মোহাম্মদ আবুল হুদা আল-ইয়াকুবী (আরবি: محمد أبو الهدى اليعقوبي; জন্ম: ৭ মে ১৯৬৩) একজন সিরীয় ইসলামি পণ্ডিত এবং শাজিলিয়া তরীকার পীর বা মুর্শিদ বা ছুফি তাত্ত্বিক দীক্ষাগুরু। শেখ মোহাম্মদ আল ইয়াকুবী নামে তিনি সমধিক পরিচিত।
আল ইয়াকুবী সিরিয়ার দামেস্কে[১] জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা ইব্রাহিম আল ইয়াকুবী (মৃঃ ১৯৮৫) এবং দাদা ইছমাইল আল ইয়াকুবী (মৃঃ ১৯৬০) উভয়েও ছিলেন পীর বা ছুফি মুর্শিদ। তিনি সর্বশেষ নবী হযরত মোহাম্মদ -এর বংশধর। তার বংশ লতিকা মৌলায়ী ইদ্রিছ আল আনোয়ার ও হাসান ইবনে আলী হয়ে নবী পর্যন্ত পৌছে।[১][২]
আল ইয়াকুবী ছুফি তারীকার পীর হিসাবে আত্ম প্রকাশের পূর্বে তার পিতার নিকট ছুফিতত্ত্বে শিক্ষা লাভ করেন।[২][৩] এ ছাড়াও তিনি সিরিয়ার প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ বা আলেম যথাক্রমে মালেকী মাযহাবের মুফতি মালেকী আল খিত্তানী, হানেফী মাযহাবের মুফতি মোহাম্মদ আবুল ইউছর আবেদীন, আলী আল বোদাইলিমী, আব্দুল আজিজ উইউন আল স্যুদ, সালেহ আল খতিব, জয়নুল আবেদীন আল তিউনিসি, মোহাম্মদ ওয়াফা আল কাচ্ছাবান্দ এবং দামেস্কের আবুর রহমান আল সাগৌরীর নিকট দীক্ষা গ্রহণ করেন।[৪]
১৯৮৭ সালে আল ইয়াকুবী ইসলামিক আইন অনুসদের ছাত্র[৫] হিসাবে দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। এর পরে তিনি বইরুতের অরব বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বৎসর দর্শন শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের লিঙ্গুয়িষ্টিক ইন দ্যা অরিয়েন্টাল ষ্ট্যাডিজ ডিপার্টমেন্টের অধিনে ১৯৯১ সালে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন।[৬] সুইডেনে তিনি আরবী সাহিত্যের গবেষক হিসাবে কর্মরত আছেন। সুুইডিস ইসলামীক সোসাইটি ১৯৯৯ সালে তাকে মুফতি অব সুইডেন পদে নিযুক্তি দান করেন।[৬] ১৯৯২ সালে তিনি ইংল্যান্ডে গমণ করেন এবং একই বছরে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা লেখার কোর্স যথাক্রমে এফসিই, সিএই, সিসিএস ও সিপিই সম্পন্ন করেন। স্যুইডেনে পুনরায় প্রত্যাবর্তনের পূর্বে তিনি ৭টি ভাষায় জ্ঞানার্জন করেন।[৬]
আল ইয়াকুবী ১১ বছর বয়সে দারউইছিয়া মসজিদে কোরআন শিক্ষাদানে নিযুক্ত হন। তিনি প্রথম জুমার খোতবা প্রদান করেন আল সাদাত মসজিদে ১৪ বছর বয়সে। জুমার নামাজের ইমাম ও খতিব বা বক্তা হিসাবে নিযুক্ত হন ১৭ বছর বয়সে। বিশ বছর বয়সে ইসলামিক ষ্ট্যাডিজ বিষয়ে শিক্ষতায় নিয়োগ প্রাপ্ত হন।[১] ২০০০ সালের মাঝামাঝিতে তিনি সিরিয়া প্রত্যাবর্তন করে আকিদা, তফসির, হাদিস, তাসাউফ ফিকাহ, উছুল, মাসায়েলা ও আরবী ব্যাকরণ বা নাহু বিষয়ে জনসমক্ষে বক্তৃতা ও শিক্ষাদানের কার্যক্রম আরম্ভ করেন।[১] আল ইয়াকুবী দামেস্কে বড় হন এবং সেখানকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। তিনি উমাইয়া মসজিদের ইমাম, জামি আল হুসান মসজিদ ও ইবনুল আরবী সমজিদের খতিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আবদুল করীম ইবনে হাওয়াইজিন কোশাইরি ও তিরমিদী নগরীর সামাইল তিরমিদি হতে রিসালা বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেন। ২০১২ সালের জুন মাসে আসাদ বাহিনী কর্তৃক বিতাড়িত হয়ে তিনি সিরিয়া হতে মরক্কো আসতে বাধ্য হন।[১][৫]
যুবরাজ আল ওয়ালিদ বিন তালাল সেন্টার ফর মুসলিম-ক্রিষ্টান আন্ডারষ্ট্যান্ডিং এবং জর্ডানের রয়েল ইসলামিক ষ্ট্রাটেজিক ষ্ট্যাডিজ সেন্টার কর্তৃক ২০১২ সালে প্রকাশিত দ্যা ফাইভ হানড্রেড মোষ্ট ইনফ্লুয়েন্সিয়াল মুসলিমস বা পৃথিবীর সর্বাধিক প্রভাবশালী ৫০০ জন মুসলমানের নামের তালিকায় তার নামটি প্রকাশ পায়।[৭]