হিমেজি দুর্গ (姫路城,হিমেজি-জো) হল জাপানেরহিয়োগো প্রশাসনিক অঞ্চলেরহিমেজি-তে পাহাড়ের উপর নির্মিত একটি দুর্গ। সামন্ততান্ত্রিক যুগে নির্মিত, উৎকৃষ্ট প্রতিরক্ষা-ব্যবস্থা সংবলিত ৮৩ টি ভবনের সমন্বয়ে গঠিত দুর্গটিকে প্রথাগত জাপানি দুর্গ-স্থাপত্যের শ্রেষ্ঠ নমুনা হিসেবে গণ্য করা হয়।[৮] উজ্জ্বল সাদা রঙ এবং গঠনগতভাবে জনমানসে উড্ডয়নোন্মুখ পাখির সাথে সাদৃশ্য থাকার জন্য দুর্গটিকে হাকুরো-জো বা শিরাসাগি-জো (সাদা সারস দুর্গ)-ও বলা হয়।[৭][৯]
আকামাৎসু নোরিমুরা কর্তৃক ১৩৩৩ খ্রিঃ হিমেয়ামা পাহাড়ের উপর একটি কেল্লা নির্মাণের মাধ্যমে হিমেজি দুর্গের দীর্ঘ ইতিহাসের সূচনা হয়। ১৩৪৬ খ্রিঃ কেল্লাটি ধ্বংস করে হিমেয়ামা দুর্গ নাম দিয়ে পুনর্নির্মাণ করা হয়। এর দুই শতাব্দী বাদে ১৫৮১ খ্রিঃ হিমেজি দুর্গ নাম দিয়ে এর পরিবর্ধিত সংস্করণ নির্মিত হয়। এই সময়ে নির্মাতা তোয়োতোমি হিদেয়োশি দুর্গের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সাধন করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল একটি তিনতলা কীপ। ১৬০০ খ্রিঃ তোকুগাওয়া ইএআসুসেকিগাহারার যুদ্ধে সাহায্যের জন্য সহযোগী ইকেদা তেরুমাসাকে দুর্গটি উপহার দেন। ইকেদা ১৬০১ থেকে ১৬০৯ খ্রিঃ পর্যন্ত দুর্গটির আমূল সংস্কার করেন এবং একটি সুগঠিত দুর্গনগরী নির্মাণ করেন।[৪] পরবর্তীতে ১৬১৭ ও ১৬১৮ খ্রিঃ হোন্দা তাদামাসা এই দুর্গে আরও অনেক ভবন যোগ করেন।[৬] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিমেজি নগরে বোমাবর্ষণ ও ১৯৯৫ খ্রিঃ হান্শিন্ মহাভূকম্প ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহ্য করে ৪০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে হিমেজি দুর্গ টিকে আছে।[৪][৩][১০]
হিমেজি দুর্গ জাপানের অন্যতম বৃহত্তম দুর্গ ও দেশের সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় পর্যটনস্থলগুলির একটি। ১৯৯৩ খ্রিঃ জাপান থেকে নথিভুক্ত প্রথম ইউনেস্কোবিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানসমূহের অন্যতম ছিল এই দুর্গ।[৩] দুর্গের মাঝখানের পরিখা-বেষ্টিত এলাকাটিকে বিশেষ ঐতিহাসিক অঞ্চলের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, এবং দুর্গের অন্তর্গত পাঁচটি স্থাপত্যকর্মকে জাতীয় সম্পদ হিসেবেও গণ্য করা হয়।[৬][১১]মাৎসুমোতো দুর্গ ও কুমামোতো দুর্গের সাথে হিমেজি দুর্গকে জাপানের তিনটি প্রধান দুর্গের অন্যতম বলে গণ্য করা হয়।[১২] দুর্গের ভবনগুলি সংরক্ষণের জন্য বহু বছর ব্যাপী সংস্কারের পর ২০১৫ খ্রিঃ ২৭শে মার্চ আবার জনগণের দর্শনার্থে খুলে দেওয়া হয়েছে।[১৩]
ইতিহাস
প্রাচীন হারিমা রাজ্যের শাসক আকামাৎসু নোরিমুরার তত্ত্বাবধানে ১৩৩৩ খ্রিঃ হিমেয়ামা পাহাড়ে একটি কেল্লার নির্মাণকাজ আরম্ভ হয়।[৪] ১৩৪৬ খ্রিঃ তার পুত্র সাদোনোরি কেল্লাটি ভেঙে সেই স্থানে নতুন করে হিমেয়ামা কেল্লা নির্মাণ করেন।[৪] ১৫৪৫ খ্রিঃ কোদেরা গোষ্ঠীর আদেশানুসারে কেল্লাটি কুরোদা গোষ্ঠীর আসন হয়, এবং সামন্ত শাসক কুরোদা শিগেতাকা কেল্লাটিকে হিমেজি দুর্গ নাম দিয়ে পুনর্নির্মাণ করেন। ১৫৬১ খ্রিঃ এই পুনর্নির্মাণ সম্পন্ন হয়।[৪][১৪] ১৫৮০ খ্রিঃ কুরোদা য়োশিতাকা, তোয়োতোমি হিদেয়োশিকে দুর্গটি উপহার দেন। হিদেয়োশি ১৫৮১ খ্রিঃ দুর্গটির উল্লেখযোগ্য সংস্কার করেন, যার অন্তর্গত ছিল প্রায় ৫৫ মি২ (৫৯০ ফু২) ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট একটি নতুন তিনতলা কীপ।[৬][১৪]
