চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় চাঁদপুর শহরের কেন্দ্রে চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত একটি উচ্চ বিদ্যালয়।
বিদ্যালয়টি প্রখ্যাত জমিদার ও লোকহিতৈষী হাসান আলী কর্তৃক ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়[১], যিনি পাশের লক্ষ্মীপুর জেলা থেকে এসেছিলেন। এ বিদ্যালয়টি যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন রাণী ভিক্টোরিয়ার সিলভার জুবলি (রজতজয়ন্তী) ঘটেছিল । তাই বিদ্যালয়টির নাম চাঁদপুর হাসান আলী জুবলি হাই স্কুল রাখা হয়েছিল। বর্তমানে চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হিসাবে পরিচিত। অতীতে বালক এবং বালিকা উভয়কেই শিক্ষা দেয়া হত। বর্তমানে শুধু ছাএদেরকে শিক্ষা দেওয়া হয়।
১৭০০ সালে জমিদার মরহুম আহমেদ রাজা চৌধুরী সরকারি মহিলা কলেজের স্থানে একটি মুসলিম হোস্টেল প্রতিষ্ঠা করেন। অপরদিকে, নবকান্ত মুখপাধ্যায় জোড় পুকুর পাড়ে একটি হিন্দু হোস্টেল প্রতিষ্ঠা করেন। এখন মুসলিম হোস্টেলটি চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের হোস্টেল হিসাবে ব্যবহার করা হয় ও হিন্দু হোস্টেলটি বিদ্যালয়টির একমাত্র হোস্টেল হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
বিদ্যালয়টি সরকারি বিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছিল ১ মে ১৯৬৯ সালে। বিদ্যালয়টি চাঁদপুর শহরের প্রাচীনতম এবং চট্টগ্রাম বিভাগের ৫ম প্রাচীনতম হিসাবে পরিচিত। বিদ্যালয়টির বিস্তারিত ইতিহাস এম. আবদুল হামিদ মজুমদার (এমএ, এম.এড, এলএল.বি) লিখেছেন । যিনি ১৯৪৯-১৯৭২ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্বরত ছিলেন।
বিদ্যালয়ের এসএসসি-২০০২ ব্যাচের প্রাক্তন মেধাবী ছাত্র "মো . মেহেদী হাসান খান জনি" এর 'মূল চিন্তাধারা ও প্রস্তাবনায়' এবং পরবর্তীতে এসএসসি-২০০২ ব্যাচের সকল প্রাক্তন ছাত্রদের 'সম্মতিক্রমে ও মূল উদ্যেগে' চাঁদপুরের ইতিহাসে সর্বপ্রথম স্কুল প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে শুরু করে সকল ব্যাচের সমন্বয় "প্রতিষ্ঠার ১২৫ বছরের পূর্তি উদ্যাপন" করেছিল ৬ জানুয়ারি ২০১২ সালে। উক্ত উদ্যাপন কমিটিতে পদাধিকারবলে স্কুলের তৎকালীন প্রধানশিক্ষক - মোহাম্মদ হোসেনকে আহ্বায়ক এবং স্কুলের ১৯৮২ ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র অসিত বরণ দাশকে সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়। একই ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র মো. ইফতে খায়রুল আলম মাসুমকে প্রধান সমন্বয়কারীর করে এবং "জাহিদুল ইসলাম রোমান (১৯৮৯ ব্যাচ)", "নুরুল আমিন খান আকাশ (১৯৯১ ব্যাচ)", "শেখ রিযাজ আহমেদ রানা (১৯৯২ ব্যাচ)", শাহেদুল হক মোর্শেদ (১৯৯২ ব্যাচ)" সহ ৪ জন সমন্বয়কারী ছিলেন। বিদ্যালয়টি দেশের উল্লেখযোগ্য শিক্ষক, নাগরিক নেতৃবৃন্দ এবং প্রশাসক তৈরি করেছে।
বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যালয়টি ৩৪ বছর পর্যন্ত কালী বাড়ির কাছে অবস্থিত ছিল। ১৯১৯-এ, বিদ্যালয়টি এটির বর্তমান অবস্থানে আনা হয়। সে পর্যায়ে বিদ্যালয়টি দু’তলা বিশিষ্ট লাল ইটের ভবন ছিল। বর্তমানের তিনতলা হলুদ ভবনটি প্রায় ২০ বছরের পুরোনো। এ বিদ্যালয়টিতে ২০১১ সালে একটি সরকারি কলেজ স্থাপনের প্রস্তাবও করে ২০০২ ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্ররা,প্রস্তাবনায় যার নাম ছিল "চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ"।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
অতীতে বালক এবং বালিকা উভয়ই এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে, কিন্তু এখন এটি কেবল বালকদের জন্য। ২১০০ শিক্ষার্থী এখানের সর্বোচ্চ সংখ্যা।
এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেক কার্যক্রমে অংশ নেয়। যেমন-
এই বিদ্যালয়ের একজন ছাত্র ওয়ার্ল্ড স্কাউট জাম্বোরি-এ প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেন। সে হচ্ছে বাংলাদেশের একমাত্র ছাত্র যে সুইডেন -এ ওয়ার্ল্ড স্কাউট জাম্বোরিতে অংশ নেয়।
এই বিদ্যালয়টিতে দুটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার আছে। একটি বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র-ব্র্যাক লাইব্রেরির সমন্বিত উদ্যোগে এবং অন্যটি বিদ্যালয়ের নিজস্ব লাইব্রেরি। এই গ্রন্থাগারের মধ্যে ২৫,০০০ বই আছে। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম বিদ্যালয় গ্রন্থাগার।