সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ

মাইকেল মধুসূদন সরকারি কলেজ
নীতিবাক্যজ্ঞানই শক্তি
ধরনসরকারি
স্থাপিত১৯৪১[]
ইআইআইএন১১৬১০১ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
অধ্যক্ষপ্রফেসর ড. খন্দোকার এহসানুল কবির
শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিবর্গ
প্রায় ১৬০ জন
শিক্ষার্থীপ্রায় ৩০ হাজার[]
ঠিকানা
শাহ আব্দুল করিম রোড, খড়কি
, ,
বাংলাদেশ

২৩°০৯′৩৮″ উত্তর ৮৯°১২′০৭″ পূর্ব / ২৩.১৬০৪৮৪° উত্তর ৮৯.২০২০৫৭° পূর্ব / 23.160484; 89.202057
শিক্ষাঙ্গনশহুরে
অধিভুক্তিজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
ওয়েবসাইটhttps://mmcollege.edu.bd
মানচিত্র

সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে যশোরে খড়কিতে অবস্থিত একটি স্নাতকোত্তর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় এটি যশোর কলেজ নামে পরিচিত ছিল, যা ১৯৪১ সালে থেকে বর্তমানে সরকারি এম এম কলেজ নামে পরিচিত হয়। বর্তমানে কলেজটি উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক, সম্মান এবং স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠ দান করা হয়। বর্তমানে এখানে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।[]

ইতিহাস

যশোরে উচ্চশিক্ষার জন্য একটি কলেজ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা বহুদিন থেকেই অনুভূত হয়ে আসছিল এবং সময়ে বৃথা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এবং এটি ১৯৪১ সালে কার্যকর রূপ নেয়। তখন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গঙ্গানন্দপুর ইউনিয়ন এর শ্রেষ্ঠ সন্তান অধ্যাপক মহিতোষ রায় চৌধুরীর পদক্ষেপে ১৯৪০ সালের আগস্ট মাসে রায় বাহাদুর কেশবলাল চৌধুরী এবং যশোর পৌরসভার সভাপতি সুরেন্দ্রনাথ হালদারের নিজের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন প্রকল্পে এক জরুরি সভার আয়োজন করা হয়। এ সভায় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন যশোরের তৎকালীন জেলা জজ এস.কে.গুপ্ত। এই অধিবেশনেই স্থির করা হয় যে যশোর এ একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা দরকার। এই উদ্দেশ্যে ক্ষিতিনাথ ঘোষ এবং মহিতোষ রায় চৌধুরীকে যথাক্রমে সম্পাদক ও যুগ্ন সম্পাদক করে ড.জীবনরতন ধর-কে কোষাধ্যক্ষ করে এবং প্রফুল্ল রায়চৌধুরী (এম, এ, বি-এল) কে সহকারী সম্পাদক করে ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়।

এরপর কার্যনির্বাহী কমিটি স্থানীয় মেডিকেল কর্তৃপক্ষের কাছে যান। যেহেতু মেডিকেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাভে অকৃতকার্য হয়, ফলে তাঁদের সম্পত্তি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়েছিল। এবং পরে ৮টি শর্তের ভিত্তিতে কলেজ পরিচালনা কমিটির সম্পাদক ক্ষিতিনাথ ঘোষ ও সহ-সম্পাদক প্রফুল্ল রায় চৌধুরী একটি দলিলপত্র তৈরি করেন।

প্রাক-ইতিহাস এবং পরিচালনা কমিটি

১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এর সময়ে মিত্রবাহিনী কলেজে ঘাঁটি স্থাপন করে। এই সময় কলেজ কর্তৃপক্ষ হাটবাড়ীয়ার জমিদারের কাঁচারী বাড়িতে (বর্তমান ফায়ার ব্রিগিড অফিস) কলেজ টিকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এবং সেখানে ক্লাস শুরু করা হয়। ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষ হলে পুনরায় কলেজটিকে পূর্বের স্থানে ফিরিয়ে আনা হয়। আর ঐ সময় কলেজের প্রথম নামটি পরিবর্তন করে যশোরের শ্রেষ্ঠ সন্তান মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের নামে নামকরণ করা হয় সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ বা এম. এম. কলেজ,যশোর নামে।

