ভার্জিনিয়া চেরিল (ইংরেজি: Virginia Cherrill; ১২ই এপ্রিল, ১৯০৮ - ১৪ই নভেম্বর, ১৯৯৬) ছিলেন একজন মার্কিন অভিনেত্রী। তিনি চার্লি চ্যাপলিনের সিটি লাইট্স (১৯৩১) চলচ্চিত্রে অন্ধ ফুল বিক্রেতা তরুণী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বিখ্যাত।
চেরিল ১৯০৮ সালের ১২ই এপ্রিল ইলিনয়ের কার্থেজের একটি ফার্মে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা জেমস ই. চেরিল এবং মাতা ব্লেঞ্চ চেরিল (জন্মনাম: উইলকক্স)।[১] তার শৈশবে চলচ্চিত্রে কর্মজীবন শুরু করার কোন পরিকল্পনা ছিল না, কিন্তু সু ক্যারলের সাথে তার বন্ধুত্ব তাকে হলিউডের দিকে আকৃষ্ট করে। ১৯২৫ সালে চেরিল "আর্টিস্ট্স বলের কুইন" হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন[১] এবং ফ্লোরেনৎস জিগফেল্ড তাকে ভ্যারাইটি মঞ্চে অভিনয়ের জন্য আমন্ত্রণ জানান। তিনি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯২৫ সালে আরভিং অ্যাডলারের সাথে তার বিয়ে হয়। অ্যাডলার ছিলেন শিকাগোর ধন্যাট্য আইনজীবী। এই বিয়েতে তিনি অসন্তুষ্ট ছিলেন এবং ১৯২৮ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।[২] সু ক্যারলের সাথে তার বন্ধুত্বের কারণে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া চলে যান। সেখানে তিনি উইলিয়াম র্যান্ডলফ হির্স্টের সাথে পরিচিত হন।[১] হলিউডে ঘুরতে গিয়ে তিনি চার্লি চ্যাপলিনের সাথে পরিচিত হন।[৩] চ্যাপলিন একটি বক্সিং ম্যাচে তার পাশে বসেছিলেন। যদিও চ্যাপলিন তার আত্মজীবনীতে লিখেন যে চেরিল তার কাছে এসে তাকে তার একটি চলচ্চিত্রে সুযোগ দেওয়ার কথা অনুরোধ করেছিল এবং বলেছিল পূর্বে তাদের সাক্ষাৎ হয়েছে।[৪]
চ্যাপলিন তাকে সিটি লাইট্স চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দেন। এই চলচ্চিত্রে তার অভিনয় সমাদৃত হলেও কাজের ক্ষেত্রে চ্যাপলিনের সাথে তার সম্পর্কে ব্যত্যয় ঘটে। আননোন চ্যাপলিন প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয় যে তার চুলবিন্যাসের জন্য তিনি চলচ্চিত্রের সেট ছেড়ে চলে যাওয়ায় তাকে একবার এই চলচ্চিত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।[৫] চ্যাপলিন তার অভিনীত সকল দৃশ্য জর্জিয়া হেলকে দিয়ে পুনঃচিত্রায়ন করার পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু পরে বুঝতে পারেন এই চলচ্চিত্রের জন্য অনেক অর্থ খরচ হয়ে গেছে। চেরিল এই প্রামাণ্যচিত্রে বলেন যে তিনি তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মারিও ডেভিসের উপদেশে এই চলচ্চিত্রে পুনরায় অভিনয় করার জন্য আরও অর্থ চান।
সিটি লাইট্স মুক্তির পূর্বে টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্স চেরিলের সাথে একটি চুক্তি করেন। সিটি লাইটসের সাফল্যের পর স্টুডিওটি তাকে তাদের ১৯৩০ এর দশকের কয়েকটি চলচ্চিত্রে সুযোগ দেয়। তারকা খ্যাতি লাভ করার পর তার প্রথম চলচ্চিত্র জন ওয়েনের গার্লস ডিমান্ড এক্সাইটমেন্ট (১৯৩১)। এছাড়া তিনি অন্যান্য প্রখ্যাত পরিচালক, যেমন জন ফোর্ডের দ্য ব্র্যাট (১৯৩১) ও টড ব্রাউনিংয়ের ফাস্ট ওয়ার্কার্স (১৯৩৩) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তিনি ১৯৩১ সালে গার্শউইনের জ্যানেট গেনরের সাথে সঙ্গীতধর্মী ডেলিশাস চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। পরবর্তীতে তিনি ব্রিটেন চলে যান এবং সেখানে জেমস ম্যাসনের দুটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। যার একটি হল ট্রাবল্ড ওয়াটার্স, যা তার অভিনীত শেষ চলচ্চিত্র। তার শেষের দিকের চলচ্চিত্রগুলো সফলতা লাভ করে নি এবং তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় ছেড়ে দেন।[৬]
চেরিল চারবার বিয়ে করেন। তার কোন সন্তান নেই। তার দ্বিতীয় স্বামী ছিলেন অভিনেতা ক্যারি গ্রান্ট। ১৯৩৪ সালে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের সাত মাস পর তারা আলাদা হয়ে যান। চেরিল জানান গ্রান্ট তার উপর অত্যাচার করত। ১৯৩৫ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।[৭]
চেরিলের তৃতীয় স্বামী জর্জ চাইল্ড ভিলিয়ার্স ছিলেন জার্সির ৯ম আর্ল। ১৯৩৭ সালে ভিলিয়ার্সকে বিয়ের পর তার বৈধ নাম হয় ভার্জিনিয়া চাইল্ড ভিলিয়ার্স, জার্সির কাউন্টেস। ১৯৪৬ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।
চেরিল অবশেষে ফ্লোরিয়ান মার্তিনির সাথে থিতু হন। মার্তিনি ছিলেন পোলীয় বৈমানিক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন চেরিল তার স্কোয়াড্রনের দেখাশুনা করতেন।[৭] মার্তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা বারবারার লকহিড মার্টিনের অধীনে একটি চাকরি পান এবং সেখানেই ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৯৬ সালে চেরিল তার মৃত্যু পর্যন্ত বসবাস করেন।
১৫৪৫ ভাইন স্ট্রিটে হলিউড ওয়াক অফ ফেমে তার নামাঙ্কিত তারকা রয়েছে।[৮]