জিয়া-মজুমদার পরিবার হলো বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক পরিবার যারা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে রয়েছে। তারা পৈতৃক বংশ দ্বারা বাঙ্গালী (বরেন্দ্রী) মুসলিম মণ্ডল। পরিবারটির সদস্য জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি ছিলেন এবং খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, এবং তাদের পরিবারের অন্যান্য বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য ছিলেন।
বিয়ের আগে
মহিষাবানের মণ্ডল
এই বংশের প্রাচীন ব্যক্তি ছিলেন বগুড়া জেলার গাবতলী মহকুমার মহিষাবান গ্রামের জনাব মুমিনউদ্দিন মণ্ডল সাহেব (মৃত্যু ১৮৪০)। বৃহত্তর গাবতলী, সুখানপুকুর এবং যমুনা নদীর পশ্চিমের অন্যান্য এলাকা জুড়ে উনার মণ্ডলিয়ানা ও প্রভাব ছিল। মুমিনউদ্দিন মণ্ডল সাহেবের প্রপৌত্র ছিলেন মরহূম জনাব কাকর মণ্ডল সাহেব।[১]
- কামালউদ্দিন মণ্ডল (জন্ম ১৮৫৪): তিনি কাকর মণ্ডলের একমাত্র ছেলে ছিলেন। তিনি একজন মৌলভী এবং স্থানীয় শিক্ষাবিদ ছিলেন ও বাগবাড়ি মাইনর স্কুলের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বেগম মেহেরুন্নেসাকে বিয়ে করার পর মহিষাবান থেকে বাগবাড়িতে চলে আসেন। তার স্ত্রীর পূর্বপুরুষরা পারস্য থেকে মুঘল আমলে ঘোড়াঘাটস্থ বালুরঘাটে এসেছিলেন এবং বাদশাহ আওরঙ্গজেবের শাসনামলে বগুড়ায় চলে আসেন।[২]
- মাহমুদ মণ্ডল: চামড়া ব্যবসায়ী
- জহিরুদ্দিন মণ্ডল: জমিদার
- মাজহাবুদ্দিন মণ্ডল
- মোয়াজ্জম হোসেন মণ্ডল: প্রকৌশলী
- মনসুর রহমান মণ্ডল (মৃত্যু ১৯৬৬): তিনি ছিলেন একজন রসায়নবিদ যিনি কাগজ ও কালি রসায়নে বিশেষজ্ঞ ছিলেন এবং কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং- এ একটি সরকারি বিভাগে কাজ করতেন। তিনি জাহানারা খাতুনকে বিয়ে করেন।
- রেজাউর রহমান মণ্ডল, মেরিন প্রকৌশলী
- মিজানুর রহমান মণ্ডল, অর্থনীতিবিদ
- জিয়াউর রহমান মণ্ডল (নীচে দেখুন)
- আহমদ কামাল মণ্ডল (মৃত্যু ২০১৭)[৩]
- খলিলুর রহমান মণ্ডল (মৃত্যু ২০১৪): তিনি মেরিল্যান্ড চলে যান ও সেখানে ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করেন এবং তার তিন কন্যা ছিল।[৪]
- মেজর মুহাম্মদ মমতাজুর রহমান মণ্ডল: পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেডিকেল অফিসার
- মাহফুজুর রহমান মণ্ডল: আয়কর প্র্যাকটিশনার
- ফাতেমা খাতুন: কোচবিহার মহারাজার অধীনে একজন এসডিওকে বিয়ে করেন
- রহিমা খাতুন: গোয়েন্দা মুহম্মদ শামসুদ্দিনকে বিয়ে করেন।
ফুলগাজীর মজুমদার
- মুরাদ খান: তিনি একজন পাঠান বণিক ছিলেন যিনি ১৭ শতকে চট্টগ্রামে আসেন, পরে চট্টগ্রামে ভয়াবহ বন্যার কারণে ফুলগাজীর শ্রীপুরে চলে আসেন।[৫] তার চার পুত্র ছিল: নহর মহম্মদ খান, তাহির মহম্মদ খান, ফুল মহম্মদ খান এবং আরিফ মহম্মদ খান।
