সুখোই সু-৩৫ ( রুশ: Сухой Су -35; ন্যাটোর প্রতিবেদনে নাম : ফ্ল্যাঙ্কার-ই ) হচ্ছে সু-২৭ আকাশ প্রতিরক্ষা যুদ্ধ বিমানের দুটি উন্নত সংস্করণের উপাধি। এগুলো একক আসন ও জোড়া ইঞ্জিনের সুপারম্যানিউভেরেবল বিমান, সুখোই ডিজাইন ব্যুরো এটি ডিজাইন করেছে এবং কমসোমলস্ক-অন-আমুর এয়ারক্রাফট প্ল্যান্ট দ্বারা এটি নির্মিত হয়েছে।
যুদ্ধ বিমানের এ টাইপটি মূলত সোভিয়েত ইউনিয়ন সু-২৭ থেকে তৈরি করেছিল এবং এটি সু-২৭ এম নামে পরিচিত ছিল। এটিতে মাল্টি-ফাংশন রাডার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা এটিকে মাল্টি-রোল ক্ষমতা দেয়। প্রথম প্রোটোটাইপ ১৯৮৮ সালের জুনে প্রথম উড্ডয়ন করেছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরে সুখোই -এর রফতানি আদেশকে আকর্ষণ করার জন্য এটিকে আবার সু-৩৫ হিসাবে মনোনয়ন করা হয়। এর চৌদ্দটি বিমান তৈরি করা হয়েছিল এবং পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল; এর একটি উদাহরণ ছিল থ্রাস্ট-ভেক্টরিং ইঞ্জিনের যা সু-৩৭ এ রূপান্তরিত হয়। ১৯৯০ এর দশকের শেষদিকে সু-৩৫ইউবি দ্বি-আসনের প্রশিক্ষণ বিমানও তৈরি করা হয়েছিল যা সু-৩০ এমকে পরিবারের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
২০০৩ সালে সুখোই পিএফএ এফএ (সু-৫৭) প্রোগ্রামের উন্নয়নের অপেক্ষায় অন্তর্বর্তীকালীন বিমান হিসাবে কাজ করার জন্য সু-২৭ কে দ্বিতীয় আধুনিকীকরণের কাজ শুরু করা হয়। সু-৩৫ নামে পরিচিত, এই সংস্করণটিতে একটি নতুন নকশাকৃত ককপিট এবং অস্ত্র-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে এবং ক্যানার্ডের জায়গায় থ্রস্ট-ভেক্টরিং ইঞ্জিন রয়েছে। প্রকরণটি ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার প্রথম উড়িয়ে শুরু করে। যদিও এটি রফতানির জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল, তারপরও রাশিয়ান এয়ার ফোর্স ২০০৯ সালে প্রযোজনা সংসণের জন্য মনোনীত সু-৩৫এস -এর লঞ্চ গ্রাহক হয়। চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্স এবং ইন্দোনেশিয়ান বিমানবাহিনীও ক্রয়াদেশ দিয়েছে।
সংস্করণ
সু-২৭এন/সু-৩৫
টি-১০এম (মডার্নাইজারওয়ানি, "আপগ্রেডেড") কারখানা কোড সহ একক আসনের যুদ্ধবিমানের নকশা। প্রথম দুটি প্রোটোটাইপে একটি নতুন ফরোয়ার্ড ফিউজেলাজ, ক্যানার্ডস এবং হালনাগাদ ফ্লাই বাই ওয়্যার ফ্লাইট-কন্ট্রোল সিস্টেম ছিল। কেএনএএপিওর নয়টি উড়ন্ত প্রাক-উৎপাদিত বিমানের (টি-১০এম -৫, টি-১০এম -৬ এবং টি-১০এম -৭) তিনটির মতো এগুলোও এস-২৭ এয়ারফ্রেম থেকে রূপান্তরিত হয়েছিল। [৫][৬] তৃতীয় বিমানটি (টি-১০এম -৩) সাতটি প্রাক-উৎপাদিত বিমানের মধ্যে প্রথম যার উল্লম্ব লেজ, দ্বি-চাকা নোজ আন্ডারক্যারিয়েজ এবং ইন-ফ্লাইট রিফুয়েল ক্ষমতা ছিল। [৭] সু-২৭এম AL-31FM টার্বোফ্যান ইঞ্জিন দ্বারা চালিত ছিল। [৮] দুটি প্রোটোটাইপ, নয়টি প্রাক-উৎপাদিত এবং তিনটি উৎপাদিত বিমান ১৯৯৫ সালে নির্মিত হয়েছিল;[১] দুটি স্ট্যাটিক-পরীক্ষা বিমানও নির্মিত হয়েছিল (T10M-0 এবং T10M-4)।[৯] বিমানটি বড় কোনো প্রোডাকশনে প্রবেশ করেনি।
