হ্যারল্ড গিম্বলেট
১৯৩৬ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে হ্যারল্ড গিম্বলেট |
|
পূর্ণ নাম | হ্যারল্ড গিম্বলেট |
---|
জন্ম | (১৯১৪-১০-১৯)১৯ অক্টোবর ১৯১৪ বিকনলার, সমারসেট, ইংল্যান্ড |
---|
মৃত্যু | ৩০ মার্চ ১৯৭৮(1978-03-30) (বয়স ৬৩) ভারউড, ডরসেট, ইংল্যান্ড |
---|
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি |
---|
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি মিডিয়াম |
---|
ভূমিকা | ব্যাটসম্যান |
---|
|
জাতীয় দল | |
---|
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ২৯০) | ২৭ জুন ১৯৩৬ বনাম ভারত |
---|
শেষ টেস্ট | ২৪ জুন ১৯৩৯ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ |
---|
|
---|
|
বছর | দল |
১৯৩৫ - ১৯৫৪ | সমারসেট |
---|
|
---|
|
|
|
---|
|
হ্যারল্ড গিম্বলেট (ইংরেজি: Harold Gimblett; জন্ম: ১৯ অক্টোবর, ১৯১৪ - মৃত্যু: ৩০ মার্চ, ১৯৭৮) সমারসেটের বিকনলার এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সমারসেট দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন।
ব্যাটিং উদ্বোধনে নেমে দ্রুতলয়ে রান তোলার ক্ষেত্রে তার জুড়ি মেলা ভার ছিল। অভিষেক খেলাতেই তিনি এ ধারা প্রচলনে সচেষ্ট ছিলেন। ১৯৮২ সালে ক্রিকেট লেখক ও সমারসেটের ঐতিহাসিক ডেভিড ফুট তার প্রকাশিত গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, ‘সমারসেটের ইতিহাসে হ্যারল্ড গিম্বলেট অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন।’[১]
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে দ্রুততার সাথে রান তুলে স্মরণীয় হয়ে আছেন। এ পর্যায়ে ২৬৫টি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন হ্যারল্ড গিম্বলেট। এ প্রসঙ্গে যুদ্ধপরবর্তীকালে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ও পরবর্তীতে সমারসেটে দীর্ঘদিনের সংবাদ পর্যবেক্ষণকারী এরিক হিল মন্তব্য করেন যে, ‘নিঃসন্দেহে নিয়মিত উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে রেকর্ড গড়েছেন তিনি।’[২] তুলনামূলকভাবে টেস্টে তিনি খুব কমই অংশ নিয়েছিলেন। সর্বমোট তিনটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। তবে, কোনটিই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ছিল না। মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন। এ সমস্যাটুকু জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিরাজমান ছিল। ২৭ জুন, ১৯৩৬ তারিখে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। ২৪ জুন, ১৯৩৯ তারিখে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন হ্যারল্ড গিম্বলেট।
শৈশবকাল
পশ্চিম সমারসেটের কোয়ানটক হিলস এলাকার বিকনলারে হ্যারল্ড গিম্বলেটের জন্ম। পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে তার পূর্ব-পুরুষেরা কৃষিকার্যের সাথে জড়িত।[৩] তিন ভ্রাতার মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন। উইলটনের স্থানীয় বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। এরপর ডেভন সীমান্তবর্তী এলাকায় বেতনভুক ওয়েস্ট বাকল্যাণ্ড স্কুলে অধ্যয়ন করেছিলেন।[৪]