১৬০০ খ্রিঃ সেকিগাহারার যুদ্ধের পর তোকুগাওয়া ইএআসু যুদ্ধে সাহায্যের জন্য ইকেদা তেরুমাসাকে দুর্গটি পুরস্কার দেন।[৪] ইকেদা তেরুমাসা তিনতলা কীপটি ধ্বংস করে দেন এবং ১৬০১ থেকে ১৬০৯ খ্রিঃ পর্যন্ত সম্পূর্ণ দুর্গের পুনর্নির্মাণ করেন। এই সময়ই তিনটি পরিখাবেষ্টিত বর্তমান রূপে হিমেজি দুর্গের আবির্ভাব।[৪][৬] এই পুনর্নির্মাণে নিযুক্ত মোট শ্রমের পরিমাণ আনুমানিক আড়াই কোটি শ্রম দিবস ধরা হয়।[৪] তেরুমাসা ১৬১৩ খ্রিঃ মারা যান এবং দুর্গের উত্তরাধিকারী তার পুত্রও এর তিন বছর পর মারা যান।[৫] ১৬১৭ খ্রিঃ হোন্দা তাদামাসা ও তার পরিবার দুর্গের উত্তরাধিকার লাভ করেন। তাদামাসা দুর্গে অনেকগুলি নতুন ভবন যোগ করেন। এগুলির মধ্যে একটি হল তার পুত্রবধূ রাজকুমারী সেন্ (千姫,সেন্হিমে)-এর জন্য একটি পৃথক ভবন।[৫]
মেইজি যুগে (১৮৬৮-১৯১২) অনেকগুলি জাপানি দুর্গ ধ্বংস করে দেওয়া হয়।[৩] ১৮৭১ খ্রিঃ হিমেজি দুর্গ পরিত্যক্ত হয় এবং দুর্গের অনেকগুলি দালান ও তোরণ ধ্বংস করে সেনা ছাউনি গঠন করা হয়।[৬][১৪] সরকারী নীতি অনুযায়ী সমগ্র দুর্গটিকেই ধ্বংস করে দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু নাকামুরা শিগেতো নামক জনৈক সামরিক কর্নেলের চেষ্টায় হিমেজি দুর্গ রক্ষা পায়।[৬] দুর্গের প্রথম তোরণ হীরক তোরণ (菱門,হিশিমোন্)-এর মধ্যে নাকামুরার সম্মানে একটি পাথরের সৌধ স্থাপন করা হয়। তবে হিমেজি দুর্গ রেহাই পেলেও সাধারণভাবে জাপানে দুর্গের প্রচলন শেষ হয়ে গিয়েছিল এবং দুর্গের রক্ষণাবেক্ষণ হয়ে উঠেছিল ব্যয়বহুল।[৬]
১৮৭১ খ্রিঃ হান সামন্ততন্ত্রের লুপ্তির পর হিমেজি দুর্গ নিলামে ওঠে।[৬] জনৈক হিমেজিবাসী ২৩ জাপানি ইয়েন (বর্তমান মূল্য ২,০০,০০০ ইয়েন বা ২,২৫৮ মার্কিন ডলার) দিয়ে দুর্গটি কিনে নেন।[৬] ক্রেতার ইচ্ছা ছিল দুর্গটি ভেঙে ফেলে জমিটি অন্য কাজে নিয়োগ করবেন, কিন্তু দুর্গ ভাঙার খরচ অত্যধিক প্রমাণিত হওয়ায় হিমেজি দুর্গ আবার রক্ষা পায়।[৬]
১৯৪৫ এ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে হিমেজি ভারী বোমাবর্ষণের শিকার হয়। হিমেজি দুর্গের পার্শ্ববর্তী অধিকাংশ অঞ্চল ভূমিসাৎ হয়ে গেলেও দুর্গটি এবারেও অক্ষত থাকে।[৮] একটি আগুন-বোমা দুর্গের ছাদে এসে পড়েছিল, কিন্তু ফাটেনি।[১৫] দুর্গ চত্বর সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯৫৬ খ্রিঃ থেকে ৫৫ কোটি ইয়েন ও ২,৫০,০০০ শ্রম দিবস খরচ করে মেরামতির কাজ শুরু হয়।[৬][১৪] ১৯৯৫ এর জানুয়ারি মাসে হিমেজি নগর হান্শিন্ মহাভূকম্পের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিন্তু আবারও হিমেজি দুর্গ অক্ষত থাকে; দুর্গের উপরতলায় রাখা সাকে-র বোতলটি পর্যন্ত ভূকম্পের পর যথাস্থানে ছিল।[১০] এর দ্বারা হিমেজি দুর্গের ভূকম্পরোধী স্থাপত্যের প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায়।[১০]
ঐতিহাসিক স্বীকৃতি
