যৌথ অভিযান দায়মুক্তি আইন, ২০০৩ বাংলাদেশের একটি বিতর্কিত আইন, যা ২০০৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রণয়ন করা হয়। এই আইনের মাধ্যমে ২০০২-২০০৩ সালে পরিচালিত অপারেশন ক্লিন হার্টে অংশগ্রহণকারী সেনাবাহিনী, পুলিশ, ও র্যাব সদস্যদের দায়মুক্তি প্রদান করা হয়। ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ হাইকোর্ট এই আইনটিকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে বাতিল করে।
২০০২ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত, বাংলাদেশ সরকার অপারেশন ক্লিন হার্ট নামের একটি সামরিক অভিযান চালায়। এ অভিযানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সামরিক বাহিনী একযোগে কাজ করে। অভিযান চলাকালীন সময়ে ৫০ জনেরও বেশি ব্যক্তি নিহত হন ও হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে।[১]
এই আইনটির মূল উদ্দেশ্য ছিল ২০০২-২০০৩ সালের অপারেশন ক্লিনহার্ট চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে সামরিক বাহিনী, পুলিশ এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কার্যক্রমের জন্য দায়মুক্তি প্রদান। এতে নির্ধারিত হয় যে, এই অভিযানে অংশগ্রহণকারী কেউ তাদের কর্মের জন্য আইনি জবাবদিহিতার সম্মুখীন হবেন না। আইনটির প্রথম ধারায় এটির শিরোনাম ও প্রয়োগ বর্ণিত হয়েছে। দ্বিতীয় ধারায় ব্যবহৃত বিভিন্ন শব্দ ও পরিভাষার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় ধারায় পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় বা পরবর্তী সময়ে সংঘটিত কার্যক্রমের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দায়মুক্তি পাবেন। চতুর্থ ধারায় এরূপ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে ও পঞ্চম ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে এই আইনটি বিদ্যমান অন্যান্য আইনকে প্রভাবিত করবে না।[২]
মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই আইনের তীব্র সমালোচনা করেছে। তাদের মতে, এই আইনটি সংবিধানের মৌলিক অধিকার সুরক্ষার বিধানের পরিপন্থী। আইনটির ফলে অপারেশন ক্লিনহার্ট চলাকালীন সময়ে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো বিচার বহির্ভূত থেকে যায়।
এই আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১২ সালের ১৪ জুন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না হাইকোর্টে রিট করেন। ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ‘জেড আই খান পান্না বনাম বাংলাদেশ ও অন্যান্য’ মামলায় হাইকোর্ট এই আইনটিকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে ও বাতিল করে।[৩]
টেমপ্লেট:বাংলাদেশের আইন