কলেজ প্রতিষ্টায় কিছু মানুষের অবদান ছিল বিশেষভাবে স্মরণীয় তাঁরা হলেন বিজয় কৃষ্ণরায়, শ্রী নীল রতনধর,বিজয় রায়, খান বাহাদুর লুৎফুর, এড. আব্দুর রউফ. বি. সরকার, নগেন্দ্রনাথ ঘোষ, রনদা প্রসাদ সাহা ও সেই সময়ে কলেজের শিক্ষকবৃন্দ।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর অধিকাংশ হিন্দুসম্প্রদায় এর লোক এই দেশ ত্যাগ করায় কলেজটির সাময়িক সংকট দেখা দেয়। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই স্থানীয় বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিবর্গের সহায়তায় সংকট কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়। ঐ সময় কলেজ পরিচালনার জন্য কিছু ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠন করা হয় কলেজ পরিচালনার নতুন কমিটি। তারা অত্যন্ত সফলতার সাথে কলেজ পরিচালনা করতে সক্ষম হন।

আব্দুর রহিম জোয়াদ্দার ১৯৪৯ সালে কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করে কলেজ এর বেশ কিছু উন্নতিসাধন করেন। ১৯৫৬ সালে কলেজে বি.কম (পাস) কোর্সটি চালু করা হয়। ১৯৫৬ সালে কলেজটিতে বি, এস-সি (পাস)কোর্স সহ ভূগোল ও অর্থনীতি, বাংলা বিভাগের সম্মান শ্রেণীর জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনুমোদিত হয়। পরবর্তীকালে ১৯৭১ সালে ইতিহাস বিভাগ চালু হয়। ১৯৫৯ সালের দিকে অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল হাই ও যশোর জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট, কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি এম. রুহুল কুদ্দুস এর প্রচেষ্টায় কলেজটিকে বড়পরিসরে স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়।

কলেজের নতুন জায়গা নির্ধারণ এবং অন্যান্য কিছু জমি দান করেন হাজী মোঃ মোরশেদ, মোঃ আব্দুল খায়েরসহ যশোরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। খড়কী এলাকার যারা জমি দিতে আগ্রহী হন তাঁদের মধ্যে খড়কীর মুন্সী নছিম উদ্দীন, মোঃ মহাতাব বিশ্বাস, মোঃ আব্দুল লতিফ, মোহাম্মদ আলী, জবুর আলী জোয়াদ্দার, মোঃ দলিল উদ্দীন, আব্দুস ছোবহা,শরীফ শামছুর রহমান, মোঃ ইমান আলী, প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। কলেজ সীমানার ভেতর ছিল তখন পরিত্যক্ত যশোর - ঝিনাইদহ রেল লাইন। এই পরিত্যক্ত রেইল লাইনের তিন বিঘা খাস জমিও কলেজকে দেওয়া হয়েছিল। কলেজের কাজ সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য দুটি কমিটি গঠন করা হয়। একটি প্রকল্প কমিটি এবং অপরটি নির্মাণ কমিটি।

১৯৬০ সালের দিকে পরিত্যক্ত রেললাইনের পরিত্যক্ত জমির উপর কলেজের কলাভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। ঐ সময় কলেজের নতুন ভবন নির্মাণ এর উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয় ১৯ লক্ষ টাকা। নতুন এই কলা ভবনে কলেজের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৬২ সালে।[]

প্রথম শিক্ষার্থী ও অবকাঠামো

কলেজটিতে প্রথম ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি শুরু হয় ১৯৪১ সালের ১ জুলাই। ১৯৪১-১৯৪২ শিক্ষাবর্ষের মোট ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ছিল ১৪৬ জন। প্রথম ছাত্র ছিল অনন্ত কুমার ঘোষ। প্রথমবছর যে চারজন ছাত্রী ভর্তি হয় তাঁরা হলেনঃ কল্যাণী দত্ত, মোসাম্মৎ মনোয়ারা খাতুন, লীলা রায়, এবং শান্তি মুখার্জ্জী। মুসলিম ছাত্র ছিল ৩৭ জন এবং হিন্দু ছাত্র ছিল ১০৯ জন। কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন ড. ধীরেন্দ্র নাথ রায়।[] ঐ সময় কলেজের অধিকাংশ ছাত্রই ছিল স্থানীয়। তবে যারা বহিরাগত ছিল তাদের জন্য ছিল দুটি আলাদা ছাত্রাবাস। একটি মুসলিম ছাত্রাবাস এবং অপরটি হিন্দু ছাত্রাবাস।