১৯৯৩ এর ১১ই ডিসেম্বর ইউনেস্কো হিমেজি দুর্গকে জাপানের অন্যতম বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করে।[৬][৩][৮] দুর্গ চত্বরের অন্তর্গত পাঁচটি স্থাপত্যকীর্তিকে জাতীয় সম্পদের মর্যাদা দেওয়া হয়; যথা: দুর্গের কীপ (天守閣,তেন্শুকাকু), বায়ুকোণের ছোট মিনার (乾小天守,ইনুই শোওতেন্শু), পশ্চিমের ছোট মিনার (西小天守,নিশি শোওতেন্শু), পূর্বের ছোট মিনার (東小天守,হিগাশি কোতেন্শু) এবং ই, রো, হা, নি-দালানসমূহ (イ, ロ, ハ, ニの渡櫓,ই, রো, হা, নি নো ওয়াতারিয়াগুরা)।[১১] দুর্গের মধ্যবর্তী পরিখাবেষ্টিত অঞ্চল একটি ঘোষিত বিশেষ ঐতিহাসিক স্থান।[৬]
মাৎসুমোতো দুর্গ ও কুমামোতো দুর্গের সাথে হিমেজি দুর্গকে জাপানের তিনটি প্রধান দুর্গের অন্যতম হিসেবে গণ্য করা হয়।[১২] এটি জাপানের সর্বাধিক দর্শনার্থী আকর্ষণকারী দুর্গও বটে; প্রতি বছর ৮ লক্ষ ২০ হাজার মানুষ দুর্গটি দেখতে যান।[৪][৩] ২০১০ এর এপ্রিল মাসে হিমেজি দুর্গের ভবনগুলির সার্বিক সংস্কার আরম্ভ হয়, এবং ২০১৫ এর ২৭শে মার্চ এই কর্মকাণ্ডের শেষে জনসাধারণের জন্য দুর্গটি পুনরায় উন্মুক্ত হয়।[১৩]
নকশার খুঁটিনাটি
হিমেজি দুর্গ জাপানের বৃহত্তম দুর্গ।[৩] একে প্রথাগত জাপানি দুর্গ-স্থাপত্যের একটি আদর্শ উদাহরণ বলা যায়; দুর্গ চত্বরে এই স্থাপত্যের অনুসারী বহু বৈশিষ্ট্য রয়েছে।[৮] হিমেজি দুর্গের বাঁকা দেওয়ালগুলিকে কখনও কখনও দৈত্যাকার পাখা (扇子,সেন্সু)-র সাথে তুলনা করা হয়। দুর্গে ব্যবহৃত মূল উপাদান দুটি হল পাথর ও কাঠ।[৬][৭] দুর্গটির দীর্ঘ ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে যে সমস্ত সামন্ত পরিবার এর মালিক হয়েছেন, তাদের প্রতীক (紋,মোন) দুর্গ জুড়ে খোদাই করা আছে।[৬]
হিমেজি নগরের কেন্দ্রে ৪৫.৬ মি (১৫০ ফু) উঁচু হিমেয়ামা পাহাড়ের চূড়ায় হিমেজি দুর্গ চত্বরের অবস্থান।[২] গুদামঘর, ভাঁড়ার, তোরণ, মিনার (楼,য়াগুরা) ইত্যাদি মিলিয়ে চত্বরে মোট ৮৩টি স্থাপত্য নিদর্শন আছে।[৬] এই ৮৩টি স্থাপত্যের মধ্যে ৭৪টি কে গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক সম্পদের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এগুলি হল: ১১টি দালান, ১৬টি মিনার, ১৫টি তোরণ ও ৩২টি মাটির দেওয়াল।[১০] দুর্গ চত্বরের উচ্চতম দেওয়ালগুলির উচ্চতা ২৬ মি (৮৫ ফু)।[৬] দুর্গের পাশেই রয়েছে কোকো-এন্ (好古園,কোকোওএন্) নামক একটি জাপানি উদ্যান। এটি ১৯৯২ খ্রিঃ হিমেজি নগরের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে নির্মিত হয়েছিল।[১৬]
পূর্ব থেকে পশ্চিমে হিমেজি দুর্গ চত্বরের বিস্তার ৯৫০ থেকে ১,৬০০ মি (৩,১২০ থেকে ৫,২৫০ ফু) এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে এর দৈর্ঘ্য ৯০০ থেকে ১,৭০০ মি (৩,০০০ থেকে ৫,৬০০ ফু)।[৬] চত্বরের পরিধি ৪,২০০ মি (২.৬ মা)।[৬] এর ক্ষেত্রফল ২৩৩ হেক্টর (২৩,৩০,০০০ মি২ বা ৫৭৬ একর), অর্থাৎ তোকিও গম্বুজের প্রায় ৫০ গুণ এবং কোশিএন্ ক্রীড়াঙ্গনের প্রায় ৬০ গুণ।[৪][৬][৮]
