হার্বার্ট ট্রেমেনহির হিউয়েট (ইংরেজি: Herbie Hewett; জন্ম: ২৫ মে, ১৮৬৪ - মৃত্যু: ৪ মার্চ, ১৯২১) সমারসেটের নর্টন ফিটজওয়ারেন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ শৌখিন ক্রিকেট তারকা ছিলেন। প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সমারসেট, অক্সফোর্ড ও মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে খেলেছেন হার্বি হিউয়েট। দলে তিনি মূলতঃ বামহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও মিডিয়াম বোলিং করতেন তিনি।
১৮৮৯ থেকে ১৮৯৩ সময়কালে কাউন্টি দলটির পক্ষে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে সেরা বোলারদের আক্রমণ মোকাবেলা করে দ্রুতলয়ে রান তুলতে তার জুড়ি মেলা ভার ছিল। বলকে শক্তিশালী কব্জির মোচড়ে আঘাত করতে তিনি অদ্বিতীয় ছিলেন। ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন।
হ্যারো স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন তিনি। ১৮৮৬ সালে অক্সফোর্ড থেকে ব্লু লাভ করেন। ১৮৮৪ সাল থেকে সমারসেটের পক্ষে খেলতে শুরু করেন হার্বি হিউয়েট। শুরুতে মাঝারীসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেন। তবে ঐ সময়ে তার খেলা ছন্দবিহীন অবস্থায় ছিল। তাস্বত্ত্বেও ১৮৮৯ সালে থেকে ১৮৯৩ সময়কালে কাউন্টি দলটির পক্ষে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব লাভের পরবর্তী দুই বছরে সুন্দর নেতৃত্বের মাধ্যমে ও উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে কাউন্টি দলকে প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশগ্রহণের মর্যাদায় প্রভূতঃ ভূমিকা রাখেন। এরফলে সমারসেট দল ১৮৯১ সালে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে খেলার সুযোগ পায়। এরপর আরও তিন বছর সমারসেটের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। ব্যাটিং উদ্বোধনে লিওনেল প্যালেরিটকে সাথে নিতেন। ১৮৯২ সালে তারা প্রথম উইকেট জুটিতে ৩৪৬ রান তুলেন। তন্মধ্যে, হিউয়েট ২০১ রানের মনোজ্ঞ ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন। অদ্যাবধি কাউন্টি দলটির পক্ষে এ জুটির সংগ্রহের রেকর্ডটি অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছে।[হ ১] ঐ মৌসুমে হিউয়েট ৩৫ ঊর্ধ্ব গড়ে ১৪০৫ রান তুলেন। ফলশ্রুতিতে উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা পাঁচ ব্যাটসম্যানের একজনরূপে মনোনীত হন।
১৮৯২ সালে নিজ দেশে ইংল্যান্ড দল কোন টেস্টে অংশগ্রহণ করেনি। নতুবা, হিউয়েট টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করতেন। তবে, খেলোয়াড়ী জীবনে সেরা ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শনের প্রেক্ষিতে ১৮৯৪ সালে লর্ডসে জেন্টলম্যানের সদস্যরূপে প্লেয়ার্সের বিপক্ষে খেলার জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। ১৮৯৩ সালে অস্ট্রেলীয় একাদশের বিপক্ষে খেলার বিষয়ে মতানৈক্যের সৃষ্টি হওয়ায় ঐ মৌসুম শেষে সমারসেট থেকে তাকে চলে আসতে হয়েছিল।