শিক্ষাকার্যক্রম

১৯৫০-এর দশকে কলেজটিতে বি.কম (পাস) ও বি.এসসি (পাস) কোর্স প্রবর্তন করা হয়। ১৯৫৯ সালে ক্যাম্পাস বর্ধিতকরণের লক্ষ্যে জেলা ম্যাজিট্রেট এম রুহুল কুদ্দুস-এর সহযোগিতায় চুয়াডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ড থেকে বর্তমান অবস্থানে (খড়কী মৌজায়) কলেজটি স্থানান্তর করা হয়। ১৯৬২ সালে বাংলা, অর্থনীতি ও ভূগোল বিষয়ে অনার্স কোর্স প্রবর্তিত হয়। ১৯৬৮ সালের ১ মে কলেজটি সরকারিকরণ করা হয়। ১৯৯১-৯২ শিক্ষাবর্ষে পদার্থবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, গণিত, রসায়ন, ব্যবস্থাপনা ও হিসাববিজ্ঞান-এ অনার্স কোর্স চালু হয়। ১৯৯২-৯৩ সালে মাস্টার্স কোর্স (প্রথম পর্ব) এবং ১৯৯৪-৯৫ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্স কোর্স (শেষ পর্ব) খোলা হয়। ইংরেজি অনার্স কোর্স চালু হয় ১৯৯৫-৯৬ শিক্ষাবর্ষে। ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস, ইসলামী শিক্ষা ও প্রাণিবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স কোর্স খোলা হয়। বর্তমানে অনার্স কোর্স রয়েছে ১৭টি বিষয়ে। মাস্টার্স কোর্স রয়েছে ১৬টি বিষয়ে। এছাড়া কলেজটিতে বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রমও চালু আছে।

বিভাগ সমূহ

বিজ্ঞান অনুষদঃ

কলা অনুষদঃ

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদঃ

ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদঃ

  • এক্যাউন্টিং
  • ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং
  • মার্কেটিং
  • ম্যানেজমেন্ট[]

বর্তমান শিক্ষার্থী ও পরিকাঠামো

বর্তমানে কলেজটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২৭ হাজার।[] কলেজের ১৭ টি বিভাগে সেমিনার লাইব্রেরি গড়ে উঠেছে। এই লাইব্রেরিগুলোতে প্রায় ১০০০ এর বেশি গ্রন্থ রয়েছে। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে বইয়ের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। খেলার মাঠ,শহীদ মিনার,২ টি পুকুর এবং ৪টি হোস্টেল (ছাত্রদের ২, ছাত্রীদের ২),কলাভবন,পুরাতন বিজ্ঞান ভবন,নতুন বিজ্ঞান ভবন, বাণিজ্য ভবন, অধ্যক্ষের ভবন,শিক্ষকদের রেস্টহাউস,কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন, ছাত্র কমনরুম ও ছাত্রী কমনরুম, পোস্ট অফিস, শিক্ষক ডরমেটরি ও একটি ক্যান্টিন নিয়ে ২২.১৮ একর জমির উপর এম.এম. কলেজ প্রতিষ্ঠিত[]। কলেজের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন বিজ্ঞান ভবনে স্থাপন করা হয়েছে ডিজিটাল হাজিরা যন্ত্র।[]

বর্তমান শিক্ষক ও কর্মচারীদের সংখ্যা

কলেজটিতে বর্তমানে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা প্রায় ১৬০ জন। এবং অফিস স্টাফের সংখ্যা ১০৫ জন।

বিভিন্ন সংগঠন

ছাত্র সংগঠনসমূহ

অন্যান্য সংগঠনসমূহ

এম.এম. কলেজে বিএনসিসি (বিমান শাখা), বিএনসিসি (বিমান মহিলা শাখা), বিএনসিসি (সেনা শাখা), রোভার স্কাউটস, রোভার-ইন-গার্ল, রেঞ্জার, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, এম.এম.সি সোসিওলজি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন ও বিজ্ঞান ক্লাব রয়েছে। রয়েছে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ। সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী, বিবর্তন ও উচ্চারণ নিয়মিত সংস্কৃতিচর্চা করে চলেছে। শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য শহীদ মিনার সংলগ্ন মুক্তমঞ্চ নামে একটি উম্মুক্ত মঞ্চ রয়েছে। এছাড়া কলেজে বাঁধন-এর স্বেচ্ছায় রক্তদান ও রক্তসংগ্রহ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে চলেছে।[]

চিত্রশালা

তথ্যসূত্র

  1. "History"mmcollege.edu.bd। ১৩ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০১৫ 
  2. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; mmcollege.edu.bd নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  3. "সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ, যশোর (১৯৪১) - Jessore, Jhenaidah, Magura, Narail"jessore.info 
  4. http://mmcollege.edu.bd/Department/
  5. "History"mmcollege.edu.bd। ১৩ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০১৫ 
  6. "মাইকেল মধুসূদন কলেজ - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১২-১৩ 
  7. BonikBarta। "যশোর এমএম কলেজে ডিজিটাল হাজিরা যন্ত্র স্থাপন"যশোর এমএম কলেজে ডিজিটাল হাজিরা যন্ত্র স্থাপন (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১২-১৩ 

বহিঃসংযোগ

Strategi Solo vs Squad di Free Fire: Cara Menang Mudah!