দুর্গের কেন্দ্রস্থ কীপ (天守閣,তেন্শুকাকু) টি ৪৬.৪ মি (১৫২ ফু) উঁচু ও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯২ মি (৩০২ ফু) উচ্চতায় এর অবস্থান।[২] এই কীপ ও আরও তিনটি ক্ষুদ্রতর মিনার (小天守,কোতেন্শু) একত্রে একটি মিনারচতুষ্টয় গঠন করে।[৬] বাইরে থেকে কীপটিকে পাঁচতলা মনে হয়, কারণ দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা দুটি উপর থেকে অভিন্ন দেখায়; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কীপে রয়েছে ছয়টি তলা ও একটি বেসমেন্ট।[৯] এই বেসমেন্টের ক্ষেত্রফল ৩৮৫ মি২ (৪,১৪০ ফু২)। কীপের ভিতরে এমন কিছু স্বাচ্ছন্দ্যসূচক বন্দোবস্ত রয়েছে যেগুলি অন্যান্য দুর্গে দেখা যায় না, যেমন শৌচালয়, নর্দমা ও রান্নাঘর।[৬]
কীপের নিজস্ব দুটি স্তম্ভ আছে; একটি পূর্বে ও অপরটি পশ্চিমে।[৬] পূর্বের স্তম্ভটির গোড়ার ব্যাস ৯৭ সেমি (৩৮ ইঞ্চি) এবং প্রথমে এটি ছিল একটি একক ফার গাছ, কিন্তু বর্তমানে এর অধিকাংশ অংশই প্রতিস্থাপিত।[৬] পশ্চিমের স্তম্ভটির গোড়ার ব্যাস ৮৫ বাই ৯৫ সেমি (৩৩ বাই ৩৭ ইঞ্চি) এবং এটির উপাদান জাপানি সাইপ্রেস।[৬]শোওয়া পুনর্গঠনের (১৯৫৬-১৯৬৪) সময় কিসো পর্বত থেকে ২৬.৪ মি (৮৭ ফু) দীর্ঘ একটি সাইপ্রেস গাছ কেটে এনে পুরোনো স্তম্ভটিকে প্রতিস্থাপন করা হয়।[৬] আনার সময় গাছটি ভেঙে যাওয়ার ফলে কাসাগাতা পর্বত থেকে আর একটি গাছ কেটে আনা হয় এবং তিনতলায় দুটি গাছ জুড়ে দেওয়া হয়।[৬]
কীপের প্রথম তলাটির ক্ষেত্রফল ৪৪০ মি২ (৪,৭০০ ফু২) এবং এর ডাকনাম "হাজার মাদুরের ঘর", কারণ এটির মেঝেতে ৩৩০টি তাতামি মাদুর বিছানো আছে।[৬] এই তলার দেওয়ালে আছে গাদা বন্দুক ও বর্শা রাখার জন্য অস্ত্রের তাক (武具掛,বুগুকাকে)। এক সময়ে দুর্গে ২৮০টি বন্দুক ও ৯০টি বর্শা রক্ষিত ছিল।[৬][১৭] কীপের দ্বিতীয় তলার ক্ষেত্রফল কমবেশি ৫৫০ মি২ (৫,৯০০ ফু২)।[৬]
তৃতীয় তলা ও চতুর্থ তলার ক্ষেত্রফল যথাক্রমে ৪৪০ মি২ (৪,৭০০ ফু২) ও ২৪০ মি২ (২,৬০০ ফু২)।[৬] এই দুটি তলাতেই উত্তর ও দক্ষিণমুখী জানালাগুলিতে সংলগ্ন আছে "পাথর-ছোঁড়ার চাতাল" (石打棚,ইশিউচিদানা)। এখান থেকে দুর্গরক্ষকরা আক্রমণকারীদের দিকে পাথর ইত্যাদি নিক্ষেপ করতে পারত।[৬] এছাড়াও রয়েছে ছোট ছোট ঘুপচি ঘর, যাদের নাম "যোদ্ধা লুকোনোর স্থান" (武者隠,মুশাকাকুশি), যেখানে দুর্গরক্ষকরা লুকিয়ে থেকে কীপে প্রবেশকারী শত্রুদের আচম্বিতে আক্রমণ করতে পারত।[৬] ষষ্ঠ তলা অর্থাৎ সবচেয়ে উপরতলার ক্ষেত্রফল মাত্র ১১৫ মি২ (১,২৪০ ফু২)।[৬] এই তলার জানালাগুলিতে এখন লোহার শিক বসানো হয়েছে, কিন্তু সামন্ত যুগে তা ছিল না এবং তখন এখান থেকে অবাধে পরিপার্শ্বের বহুদূর অবধি নজরে রাখা যেত।[৬]
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
সামন্ত যুগের সাপেক্ষে হিমেজি দুর্গের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল উন্নত।[৮] বৃত্তাকার, ত্রিভুজাকার ও আয়তাকার শররন্ধ্র (狭間,সামা) দুর্গের সর্বত্র পাওয়া যায়, যেখান থেকে গাদা বন্দুক বা ধনুর্বাণের সাহায্যে দুর্গরক্ষকরা নিরাপদে আক্রমণকারীদের মোকাবিলা করতে পারত।[৯] বর্তমানে গোটা দুর্গ চত্বরে প্রায় ১০০০টি শররন্ধ্র দেখতে পাওয়া যায়।[৬] "পাথর-ছোঁড়ার জানলা" (石落窓,ইশি-ওতোশি-মাদো) নামক কৌণিক জানালাও দুর্গের বহু স্থানে তৈরি করা ছিল, যেখান থেকে নিচে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় আক্রমণকারীদের উপর গরম তেল বা পাথরের টুকরো নিক্ষেপ করা সম্ভব। পুনর্নির্মাণের সময় অগ্নিনিরোধক ব্যবস্থা হিসেবে দুর্গের দেওয়ালে সাদা প্লাস্টারের ব্যাপক ব্যবহার করা হয়।[২][১৮]