বিদ্যালয়ে জীবনে সফলতম ক্রিকেটার হিসেবে স্বীকৃতি পান। এ সময়ে ওয়াচেট ক্রিকেটে ক্লাবের সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৩১ সালে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। ঐ বছরের আগস্টে প্রথমবারের মতো উল্লেখ করার মতো ইনিংস খেলেন। ওয়াচেটের সদস্যরূপে ওয়েলিংটনের বিপক্ষে ১৬০ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় অগ্রসর হয় তার দল। দলীয় সংগ্রহ ৩৭/৭ থাকাবস্থায় মাঠে নামেন তিনি। অপর কিশোর ব্যাটসম্যান অ্যালান পিয়ার্সের সাথে জুটি গড়েন। পিয়ার্স ৯১ রান তুললেও জয়সূচক রান করেন তিনি।[৫] এক বছর পর বাছ-বিচারহীন শৌখিন দল সমারসেট স্ট্রাগলার্সের সদস্যরূপে পশ্চিম ইংল্যান্ডে খেলতে থাকেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিদ্যালয়ের সাবেক ও বিভিন্ন যোগ্যতার অধিকারী খেলোয়াড়সহ কয়েকজন শৌখিন খেলোয়াড় নিয়ে দলটি গঠন করা হয়েছিল। শৌখিন খেলোয়াড়েরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব-পর্যন্ত সমারসেট পক্ষে খেলে দলটিকে টিকিয়ে রেখেছিলেন। স্ট্রাগলার্সের পক্ষে প্রথম খেলায় ওয়েলিংটন স্কুলের বিপক্ষে ৭৫ মিনিটে ১৪২ রান তুলেছিলেন হ্যারল্ড গিম্বলেট।[৬]
কাজের সন্ধানে হ্যারল্ড গিম্বলেট সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে লন্ডনে অবস্থান করেন। কিন্তু নাগরিক জীবনের সাথে একাত্মতা পোষন না করায় স্ব-গৃহে প্রত্যাবর্তন করতে বাধ্য হন। ওয়াচেট ক্লাবে ক্রিকেট খেলতে থাকেন। সমারসেট কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের প্রথিতযশা খেলোয়াড়, শহরের দর্জি ও ওয়াচেট ক্রিকেট ক্লাবের অন্যতম উপদেষ্টা ডব্লিউ. জি. পেনির পরামর্শক্রমে কাউন্টি দলে যাচাই-বাছাইয়ের খেলায় অংশ নেন। তবে তার মধ্যে উদ্যমতা ও ব্যাটিংয়ের জড়তা লক্ষ্য করা গিয়েছিল।[৭] এছাড়াও কিছু সূত্রে জানা যায় যে, শীর্ষসারির খেলোয়াড়দের বিপক্ষে খেলতে তিনি ইতস্ততাবোধ করছিলেন।
তাসত্ত্বেও, ১৯৩৫ সালের শুরুতে গিম্বলেটকে টানটনের কাউন্টি গ্রাউন্ডে দুই সপ্তাহের অনুশীলনীমূলক খেলায় অংশগ্রহণের জন্যে আমন্ত্রণ বার্তা পাঠানো হয়েছিল। আশানুরূপ তেমন সফলতা না পেলেও তাকে সরাসরি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলার জন্যে অনুমতি দেয়া হয়।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
মে, ১৯৩৫ সালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নিয়েই বাজিমাৎ করেন। এ প্রসঙ্গে ১৯৭৯ সালে উইজডেনে উল্লেখ করা হয় যে, ‘তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুটা এতোটাই দূর্দান্ত ছিল যে কোন ঔপন্যাসিক তাঁর নায়কের অংশগ্রহণে বইয়ের বারোটা বাজিয়ে ছেড়ে দেবেন।’[৮]
সমারসেটে দুই সপ্তাহের যাচাই-বাছাইকাল শেষ হবার পূর্বেই তাকে বলা হয় যে, প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটার হিসেবে তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। ক্লাবের সম্পাদক ও সাবেক অধিনায়ক জন ড্যানিয়েল বলেন যে, ‘আমরা আপনাকে ৩৫ সিলিং ও বাস ভাড়া দেব। ভয় পাবেন না, আপনি এর চেয়ে বেশি উপযুক্ত নন।’[৯] ড্যানিয়েলের পুত্র গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, সমারসেটের পেশাদার খেলোয়াড়েরাও কাউন্টি দলে তার অন্তর্ভুক্ত করার বিপক্ষে অবস্থান নেয়।[১০] এছাড়াও, সমারসেটের আর্থিক দূরাবস্থা বিরাজমান ছিল। সম্ভবতঃ কাউন্টি ক্লাবটি আরও একজন পেশাদার খেলোয়াড়ের ব্যয়ভার বহনে সক্ষম ছিল না।
গিম্বলেটের অনুশীলনীর শেষ শুক্রবারে সমারসেট কর্তৃপক্ষ পরদিন ফ্রোমে অনুষ্ঠিত এসেক্সের বিপক্ষে অসুস্থ শৌখিন খেলোয়াড়ে লরি হকিন্সের বিকল্প হিসেবে তাকে দলে অন্তর্ভুক্ত করার চিন্তা করে। গিম্বলেটকে ফ্রোমে চলে আসার কথা বলা হয়। ড্যানিয়েল উইকেট-রক্ষক ওয়ালি লাকেসকে ব্রিজওয়াটার থেকে তাকে আনার জন্যে গাড়ি দিয়ে পাঠান। গিম্বলেট বাস হাতছাড়া করলেও লরিতে চড়ে রওয়ানা দেন। সমারসেট টসে জয়লাভ করে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। ৩৫/৩ হয় ও মধ্যাহ্নভোজনের বিরতিতে ১০৫/৫ হয়। বিরতির পরপরই ডিকি বারো আউট হন। ১০৭/৬ হবার পর তিনি আর্থার ওয়েলার্ডের সাথে যোগ দেন।[১১]
