স্যার চার্লস অব্রে স্মিথ, সিবিই (ইংরেজি: C. Aubrey Smith; জন্ম: ২১ জুলাই, ১৮৬৩ - মৃত্যু: ২০ ডিসেম্বর, ১৯৪৮) লন্ডনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ঘরোয়া প্রথমশ্রেণীর ক্রিকেটে সাসেক্স, কেমব্রিজ, এমসিসি ও ট্রান্সভালের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট-বোলার ছিলেন। এছাড়াও নিচেরসারিতে কার্যকরী ডানহাতি ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন তিনি।
চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশের পর সি. অব্রে স্মিথ নামে পরিচিতি পান। ক্রিকেটের পাশাপাশি মঞ্চ ও চলচ্চিত্র অভিনয় কর্মের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন। হলিউডে অবস্থানকালে ব্রিটিশ অভিনেতাদেরকে নিয়ে দল গঠন করেন। আনুষ্ঠানিক খেলাগুলোয় তাদের ক্রীড়াশৈলী স্থানীয় দর্শকদের মনোরঞ্জনের খোরাক জোগাতো।
প্রারম্ভিক জীবন
ইংল্যান্ডের লন্ডনে জন্মগ্রহণকারী স্মিথ বিশিষ্ট চিকিৎসক চার্লস জন স্মিথ ও সারাহ অ্যান দম্পতির সন্তানরূপে জন্মগ্রহণ করেন। তার বোন বেরিল ফাবেরকে কসমো হ্যামিল্টনের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ করানো হয়েছিল।[১]
চার্টারহাউজ স্কুলে অধ্যয়ন করেন স্মিথ। এরপর কেমব্রিজের সেন্ট জোন্স কলেজে পড়াশোনা করেন।[২][৩] ১৮৮৮-৮৯ অর্থবছরে দক্ষিণ আফ্রিকায় স্বর্ণের আকর্ষণে বসতি স্থাপন করেন। এ সময়ে সর্দি জ্বরে আক্রান্ত হন। ভুলক্রমে তাকে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেছিলেন। ১৮৯৬সালে ইসাবেলা নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন তিনি।
খেলোয়াড়ী জীবন
ক্রিকেটার হিসেবে স্মিথ মূলতঃ ডানহাতে ফাস্ট-বোলিং করতেন ও নিচেরসারিতে ডানহাতে কার্যকরী ব্যাটসম্যানের দায়িত্বে থাকতেন। এছাড়াও সুদক্ষ ফিল্ডার হিসেবেও সুনাম ছিল তার। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বোলাররূপে তার সবিশেষ পরিচিতি ছিল। বোলিং করার সময় অদ্ভুতভাবে বাঁকানো দৌড়ের জন্য ডিপ মিড-অফ এলাকা থেকে শুরু করতেন। ফলশ্রুতিতে 'রাউন্ড দ্য কর্নার স্মিথ' ডাকনামে পরিচিতি লাভ করেন অব্রে স্মিথ।[৪]
১৮৮২ থেকে ১৮৯২ সময়কালীন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে খেলতেন। এছাড়াও ১৮৮২ থেকে ১৮৯২ সময়কালে সাসেক্সের পক্ষে বিভিন্ন সময়ে ক্রিকেট খেলতেন।[৫] দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থানকালে জোহেন্সবার্গ ইংরেজ একাদশের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
ইংল্যান্ডের পক্ষে একটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করলেও অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। ঐ টেস্টটিতে ইংল্যান্ড জয়লাভ করেছিল। ১৮৮৮-৮৯ মৌসুমে পোর্ট এলিজাবেথে অনুষ্ঠিত টেস্টের প্রথম ইনিংসে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে উনিশ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট দখল করেছিলেন।[৬] ইংরেজ দলে ঐ সময়ের সেরা খেলোয়াড়দের অন্তর্ভুক্তি ছিল না ও কেউ জানতো না যে খেলাটি আনুষ্ঠানিকভাবে টেস্টখেলা হিসেবে গণ্য হবে।
চলচ্চিত্রে অংশগ্রহণ
শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রী গ্রেটা গার্বো, এলিজাবেথ টেলর ও ভিভিয়েন লেই এবং অভিনেতা ক্লার্ক গ্যাবল, লরেন্স অলিভিয়ের, রোনাল্ড কোলম্যান, মরিস চেভালিয়ের ও গ্যারি কুপারের সাথে কাজ করেছেন।
টারজান ধারাবাহিক চলচ্চিত্রের প্রথমটি ১৯৩২ সালের টারজান দি অ্যাপ ম্যানে জনি ওয়াইজমুলারের সাথে অভিনয় করেন। তিনি মরিন ওসালিভানের পিতার চরিত্রে ছিলেন।
স্মিথ খেলতে ভালোবাসতেন। তার ভাষায় হলিউড ইংরেজদের আবাসস্থল। ঘন ভ্রু, গোলাকৃতি আঁখি, হাতল আকৃতির গোঁফ ও ৬ ফুট ৪ ইঞ্চির দীর্ঘদেহ হলিউডের সর্বাপেক্ষা পরিচিত মুখের মর্যাদা এনে দেয়।
হলিউড ক্রিকেট ক্লাব
১৯৩২ সালে হলিউড ক্রিকেট ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ইংল্যান্ড থেকে ঘাস এনে পিচ তৈরি করেন। স্বদেশী ডেভিড নিভেন, লরেন্স অলিভার, নাইজেল ব্রুস, লেসলি হাওয়ার্ড[৭] ও বরিস কারলফসহ স্থানীয় মার্কিন খেলোয়াড়দেরকে ক্লাবের সদস্য করেন। তন্মধ্যে নাইজেল ব্রুসকে অধিনায়কের দায়িত্বে রাখা হয়েছিল।
স্মিথ স্বদেশীদেরকে নিয়মিত হলিউড ক্রিকেট ক্লাবে হাজিরা দিতে উদ্বুদ্ধ করতেন। ব্যতিক্রম ঘটলে তার অসন্তুষ্টির কবলে পড়তে হতো। উগ্র জাতীয়তাবাদী স্মিথ ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধে অনাগ্রহী উপযুক্ত অভিনেতাদের বিপক্ষে সমালোচনায় মুখরিত থাকতেন।
সম্মাননা
হলিউড ওয়াক অব ফেমের অন্যকম তারকা ছিলেন তিনি।[৮] ফ্রন্টিয়ার্সম্যান লেজিওনে স্মিথ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৩৮ সালে ব্রিটিশ এম্পায়ার কমান্ডার অর্ডার সিবিই পদবী লাভ করেন। [৯] অ্যাংলো-আমেরিকান মৈত্রীতে অবদানের[১০][১১][১২] স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৪৪ সালে রাজা ষষ্ঠ এডওয়ার্ড কর্তৃক নাইট পদবীপ্রাপ্ত হন।[১৩]
দেহাবসান
৮৫ বছর বয়সে ফুসফুস প্রদাহজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৪৮ সালে তার দেহাবসান ঘটে। সমাহিত করার নয় মাস পর তার ইচ্ছে অনুযায়ী নিজদেশ যুক্তরাজ্যে তার ভস্ম নিয়ে যাওয়া হয়। সাসেক্সের হোভের সেন্ট লিওনার্ডস সমাধিক্ষেত্রে মায়ের সাথে রাখা হয়।
তথ্যসূত্র
↑Who Was Who in the Theatre: 1912-1976 vol. 4, Q-Z, p. 2208; compiled from editions originally published annually by John Parker, this 1976 version by Gale Research.