দুর্গ চত্বরের মোট পরিখার সংখ্যা ছিল তিন, কিন্তু বর্তমানে সবচেয়ে বাইরের পরিখাটি মাটিচাপা পড়ে গেছে।[৭] কেন্দ্রীয় পরিখা ও অভ্যন্তরীণ পরিখার অধিকাংশ অবশ্য টিকে আছে।[৭] পরিখাগুলির গড় প্রস্থ ২০ মি (৬৬ ফু), সর্বাধিক প্রস্থ ৩৪.৫ মি (১১৩ ফু) এবং গড় গভীরতা ২.৭ মি (৮.৯ ফু)।[১০] তিন দেশের পরিখা (三国濠,সাংগোকু-বোরি) হল ২,৫০০ মি২ (২৭,০০০ ফু২) ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট একটি পুকুর; অগ্নিকাণ্ডের সময় এর জল আগুন নেভানোর কাজে লাগানো হত।[৬]
দুর্গ চত্বর, বিশেষত "কোমর অঞ্চলে" (腰曲輪,কোশিকুরুওয়া) সম্ভাব্য অবরোধের সময় চাল, নুন ও জল মজুত রাখার জন্য বহুসংখ্যক গুদাম ঘর দেখতে পাওয়া যায়।[৬] লবণ মিনার (潮櫓,শিওইয়াগুরা) বলে পরিচিত একটি বাড়ি শুধু নুন সঞ্চয়ের জন্যই ব্যবহৃত হত এবং দুর্গ সক্রিয় থাকাকালীন এতে আনুমানিক ৩,০০০ বস্তা নুন রাখা সম্ভব ছিল।[৬] অভ্যন্তরীণ পরিখার অভ্যন্তরস্থ অঞ্চলে ছিল ৩৩টি কুয়ো, যার মধ্যে ১৩টি এখনও আছে; গভীরতম কুয়োর গভীরতা ৩০ মি (৯৮ ফু)।[৬]
দুর্গের অভ্যন্তরস্থ গলিঘুঁজির গোলকধাঁধা হল এর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ।[৯] তোরণ, প্রাকারবেষ্টিত চাতাল ও বাইরের সমস্ত দেওয়াল সমেত সমগ্র দুর্গ চত্বরটি শত্রুকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে এমনভাবে বিন্যস্ত ছিল যাতে কীপের দিকে এগোতে গেলে তাদের একটি সর্পিলাকার পথ ধরে চলতে হয়।[৯] প্রাথমিকভাবে দুর্গ চত্বরে ৮৪টি তোরণ ছিল, যাদের মধ্যে ১৫টির নাম ছিল জাপানি বর্ণমালা অনুসারে (ই, রো, হা, নি, হো, হে, তো ইত্যাদি)।[৬] বর্তমানে ২১টি তোরণ অক্ষত আছে, এদের মধ্যে ১৩টির নাম বর্ণমালা অনুসারী।[৬]
কোনও কোনও ক্ষেত্রে দুর্গের রাস্তাগুলি এক একটি বদ্ধ 'লুপ' পর্যন্ত তৈরি করে, ফলে দুর্গে চলাফেরা ভীষণ কঠিন হয়ে যায়।[১৮] যেমন, হীরক তোরণ (菱門,হিশিমোন্) থেকে কীপ (天守閣,তেন্শুকাকু)-র সরলরৈখিক দূরত্ব মাত্র ১৩০ মি (৪৩০ ফু), কিন্তু যাওয়ার রাস্তাটির আসল দৈর্ঘ্য ৩২৫ মি (১,০৬৬ ফু)।[৬] রাস্তাগুলি সংকীর্ণ ও খাড়াই হওয়ার ফলেও চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়।[৬] এই ব্যবস্থা আক্রমণকারীদের দীর্ঘ যাত্রাপথে তাদের উপর গুলি, তীর, পাথর ইত্যাদি বর্ষণের সুবিধা করে দেয়। হিমেজি দুর্গ কখনও এভাবে আক্রান্ত হয়নি বলে ব্যবস্থাটির উপযোগিতা যাচাই করা যায়নি।[৮][৯] কিন্তু বর্তমানে স্পষ্ট পথনির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও অনেক দর্শনার্থী দুর্গ চত্বরে ঘোরাফেরা করার সময়ে অসুবিধায় পড়ে যান।[২]
সাংস্কৃতিক প্রভাব
হিমেজি দুর্গের ধবধবে সাদা রঙ এবং দুর্গের গঠনের সাথে উড্ডয়নোন্মুখ পাখির কথিত সাদৃশ্যের জন্য একে হাকুরো-জো (সাদা ইগ্রেট দুর্গ) এবং শিরাসাগি-জো (সাদা সারস দুর্গ)-ও বলা হয়।[৭][৯] বিদেশী ও জাপানি চলচ্চিত্রে দুর্গটিকে বহুবার দেখানো হয়েছে। এই সমস্ত উদাহরণের মধ্যে আছে জেম্স বণ্ড ধারাবাহিকের চলচ্চিত্র ইউ ওনলি লিভ টোয়াইস (১৯৬৭) এবং আকিরা কুরোসাওয়ারকাগেমুশা (১৯৮০) ও রান (১৯৮৫)।[১২]শোগুন ধারাবাহিকে (১৯৮০) সামন্তযুগীয় ওসাকা দুর্গের প্রতিনিধিত্ব করেছে হিমেজি দুর্গ, কারণ ওসাকা দুর্গের পার্শ্ববর্তী দুর্গপ্রাকার সমূহ বর্তমানে নষ্ট হয়ে গেছে।[১৫]
