Ceasefires · Insurgent groups
প্রতিবাদ এবং সরকার পরিবর্তন
ঘটনা এবং হামলা
মুসলিম-বিরোধী সহিংসতা
২০১৩-এ মিয়ানমারে মুসলিম-বিরোধী দাঙ্গা মধ্য ও পূর্বাঞ্চলীয় মিয়ানমারের (বার্মা) বিভিন্ন শহরে সংগঠিত হওয়া সংঘর্ষের একটি সমষ্টি ছিল।
২০ মার্চ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত ম্যান্ডেলা বিভাগের মিকটিলাতে বৌদ্ধ ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা থেকে সহিংস সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন প্রাণ হারায় এবং ৬১ জন আহত হয়। ২০ মার্চে সহিংসতা শুরু হয় যখন একজন মুসলিম সোনার দোকানের মালিক, তার স্ত্রী এবং দুই মুসলমান কর্মচারী একটি সোনার মাথার কাঁটা নিয়ে একজন বৌদ্ধ গ্রাহক এবং তার স্বামীর সাথে ঝগড়ার এক পর্যায়ে আঘাত করে। একটি বৃহৎ দল সঙ্গবদ্ধ হয়ে দোকানটি ধ্বংস করতে শুরু করে। দোকানটি ধ্বংস করার পর, বিপুল সংখ্যক পুলিশ উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ হয়ে যেতে বলে।[৩] সন্ধ্যায় এই ঘটনায় জড়িত নয় এমন এক স্থানীয় বৌদ্ধ ভিক্ষুকে তার সাইকেল থেকে টেনে আনা হয়, পেট্রোলে ভিজিয়ে দেয়া হয় এবং একটি মসজিদের কাছাকাছি ছয় মুসলিম যুবক তাকে জীবিত পুড়িয়ে দেয়।[৪] ভিক্ষুর হত্যাকাণ্ডের ফলে অপেক্ষাকৃত অপ্রতিরোধ্য অবস্থা তৈরি হয়ে ব্যাপকভাবে তীব্রতা ও সহিংসতা বৃদ্ধি পায়।[৩] বৌদ্ধ উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক মিংলার জ্যোওন ইসলামী বোর্ডিং স্কুলে আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগ করার ফলে প্রাণঘাতী ঘটনা ঘটে। বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও, ছোরা, ধাতব পাইপ, শিকল এবং পাথর হাতে সজ্জিত দাঙ্গাকারীরা ৩২ জন কিশোর শিক্ষার্থী ও চারজন শিক্ষককে হত্যা করে।[৫]
২৫ শে মার্চ, ওথকোনে, তটকোনে এবং ইয়াটিহিন শহরে মুসলিম ঘরবাড়ি ও মসজিদগুলিকে লক্ষ্য করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এই সহিংসতার ফলে কমপক্ষে ৯০০০ বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হওয়ার খবর প্রকাশ করা হয়।[৬] এপ্রিল মাসে, বিবিসি পুলিশের একটি ফাস হওয়া ভিডিও খোঁজে পায় যাতে দেখানো হয় যে মিকটিলাতে যখন ঘরবাড়ি এবং ব্যবসায় বাণিজ্য জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছিল, বিপুল সংখ্যক পুলিশ কর্মকর্তারা তখন দাঁড়িয়ে ছিল। ভিডিওটিতে দাঙ্গাকারীদের হাতে কমপক্ষে দুইজন মুসলমান শিক্ষার্থীকে পুড়িয়ে ফেলা এবং হত্যার ঘটনাও দেখানো হয়েছে, যেসব অপরাধের মধ্যে বৌদ্ধ ভিক্ষুরাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তীতে আদালতে অপরাধীদের বিচারের জন্য ভিডিওটি তুলে ধরা হয়। তৃতীয় দিনে, সরকার যখন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে এবং সামরিক বাহিনী মোতায়েন করে তখন পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়ে যায়।[৩]
২১শে মে, সোনা দোকানের মালিকসহ সাতজন মুসলমান এবং ভিক্ষুদের হত্যার পরিকল্পনাকারীদের, যাদের সহিংসতা উস্কে দেয়ার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং ২ থেকে ২৮ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেয়া হয়। জুলাই মাসে, বার্মা আদালত দাঙ্গায় ২৫ জন বৌদ্ধকে সহিংসতা চলাকালে হত্যা এবং অন্যান অপরাধের দায়ে ১৫ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করে।[১]
