছিল।
পরিবেশ
দাবি:ভ্যান অ্যালেন বিকিরণ বেষ্টনী ও মহাজাগতিক রশ্মির বিকিরণের জন্য নভোচারীরা এই মহাকাশ যাত্রায় বাঁচতে পারতেন না। কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্ববিদের মতে স্টারফিশ প্রাইম (১৯৬২ সালের উচ্চ-উচ্চতার নিউক্লীয় পরীক্ষা) ভ্যান অ্যালেন বেষ্টনীতে আরেকটি তীব্র স্তর গঠন করেছিল।[২১]
পাল্টা দাবি: পৃথিবীর চারিদিকে তিনটি ভ্যান অ্যালেন বেষ্টনী রয়েছে – অভ্যন্তরীণ বেষ্টনী, বহিঃস্থ বেষ্টনী ও সাময়িক তৃতীয় বেষ্টনী।[২২] অভ্যন্তরীণ বেষ্টনী আরও ভয়ঙ্কর এবং সেখানে উচ্চশক্তির প্রোটন রয়েছে। বহিঃস্থ বেষ্টনীতে তুলনায় কম ভয়ঙ্কর নিম্নশক্তির ইলেকট্রন বা বিটা কণিকা রয়েছে।[২৩][২৪] অ্যাপোলো মহাকাশযান কয়েক মিনিটের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বেষ্টনীকে এবং প্রায় ১+১⁄২ ঘণ্টার মধ্যে বহিঃস্থ বেষ্টনীকে অতিক্রম করেছিল।[২৪] মহাকাশযানের অ্যালুমিনিয়াম কাঠামো নভোচারীদের আয়নীভূত বিকিরণের হাত থেকে রক্ষা করেছিল।[২৪][২৫] এছাড়া, বেষ্টনীর মধ্যে দিয়ে পৃথিবী থেকে চাঁদের কক্ষপথ পরিবর্তনের পথ এমনভাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল যাতে বিকিরণের প্রভাব কম হয়।[২৫] এমনকি ভ্যান অ্যালেন বেষ্টনীর আবিষ্কারক জেমস ভ্যান অ্যালেন এই দাবি নস্যাৎ করেছিলেন যে সেখানকার বিকিরণ অ্যাপোলো অভিযানের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক।[২১]
দাবি: এই বিকিরণে ক্যামেরার ফিল্ম অস্পষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা।
পাল্টা দাবি: ক্যামেরার ফিল্মকে ধাতুর আধারে রাখা হয়েছিল যা ফিল্মের ইমালসনকে বিকিরণ দ্বারা অস্পষ্ট হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছিল।[২৬] এছাড়া লুনার অরবিটার ও লুনা ৩-এর মতো মানবহীন চান্দ্র মহাকাশযানের ক্যামেরার ফিল্ম বিকিরণ দ্বারা অস্পষ্ট হয়ে যায়নি।
এডুইন অলড্রিন মার্কিন পতাকাকে স্যালুট করছেন। হেলমেটের পিছন থেকে অলড্রিনের ডান হাতের আঙুলগুলো দেখা যাচ্ছে।
কয়েক সেকেন্ড পরে তোলা চিত্র। অলড্রিনের হাত নিচে নামানো, মাথা ক্যামেরার দিকে এবং পতাকা যেমন ছিল তেমনই রয়ে গেল।
উপরের দুটি চিত্র নিয়ে তৈরি অ্যানিমেশন। এখানে আর্মস্ট্রঙের ক্যামেরার আলোকসম্পাতকাল পরিবর্তিত হলেও পতাকা নড়েনি।
দাবি: নভোচারীদের দ্বারা চন্দ্রপৃষ্ঠে বসানো মার্কিন পতাকা উড়ছিল যদিও চাঁদে কোনো বায়ুপ্রবাহ নেই। এই ঘটনা দিয়ে প্রমাণ করা হয় যে এটা পৃথিবীতে ক্যামেরাবন্দি করা হয়েছিল এবং সেখানকার হাওয়ার জন্য পতাকাটি উড়ছিল। ষড়যন্ত্র তত্ত্ববিদ বার্ট সিব্রেলের মতে ঘরের ভিতরের পাখার জন্য পতাকাটি উড়ছিল এবং তাঁদের স্পেস স্যুটেরশীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পৃথিবীতে খুব ভারী হবে বলে পাখা ব্যবহার করা হয়েছিল।
পাল্টা দাবি: মার্কিন পতাকাকে Γ-আকৃতির দণ্ড দিয়ে লাগানো হয়েছিল যাতে করে এটি নিচে না ঝুলে যায়। ঐ পতাকাটি তখনই আপাতভাবে উড়ছিল যখন নভোচারীরা একে নিয়ে নড়াচড়া করছিলেন। বায়ুর ঘর্ষণ না থাকার জন্য এই নড়াচড়ার ফলে পতাকার মুক্ত কোনাটি কিছুক্ষণের জন্য একটি দোলকের মতো দুলছিল। পতাকার ছবিতে মৃদু তরঙ্গ থাকার কারণ হচ্ছে যে চাঁদে নিয়ে যাওয়ার সময় এটি ভাঁজ করা অবস্থায় ছিল। স্থির চিত্রে এই মৃদু তরঙ্গকে অনেকসময় নড়াচড়া বলে ভ্রম হতে পরে।[২৭][২৮][২৯]
যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রযুক্তির মধ্যে তুলনা
ষড়যন্ত্র তত্ত্ববিদ বার্ট সিব্রেল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নেরমহাকাশ প্রযুক্তির আপেক্ষিক মান দেখিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন যে চাঁদে অবতরণ হওয়ার কথা নয়। মহাকাশ প্রতিযোগিতার সূচনালগ্নে সোভিয়েত ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে এগিয়ে ছিল কিন্তু শেষের দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন চাঁদে মানব অবতরণ যান নামানো তো দূরের কথা, চাঁদে কোনো মানব মহাকাশযানই পাঠাতে পারেনি। এটা দাবি করা হয় যে যেহেতু সোভিয়েত ইউনিয়ন চাঁদে মানুষ পাঠাতে পারেনি, সেহেতু যুক্তরাষ্ট্রও চাঁদে মানুষ পাঠাতে পারবে না।