লোককথা ও কিংবদন্তি
স্থানীয় একাধিক লোককথার অংশ হয়ে গেছে হিমেজি দুর্গ।[৬] বিখ্যাত কাইদান (জাপানি ভূতের গল্প) বান্চো-সারায়াশিকি (番町皿屋敷,"বাঞ্চো-র থালা প্রাসাদ")-তে এদো (তোকিও) নগরের কথা বলা হলেও এর অপর একটি সংস্করণ বান্শু সারায়াশিকি (播州皿屋敷,"হারিমা প্রদেশের থালা প্রাসাদ")-এ হিমেজি দুর্গের কথা বলা হয়। একটি বিতর্কিত মত অনুযায়ী দুর্গটি গোটা গল্পেরই ঘটনাস্থল, এবং কিংবদন্তির উৎস ওকিকুর কুয়ো আজ অবধি দুর্গ চত্বরের মধ্যেই আছে।[৫] কিংবদন্তি অনুযায়ী ওকিকুর বিরুদ্ধে মূল্যবান পারিবারিক সম্পদ কয়েকটি থালা ভেঙে ফেলার মিথ্যা অভিযোগ আনা হয় এবং তাকে হত্যা করে কুয়োর মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়।[৬] তার প্রেতাত্মাকে ঐ কুয়োর মধ্যে প্রতি রাত্রে হতাশভাবে থালা গুনতে শোনা যায়।[৬]
"বুড়ি বিধবার পাথর" (姥が石,উবাগাইশি) লোককথাটিও হিমেজি দুর্গের সাথে জড়িত।[৬] এই গল্প অনুযায়ী তোয়োতোমি হিদেয়োশি দুর্গ নির্মাণের সময় পাথর শেষ হয়ে যায় এবং এক বুড়ি বিধবার কানে এই খবর পৌঁছায়। বিধবা হিদেয়োশিকে তার জাঁতির পাথরটি অসুবিধা স্বীকার করেও দান করেন।[৬] এই ঘটনায় অনুপ্রেরণা পেয়ে অন্যান্য বহু মানুষও তাদের প্রয়োজনের অনেকগুলি পাথর দান করে এবং দুর্গের নির্মাণকাজ অব্যাহত থাকে। আজও দুর্গের কেন্দ্রে একটি দেওয়ালে এই বিশেষ পাথরটি তারের জালে ঢাকা অবস্থায় চিহ্নিত করে রাখা আছে।[৬]
আর একটি গল্পে ইকেদা তেরুমাসার প্রধান ছুতোর গেন্বেই সাকুরাইয়ের কথা পাওয়া যায়, যিনি দুর্গের কীপের নির্মাণে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন।[৬] এই গল্প অনুযায়ী গেন্বেই সাকুরাই নিজের কাজে অসন্তুষ্ট ছিলেন; তার মনে হচ্ছিল কীপটি দক্ষিণ-পূর্ব দিকে সামান্য হেলে আছে। অন্যমনস্ক হয়ে তিনি খোদাই করার একটি যন্ত্র মুখে করে কীপের ছাদে উঠে যান এবং সেখান থেকে ভুলক্রমে মৃত্যুমুখে পতিত হন।[৬]
↑ কখগঘঙJacqueline A., Ball (২০০৫)। Himeji Castle: Japan's Samurai Past (ইংরেজি ভাষায়)। New York: Bearport Publishing। পৃষ্ঠা 32। আইএসবিএন1-59716-001-6।
↑ কখগঘঙচBornoff, Nicholas (২০০০)। দ্য ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ট্রাভেলার: জাপান। ওয়াশিংটন: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা 256–257। আইএসবিএন0-7894-5545-5।
↑ কখলো, স্যাম (মে ১১, ২০১০)। "একটি জাপানি সম্পদের পুনর্নির্মাণ" (ইংরেজি ভাষায়)। বেস্ট ওয়েস্টার্ন'স্ ট্রাভেল ব্লগ। মে ২৪, ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১১, ২০১০।
هذه المقالة عن سمار. لمعانٍ أخرى، طالع سمار (توضيح). وادي السمارمحطة قطار وادي السمارمعلومات عامةالموقع ولاية الجزائر، دائرة الحراش، وادي السمارالمدينة مدينة وادي السمارالتقسيم الإداري وادي السمار البلد الجزائر شبكة المواصلات Algiers Suburban Rail Network (en) المالك الشركة ...
