২০২৪-এ ভারতে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা

বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন, আগরতলায় হামলা
গৈরিক সন্ত্রাসের অংশ
মানচিত্র
আগরতলা ত্রিপুরা-এ অবস্থিত
আগরতলা
আগরতলা
আগরতলা (ত্রিপুরা)
আগরতলা ভারত-এ অবস্থিত
আগরতলা
আগরতলা
আগরতলা (ভারত)
স্থানবাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন, আগরতলা, ত্রিপুরা, ভারত
স্থানাংক২৩°৫০′৫৯″ উত্তর ৯১°১৭′০২″ পূর্ব / ২৩.৮৪৯৮২° উত্তর ৯১.২৮৩৯৮° পূর্ব / 23.84982; 91.28398
তারিখ২ ডিসেম্বর ২০২৪
দুপুর ২টার দিকে (ইউটিসি+০৫:৩০)
হামলার ধরনভাংচুর
হামলাকারী দলহিন্দু সংঘর্ষ সমিতি
কারণচিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদ

২ ডিসেম্বর ২০২৪-এ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে একটি হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীদের হিন্দু সংঘর্ষ সমিতির সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যেটি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সাথে যুক্ত একটি উগ্র-হিন্দু চরমপন্থী গোষ্ঠী।[][]

পটভূমি

জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এর ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর ভারতের শক্তিশালী মিত্র শেখ হাসিনার পদত্যাগের ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের নাটকীয়ভাবে অবনতি ঘটে। যেহেতু ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি অপপ্রচার শুরু করেছিল, ভারত সরকার বাংলাদেশী হিন্দুদের উপর সহিংস সাম্প্রদায়িক আক্রমণ আখ্যা দিয়ে বিষয়টির উপর বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করে।[][][]

২৫ নভেম্বর ২০২৪-এ বাংলাদেশী হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা ও বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়, যার ফলে ভারতে ব্যাপক প্রতিবাদ হয়। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবিতে, ২৭ নভেম্বর ভারতীয় জনতা পার্টির পশ্চিমবঙ্গ শাখার প্রধান শুভেন্দু অধিকারী ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অবরোধ করার হুমকি দেন।[] ২৯শে নভেম্বর কলকাতায় হিন্দু সংগঠন বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণের সদস্যরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙ্গে বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের সীমানায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাপ্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকা পোড়ায়, যার প্রতি সরকার। বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে নিন্দা জানায়।[] অন্যদিকে, আসামের করিমগঞ্জ জেলায় সনাতানি ঐক্য মঞ্চের প্রায় ৪০,০০০ সদস্য "জয় শ্রী রাম" স্লোগান দিয়ে "সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর কথিত হামলার প্রতিশোধ নিতে" বাংলাদেশের সাথে সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করেছিল।[]

ঘটনা

উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় কয়েক দিন ধরেই বাংলাদেশ-বিরোধী বিক্ষোভ করেছিল হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি।[] ২রা ডিসেম্বর ভারতীয় সময় দুপুর ২ টার দিকে, সংগঠনের সদস্যরা আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হাজির হয় এবং জয় শ্রী রাম স্লোগান দিয়ে এর প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে।[] হামলাকারীরা "বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে ফেলে, আগুন দেয় এবং ভবনের ভেতরে কিছু ভাঙচুর চালায়"।[]

ঘটনাটির পর বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষ সহকারী হাইকমিশনের সকল প্রকার ভিসা ও দূতাবাসীয় সেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে।[১০]

প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘটনাটিতে "গভীর ক্ষোভ" প্রকাশ করে একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করে এবং স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এই হামলাটিকে "পূর্ব পরিকল্পিত" বলে অভিহিত করে। বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয় যে হামলাটি ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোম্যাটিক রিলেশন্স, ১৯৬১-এর পরিপন্থী।[১১] ৩রা ডিসেম্বর ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মাকেও তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।[১২]