তৃতীয় বলে প্রথম রান তিনি। এর পরপরই লেগ ব্রেক ও গুগলি বোলার পিটার স্মিথের ওপর চড়াও হন। এক ওভারে ১৫ রান তোলেন তিনি। মাত্র ২৮ মিনিটে ৩৩ বলে ছক্কা মেরে ৫০ রানে পৌঁছেন। ওয়েলার্ড তার সাথে তাল মেলাতে পারেননি ও লাকেসের বলে আউট হন। আক্রমণধর্মী খেলোয়াড়ে বিল অ্যান্ড্রুজ গিম্বলেটের সাথে খেলতে নামেন। মাত্র ৬৩ মিনিটে সেঞ্চুরি করেন তিনি। এটিই ঐ মৌসুমের দ্রুততম সেঞ্চুরি ছিল। উইকেটে থাকাবস্থায় তিনি ১৩০ রান যুক্ত করেন। তিন ছক্কা ও ১৭ চারের মারে ৮০ মিনিটে ১৭৫ বলে ১২৩ রান তুলে ক্ষান্ত হন।[১২] সমারসেটে দল ইনিংস ব্যবধানে খেলায় জয়লাভ করেছিল।[১৩]
এ ইনিংসের কল্যাণে হ্যারল্ড গিম্বলেট তাৎক্ষণিকভাবে তারকা খেলোয়াড়ে পরিণত হন। ফুটের জীবনীতে দেখা যায় যে, ফ্লিট স্ট্রিটের লেখক ও চিত্রকারগণ বিকনলারে গিম্বলেটের খামারবাড়িতে চলে যেতেন। সাবেক ক্রিকেটার জ্যাক হবস সংবাদপত্রের কলামে গিম্বলেটের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। তবে, সতর্ক করে দেন যে, এ ধরনের সাফল্য টিকিয়ে রাখা বেশ দুঃসাধ্য।[১৪]
পরের খেলায় দলে তার ঠাঁই হয়। আরেক নিয়মিত খেলোয়াড়ের আঘাতের কারণে লর্ডসে মিডলসেক্সের বিপক্ষে খেলতে নামেন। দ্বিতীয় ইনিংসে আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫৩ রান তুলে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকে পরিণত হন। আঘাতের কারণে পরের খেলায় অংশ নিতে পারেননি তিনি। মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে দলে যোগ দেন হ্যারল্ড গিম্বলেট। স্বল্প সাফল্য পেলেও মিডিয়াম পেস বোলিং করে কিছুটা সফলতার স্বাক্ষর রাখেন তিনি। বাথের রিক্রিয়েশন গ্রাউন্ডে গ্লুচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে ৪/১০ পান। এটিই পরবর্তীকালে তার প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনে সেরা বোলিং পরিসংখ্যান হিসেবে রয়ে যায়।[১৫] ১৯৩৬ সালের উইজডেন সংস্করণে গিম্বলেটের প্রথমে মৌসুম সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়। এতে লেখা হয় যে, ‘শুরুরদিকের প্রতিশ্রুতিশীলতার স্বাক্ষর ধরে রাখতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
১৯৩৬ সালের শুরুতে কয়েক সপ্তাহ মাঝারিমানের খেলা উপহার দিয়েছিলেন হ্যারল্ড গিম্বলেট। দলের নিয়মিত উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান জ্যাক লি সমারসেট দল ত্যাগ করে মিল হিল স্কুলে কোচ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ফলশ্রুতিতে, মৌসুমের প্রথম খেলায় সফররত ভারতীয় একাদশের বিপক্ষে সমারসেটের ব্যাটিং উদ্বোধনের জন্যে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। খেলায় তিনি ১০৩ ও অপরাজিত ৪৬ করলে ফলো-অনের কবলে পড়া ভারতীয় একাদশ নয় উইকেটে পরাজিত হয়েছিল।[১৬] এর পরপরই ওল্ড ট্রাফোর্ডে ল্যাঙ্কাশায়ারের বিপক্ষে খেলতে নামেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ৯৩ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬০ রান তুলে অপরাজিত থাকেন। এ পর্যায়ে নিচেরসারির ব্যাটসম্যানদের সহায়তায় ল্যাঙ্কাশায়ারের নিশ্চিত বিজয়কে আটকিয়ে দেন।[১৭] তখন তিনি ২০০-এর অধিক গড়ে রান তুলেছিলেন। এক সপ্তাহ পর তুলনামূলকভাবে দূর্বল দল নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে তৃতীয় সেঞ্চুরি করেন।[১৮] এ সাফল্যের প্রেক্ষিতে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট দল বাছাইয়ের উদ্দেশ্য নিয়ে লর্ডসে নর্থ ও সাউথের মধ্যে খেলায় আয়োজন করা হয়। দলগুলোয় টেস্ট খেলোয়াড় ও তরুণ খেলোয়াড়ের সংমিশ্রণ ছিল। খেলার একমাত্র ইনিংসে মাত্র চার রান তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন হ্যারল্ড গিম্বলেট।[১৯] তাসত্ত্বেও, ১৯৩৬ সালে প্রথম টেস্ট খেলার জন্যে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়। ইয়র্কশায়ারের আর্থার মিচেলের সাথে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যাটিং উদ্বোধনের জন্যে তাকে মনোনীত করা হয়।