এরপর তিনি আরও তিন বছর প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। এ সময়ে শৌখিন ও প্রতিনিধিত্বমূলক দলের সদস্যরূপে অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছেন। ১৮৯৫ সালে স্কারবোরায় ইংল্যান্ড একাদশ দলের অধিনায়ক মনোনীত হন। ভেজা পিচে খেলা আয়োজন নিয়ে আবারও বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। দর্শকদের রোষানলে পড়ে প্রথম দিন মধ্যাহ্নভোজনের বিরতিতে খেলা থেকে সরে আসেন। এরপর তিনি আর মাত্র একটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেন। ১৮৯৬ সালে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের সদস্যরূপে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে খেলেন।
ইনার টেম্পলের বারে ব্যারিস্টার হিসেবে কাজ করতে থাকেন।
প্রারম্ভিক জীবন
হার্বার্ট ট্রেমেনহির হিউয়েট ২৫ মে, ১৮৬৪ তারিখে টনটনের কাছাকাছি নর্টন ফিটজওয়ারেনর নর্টন কোর্টে জন্মগ্রহণ করেন। উইলিয়াম হেনরি ও ফ্রান্সেস এম হিউয়েট দম্পতির একমাত্র পুত্রসন্তান ছিলেন তিনি।[১] একমাত্র পুত্র হলেও এ দম্পতির কমপক্ষে চারজন কন্যা ছিল।
১৮৭১ সালে এমিলি লুইসা ও হেলেন জি নাম্নী দুই জ্যেষ্ঠ বোন ফ্লোরেন্স এথেল নাম্নী আরও এক ছোট বোনকে নিয়ে আদমশুমারীতে তালিকাভূক্ত হন।[২] ১৮৯১ সালে মেরি ডব্লিউ নাম্নী আরও এক ছোট বোন তালিকাভূক্ত হন। তবে এ সময়ে উভয় জ্যেষ্ঠ বোন ঐ ঠিকানায় ছিলেন না কিংবা তাদের পিতা উইলিয়াম হেনরিকে রাখা হয়নি।[৩]
শুরুতে গড্যালমিংয়ের হিলসাইডে পড়াশোনা করেন। সেখানে তিনি ক্রিকেট ও রাগবি দলের অধিনায়ক মনোনীত হয়েছিলেন।[৪] ১৮৭৯ সালে হিলসাইড ত্যাগ করে হ্যারো স্কুলে চলে যান। ১৮৮১ সালে বিদ্যালয় ক্রিকেট একাদশ দলের প্রস্তুতিমূলক খেলায় তার বোলিংয়ের শক্তিমত্তা লক্ষ্য করা যায়। আবাসিক দলের খেলায় তিনি ২২ রান দিয়ে সকল উইকেট পান। ১৮৮২ ও ১৮৮৩ সালে বিদ্যালয়ের প্রথম ক্রিকেট একাদশ দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন।[৫] উভয় বছরেই বার্ষিক প্রতিযোগিতার খেলায় এটন কলেজের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হন। তবে কোনটিতেই আশাপ্রদ খেলা উপহার দিতে পারেননি হার্ব হিউয়েট। সর্বোচ্চ ছয় রান তুলেন। ১৮৮২ সালে প্রথম ইনিংসে এ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন।[৬][৭]
হ্যারোতে পড়াশোনা শেষ করার পর অক্সফোর্ডের ট্রিনিটি কলেজে ভর্তি হন। তার উত্থানের বিষয়ে ডব্লিউ. জি. গ্রেস মন্তব্য করেন যে, সরকারী বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেটে শুরুতে তিনি খুব কমই পরিচিতি পেয়েছেন। কিন্তু, সমারসেটশায়ারে যোগ দেয়ার ফলে কাউন্টি ক্রিকেটে প্রতিভাধর খেলোয়াড়ে পরিণত হন।[৮]
