লিনা হিডি (ইংরেজি: Lena Headey; /ˈliːnəˈhiːdi/ উচ্চারণ: লীনা হীডী; জন্ম: ৩ অক্টোবর ১৯৭৩)[১] হলেন একজন ইংরেজ অভিনেত্রী ও চলচ্চিত্র প্রযোজক। নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে তিনি বিভিন্ন ছোট ও পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন। তিনি দ্য ব্রাদার্স গ্রিম-এ প্রথম বড় বাজেটের ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর তিনি অ্যাকশন চলচ্চিত্র ৩০০ (২০০৭) ছবিতে স্পার্টার রাণী গর্গো চরিত্রে এবং রোমাঞ্চকর ও জীবনীমূলক চলচ্চিত্র দ্য রেড ব্যারন (২০০৮) ছবিতে অভিনয় করেন।
হিডি ভিডিও গেম রাইজেন (২০০৯) এবং ভিডিও গেম টাই-ইন চলচ্চিত্র কিংসগ্লেইভ: ফিফটিন ফাইনাল ফ্যান্টাসি (২০১৬) এবং অ্যানিমেটেড ধারাবাহিক ডেঞ্জার মাউস (২০১৫-১৭) ও ট্রলহান্টার্স (২০১৭-১৮)-এর কণ্ঠ দেন।
প্রারম্ভিক জীবন
হিডি ১৯৭৩ সালের ৩ অক্টোবর বারমুডারহ্যামিলটনে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা জন হিডি এবং মাতা সু হিডি।[১] তার পিতা ইয়র্কশায়ারের পুলিশ কর্মকর্তা। তার টিম নামে এক ছোট ভাই আছে।[৪] হিডির যখন পাঁচ বছর বয়স তখন তার পরিবার সমারসেটে চলে যায় এবং যখন তার ১১ বছর বয়স তখন তারা ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ারের শেলিতে চলে যান।[৫] শৈশবে তিনি বেলে নাচের প্রশিক্ষণ নেন।[৬]
হিডি প্রথম অভিনয় করেন যখন তিনি শেলি কলেজের শিক্ষার্থী। তার ১৭ বছর বয়সে তিনি রয়েল ন্যাশনাল থিয়েটারের একটি মঞ্চনাটকে কাজ করার সময় তিনি সবার নজরে আসেন এবং তাকে ১৯৯২ সালের ওয়াটারল্যান্ড চলচ্চিত্রের একটি চরিত্রের জন্য বাছাই করা হয়।[৭]
কর্মজীবন
১৯৯০-এর দশক: অভিষেক ও প্রারম্ভিক কাজ
হিডি তার ১৭ বছর বয়সে একটি একাঙ্ক মঞ্চনাটকে অভিনয় করার পর একজন কাস্টিং এজেন্ট তার ছবি তোলেন এবং তাকে অডিশন দেওয়ার আহ্বান জানান। পরে তিনি স্টিফেন ইলেনহলের নাট্যধর্মী ওয়াটারল্যান্ড চলচ্চিত্রে একটি পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। পরের বছর তিনি লিজি চরিত্রে জেমস আইভরি পরিচালিত দ্য রিমেইন্স অব দ্য ডে ছবিতে অভিনয় করেন। ছবিটি সেবছর আটটি বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করে।
তিনি ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ডিজনির দ্য জাঙ্গল বুক চলচ্চিত্রে ক্যাথরিন চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবিটি ইতিবাচক সমালোচনা লাভ করে এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৪৪ মিলিয়ন ডলার আয় করে।[৮] হিদি এবং তার সহশিল্পীরা ইতিবাচক সমালোচনা লাভ করে এবং চলচ্চিত্র সমালোচক জেমস বেরার্ডিনেলি তাদের "শক্তিশালী অভিনয়ের" প্রশংসা করেন।[৯] ১৯৯৭ সালের তিনি ভেনেসা রেডগ্রেভের বিপরীতে রোম্যান্টিক নাট্যধর্মী মিসেস ডালোওয়ে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। হিডি বড় বাজেটের অনেজিন ছবিতে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন। এতে প্রধান ভূমিকায় ছিলেন রাফ ফাইঞ্জ ও লিভ টাইলার।
২০০০-এর দশক: খ্যাতি অর্জন