স্বল্পকালীন টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনে প্রথম টেস্টেই সর্বাপেক্ষা অধিক সফলতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন তিনি। নিম্নমূখী রানের খেলায় ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ড দল প্রথম ইনিংসে ১৩ রানে পিছিয়েছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ৬৭ রান তুলে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হন ও দলের বিজয়ে প্রভূতঃ ভূমিকা পালন করেন।[২০] ১০৭ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় অগ্রসর হয় তার দল। উইজেডেনের ভাষ্যমতে, ‘পোতানো উইকেট ও বাজে আবহাওয়ায় এ রান তোলা বেশ দুরূহ ছিল।[২১] তবে, গিম্বলেট উইকেটে পেস খুঁজে পান, আক্রমণাত্মকধর্মী মেজাজ ও হুক সহযোগে তিনি এগিয়ে যান। ৩৭ রান করা মরিস টার্নবুলের সাথে ১০০ মিনিটে জয়সূচক রান তুলেন।’
ইংরেজ ক্রিকেট মৌসুমের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ লর্ডসে জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের মধ্যকার খেলার মাধ্যমে ইংরেজ ক্রিকেটে খেলোয়াড় অন্তর্ভুক্তি নির্ভর করতো। প্লেয়ার্সের পক্ষাবলম্বন করে খেলতে নামেন। কিন্তু তিনি মাত্র তিন ও এক রান তুলেন।[২২] তাসত্ত্বেও, ওল্ড ট্রাফোর্ডের দ্বিতীয় টেস্ট খেলার জন্যে তাকে ইংরেজ দলে রাখা হয়। এবার টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটা কেন্টের ব্যাটসম্যান আর্থার ফাগের সাথে ব্যাটিং উদ্বোধনে নামেন। এবারো ইংল্যান্ডের একমাত্র ইনিংসে মাত্র নয় রান তুলে ফেরৎ যেতে হয় তাকে।[২৩] ১৯৩৬ সালের শেষদিকে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড গমনের উদ্দেশ্যে ইংরেজ দল চূড়ান্ত করা হয়। আগস্টের শুরুতে ঘোষিত ইংরেজ দলটিতে গিম্বলেটকে বাদ দেয়া হয়। তার পরিবর্তে ভারতের বিপক্ষে তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশগ্রহণকারী চার্লস বার্নেটকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়। এছাড়াও, তরুণ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে আর্থার ফাগকে দলে রাখা হয়। ১৯৩৬ মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে গিম্বলেটের খেলার মান নিচেরদিকে চলে যেতে থাকে। মে মাসের শুরুতে যেখানে ব্যাটিং গড় ২০০ ছিল, সেখানে মৌসুম শেষে এ গড় ৩২.৮১-এ এসে দাঁড়ায়। এ গড়টি আর্থার ফাগ ও চার্লি বার্নেটের গড়ের চেয়ে অর্ধ-ডজন কম ছিল।[২৪] উইজডেনে মন্তব্য করা হয় যে, প্রথম টেস্টের দূর্দান্ত ৬৭ রানের ইনিংস বাদে উল্লেখ করার মতো তিনি কিছুই করতে পারেননি।[২৫] এতে আরো বলা হয় যে, স্লিপ অঞ্চলে তার ফিল্ডিং আন্তর্জাতিক মানের চেয়ে নিম্নমানের। স্পষ্টতঃ তিনি ইংল্যান্ডের খেলোয়াড় হবার উপযোগী নন। এক বছর পূর্ব থেকেই সমালোচনা সৃষ্টি হবার পুণরাবৃত্তি ঘটিয়ে উল্লেখ করা হয় যে, পর্যাপ্ত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সোজা-সাপ্টা ব্যাট চালিয়েছেন; সঠিক বল নির্বাচন করতে না পারার ব্যর্থতাও রয়েছে তার; ফলে, লেগ-সাইডে ক্যাচ দিচ্ছেন। এখনো অনভিজ্ঞতার খেসারত গুনছেন তিনি। কেবলমাত্র নিজ কাউন্টিতে তাকে খেলতে মানায়।[২৫]
ডেভিড ফুটের গিম্বলেট সম্পর্কে আত্মজীবনীমূলক রচনায় ১৯৩৬ সালে অন্যতম সফল মৌসুমের কথা উল্লেখের পাশাপাশি অসুস্থতার ইঙ্গিত তুলে ধরা হয় যা পরবর্তীকালে গুরুতর প্রভাব ফেলে। ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টে সহজ ধরনের ক্যাচ হাতছাড়া হবার পর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এরপর চূড়ান্ত টেস্ট থেকে স্বেচ্ছায় নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি ব্যক্ত করেন যে, ‘যাক অবশেষে দায় মুক্তি পেলাম।’[২৬] ফুট লিখেছেন যে, লর্ডস ও ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্ট তার জন্যে বেশ বিরক্তিকর ছিল। এরফলে ভবিষ্যতে আর দলে নির্বাচিত না হবার সম্ভাবনায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।[২৭]