উদাহরণস্বরূপ, তিনি দাবি করেছেন যে অ্যাপোলো কর্মসূচির সময় যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সোভিয়েত ইউনিয়ন মোট ৫ ঘণ্টা বেশি সময় ধরে মানব মহাকাশ যাত্রা সম্পন্ন করেছিল এবং এটা পর্যবেক্ষণ করেছেন যে সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাকাশের বিভিন্ন প্রাথমিক মাইলফলক স্পর্শ করেছিল: কক্ষপথে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ (অক্টোবর ১৯৫৭, স্পুটনিক ১), মহাকাশে ও কক্ষপথে প্রথম প্রাণী (লাইকা নামক একটি কুকুর, নভেম্বর ১৯৫৭, স্পুটনিক ২), মহাকাশে ও কক্ষপথে প্রথম ব্যক্তি (ইউরি গাগারিন, এপ্রিল ১৯৬১, ভস্টক ১), মহাকাশে প্রথম মহিলা (ভালেন্তিনা তেরেসকোভা, জুন ১৯৬৩, ভস্টক ৬) ও মহাকাশে প্রথম পদচারণা (আলেক্সেই লেওনভ, মার্চ ১৯৬৫, ভসখদ ২)।
তবে উপরে উল্লেখিত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সোভিয়েত ইউনিয়নের মহাকাশ যাত্রার এক বছর বা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরূপ মহাকাশ যাত্রা সম্পন্ন হয়েছিল। ১৯৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র কিছু মাইলফলক স্পর্শ করতে লাগল (যেমন প্রথম সফল মহাকাশ রঁদেভু), যা চন্দ্র অভিযানের অন্যতম পদক্ষেপ। এছাড়া নাসা ও অন্যান্যদের মতে সোভিয়েতদের এই মাইলফলক জয়গুলো অতটা মহান নয় যতটা মনে হচ্ছে, যার মধ্যে বিভিন্ন মাইলফলক জয় কেবল স্টান্ট যেগুলো প্রযুক্তির তেমন উন্নয়ন সাধন করেনি, যেমন মহাকাশে প্রথম মহিলা।[৩০][৩১] এছাড়া প্রথম মানব কক্ষীয় অ্যাপোলো অভিযানের (অ্যাপোলো ৭) সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন কেবল ৯টি মহাকাশ যাত্রা সম্পন্ন করেছিল, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ১৬টি মহাকাশ যাত্রা সম্পন্ন করেছিল। আবার, মহাকাশযানের মহাকাশে কাটানোর সময়ের বিচারে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে মোট ৪৬০ ঘণ্টার মহাকাশ যাত্রা ছিল, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মোট ১,০২৪ ঘণ্টার মহাকাশ যাত্রা ছিল। নভোচারীদের কাটানো সময়ের বিচারে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে ৫৩৪ ঘণ্টার মানব মহাকাশ যাত্রা ছিল, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ১,৯৯২ ঘণ্টার মানব মহাকাশ যাত্রা ছিল। অ্যাপোলো ১১ অভিযানের সময় যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের থেকে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিল।
শুধু তাই নয়, ১৯৮০-এর দশকের আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন কোনো মানব চন্দ্র অভিযান সম্পন্ন করতে পারবে এমন কোনো সফল রকেট তৈরি করতে পারেনি। তাদের এন১ রকেট ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সালে চারবার উৎক্ষেপণ করতে ব্যর্থ হয়েছিল।[৩২]
অ্যাপোলো ষড়যন্ত্র তত্ত্ববিদদের মতে, বিভিন্ন মানমন্দির ও হাবল মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র অবতরণ স্থানের আলোকচিত্র তুলতে পারতো। এর মানে এটাই বোঝাচ্ছে যে বিশ্বের প্রধান মানমন্দির ও হাবল দূরবীক্ষণ যন্ত্র অবতরণ স্থানের আলোকচিত্র তুলতে চাইছে না এবং তারাও এই ধোঁকাবাজির সাথে জড়িত আছে। আসলে হাবল দূরবীক্ষণ যন্ত্র চাঁদের আলোকচিত্র তুলেছে, যার মধ্যে কমপক্ষে দুটি অ্যাপোলো অবতরণ স্থানও রয়েছে, কিন্তু হাবল দূরবীক্ষণ যন্ত্রের রেজোলিউশনের জন্য এটি চাঁদে ৬০–৭৫ গজ (৫৫–৬৯ মিটার)-এর চেয়ে ছোট বস্তু দেখতে পারে না।[৩৮]
