বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর রূপপুর নামক স্থানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এই উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ জুলাই ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০২৫।[১] ২০২৪ সাল নাগাদ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দু’টি (প্রথম ও দ্বিতীয়) ইউনিটের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। দুটি ইউনিটে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে প্রাথমিকভাবে ১ লক্ষ ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ ধরা হয়েছে। একক প্রকল্প হিসেবে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কোনো অবকাঠামো স্থাপন প্রকল্প। সরকারের মতে এই প্রকল্প পরিবেশবান্ধব এবং আর্থিকভাবে লাভজনক।[২][৩] রাশিয়ার রসাটমের এটোমস্ট্রোয় একপোর্ট (এএসই) নামীয় সংস্থাকে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করার পর এর স্থায়িত্ব হবে ১০০ বছর। দেশের ১৮ লাখ পরিবার এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সুবিধা লাভ করবে। আড়াই হাজার দক্ষ জনবলের কর্মসংস্থান হবে।
মূল প্রকল্পের আগে তথা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরুর আগে প্রয়োজনীয় প্রারম্ভিক কার্যাদি সম্পন্ন করার লক্ষ্যে এ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে সার্বিক জ্বালানী মিক্স পারমাণবিক শক্তি অন্তর্ভুক্ত করার যৌক্তিকতা সম্পর্কিত অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত বিশ্লেষণ সম্পন্ন করা হয়েছে এবং প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত স্থাপনা এবং এতদ্সংক্রান্ত অফিসের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে। এছাড়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে “আরএফপি” দলিল প্রণয়ন করা হয়েছে। চূড়ান্তকরণ। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য “সাইট সেইফটি রিপোর্ট” চুড়ান্তকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সমীক্ষা পরিচালনাসহ অতীতে সম্পাদিত কার্যাদি ও তথ্যাবলী হলনাগাদকরণ। এছাড়া প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষ্পে গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের অন্য দুটি প্রধার কার্যাবলী হলো আন্তর্জাতিকভাবে প্রযোজ্য প্রয়োজনীয় কোডস্, গাইডস্ এবং স্ট্যান্ডার্ডস্ চিহ্নিত করে এগুলোর সাহায্যে বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য পারমাণবিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত দলিলপত্রাদি তৈরীকরণ এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে নির্মাণ সংক্রান্ত নিউক্লিয়ার রেগুলেটরি লাইন্সেস প্রাপ্তির লক্ষ্যে যাবতীয় কার্যাবলী সম্পাদন।
রাশিয়ার বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশে নির্বিতব্য রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ভারি যন্ত্রাংশ নির্মাণ করা হয়েছে। রূপপুরের পারমাণবিক চুল্লিও রাশিয়ায় নির্মিত হয়েছে। ভিভিআর-১২০০ মডেলের এই চুল্লিতে (রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল) পরমাণু জ্বালানি পুড়িয়ে মূল শক্তি উৎপাদন হবে। এ থেকে ১২শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। রূপপুরের প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হবে বলে পরিকল্পনা করা হয়েছে।[২]
|তারিখ=