১৯৩৬, ১৯৩৭ ও ১৯৩৮ সালে বেশ ভালো খেলেন। তার বয়সী লিওনার্ড হাটনকে টেস্টে নেয়া হলেও তিনি ঐ সময় পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন না।[২৮] উভয় মৌসুমে খুব সহজেই সহস্র রানের কোটা স্পর্শ করেন ও মাঝে-মধ্যেই দূর্দান্ত ইনিংস খেলতেন। ১৯৩৭ সালে ১৫০ মিনিটে ১৪১ রান করেন। সমারসেটের ওয়লসে হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে ঐ ইনিংসে নয়টি ছক্কা ও ষোলটি চারের মার ছিল।[২৯] ১৯৩৮ সালে উইজডেনে উল্লেখ করা হয় যে, পূর্ববর্তী মৌসুমের তুলনায় তিনি আরও রক্ষণাত্মক খেলায় সচেষ্ট ছিলেন। রান সংগ্রহের দিক দিয়েও দলীয় সঙ্গী ও উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান দুই হাজারের অধিক রান তুলে তাকে পিছনে ফেলে দেন।[২৮] ১৯৩৮ সালে কয়েকটি খেলায় চার নম্বরে ব্যাটিং নামলে বার্টি বাস লি’র সাথে ব্যাটিং উদ্বোধনে নামতেন।
১৯৩৯ সালের শুরুতে আবার নিজের প্রতিভা বিকাশে অগ্রসর হন। এ সফলতা পূর্বে আর করেননি। সমারসেটের পক্ষ প্রথম সাত খেলায় ৯০৫ রান তুলেন। উপর্যুপরী পাঁচটি খেলায় সেঞ্চুরি করেন তিনি।[৩০] এরফলে টেস্ট দলে তাকে ফিরিয়ে আনা হয়। লডর্সে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে লেন হাটনের সাথে ব্যাটিং উদ্বোধনে নামেন। ২২ ও ২০ রান তুলেন তিনি।[৩১] দ্বিতীয় ইনিংসে জয়ের জন্যে ইংল্যান্ডের দ্রুতলয়ে রান তোলার প্রয়োজন পড়ে। এ পর্যায়ে ফাস্ট বোলার লেসলি হিল্টনের প্রথম দুই বলেই চার ও ছয় হাঁকান।[৩২] এরপর তাকে টেস্ট দলে রাখা হয়নি। তবে, লর্ডসে প্লেয়ার্সের সদস্যরূপে জেন্টলম্যানের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৫২ রান তুলেছিলেন।[৩৩] ঐ মৌসুমে ৪০.৮৯ গড়ে ১৯২২ রান তুলেন।[২৪]
বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রয়্যাল এয়ার ফোর্সে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অংশ নেন। প্লাইমাউথ ও ব্রিস্টলের ন্যায় মারাত্মকভাবে বোমাবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত শহরে তাকে দায়িত্ব পালন করতে হয়েছিল।[৩৪]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আট মৌসুম সমারসেট দলের প্রধান মেরুদণ্ডের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন হ্যারল্ড গিম্বলেট। আক্রমণাত্মক পন্থা অবলম্বনের পাশাপাশি শট নির্বাচনেও আরও সচেষ্ট ছিলেন। তবে, খেলার প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকানোর অভ্যাস খেলোয়াড়ী জীবনের শেষমুহুর্ত পর্যন্ত বজায় রেখেছিলেন। এছাড়াও, তুলনামূলকভাবে ব্যাটিংয়ে দূর্বল থাকা সমারসেট দলে জ্যেষ্ঠ ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব যথাসম্ভব পালন করেছিলেন। ১৯৪৬ সালে সমারসেট দল ৫০ বছরেরও অধিক সময়ের মধ্যে সেরা সফলতা অর্জন করে। ১৯৪৭ সালে ইনিংস প্রতি ৪৯.৯২ রান তুলেন। এটিই তার সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে এক মৌসুমে সর্বাধিক ব্যাটিং গড় ছিল।[২৪] এছাড়াও সাতটি সেঞ্চুরি করেন যা যে-কোন মৌসুমের তুলনায় অধিক ছিল তার। টানটনে মিডলসেক্সের বিপক্ষে ২৩১ রান তুলেন। এটিই তার প্রথম দ্বিশতক ছিল। উইজেডেনের ভাষায়, সমারসেট ব্যাটসম্যানের নির্দয় আক্রমণবিশেষ।[৩৫][৩৬]