সু-৩৭
প্রযুক্তি প্রদর্শনকারী, একাদশ উন্নয়নমূলক সু-২৭এম (টি-১০এম -১১) থেকে রূপান্তরিত। সু-৩৭ -এ একটি ডিজিটাল ফ্লাই-বাই-ওয়্যার ফ্লাইট-কন্ট্রোল সিস্টেম, একটি গ্লাস ককপিট, এন০১১ এম রাডার, এবং থ্রাস্ট-ভেক্টরিং নোলস সহ AL-31FP ইঞ্জিন বৈশিষ্ট্যযুক্ত। [১০] বিমানটিতে পরে স্ট্যান্ডার্ড-প্রডাকশন AL-31F ইঞ্জিন লাগানো হয়েছিল এবং এর ফ্লাইট-কন্ট্রোল সিস্টেম এবং ককপিট সিস্টেম সংশোধন করা হয়েছিল। [১১]
সু-৩৫ইউবি
KnAAPO দুই সিটের এই প্রশিক্ষণ বিমান ডিজাইন ও তৈরি করেছিল। একক বিমান (T-10UBM-1) সু-২৭এম এর ক্যানার্ড এবং লম্বা উল্লম্ব লেজ সু-৩০এমকেকে -এর অনুরূপ একটি ফরোয়ার্ড ফিউজেল বৈশিষ্ট্যযুক্ত। এছাড়া সু-৩৫ইউবি সু-৩০এমকেকে এর এভায়োনিক স্যুট ভাগ করেছে, যদিও এটিতে ক্যানার্ডগুলো সামঞ্জস্য করার জন্য আলাদা ফ্লাই বাই ওয়্যার ফ্লাইট-কন্ট্রোল সিস্টেম ছিল।[১২] বিমানটি থ্রস্ট-ভেক্টরিং অগ্রভাগ সহ AL-31FP ইঞ্জিন দ্বারা চালিত ছিল।[১৩] যদিও এটি একটি প্রশিক্ষণ বিমান, তারপরও সু-৩৫ইউবি কে সম্পূর্ণরূপে যুদ্ধ-সক্ষম হিসাবে ডিজাইন করা হয়েছিল।
সু-৩৫বিএম
একক আসনের যুদ্ধবিমান যা আসলে সু-২৭ -এর একটি নতুন নকশা। এই টাইপটিতে সু-২৭এম -এ পাওয়া যায় এমন ক্যানার্ড এবং ডোরসাল এয়ার ব্রেক অপসারণ সহ এয়ারফ্রেমে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন রয়েছে। এটিতে হালনাগাদ হওয়া এন০৩৫ ইরবিস-ই রাডার এবং একটি নতুন নকশাকৃত ককপিট রয়েছে। বিমানটি থ্রাস্ট-ভেক্টরিং AL-41F1S টার্বোফান ইঞ্জিন দ্বারা চালিত যা সুপারক্রিউজ সক্ষম টি -10 বিএম হিসাবে পরিচিত (বলশায় মডার্নাইটিসিয়া, "মেজর মডার্নাইজেশন")।[১৪][১৫]
সু-৩৫এস
রাশিয়ান এয়ার ফোর্সের জন্য উৎপাদিত টি-১৯ বিএম ডিজাইনের নাম। এভিয়েশন উইক অ্যান্ড স্পেস টেকনোলজি অনুসারে, "এস" এর অর্থ স্ট্রয়েভয় (" যুদ্ধবিমান ")। [১৬]
ব্যবহারকারী
চীন
পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্স - ইনভেন্টরিতে ২৪ টি বিমান[৩]
ষষ্ঠ এভিয়েশন ব্রিগেড - ষষ্ঠ বিমান ঘাঁটি, কুয়াংতুং[১৭]
মিশর
মিশরীয় বিমানবাহিনী - ২০১৮ সালে চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার আদেশে ২৪ টি।[১৮]
ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশীয় বিমানবাহিনী - আদেশ অনুসারে ১১ টি বিমান [১৯][২০]
রাশিয়া
রাশিয়ান এয়ার ফোর্স - ৯২ টি বিমান[২১][২][২২] জানুয়ারী ২০১৬ এ চূড়ান্ত হওয়া ৫০ টি বিমান দ্বিতীয়বারে এই সংখ্যা বাড়িয়ে ৯৮ টি করা হয়; ডেলিভারি একই বছর শুরু করে প্রতি বছর ১০ টি করে বিমান ডেলিভারি দেয়া হবে।[২৩]
২৩ তম ফাইটার এভিয়েশন রেজিমেন্ট - ডিজোমগি বিমানবন্দর, খবরভস্ক ক্রেই[২৪]
↑Pyadushkin, Maxim (১২ জানুয়ারি ২০১৬)। "Russia Places New Order For 50 Su-35S Fighters"। Aerospace Daily & Defense Report। Aviation Week। ১১ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুলাই ২০১৭।