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ভারতীয় গণমাধ্যমের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন।[১৩] অন্তর্বর্তী সরকারের দুইজন উপদেষ্টা, নাহিদ ইসলামএম. সাখাওয়াত হোসেন, ঘটনাটির জন্য ভারত সরকারের সমালোচনা করেন।[১৩]

হামলার নিন্দা জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র অধিকার পরিষদসহ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদজাতীয় নাগরিক কমিটিসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠন বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।[১৩][১৪]

১০ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার ঘটনাটিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং উভয়পক্ষকে শান্তিপূর্ণভাবে কূটনৈতিক বিরোধ নিষ্পত্তির আহ্বান জানান।[১৫]

বিচার

হামলায় জড়িত থাকার সন্দেহে ৩ ডিসেম্বর সাতজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয় এবং দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে সহকারী হাইকমিশন এলাকায় দায়িত্বরত তিনজন পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়।[১০][১৬]

তথ্যসূত্র

  1. "ISKCON row: Far-right outfits breach Bangladesh mission in Agartala"The Siasat Daily (ইংরেজি ভাষায়)। ২ ডিসেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ 
  2. "Bangladesh assistant high commission in Agartala attacked, flag torched"দৈনিক প্রথম আলো (ইংরেজি ভাষায়)। ২ ডিসেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ 
  3. প্রতিবেদক, নিজস্ব (১১ আগস্ট ২০২৪)। "বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলা নিয়ে ভারতে অপতথ্যের প্রচার"দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ৮ অক্টোবর ২০২৪ 
  4. "Misinformation over Hindus being targeted in Bangladesh fuels Islamophobia fears"South China Morning Post (ইংরেজি ভাষায়)। ২৩ আগস্ট ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০২৪ 
  5. "Disinformation About Attacks on Minorities Threaten Stabilization Efforts in Bangladesh"thediplomat.com। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০২৪ 
  6. Nag, Jayatri (২৭ নভেম্বর ২০২৪)। "BJP Bengal unit-led Leader of Opposition Suvendu Adhikari plans border blockade, demands halt on trade to Bangladesh over ISKCON monk's arrest"The Economic Times। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ 
  7. "Dhaka condemns desecration of national flag outside Bangladesh mission in Kolkata"The Business Standard (ইংরেজি ভাষায়)। ২৯ নভেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ 
  8. "'Chalo Bangladesh': Protesters nearly cross India's Assam border to avenge alleged attacks on minority Hindus"Deccan Herald (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ 
  9. Hasnat, Karishma (২ ডিসেম্বর ২০২৪)। "Security tightened after protesters enter Bangladesh mission in Agartala, MEA says 'deeply regrettable'"ThePrint। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ 
  10. "Bangladesh Assistant High Commission shuts down visa, consular services at Agartala after mob breach"দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস (ইংরেজি ভাষায়)। ৩ ডিসেম্বর ২০২৪। 
  11. "Dhaka resents 'heinous attack' on Agartala mission"The Business Standard (ইংরেজি ভাষায়)। ২ ডিসেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ 
  12. "MOFA summons Indian envoy Pranay Verma"The Business Standard (ইংরেজি ভাষায়)। ৩ ডিসেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ 
  13. "Attack on Agartala mission: Protests mount, Yunus moves for national unity"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ৪ ডিসেম্বর ২০২৪। 
  14. "Students hold rally at DU protesting attack on Bangladesh Assistant High Commission in Agartala"The Business Standard (ইংরেজি ভাষায়)। ২ ডিসেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ 
  15. "ভারতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনে হামলার বিষয়ে যা বলল যুক্তরাষ্ট্র"দৈনিক জনকণ্ঠ। ১১ ডিসেম্বর ২০২৪। 
  16. "আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ৩ পুলিশ বরখাস্ত"দৈনিক মানবজমিন। ৩ ডিসেম্বর ২০২৪। 

Strategi Solo vs Squad di Free Fire: Cara Menang Mudah!