১৯৪৭ সালে তার ব্যাটিং একটু নিচেরদিকে চলে যায়। তবে, ১৯৪৮ সালে সমারসেটের ব্যাটিং দৃশ্যতঃ তার রানের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল ছিল। ঐ গ্রীষ্মে দলের চারটি সেঞ্চুরির সবকটিই তার ব্যাট থেকে আসে। নিজস্ব ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। এ পর্যায়ে ৩১০ রানের ঐ ইনিংসটি সমারসেটের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস হিসেবে স্বীকৃত ছিল। ইস্টবোর্নের সাফ্রন্সে সাসেক্সের বিপক্ষে এ রানটি তুলেন।[৩৭] সমারসেটের পূর্বতন ২৯২ রানের ব্যক্তিগত রেকর্ডটি ভিক্টোরীয় যুগের প্রয়াত লিওনেল প্যালেরিট গড়েছিলেন। গিম্বলেট তার আত্মজীবনীকার ডেভিড ফুটকে আত্মজীবনীর এটিই প্রধান আকর্ষণ বলে জানিয়েছিলেন। তিনি ইস্টবোর্নে সাসেক্সের খেলোয়াড় জেমস ল্যাংগ্রিজকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন যে, একজন শৌখিন খেলোয়াড় হিসেবে রেকর্ড বইয়ের পাতায় আমাদের কাউন্টির নাম উল্লেখ করা থাকবে।[৩৮] গিম্বলেট এ অর্জনকে চিত্রিত করে রাখতে প্রস্তাবনা দেন। কিন্তু, সমারসেটের সচিব এ চিন্তাধারাকে নাকচ করে দেন। ‘আমি মনে করেছিলাম যে সমারসেটের পক্ষে খেলোয়াড়ী জীবন শেষ হবার পথে। আমি বেশ মনঃকষ্ট পাই।’[৩৯]
এরপরও তিনি থেমে থাকেননি। ১৯৪৯ সালে তিনি তার খেলোয়াড়ী জীবনে প্রথমবারের মতো দুই হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করতে সক্ষম হন। ঐ সময়ে তার সংগৃহীত ২০৯৩ রান সমারসেটের নতুন রেকর্ড ছিল।[২৪] এছাড়াও, খেলোয়াড়ী জীবনে প্রথমবারের মতো এক খেলায় উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন। টানটনে হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে ১১৫ ও অপরাজিত ১২৭ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।[৪০] উইজডেন ঐ মৌসুমে তার অবদান সম্পর্ক মন্তব্য করে যে, ‘তাঁর অনুভূতি এমন ধরনের ছিল যে, সবকিছু শেষ হয়ে গেলেও তাঁর খেলায় কোন প্রভাব ফেলবে না।’[৪১]
১৯৫০ সালেও এর পুণরাবৃত্তি ঘটে। তবে, মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে এর ব্যতয় ঘটে। সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে ইংল্যান্ড দল টেস্ট সিরিজে পিছিয়ে পড়ে। দুই অখ্যাত স্পিন বোলার সনি রামাদিন ও আল্ফ ভ্যালেন্টাইনের বলে কুপোকাত হয়ে পড়ে ইংরেজ দল। লর্ডসের দ্বিতীয় টেস্টে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হবার পর ইংল্যান্ড দল নির্বাচকমণ্ডলী ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্টে অংশ নেয়ার জন্যে তাকে মনোনীত করে। গত ১১ বছরে এটিই হ্যারল্ড গিম্বলেটের প্রথম টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল। ফুটের মতে, এ সময় তিনি শুধু সমারসেটেই নন; বরং ইংল্যান্ডের সর্বত্র জনপ্রিয় ছিলেন।[৪২] কিন্তু খেলা শুরুর পূর্বে ঘাড়ের ব্যথায় মারাত্মকভাবে কাবু হয়ে পড়েন তিনি। পেনিসিলিন প্রয়োগ করেন ও নটিংহাম গমন করেন। পরবর্তীতে খেলা থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন ও আর খেলায় অংশগ্রহণের জন্য মনোনীত হননি।
১৯৫০ মৌসুম শেষে প্রথমবারের মতো কমনওয়েলথ দলের সদস্যরূপে বিদেশ গমন করেন। ভারত ও শ্রীলঙ্কায় প্রতিনিধিত্বমূলক পাঁচটি খেলায় ব্যাটিং উদ্বোধনে নেমেছিলেন তিনি। এ সফরে কিছুটা সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। একটি শতরানের ইনিংস খেলেন। সমারসেটের সদস্যরূপে থাকাকালে ৫০টি সেঞ্চুরির এটিই একমাত্র ঘটনা ছিল।[৪৩] তিনি স্বগৃহে অসুস্থ ও অসুখী ছিলেন। দলে অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে তিনি আশ্চর্যান্বিত হয়ে পড়েন। তবে এটি সম্পূর্ণই মনোগত বিষয় ছিল বলে আত্মজীবনীতে দাবী করা হয়।[৪৪] ১২ কেজি ওজন হারান। ১৯৫১ সালের পর রান সংগ্রহের জন্যে তাকে আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে হয়। জুলাইয়ে ক্রিকেট জগৎ থেকে লম্বা বিরতি নিতে বাধ্য হন। এরপর কিছুটা সফল হন তিনি।