- ফুল মহম্মদ খান (মুরাদ খানের পুত্র): তিনি শমসের গাজীর অধীনে তিপ্রা রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং গাজী উপাধি লাভ করেন। তার নামানুসারে এলাকাটি ফুলগাজী নামে পরিচিতি লাভ করে।
- নহর মহম্মদ খান (মুরাদ খানের পুত্র): তিনি ১৭০১ সালে তার প্রাসাদে একটি বড় জলাধার নির্মাণ করেন। এই জলাধারের পশ্চিমে, পরিবারটি একটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ তৈরি করেন যা বর্তমানে শ্রীপুর জামে মসজিদ নামে পরিচিত এবং আজও ব্যবহার করা হচ্ছে। ত্রিপুরার মহারাজা শমসের গাজী এবং তার বাহিনীর সাথে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন যার মধ্যে নাহার এবং ফুলগাজী অন্তর্ভুক্ত ছিল। চুক্তিতে উল্লেখ করা হয় যে, নাহার রাজস্বমুক্ত ৮০ দ্রোণ জমি, ১৪টি জমিদারি মৌজা এবং মজুমদার উপাধি লাভ করেছেন। এই ১৪টি মৌজা নিয়ে আধুনিক ফুলগাজী ইউনিয়ন গঠিত।[৫]
- আজগর আলী মজুমদার (নাহার মুহাম্মদ খানের পাঁচ ছেলের মধ্যে জ্যেষ্ঠ): আকামত আলী মজুমদার, হাশমত আলী মজুমদার, বাশরত আলী মজুমদার, সালামৎ আলী মজুমদার এবং মফিজুল ইসলাম মজুমদার নামে তাঁর পাঁচ ছেলে ছিল।
- আকামৎ আলী মজুমদার (আজগর আলী মজুমদারের ছেলে): তার কোন ছেলে ছিল না
- বশারৎ আলী মজুমদার (আজগর আলী মজুমদারের ছেলে): তিনি দুই সন্তানের পিতা ছিলেন
- হাশমৎ আলী মজুমদার (আজগর আলী মজুমদারের ছেলে): তার পাঁচ ছেলে ছিল, যথা তফজ্জল হোসেন মজুমদার, তবারক হোসেন মজুমদার, মহম্মদ সাদেক মজুমদার, বিলায়েৎ হোসেন মজুমদার এবং মাজহারুল হোসেন মজুমদার।
- মাজহারুল হোসেন মজুমদার (হাশমত আলী মজুমদারের ছেলে): তিনি মজ্জম্মিল আলী মজুমদার নামেও পরিচিত ছিলেন এবং পীর পাগলা দরবেশের মাধ্যমে সুফি পীর হন (মৃত্যু নভেম্বর ১৯৭৫)।
- মফিজুল আলী মজুমদার (আজগর আলী মজুমদারের ছেলে): তিনি বিয়ের আগেই মারা যান।
- সালামৎ আলী মজুমদার (আজগর আলী মজুমদারের ছেলে): তার সাত ছেলে ছিল; বিশেষ করে মকদ্দস আলী মজুমদার এবং এস্কান্দর আলী মজুমদার
- এস্কান্দর আলী মজুমদার (সালামৎ আলী মজুমদারের ছেলে): তিনি একজন ধনী চা-ব্যবসায়ী ছিলেন, তিনি বেগম তৈয়বাকে বিয়ে করেন এবং দিনাজপুরে চলে আসেন।
- শেলিনা ইসলাম: তিনি মহম্মদ রফিকুল ইসলাম চৌধুরীকে বিয়ে করেন যিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এবং পুন্ড্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন।
- মহম্মদ শাহরিন ইসলাম চৌধুরী (তুহিন), একজন সাবেক সংসদ সদস্য (১৯৯৬)।
- খুরশীদ জাহান (১৯৩৯-২০০৬), সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রী (২০০১-২০০৬)[৬]
- খালেদা খানম পুতুল (নীচে দেখুন)[৭]
- সাঈদ এস্কান্দার মজুমদার (১৯৫৩-২০১২), সাবেক সংসদ সদস্য এবং ইসলামিক টিভির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান[৮]
- শেলিমা রহমান
- শামীম এস্কান্দার মজুমদার
মজুমদার-জিয়া পরিবারের সদস্যগণ
তথ্যসূত্র