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
১৮৮৪ সালে ফ্রেশম্যানের খেলায় অংশ নিয়ে শূন্য ও আট রান এবং দুই উইকেট পান।[৯] এরপর অক্সফোর্ডে প্রথম মৌসুমে অংশ নিয়ে খুব কমই প্রভাব রাখেন। ফলশ্রুতিতে, বিশ্ববিদ্যালয় একাদশের সদস্যরূপে মনোনয়ন পাননি। এরপর ঐ মৌসুম শেষে সমারসেটের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলার জন্য নাম লেখান। টানব্রিজ ওয়েলসে অনুষ্ঠিত অভিষেক খেলায় অংশগ্রহণকালীন তার বয়স ছিল ২০ বছর।
২৫ আগস্ট, ১৮৮৪ তারিখে সমারসেটের সদস্যরূপে কেন্টের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। আগস্টের শেষদিকে কেন্টের বিপক্ষে অংশ নিয়ে মাঝারীসারিতে খেলে ১৪ ও ০ রান তুলেন। বল হাতে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে দুইটি উইকেট তুলে নেন।[১০] ১৮৮৪ সালে ল্যাঙ্কাশায়ারের বিপক্ষে আরও একটি খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।
১৮৮৫ সালে অক্সফোর্ডে অনুশীলনীমূলক খেলায় অংশ নিলেও তেমন সফলতা পাননি।[১১] তবে, ঐ গ্রীষ্মে সমারসেটের ছয়টি প্রথম-শ্রেণীর খেলার মধ্যে চারটিতে অংশগ্রহণ ছিল তার।[১২][১৩] মধ্য জুলাইয়ে সমারসেটের পক্ষে মৌসুমের প্রথম খেলায় হিউয়েট তার প্রথম অর্ধ-শতরানের সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ৫০ রানে থাকা অবস্থায় হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে তার দল পাঁচ উইকেটে জয় তুলে নেয়।[১৪] ১৮৮৫ সালে সমারসেটের পক্ষে আরও দুইবার পঞ্চাশোর্ধ্ব রান তুলেন। ঐ মৌসুমে ৩৫.২৮ গড়ে ২৪৭ রান তুলেন। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে সাত মৌসুমে ৩০ ঊর্ধ্ব গড়ে রান তোলার এটি প্রথম ঘটনা ছিল।[১৫]
১৮৯২ সালে সমারসেটের পক্ষে ১,০৪৭ রান তুলেন। এরফলে, কাউন্টি খেলায় সহস্রাধিক রান সংগ্রহকারী হিসেবে তিনিই একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে এ অর্জনে যুক্ত হয়েছিলেন।[১৬] প্রথম-শ্রেণীর খেলায় সর্বমোট ১,৪০৭ রান করেন যা যে-কোন ব্যাটসম্যানের তুলনায় অধিক ছিল। শৌখিন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ব্যাটিং গড়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। ফলশ্রুতিতে, ১৮৯৩ সালে উইজডেন কর্তৃক পাঁচ বর্ষসেরা ব্যাটসম্যানের অন্যতম মনোনীত হন। এতে উল্লেখ করা হয় যে, গত আগস্টে যদি ইংল্যান্ড একাদশের প্রতিনিধিত্বমূলক দল মাঠে নামতো তাহলে তিনি নিঃসন্দেহে দলে ঠাঁই পেতেন।
হিউয়েটের নেতৃত্বে ১৮৯২ সালে সমারসেট আট খেলায় জয় পায়, তিনটিতে ড্র ও পাঁচটিতে পরাজিত হয়েছিল। এরফলে দলটি কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে তৃতীয় স্থান দখল করেছিল যা তাদের শত বছরেরও অধিক সময়কালে সর্বোচ্চ অবস্থান ছিল। পরবর্তীতে ২০০১ সালে ঐ প্রতিযোগিতায় রানার-আপ হয়ে ঐ রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলতে সমর্থ হয়।[১৭] দ্য টাইমসে ঐ বছরে কাউন্টির এ অর্জনের বিষয়ে উচ্ছসিত প্রশংসাবাক্য লিপিবদ্ধ করা হয় ও হিউয়েটের সুন্দর ক্রীড়াশৈলীর জন্য বিশেষভাবে লেখা হয়।