২০০৯ সালের ১৭ জুলাইয়ে নাসা লুনার রেকনেসেন্স অরবিটার (এলআরও) থেকে অ্যাপোলো ১১, ১৪, ১৫, ১৬ ও ১৭ অবতরণ স্থানের আলোকচিত্র তুলেছিল।[৩৯] এই আলোকচিত্রে চন্দ্রপৃষ্ঠে প্রত্যেক অভিযানের অবতরণ যানের ডিসেন্ট স্টেজ দেখা যাচ্ছে। অ্যাপোলো ১৪ অবতরণ স্থানের চিত্রে অবতরণ যান ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের মধ্যে হাঁটার পথ লক্ষ করা যাচ্ছে।[৩৯] ২০০৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বরে নাসা অ্যাপোলো ১২ অবতরণ স্থানের চিত্র প্রকাশ করেছিল।[৪০] এলআরও-এর তোলা আলোকচিত্র সমগ্র বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় স্বীকার করলেও এগুলো ষড়যন্ত্র তত্ত্ববিদদের মত পরিবর্তন করতে পারেনি।[৪১]
↑Lunsford, Danny Ross; Jones, Eric M. (২০০৭)। "Venus over the Apollo 14 LM"। Apollo Lunar Surface Journal। NASA। জুলাই ২১, ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ৮, ২০১৩।
↑উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; whomourns নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
↑Stoyanova, Silvia, সম্পাদক (সেপ্টেম্বর ১০, ২০০৭)। "Hubble Shoots The Moon"। NASA। ডিসেম্বর ৪, ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ২০, ২০০৯।
↑ কখHautaluoma, Grey; Freeberg, Andy (জুলাই ১৭, ২০০৯)। Garner, Robert, সম্পাদক। "LRO Sees Apollo Landing Sites"। NASA। নভেম্বর ১৬, ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১৪, ২০০৯। NASA's Lunar Reconnaissance Orbiter, or LRO, has returned its first imagery of the Apollo Moon landing sites. The pictures show the Apollo missions' lunar module descent stages sitting on the moon's surface, as long shadows from a low sun angle make the modules' locations evident.
↑Garner, Robert, সম্পাদক (সেপ্টেম্বর ৩, ২০০৯)। "Apollo 12 and Surveyor 3"। NASA। সেপ্টেম্বর ৫, ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ২, ২০১৩।
↑Antonia (সেপ্টেম্বর ১০, ২০০৯)। "A HB Response To The LRO Photos"। Lunarlandinghoax.com (Blog)। Antares 14 Media। অক্টোবর ১৮, ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ২৭, ২০১৩।
Bennett, Mary; Percy, David S. (২০০১) [First published 1999 in Great Britain by Aulis Publishers]। Dark Moon: Apollo and the Whistle-Blowers। Kempton, IL: Adventures Unlimited Press। আইএসবিএন978-0932813909।
Brian, William L. (১৯৮২)। Moongate: Suppressed Findings of the U.S. Space Program, The NASA-Military Cover-Up (1st সংস্করণ)। Portland, OR: Future Science Research Publishing Co.। আইএসবিএন978-0941292009।
Kaysing, Bill (২০০২) [First published 1976]। We Never Went to the Moon: America's Thirty Billion Dollar Swindle। Randy Reid credited as co-author in 1976 editions। Pomeroy, WA: Health Research Books। ওসিএলসি52390067।
Попов, Александр Иванович (২০০৯)। Американцы на Луне: великий прорыв или космическая афера? [Americans on the Moon: The Great Breakthrough or Space Scam?] (রুশ ভাষায়)। Moscow: Veche। আইএসবিএন978-5953333153।
Wisnewski, Gerhard (২০০৭) [Originally published 2005 in German under the title Lügen im Weltraum, Von der Mondlandung zur Weltherrschaft, Knaur Taschenbuch Verlag, Munich]। One Small Step?: The Great Moon Hoax and the Race to Dominate Earth from Space। English translation by Johanna Collis। Forrest Row: Clairview Books। আইএসবিএন978-1905570126।