শ্যুটার ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী অপরাধ কাহিনি নির্ভর পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন জয়ের প্রযোজনায়[১] ও রাজু চৌধুরী'র পরিচালনায় নির্মিত হয়েছে। শুটার-এ অপরাধ জগতের একজন মানুষের সুস্থ জীবনে ফিরে আসা ও টিকে থাকার লড়াইয়ের কাহিনি চিত্রিত হয়েছে। দেলোয়ার হোসেন দিলের কাহিনির ভিত্তিতে এই চলচ্চিত্রের সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেছেন আব্দুল্লাহ জহির বাবু।[২][৩] এই চলচ্চিত্রের মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শাকিব খান[৪] ও শবনম বুবলি।[৫] এটা বুবলির দ্বিতীয় অভিনীত চলচ্চিত্র।[৬] এছাড়াও অন্যান্য চরিত্রে সম্রাট, শাহরিয়াজ, মিশা সওদাগর, মানসী সরকার প্রকৃতি ও তিথি কবির তাদের অভিনয় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন।[৩][৭] ১৩ সেপ্টেম্বর,২০১৬ চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের ১৫২টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়।[১] দূর্বল চিত্রনাট্যের কারণে সমালোচিত হলেও চলচ্চিত্রটি ২০১৬ সালের ১০টি ব্যবসা সফল ছবির তালিকায় স্থান করে নেয়।[৮]
গল্পসুত্র
পেশাদার খুনী সূর্য(শাকিব খান)কে সবাই শুটার সূর্য নামে চেনে। তার নিশানা নির্ভুল। শহরের বড় সন্ত্রাসী শার্ক(মিশা সওদাগর)-এর সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব। এর মাঝে লাবণ্য(বুবলি) আত্মহত্যা করতে চায়। সূর্য লাবণ্যকে আত্মহত্যা হতে রক্ষা করে। সূর্যের সাথে প্রেম হয় লাবণ্যের। সূর্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চায় কিন্তু সূর্যকে মারার জন্য আরেক শুটার রোমেল(সম্রাট)কে ভাড়া করে শার্ক। সূর্যকে খুন করতে গিয়ে রোমেল তার মায়ের মুখোমুখি হয়। রোমেল জানতে পারে জেলে থাকার সময় সূর্যই তার মাকে দেখাশোনা করেছে। এবার সূর্যের শত্রুদের বিরুদ্ধে মাঠে নামে রোমেলও।[২]
প্রাথমিকভাবে শাকিব খান, সম্রাট, শাহরিয়াজ ও মিশা সওদাগর অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। নায়িকা ছাড়াই নিয়ে মার্চ, ২১০৬ হতে চিত্রগ্রহণ শুরু করা হয়।[১৪] মূল নায়িকার চরিত্রে অপু বিশ্বাসের নাম প্রকাশিত হয়।[১৫] পরবর্তীতে অপু বিশ্বাসের বদলে শবনম বুবলিকে নেয়া হয়।[১৬] ২০১৬ -এর ৩০ জুন শবনম বুবলি, মানসী সরকার প্রকৃতি ও তিথি কবির অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন।[১৪][১৭][১৮]
শুটার চলচ্চিত্রের দৃশ্যসমূহ ঢাকার আফতাবনগর[১৯], কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন, সাভারের গলফ কোর্স[২০][২১]ফ্যান্টাসী কিংডম এবং গাজীপুরের পূবাইলে ধারণ করা হয়। ১০ মার্চ,২০১৬ হতে কমলাপুর রেল স্টেশনেশুটার -এর মহরত ও শাকিব খানের 'অ্যাকশন' দৃশ্য ধারণের মাধ্যমে মুখ্য চিত্রগ্রহণ শুরু হয়।[১৫] ১৭ হতে ২৩ জুলাই,২০১৬ তে বিএফডিসি'তে 'ইনডোর' দৃশ্য ধারণ করা হয়।[৫][২২] আগস্ট, ২০১৬ তে চিত্রগ্রহণ সম্পন্ন হয়।[২৩]
শুটার চলচ্চিত্রের গানগুলির ভিডিও 'লাইভ টেকনোলজিস'-এর ইউটিউব চ্যানেল হতে অবমুক্ত করা হয়-
কি করে আজ বলবো গানটি ২০১৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অবমুক্ত করা হয়। আনুষ্ঠানিক ট্রেইলার প্রকাশের পূর্বে এই গানটি প্রকাশের মাধ্যমে শুটার-এর প্রাথমিক প্রচারণা শুরু হয়। প্রণয়ধর্মী এই গানে শাকিব খান ও বুবলি ঠোঁট মিলিয়েছেন। সাভারের গলফ কোর্সে গানটির চিত্রায়ন করা হয়।[২৫][২৬]
কাটে না দিন গানটি ২০১৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর অবমুক্ত করা হয়। আশুলিয়ার ফ্যান্টাসী কিংডমে শাকিব খান ও বুবলিকে নিয়ে প্রণয়ধর্মী গানটির চিত্রায়ন করা হয়েছে।[২৭]
শুটার চলচ্চিত্রের শিরোনাম সঙ্গীতটি ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর অবমুক্ত করা হয়। বিএফডিসি-তে গানটির চিত্রায়ন করা হয়।[২৪]
আইটেম গান বাবুজি ২০১৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর অবমুক্ত করা হয়। সম্রাট, মিশা সওদাগর ও তিথি কবির নিয়ে এই গানের চিত্রায়ন করা হয়।[২৮]
০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ তারিখে চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড হতে বিনা কর্তনে ছাড়পত্র পায়।[২৯] প্রচারণার উদ্দেশ্যে ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ তারিখে আনুষ্ঠানিক 'ট্রেইলার' প্রকাশ করা হয়।[২৪] মুক্তি দেয়ার জন্য ১৭০টি প্রেক্ষাগৃহ 'বুকিং' করা হয়।[২৯][৩০][৩১] ২০১৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ঈদুল ফিতরের সপ্তাহে[৩২]রক্ত ও বসগিরি'র সাথে একইদিনে চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের ১৫২টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়।[১][৩৩] দর্শকদের ভাল সাড়া পাওয়ায় চলচ্চিত্রটি দ্বিতীয় সপ্তাহে আরো ৩৩টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেয়া হয়।[৩৪]
সমালোচনা ও অভ্যর্থনা
২০১৬ সালের ঈদুল ফিতরে নবাগত বুবলির বসগিরি ও শুটার একই দিনে মুক্তি পায়।[১১] দুইটি ছায়াছবির মধ্যে শুটার দর্শকদের কাছ থেকে ভাল সাড়া পায়। দর্শকপ্রিয়তা পেলেও চলচ্চিত্রটি দূর্বল চিত্রনাট্যের কারণে সমালোচিত হয়;[৩৫] শাহরিয়াজ ও জারাকে বিতর্কিত ভাবে উপস্থাপনের জন্য পরিচালক রাজু চৌধুরী সমালোচিত হন।[৩৬] তবে সমালোচকরা বুবলির অভিনয়ের প্রশংসা করেন।[৩৫]এক থেকে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শুটার বাণিজ্যিকভাবে সফল হয় এবং লগ্নিকৃত পুঁজি উঠিয়ে আনতে সক্ষম হয়।[৩২][৩৭] চলচ্চিত্রটি ২০১৬ সালের ব্যবসা সফল ১০টি চলচ্চিত্রের তালিকায় স্থান করে নেয়।[৮]