১৯৫২ সালে সমারসেট কর্তৃপক্ষ হ্যারল্ড গিম্বলেটকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের খেলার জন্যে মনোনীত করে। গ্লুচেস্টারশায়ারের সাথে ব্যাংক ছুটিতে খেলা আয়োজনের কথা থাকলেও নিজ এলাকা গ্লাসটনবারিতে নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে খেলাটিত অনুষ্ঠিত হয়।[৪৫] ঐ খেলায় গিম্বলেট সেঞ্চুরি করেন। রান সংগ্রহের দিক দিয়ে ১৯৫২ সালে এটি তার সেরা ইনিংস ছিল।[৪৬] সকল খেলায় অংশ নিয়ে ৩৯.৫১ গড়ে ২,১৩৪ রান তুলেন।[২৪] টানটনে ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে সমারসেটের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে দুইবার এক খেলায় সেঞ্চুরির সন্ধান পান। ১৪৬ ও ১১৬ রান তুললেও খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল।[৪৭]
১৯৫২ সালটি গিম্বলেটের জন্যে দারুণ মৌসুম ছিল। তবে, দলের জন্য দূর্বলমানের ছিল। বেশ কয়েক বছর কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে পয়েন্ট তালিকার মাঝামাঝি স্থানে অবস্থান করলেও ১৯৫২ সালে নিচেরদিকে চলে যায় সমারসেট দল। এ স্থানে চার বছর অবস্থান করে। তবে, গিম্বলেট নিজস্ব ক্রীড়াশৈলীতে ভাস্বর ছিলেন স্বমহিমায়। ১৯৫৩ সালের উইজডেন সংস্করণে টম গ্রেভেনি, ডেভিড শেপার্ড, স্টুয়ার্ট সারিজ ও ফ্রেড ট্রুম্যানের সাথে তাকেও অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত করা হয়।[৪৮]
১৯৫৩ সালে চ্যাম্পিয়নশীপের ১৯টি খেলায় পরাজিত হয় সমারসেট দল। ১৯৫২ সালের তুলনায় যা আরো বেশি। গিম্বলেট ঠিকই তার খেলার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিলেন। তবে, আঘাতের কারণে তিনটি খেলার বাইরে থাকতে হয় তাকে। এরফলে, প্রতিপক্ষীয় দলের আরও সুবিধা হয়েছিল। উইজেডেনের ভাষ্য মতে, দলীয় সঙ্গীদের কাছ থেকে তিনি খুব কমই সহযোগিতা পেয়েছিলেন।[৪৯] টানটনে নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে অপরাজিত ১৬৭ রানের ইনিংসটি তার খেলোয়াড়ী জীবনের ৫০তম শতরানের ইনিংস ছিল।[৫০] ১৯৫৩ মৌসুমের শেষদিকে হ্যাস্টিংস ও কিংস্টনে উৎসবমুখর ক্রিকেটে অংশ নেন। উইজডেন মন্তব্য করে যে, ১৯৫৪ সালে সমারসেট কর্তৃপক্ষ তার সাথে আরও পাঁচ বছরের চুক্তির কথা ঘোষণা করে।[৪৯]
অবসর
প্রথম-শ্রেণীর খেলার বাইরে দক্ষিণ ওয়েলসভিত্তিক এব ভ্যাল ক্রিকেট ক্লাবে পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে খেলতেন। মিলফিল্ড স্কুলের প্রধানশিক্ষক ও তার সাবেক সমারসেট অধিনায়ক জ্যাক মেয়ারের বরাবরে চাকুরীর জন্যে আবেদন করেন। ডরসেটের পক্ষে কয়েকটি মাইনর কাউন্টিজের খেলায় অংশ নেন। মিলফিল্ডে থাকাকালে গিম্বলেট ক্রিকেট কোচ হিসেবে অংশ নিতেন, বিদ্যালয়ের দোকান পরিচালনা করতেন ও বিদ্যালয়কে ঘিরে মিনিবাসের চালকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।[৫১] শেষদিকে, তার মানসিক ও শারীরক সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। তিনি বাতরোগে আক্রান্ত হন। অবসরকালীন মাইনহেডের বসবাস করতে থাকেন। কোচিংয়ের সাথে যুক্ত থেকে সমারসেট থেকে আর্থিক সহযোগিতার সাথে জড়িত থাকেন। তবে, তার আচরণ অনেক সময় খারাপ হতে থাকে। এ ধরনের ঘটনায় তার পূর্বেকার সুনাম অনেকাংশেই কমতে থাকে।[৫১]
মৃত্যু পূর্বকালীন তিনি মাইনহেড থেকে ডরসেটের ভারউড এলাকায় ভাড়া থাকেন। চিকিৎসা নির্দেশিকা থাকা ঔষধের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে হ্যারল্ড গিম্বলেটের দেহাবসান ঘটে।[৫২]
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন তিনি। মার্গারিটা (রিটা) নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। এ দম্পতির এক পুত্রসন্তান ছিল।
তথ্যসূত্র
- ↑ Foot, p. 1.