1988 Italian filmThe OpponentDirected bySergio MartinoWritten byRobert Brodie Booth Maria Perrone Capano Sergio Martino Sauro ScavoliniStory byLuciano MartinoStarringDaniel Greene Giuliano Gemma Ernest BorgnineCinematographyGiancarlo FerrandoMusic byLuciano MicheliniRelease date 1988 (1988) Running time90 minutesCountryItalyLanguageEnglish The Opponent (Italian: Qualcuno pagherà, also known as Uppercut Man) is a 1988 Italian sport comedy-drama film directed by Sergio Martino and starrin...
São Gonçalo dos Campos Município do Brasil São Gonçalo dos Campos e sua arborização centenáriaSão Gonçalo dos Campos e sua arborização centenária Símbolos Bandeira Brasão de armas Hino Lema Semper quaerere pacem et bonumSempre a procura da boa paz Gentílico são-gonçalense Localização Localização de São Gonçalo dos Campos na BahiaLocalização de São Gonçalo dos Campos na Bahia São Gonçalo dos CamposLocalização de São Gonçalo dos Campos n...
Este artículo o sección tiene referencias, pero necesita más para complementar su verificabilidad.Este aviso fue puesto el 23 de abril de 2020. Marcos Aguinis Marcos Aguinis Secretario de Cultura de la Nación Argentina 4 de febrero de 1986[1]-21 de enero de 1987Presidente Raúl AlfonsínPredecesor Carlos GorostizaSucesor Carlos Bastianes Subsecretario de Cultura de la Nación Argentina 10 de diciembre de 1983-4 de febrero de 1986Presidente Raúl Alfonsín Información personalNacim...
Eugenio Fernández QuintanillaInformación personalNacimiento 1887Arnuero (Cantabria, España)Fallecimiento 30 de mayo de 1932(45 años)Madrid, EspañaNacionalidad españolEducaciónEducado en Escuela Técnica Superior de Arquitectura de MadridInformación profesionalOcupación Arquitecto Obras notables Casa de Correos (Santander)Proyectos representativos Círculo de Bellas Artes (Madrid) (no elegido)Distinciones Medalla al Mérito en el Trabajo[editar datos en Wikidata] Eugenio Fer...
Tarian Polka Polka adalah tarian rakyat Cekoslovakia dengan irama 2/4 dan tempo yang agak cepat.[1] Tarian yang berasal dari kalangan petani Bohemia Timur (sekarang Republik Ceko) ini menyebar ke Praha pada tahun 1830-an.[2] Lalu, pada pertengahan abad kesembilan belas mencapai Paris dan memenuhi ruang dansa dan teater di seluruh Eropa dan Amerika dalam berbagai versi.[2] Variasi regional seperti rheinlander, polkamazurka dan polka Polandia muncul karena masing-masing ...
American college football season 1992 Oklahoma State Cowboys footballConferenceBig 8 ConferenceRecord4–6–1 (2–4–1 Big 8)Head coachPat Jones (9th season)Offensive coordinatorBill Michael (1st season)Defensive coordinatorBill Miller (4th season)Home stadiumLewis Field(Capacity: 50,440)Seasons← 19911993 → 1992 Big Eight Conference football standings vte Conf Overall Team W L T W L T No. 14 Nebraska $ 6 – 1 –...
NASCAR Seri Piala Winston 1988 Sebelum: 1987 Sesudah: 1989 Bill Elliott (foto 2017) sebagai juara musim 1988. NASCAR Seri Piala Winston 1988 merupakan musim NASCAR Seri Piala Winston. Musim ini berlangsung dari bulan Februari 1988 lewat Daytona 500 di Daytona International Speedway dan berakhir pada bulan November dalam di Atlanta Motor Speedway. Di musim ini Bill Elliott keluar sebagai juara umum. Klasemen akhir Bill Elliott – 4488 Rusty Wallace – 4464 Dale Earnhardt – 4...
Neighbourhood in Kowloon, Hong Kong For the administrative district, see Kowloon City District. For the former enclave, see Kowloon Walled City. This article needs additional citations for verification. Please help improve this article by adding citations to reliable sources. Unsourced material may be challenged and removed.Find sources: Kowloon City – news · newspapers · books · scholar · JSTOR (November 2011) (Learn how and when to remove this templa...
