অশোকসুন্দরী (সংস্কৃত: अशोकसुंदरी, Aśokasundarī) হলেন একজন হিন্দু দেবী। তিনি শিব ও পার্বতীর কন্যা। পদ্মপুরাণে তাঁর কাহিনি উল্লিখিত হয়েছে। অশোকসুন্দরীর পুত্রের নাম যযাতি।[১] দেবী অশোকসুন্দরী বাংলায় শোকরহিতা নামে পূজিতা হন।
নামকরণ
পার্বতী নিজের একাকিত্ব দূর করতে চাইলে কামনাপূর্ণকারী কল্পতরু হতে অশোকসুন্দরীর সৃষ্টি হয়। তাঁর নামটিও পার্বতীর সৃষ্টির কারণ থেকে উৎসারিত হয়েছে। অশোক শব্দটি পার্বতীর "শোক" দূরীকরণের সঙ্গে যুক্ত এবং "সুন্দরী" শব্দের অর্থ "অপরূপা বালিকা"।[২]
কিংবদন্তি
পদ্মপুরাণে অশোকসুন্দরীর জন্মবৃত্তান্ত উল্লিখিত হয়েছে। রাজা নহুষের উপাখ্যানের একটি ভাষ্য অনুযায়ী, একবার পার্বতী শিবকে অনুরোধ করেন তাঁকে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা সুন্দর উদ্যানটিতে নিয়ে যেতে। শিব তাঁকে নন্দনবনে নিয়ে আসেন। সেখানে পার্বতী সকল কামনাপূর্ণকারী কল্পতরু দেখতে পান। পার্বতীর দুই পুত্র কার্তিক ও গণেশ বয়ঃপ্রাপ্ত হয়ে কৈলাস ত্যাগ করার পর থেকে দুঃখে একাকী তাঁর দিন কাটছিল। নিজের একাকিত্ব দূর করার জন্য তিনি কল্পতরুর কাছে একটি কন্যা কামনা করলেন। তাঁর ইচ্ছা পূর্ণ হল। জন্ম হল অশোকসুন্দরীর। পার্বতী কথা দিলেন, নিজের পূর্বনিদিষ্ট ভাগ্যবলে অশোকসুন্দরী বিবাহ করবেন চন্দ্রবংশীয় রাজা নহুষকে এবং নহূষ দেবরাজ ইন্দ্রের সমতুল্য হবেন। একদিন অশোকসুন্দরী নন্দনবনে তাঁর সখীদের সঙ্গে বিহার করছেন, এমন সময় হুন্দ নামে এক রাক্ষস তাঁকে দেখতে পায় এবং তাঁর প্রেমে পড়ে যায়। সে গিয়ে অশোকসুন্দরীকে প্রেম নিবেদন করলে অশোকসুন্দরী তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন যে, নহূষের সঙ্গে তাঁর বিবাহ আগেই নির্ধারিত হয়ে রয়েছে। হুন্দা এক নারীর স্বামীকে হত্যা করেছিল। সেই বিধবার ছদ্মবেশে অশোকসুন্দরীর কাছে উপস্থিত হয়ে তিনি তাকে তাঁর আশ্রমে নিয়ে যেতে বলে। ছদ্মবেশী দৈত্যের সঙ্গে চলতে গিয়ে দেবী উপনীত হন দৈত্যের প্রাসাদে। দৈত্যের বিশ্বাসঘাতকতা ধরা পড়ে যায়। অশোকসুন্দরী তাকে অভিশাপ দেন, রাজা নহুষের হাতে তার মৃত্যু ঘটবে। এরপর দেবী চলে যান তাঁর পিতামাতার বাসস্থান কৈলাসে। হুন্দ শিশু নহুষকে তাঁর প্রাসাদ থেকে অপহরণ করে। যদিও এক দাসী তাঁকে উদ্ধার করে ঋষি বশিষ্ঠের হস্তে অর্পণ করে। নহুষ বয়ঃপ্রাপ্ত হলে জানতে পারেন যে হুন্দকে হত্যা করা তাঁর উদ্দেশ্য হবে। এবার অশোকসুন্দরীকে অপহরণ করে হুন্দ তাঁকে বলে যে, সে নহুষকে বধ করেছে। কিন্তু এক কিন্নর যুগল তাঁকে প্রবোধ দিয়ে নহুষের কুশলসংবাদ জানান। তাঁরা ভবিষ্যদ্বাণী করেন, অশোকসুন্দরী যযাতি নামে এক শক্তিশালী পুত্র ও একশো সুন্দরী কন্যার জননী হবেন। নহুষের সঙ্গে হুন্দের প্রবল যুদ্ধ হয় এবং তাকে পরাজিত ও নিহত করে নহুষ অশোকসুন্দরীকে উদ্ধার করেন। দু’জনের বিবাহ সম্পন্ন হয়। পরবর্তীকালে কোনও এক সময়ে ইন্দ্রের অনুপস্থিতিতে নহূষ সাময়িকভাবে স্বর্গে রাজত্ব করেছিলেন।[২][৩][৪]
তথ্যসূত্র