- ↑ "Counties: Somerset"। Barclays World of Cricket (1986 সংস্করণ)। Book Club Associates। পৃষ্ঠা 448।
- ↑ Foot, p. 41.
- ↑ Foot, pp. 43–48.
- ↑ Foot, pp. 53–54.
- ↑ Foot, p. 53.
- ↑ Foot, pp. 56–60.
- ↑ Obituary, 1978। Wisden Cricketers' Almanack (1979 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 1077–1079। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০১৪।
- ↑ Foot, p. 60.
- ↑ Foot, p. 62.
- ↑ Foot, pp. 64–66.
- ↑ Foot, pp. 66–68.
- ↑ "Somerset v Essex"। www.cricketarchive.com। ১৮ মে ১৯৩৫। সংগ্রহের তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯।
- ↑ Foot, p. 68.
- ↑ "Somerset v Gloucestershire"। www.cricketarchive.com। ২৯ জুন ১৯৩৫। সংগ্রহের তারিখ ৪ অক্টোবর ২০০৯।
- ↑ "Somerset v Indians"। www.cricketarchive.com। ৯ মে ১৯৩৬। সংগ্রহের তারিখ ৮ অক্টোবর ২০০৯।
- ↑ "Lancashire v Somerset"। www.cricketarchive.com। ১৬ মে ১৯৩৬। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০০৯।
- ↑ "Northamptonshire v Somerset"। www.cricketarchive.com। ২৩ মে ১৯৩৬। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০০৯।
- ↑ "South v North"। www.cricketarchive.com। ১৩ জুন ১৯৩৬। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০০৯।
- ↑ "England v India"। www.cricketarchive.com। ২৭ জুন ১৯৩৬। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০০৯।
- ↑ "India in England"। Wisden Cricketers' Almanack (1937 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 24।
- ↑ "Gentlemen v Players"। www.cricketarchive.com। ২৭ জুন ১৯৩৬। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০০৯।
- ↑ "England v India"। www.cricketarchive.com। ২৫ জুলাই ১৯৩৬। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০০৯।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "First-class Batting and Fielding in Each Season by Harold Gimblett"। www.cricketarchive.com। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০০৯।
- ↑ ক খ "Somerset Matches"। Wisden Cricketers' Almanack (1937 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 224।
- ↑ Foot, p. 82.
- ↑ Foot, p. 83.
- ↑ ক খ "Somerset in 1938"। Wisden Cricketers' Almanack (1939 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 485।
- ↑ "Somerset v Hampshire"। www.cricketarchive.com। ২১ জুলাই ১৯৩৭। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০০৯।
- ↑ "Somerset in 1939"। Wisden Cricketers' Almanack (1940 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 426।
- ↑ "England v West Indies"। www.cricketarchive.com। ২৪ জুন ১৯৩৯। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০০৯।
- ↑ "West Indies in England in 1939"। Wisden Cricketers' Almanack (1940 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 197।
- ↑ "Gentlemen v Players"। www.cricketarchive.com। ৭ জুলাই ১৯৩৯। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০০৯।
- ↑ Foot, pp. 94–97.
- ↑ "Somerset v Middlesex"। www.cricketarchive.com। ১৩ জুলাই ১৯৪৬। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০০৯।
- ↑ "Somerset in 1946"। Wisden Cricketers' Almanack (1947 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 404।
- ↑ "Sussex v Somerset"। www.cricketarchive.com। ১৮ আগস্ট ১৯৪৮। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০০৯।
- ↑ Foot, p. 102.
- ↑ Foot, p. 103.
- ↑ "Somerset v Hampshire"। www.cricketarchive.com। ২১ মে ১৯৪৯। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০০৯।
- ↑ "Somerset in 1949"। Wisden Cricketers' Almanack (1950 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 476।
- ↑ Foot, p. 104.
- ↑ "Madhya Pradesh President's XI v Commonwealth XI v Hampshire"। www.cricketarchive.com। ১৫ ডিসেম্বর ১৯৫০। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০০৯।
- ↑ Foot, p. 105.
- ↑ Foot, p. 107.
- ↑ "Somerset v Northamptonshire"। www.cricketarchive.com। ২৬ জুলাই ১৯৫২। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০০৯।
- ↑ "Somerset v Derbyshire"। www.cricketarchive.com। ১২ জুলাই ১৯৫২। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০০৯।
- ↑ "Five Cricketers of the Year"। Wisden Cricketers' Almanack (1953 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 65–75।
- ↑ ক খ "Somerset in 1953"। Wisden Cricketers' Almanack (1954 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 518।
- ↑ "Somerset v Northamptonshire"। www.cricketarchive.com। ১৮ জুলাই ১৯৫৩। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০০৯।
- ↑ ক খ Foot, pp. 112–119.
- ↑ Foot, David (৯ জুন ২০০৩)। "Tale of a tormented genius"। CricInfo। সংগ্রহের তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০০৯।
আরও দেখুন
গ্রন্থপঞ্জি
বহিঃসংযোগ