Not to be confused with Barat (film). 2015 filmBanat (The Journey)Directed byAdriano ValerioWritten byAdriano Valerio Ezio AbbateStarringEdoardo Gabbriellini Elena RadonicichCinematographyJonathan RicquebourgMusic byAssen AvramovRelease date September 4, 2015 (2015-09-04) (Venice Film Festival) LanguageItalian Banat (The Journey), originally titled Banat (Il viaggio), is a 2015 Italian-Romanian-Bulgarian-Macedonian drama film written and directed by Adriano Valerio, at his ...
American podcaster and author Bret WeinsteinWeinstein in 2022BornBret Samuel Weinstein (1969-02-21) February 21, 1969 (age 54)Los Angeles, California, U.S.EducationUniversity of PennsylvaniaUniversity of California, Santa Cruz (BA)University of Michigan (MA, PhD)Occupation(s)Author, podcasterSpouseHeather HeyingRelativesEric Weinstein (brother)Scientific careerThesisEvolutionary Trade-Offs: Emergent Constraints and Their Adaptive Consequences (2009)Doctoral advisorRichard D. Alexand...
Species of flowering plant Melaleuca tamariscina Scientific classification Kingdom: Plantae Clade: Tracheophytes Clade: Angiosperms Clade: Eudicots Clade: Rosids Order: Myrtales Family: Myrtaceae Genus: Melaleuca Species: M. tamariscina Binomial name Melaleuca tamariscinaHook.[1] Synonyms[1] Myrtoleucodendron tamariscinum (Hook.) Kuntze Melaleuca tamariscina, commonly known as bush-house paperbark or tamarix honey-myrtle is a plant in the myrtle family, Myrtaceae and is e...
Final Piala Generalísimo 1971TurnamenPiala Generalísimo 1970–1971 Barcelona Valencia 4 3 setelah perpanjangan waktuTanggal4 Juli 1971StadionStadion Santiago Bernabéu, MadridWasitJuan María Sáiz ElizondoPenonton100.000← 1970 1972 → Final Piala Generalísimo 1971 adalah pertandingan final ke-67 dari turnamen sepak bola Piala Generalísimo untuk menentukan juara musim 1970–1971. Pertandingan ini diikuti oleh Barcelona dan Valencia dan diselenggarakan pada 4 Juli 1971 di Stad...
Species of rodent Red-cheeked rope squirrel Conservation status Least Concern (IUCN 3.1)[1] Scientific classification Domain: Eukaryota Kingdom: Animalia Phylum: Chordata Class: Mammalia Order: Rodentia Family: Sciuridae Genus: Funisciurus Species: F. leucogenys Binomial name Funisciurus leucogenys(Waterhouse, 1842) Subspecies[2] F. l. leucogenys F. l. auriculatus F. l. oliviae The red-cheeked rope squirrel (Funisciurus leucogenys) is a species of rodent in the famil...
This article's factual accuracy may be compromised due to out-of-date information. Please help update this article to reflect recent events or newly available information. (November 2010) A1 Team IndonesiaFounded2005Seat holder(s)n/aTeam principalBagoes HermantoRace driver(s)Satrio Hermanto, Zahir AliFirst race2005-06 Great BritainRounds entered38 (76 races)Championships0Sprint race victories0Feature race victories0Pole positions0Fastest laps0Total points212008-09 position15th (0 pts) A1 Team...
هذه المقالة تحتاج للمزيد من الوصلات للمقالات الأخرى للمساعدة في ترابط مقالات الموسوعة. فضلًا ساعد في تحسين هذه المقالة بإضافة وصلات إلى المقالات المتعلقة بها الموجودة في النص الحالي. (يونيو 2023) لمعانٍ أخرى، طالع طريق (توضيح). الطريقمعلومات عامةالصنف الفني دراماتاري...
В Википедии есть статьи о других людях с такой фамилией, см. Нелидов; Нелидов, Александр. Александр Иванович Нелидов Посол России во Франции 1904 — 1910 Монарх Николай II Предшественник Лев Павлович Урусов Преемник Александр Петрович Извольский 3-й Посол России в Италии 1 ию...
Cet article est une ébauche concernant un acteur américain et un réalisateur américain. Vous pouvez partager vos connaissances en l’améliorant (comment ?) selon les conventions filmographiques. Edward Brophy de g. à dr.:Jackie Cooper, Edward Brophy et Wallace Beerydans Le Champion (1931) Données clés Nom de naissance Edward Santree Brophy Naissance 27 février 1895New York (État de New York)États-Unis Nationalité Américaine Décès 27 mai 1960 (à 65 ans)Pacific Palis...
British politician (1772–1864) For other people named Richard Bethell, see Richard Bethell (disambiguation). Richard Bethell, lithograph c.1830 Richard Bethell (10 May 1772 – 25 December 1864)[1] was a British Tory[2] and then Conservative Party[3] politician from Rise[4] in the East Riding of Yorkshire. He sat in the House of Commons between 1830 and 1841. Life He was the son of the Rev. Richard Bethell, rector of Wallingford, and was born at Isleworth. He...