হিন্দুধর্মের সমালোচনা বলতে হিন্দুদের কিছু প্রথা ও বিশ্বাসের সমালোচনাকে বোঝায়। প্রথম যুগের হিন্দু ধর্মসংস্কারকরা হিন্দুধর্মের প্রচলিত অপব্যাখ্যাগুলির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। পরবর্তীকালের সংস্কারকরাও তাদের সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে তাই করেছিলেন। হিন্দুধর্মের সমালোচনা হিন্দুধর্মের ঐতিহাসিক এবং বর্তমান উভয় দিকগুলোতেই আলোকপাত করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সতীদাহ এবং বর্ণপ্রথা। [১][২][৩][৪][৫]
ধর্মগ্রন্থ
হিন্দুধর্মের কিছু বিশ্লেষক দাবি করেন যে, হিন্দুধর্ম সমসাময়িক সকল ধর্মের উপাদানকে নিজেদের মধ্যে আত্মস্থ করে থাকে[৬] এবং হিন্দুধর্মের বেদ পুরাণ সহ বহু ধর্মগ্রন্থে বৌদ্ধধর্ম, জৈনধর্ম ও শিখধর্মের উপাদান রয়েছে এবং তা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্রিক ধর্ম ও জরাথুস্ট্রবাদের যেন আবেস্তা নামক ধর্মগ্রন্থ হতে ধর্মীয় উপাদান গ্রহণ করেছে, যেমনঃ অহুর থেকে অসুর, দেইব থেকে দেব, আহুরা মাজদা থেকে একেশ্বরবাদ, বরুণ, বিষ্ণু ও গরুদ, অগ্নিপুজা, হোম নামক পানীয় থেকে সোম নামক স্বর্গীয় সুধা, ভারতীয় ও পারসিকদের বাকযুদ্ধ থেকে দেবাসুরের যুদ্ধ, আর্য থেকে আর্য, মিত্রদেব, দিয়াউসপিত্র দেব (বৃহস্পতি দেব), ইয়াস্না থেকে ইয়যোনা বা যজ্ঞ, নারীয়সঙ্ঘ থেকে নরাশংস (মানুষের মাঝে প্রশংসিত জন), অন্দ্র থেকে ইন্দ্র, গান্দারেওয়া থেকে গন্ধর্ব, বজ্র, বায়ু, মন্ত্র, যম, আহুতি, হুমাতা থেকে সুমতি ইত্যাদি।[৭][৮] কিছু বিশেষজ্ঞের মনে করে, কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ অব্দে জন্মেছিলেন, সে সময়কালে পারস্যের (বর্তমান ইরান) রাজা ছিল দ্বিতীয় আর্টাক্সেরেক্সেস বা দ্বিতীয় দারিয়াস বা তৃতীয় আর্ট্যাক্সারেক্সেস, যারা সকলেই জরাথুস্ট্রবাদের অনুসারী ছিলেন, সে সময় হয়তো দ্বৈপায়ন সেখানে গিয়ে এসব তথ্য অনুলিপি করেছেন।
সতীদাহ প্রথা একটি ঐতিহাসিক ঘটনা ও পৌরাণিক প্রথা। যেখানে একজন বিধবা নিজের ইচ্ছায় তার মৃত স্বামীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া চিতার উপরে বসে নিজেকে উৎসর্গ করেন। বিদ্যা দেহেজিয়ার মতে সতীদাহ প্রথা ভারতীয় সমাজে দেরিতে প্রবর্তিত হয়েছিল এবং ৫০০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে নিয়মিত হয়ে ওঠে।
নেপাল ও ভারতেবর্ণব্যবস্থা বহু শতাব্দী ধরে প্রচলিত। এই বর্ণব্যবস্থা একটি ক্রমোচ্চ শ্রেণিবিভাগ হিসেবে বর্ণিত হয়। এখানে সমাজের নানা স্তরের মানুষদের উচ্চ ও নিম্ন বিভিন্ন বর্ণে ভাগ করা হয়।[৯]
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বর্ণ ব্যবস্থাকে "বৈষম্যমূলক এবং নিষ্ঠুর, অমানবিক এবং অপমানজনক আচরণ" হিসাবে বর্ণনা করেছে,যার মতে ভারতের ১৬৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষে বর্ণপ্রথার শিকার। বিশ্বব্যাপী অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি পাশাপাশি জাতিসংঘ এবং এইচআরডাব্লিউ বারবার বর্ণপ্রথার সমালোচনা করে আসছে।
হিন্দুদের দৃষ্টিভঙ্গি
হিন্দুধর্মের বর্ণব্যবস্থা জন্মগত বলে কিছু হিন্দু শাস্ত্রে বর্ণিত হলেও হিন্দু শাস্ত্রের অনেক জায়গায় সন্তানের বর্ণ, পিতামাতার বর্ণের পরিচয় নয়, মানুষ নিজের কর্মের পরিচয়ে নির্দিষ্ট বর্ণের অন্তর্ভুক্ত হয় বলে উল্লিখিত হয়েছে।[১০] উদাহরণস্বরূপ দেখা যায়, ক্ষত্রিয় রাজা বিশ্বামিত্র ব্রাহ্মণ, শুদ্র বাল্মীকি ব্রাহ্মণ, ব্রাহ্মণ পরশুরাম যুদ্ধের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ক্ষত্রিয় হয়েছেন ইত্যাদি।
ব্রিটিশ ভারতে হিন্দু বর্ণব্যবস্থা আইনি স্বীকৃতি পায়।[১১] এই সময় জমি নীতি এক নতুন শ্রেণীর জমিদার সৃষ্টি করে এবং বহু সংখ্যক মানুষ তাদের প্রজা ও কৃষি-মজুরে পরিণত হয়।[১২] বর্ণব্যবস্থা ব্যক্তির কাজের ভিত্তিতে সৃষ্ট হলেও, ক্রমে তা জন্মভিত্তিক হয়ে পড়ে।
Burns, John। "Once Widowed in India, Twice Scorned"(পিডিএফ)। NY Times articles। 1998 The New York Times Company। ৯ জুন ২০১০ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 10/12/2012।এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)