২০০০ সালে তিনি নাট্যধর্মী এবার্ডিন ছবিতে অভিনয় করেন। এই ছবিতে কাজ করার জন্য তিনি ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত ব্রাসেলস ইউরোপীয় চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে সিলভার আইরিশ পুরস্কার লাভ করেন।[১০] এছাড়া এই সময়ে তিনি গসিপ (২০০০), দ্য পেরোল অফিসার (২০০১) এবং পজেসন (২০০২) ছবিতে অভিনয় করেন।
হিডি টেরি ইলিয়ামেরদ্য ব্রাদার্স গ্রিম ছবিতে ম্যাট ডেমন ও হিথ লেজারের সাথে অভিনয় করেন। ছবিটি ২০০৫ সালের আগস্টে মুক্তি পায়। ছবিটি মিশ্র সমালোচনা লাভ করে। এক সাক্ষাত্কারে হিডি এই চলচ্চিত্রে তার চরিত্র সম্পর্কে বলেন: "ছবিতে আমি একজন টমবয় চরিত্রে অভিনয় করি এবং আমি তা পছন্দ করেছিলাম। চরিত্রটি আমাকে আকৃষ্ট করেছিল কারণ সে এই চলচ্চিত্রে এই প্রত্যাশিত কোন নারী চরিত্র ছিল না। আপনার সাথে তার সাক্ষাতে সে আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে সে কে। তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা তাকে চিহ্নিত করে সে কে এবং এটা আমি পছন্দ করেছিলাম। সে বনে বাস করে, সেখানে বেড়ে ওঠে এবং সেখানে বেঁচে থাকে। তার প্রবৃত্তি প্রায় পশুর মত এবং সে তার চারপাশে ৩৬০ ডিগ্রি দেখতে পারে। কি ঘটছে সে ব্যাপারে সে সচেতন এবং তা এভাবেই চলছে। সে পৃথিবীর।"[১১]
২০০৫ সালে তিনি অভিনেত্রী পাইপার পেরাবোর সঙ্গে দ্য কেভ এবং ইমাজিন মি অ্যান্ড ইউ ছবিতে অভিনয় করেন। ব্রুস হান্ট পরিচালিত দ্য কেভ ছবিতে তিনি বিজ্ঞানী ক্যাথরিন জেনিংস চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবিটি সমালোচকদের কাছে প্রশংসিত হয় নি[১২] এবং বক্স অফিসে ব্যবসা করতে পারে নি।[১৩] ওল পার্কার পরিচালিত রোম্যান্টিক কমেডি-নাট্যধর্মী ইমাজিন মি অ্যান্ড ইউ সীমিত পরিসরে মুক্তি পায় এবং ইতিবাচক সমালোচনা লাভ করে। সমালোচকগণ চলচ্চিত্রে হিডির সমকামী চরিত্রে অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন; সান ফ্রান্সিসকো ক্রনিকলের মাইক লাসালে বলেন এই অভিনেত্রীর "স্পষ্টবাদী, অলঙ্ঘনীয় আবেদন ও চেহারা রয়েছে এবং বিশেষ করে হাসি যা বুদ্ধিমত্তা, নিখুঁততা এবং প্রচুর বিনোদন প্রদান করে।"[১৪]
হিডি ২০০৬ সালে জ্যাক স্নাইডার পরিচালিত ঐতিহাসিক অ্যাকশনধর্মী ৩০০ ছবিতে রাণী গর্গো চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবিতে তাকে নগ্ন দৃশ্যে অভিনয় করতে দেখা যায়। এই প্রসঙ্গে তিনি ইন্ডিলন্ডনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "২০ জন লোকের সামনে কাপড় খোলা এবং তা আরও অনেক লোকের সামনে প্রদর্শিত হওয়ার বিষয়টি সবসময়ই বিব্রতকর। তবে আমি মনে করি তাদের মধ্যকার সম্পর্ক দেখাতে তা প্রয়োজনীয় ছিল। এটি অবশ্যম্ভাবী মুহূর্ত ছিল এবং আমি মনে করি তা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।"[১৫] এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি সেরা ব্রেকথ্রো পারফরম্যান্স বিভাগে এমটিভি মুভি পুরস্কার[১৬] এবং শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য স্যাটার্ন পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[১০]