অকানে ৩০শে এপ্রিল ৪০০ জন বৌদ্ধ ইট ও লাঠিসোটা নিয়ে মসজিদগুলোতে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং একশোরও বেশি বাড়ি ও দোকানপাঠ আগুনে পুড়িয়ে দেয় এবং দুই জনকে হত্যা করে। এতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। পাশাপাশি যাদানাকন, পানাপিন, চৌকথে এবং থেকন-এর নিকটবর্তী গ্রামগুলিতে ৭৭টিরও বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস করে হয়। দাঙ্গাটি শুরু হয়েছিল যখন একটি বাইসাইকেলে একজন মুসলিম মেয়ে দুর্ঘটনাক্রমে একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীকে তার ভিক্ষাবৃত্তির থালায় চাপ সহ ধাক্ষা দেয়।[৭]
২৯ শে মে, একটি প্রতিবেদনে যখন বলা হয় যে, নে উইন নামের ৪৮ বছর বয়সী একজন মুসলিম পুরুষ, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারীর সাথে ঝগড়া করে তার গায়ে পেট্রোল ছিটিয়ে দেয় এবং তাকে আগুন ধরিয়ে দেয়, তখন চীনের সীমান্তবর্তী শান প্রদেশের লেশিয়তে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রতিক্রিয়া, ছোরা এবং বাঁশের খুঁটিসহ সশস্ত্র একদল বৌদ্ধ উচ্ছৃঙ্খল জনতা একটি মসজিদ, মুসলিম অনাথাশ্রম এবং অনেক দোকানে আগুন দেয়, যখন পুলিশ নে উইন কে পর সমর্পণ করতে অস্বীকার জানায়। পরদিনও বৌদ্ধ এবং মুসলিমদের মধ্যে সংঘর্ষ চলতে থাকে এবং কমপক্ষে এক ব্যক্তি মারা যায়।[৮] বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা রাস্তায় মোটরসাইকেল চালাতে শুরু করে, যাতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম না হওয়া পর্যন্ত ১৪০০ মুসলমান বৌদ্ধ মঠের আশ্রয় নিতে বাধ্য থাকে।
২৪ আগস্ট, সাগাইং অঞ্চলের কান্তবালুর ১৬ কিলোমিটার দক্ষিণে হানান গণ গ্রামে যখন এমন একটি গুজব ছড়ায় যে একজন মুসলিম, বৌদ্ধ মহিলাকে যৌন নির্যাতনের চেষ্টা করেছে তখন আবারও সহিংসতা শুরু হয়।[৯] স্থানীয় বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ১০০০ বৌদ্ধ উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে স্থানীয় মুসলিম মালিকানাধীন ব্যবসাপাতি এবং গ্রামের মসজিদ পুড়িয়ে দিয়ে প্রতিশোধ নিতে নেতৃত্ব দেয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন রিপোর্ট করে যে তিন ঘণ্টার দাঙ্গায় প্রধানত মুসলমানদের মালিকানাধীন ৪২টি বাড়িঘর এবং ১৫টি দোকান ছিনতাই হয়েছে। ঘটনাস্থলে একজন বন্দুকধারী ও একজন বেসামরিক লোক আহত হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা সহিংসতা দমন করতে সক্ষম ছিল না, তবে তাদের পিস্তল থেকে ফাঁকাগুলি ছোড়ে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।[৯][১০][১১]
২৯শে সেপ্টেম্বর থেকে ২২শে অক্টোবরের মধ্যে, রাখাইন রাজ্যের উপকূলীয় শহর থান্ডওয়ে থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে থাবাচিং ও নিন্থি গ্রামে রাখাইন বৌদ্ধরা হামলা চালায় এবং কামেইন মুসলিমদের ওপর আক্রমণ করে। সাতজন মুসলমান ও দুইজন বৌদ্ধকে হত্যা করা হয় এবং ৭০ থেকে ৮০টি ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। প্রায় ৫০০ জন জাতিগত কামেইন মুসলমানদেরকে তাদের বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়।[১২][১৩] রাখাইন বৌদ্ধ ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সহিংসতা আরও তীব্রতর হয়ে যায়, ১৭ ও ১৮ নভেম্বর পৃথক পৃথক ঘটনায় পাঁচ ও ছয় বছর বয়সী রাখাইন বৌদ্ধ মেয়ের মৃতদেহ পাওয়ার পর। মেয়েদের একজন ধর্ষিত হয়েছে বলে জানা যায়। [১৪]