অবসর
সমারসেট থেকে চলে আসার পর কাউন্টি ক্রিকেটে আর খেলা চালিয়ে যাননি হার্বি হিউয়েট। শৌখিন ও প্রতিনিধিত্বমূলক দলের সদস্যরূপেই তাকে প্রথম-শ্রেণীর খেলায় দেখা যেতো। ১৮৯৩ সালে সাউথের সদস্য হিসেবে তিনবার নিচেরসারিতে খেলতে নেমে দুই অর্ধ-শতক হাঁকান।[১৮][১৯]
১৯০১ সাল পর্যন্ত হ্যারো ওয়ান্ডেরার্স, এমসিসি ও আই জিঙ্গারির পক্ষে খেলা চালিয়ে যান। ১৯০১ সালের আদমশুমারীতে দেখা যায় যে, তিনি ওয়েস্টমিনস্টার এলাকায় বসবাস করতেন। তিনি বাড়ীর গৃহকর্তা ছিলেন ও অন্যজন চাকর ছিলেন।[২০]
ব্যারিস্টার হিসেবে কাজ চালিয়ে যান। ইনার টেম্পলে প্রশিক্ষণ লাভ করে ১৮৯০ সালে কমপক্ষে একবার পরীক্ষায় কৃতকার্য হন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে টেরিটরিয়াল ফোর্স রিজার্ভে সহকারী প্রভোস্ট মার্শাল পদে নিযুক্ত ছিলেন। ৭ সেপ্টেম্বর, ১৯১৫ থেকে ২৪ মে, ১৯১৮ তারিখ পর্যন্ত এ দায়িত্বে ছিলেন তিনি।[২১][২২]
৪ মার্চ, ১৯২১ তারিখে ৫৬ বছর বয়সে সাসেক্সের হোভে দেহাবসান ঘটে তার। চারদিন পর নর্টন ফিটজওয়ারেন এলাকায় তার শবানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। তার স্মরণে দ্য টাইমসে কেবলমাত্র হিউয়েটের খেলোয়াড়ী জীবন সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়। শেষদিকের জীবন সম্পর্কে কোন তথ্য দেয়া হয়নি। এছাড়াও, স্ত্রী কিংবা সন্তানের কথাও লেখা ছিল না।
মূল্যায়ন
১৮৯৩ সালে উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাক কর্তৃক পাঁচ বর্ষসেরা ব্যাটসম্যানের অন্যতম ব্যাটসম্যানরূপে মনোনীত হন। তখন ঐ সংখ্যায় তাকে ইংল্যান্ডের সেরা বামহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে গণ্য করা হয়।
প্রচলিত রীতিবিরুদ্ধ অবস্থায় খেললেও আক্রমণাত্মক ধাঁচ বজায় রাখতেন। ফলশ্রুতিতে, ডব্লিউ. জি. গ্রেস তার উদ্যমী ভূমিকা ও ভীতিহীন বল মোকাবেলা করার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। পাশাপাশি ছন্দবিহীন খেলার কথাও তুলে ধরা হয়।
স্যামি উডস মন্তব্য করেন যে, হিউয়েট ফিল্ডিং করতে পছন্দ করতেন না। তবে, পয়েন্ট এলাকায় বেশ দূর্দান্ত ভূমিকা রাখতেন। উডস আরও মন্তব্য করেছেন যে, ফিল্ডিংকালে তিনি সর্বদাই চিবুতেন; এমনকি দল হেরে গেলেও।[২৩]
সমারসেটের শেষ মৌসুমে তার অধিনায়কত্বে দল কম সফলতা পায়। ষোল খেলায় অংশ নিয়ে দলটি মাত্র চার খেলায় জয়লাভ করে অষ্টম স্থান অধিকার করতে সক্ষম হয়।[২৪]
↑Walsh, Richard, সম্পাদক (২০১০)। "Somerset's performance in the County Championship (1891–2009)"। Somerset County Cricket Club and Somerset Cricket Board Yearbook 2009/10। Greenpark Publishing। পৃষ্ঠা 66–67।