চলচ্চিত্রের পাশাপাশি হিডি জেমস ক্যামেরনেরটারমিনেটর ফ্যাঞ্চাইজির ফক্সেরটারমিনেটর: দ্য সারাহ কনর ক্রনিকল্স টেলিভিশন ধারাবাহিকে অভিনয় করেন। হিডি ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সারা কনর চরিত্রে অভিনয় করেন। ২০০৯ সালের মে মাসে বাতিল হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দুই মৌসুমে ধারাবাহিকটির ৩১টি পর্ব প্রচারিত হয়। ভ্যারাইটি ম্যাগাজিন হিডির সারাহ চরিত্রে দৃঢ় অভিনয়ের প্রশংসা করে লিখে, "বুদ্ধিমান, কৌশলদীপ্ত ও শক্তিশালী, তবুও মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ ও ভঙ্গুর"।[১৭] তার এই চরিত্রের জন্য তিনি দুইবার টেলিভিশনে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য স্যাটার্ন পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[১০]
হিডি কয়েকটি স্বাধীন চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন, যার মধ্যে রয়েছে ১ম বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধ বিমানের পাইলট মানফ্রেড ফন রিখটোফেনের জীবনীমূলক চলচ্চিত্র দ্য রেড ব্যারন (২০০৮)। এতে তার সহশিল্পী ছিলেন মাথিয়াস সোয়েগফের ও জোসেপ ফাইঞ্জ।[১৮] এতে তিনি কেট ওটার্স্ডর্ফ নামে এক নার্স চরিত্রে অভিনয় করেন, যার বাস্তব জীবনে রিখটোফেনের সাথে প্রেম ছিল বলে ধারণ করা হয়।[১৯] ২০০৭ সালে প্রচারিত সেন্ট ট্রিনিয়ান্স ধারাবাহিকে তিনি মিস ডিকিনসন চরিত্রের অভিনয় করেন। পরের বছর তিনি রিডলি স্কট প্রযোজিত টেল-টেল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এটি এডগার অ্যালান পোরদ্য টেল-টেল হার্ট ছোটগল্প অবলম্বনে নির্মিত। ছবিটি ২০০৮ সালের ২৫ মে সরাসরি ডিভিডি আকারে মুক্তি পায়।[২০]
২০০৮ সালে হিডি শন এলিস পরিচালিত ভৌতিক চলচ্চিত্র দ্য ব্রোকেন এ অভিনয় করেন।[২১] এতে তিনি জিনা ম্যাকভে চরিত্রে অভিনয় করেন, যে মনে করে যে লন্ডন শহরে তাকে এক খুনী অনুসরণ করছে।[২২] ছবিটি ২০০৮ সানড্যান্স চলচ্চিত্র উৎসবের মধ্যরাতের অংশে প্রদর্শিত হয় হয় এবং গড়পরতা প্রতিক্রিয়া লাভ করে। কয়েকজন সমালোচক হিডির অভিনয়ের প্রশংসা করেন, যার মধ্যে সিনেম্যাটিক্যাল-এর কিম কয়নার লিখেন, "হিডি একাই ছবিটি নিয়ে গেছেন এবং তিনি তা ভালভাবেই সম্পন্ন করেছেন।"[২৩] একই বছর তিনি আরেকটি ভৌতিক চলচ্চিত্র লেইড টু রেস্ট চলচ্চিত্রের প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেন। ছবিটি ২০০৮ সালে মুক্তি পায় এবং পরে ২০০৯ সালের ২১ এপ্রিল স্ট্রেইট-টু-ভিডিও আকারে প্রকাশ পায় এবং সমালোচকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অ্যাবাউট.কমের সমালোচক মার্ক এইচ. হ্যারিস হিডি ও তার সহশিল্পী থমাস ডেকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, "ছবিটি দেখতে সুন্দর এবং বড়াই করার মত অসাধারণ শিল্পীরা রয়েছেন"
পুরস্কার ও সম্মাননা
বিজয়ী
২০০১: শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য সিলভার আইরিশ পুরস্কার - এবার্ডিন[১০]
২০১২: শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর জন্য ইওয়ি পুরস্কার - গেম অব থ্রোনস[২৪]
২০১২: টেলিভিশনের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য পোর্টাল পুরস্কার - গেম অব থ্রোনস[২৫]
২০১৪: নাট্য ধারাবাহিকের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য উইমেন্স ইমেজ নেটওয়ার্ক পুরস্কার - গেম অব থ্রোনস[২৬]