বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশবাংলাদেশের ৩৭তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।[১] এটি দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় এবং বিশ্বের ১২তম মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়। নীল অর্থনীতি (ব্লু ইকোনমি) অর্জনের লক্ষ্যে মেরিটাইম বিষয়ক উচ্চতর পড়াশুনার জন্য প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম 'বিশেষায়িত' বিশ্ববিদ্যালয় এটি। পাশাপাশি এখান থেকে মেরিন ক্যাডেটদের আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন 'ব্যাচেলর অব মেরিটাইম সায়েন্স' ডিগ্রি দেয়া হয়।[২][৩]
ইতিহাস
২০১৩ সালে মেরিন ও মেরিটাইম সংশ্লিষ্ট উচ্চ শিক্ষার জন্য বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র বিশেষায়িত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।[৪] বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো স্নাতক (সম্মান) শ্রেণী চালুর অংশ হিসেবে ৩ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের মিরপুর পল্লবীস্থ অস্থায়ী ক্যাম্পাসে ধরিত্রী ও সমুদ্রবিজ্ঞান অনুষদ এর অধীনে বিএসসি (অনার্স) ইন ওশানোগ্রাফি এর ১ম ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়।
২০১৯ সালের জুলাই মাসে থেকে চট্টগ্রামে ১০৬.৬ একর জমির উপর স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। ২০২১ সালে প্রথম ধাপে এবং ২০২৫ সালে দ্বিতীয় ধাপে পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস নির্মাণ সম্পন্ন হবে। এক্ষেত্রে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে।[৫]
এটি বাংলাদেশের ৩৭ তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৮ সালে বিএসসি ইন নেভাল আর্কিটেকচার এন্ড অফশোর ইন্জিনিয়ারিং এর প্রথম ব্যাচের ক্লাস শুরু হয়। ২০১৯ সালে আরো দুইটি প্রোগ্রামের ক্লাস শুরু হয়। এলএলবি ইন মেরিটাইম ল এবং বিবিএ ইন পোর্ট ম্যানেজমেন্ট এন্ড লজিটিক্স। ২০২০ সালে বিএসসি ইন মেরিটাইম ফিশারিজ এর প্রথম ব্যাচের ভর্তি এবং ক্লাস শুরু হয়।
সামুদ্রিক মাৎস্যবিজ্ঞান, নিরাপদ জাহাজ চলাচল ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসন, নৌ-প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, সমুদ্রবিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক মেরিটাইম আইন ইত্যাদি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষাদান ও গবেষণার লক্ষ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৭ টি অনুষদের অধিনে ৩৮ টি বিভাগ চালু রয়েছে। তবে শুধুমাত্র ৫টি বিভাগ স্নাতক পর্যায়ের জন্য চালু রয়েছে। এছাড়াও পাশাপাশি ব্যাচেলর অব মেরিন সায়েন্সও চালু রয়েছে মেরিন ক্যাডেটদের জন্য। এর বাইরে কিছু অতিরিক্ত বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও দেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে এসব অনুষদ থেকে স্নাতক ডিগ্রিও দেয়া হবে।[৬] বর্তমানে স্নাতক পর্যায়ে ৫টি বিভাগে মোট ২০০ জনকে ভর্তি নেয়া হয়।
মেরিটাইম শাসন ও নীতি অনুষদ
মেরিটাইম আইন ও নীতি বিভাগ
মেরিটাইম নিরাপত্তা ও কৌশলগত অধ্যয়ন বিভাগ
মেরিটাইম নিরাপত্তা প্রশাসন বিভাগ
জাহাজ প্রশাসন অনুষদ
মেরিটাইম বিজ্ঞান বিভাগ
বন্দর ও নৌপরিবহন ব্যবস্থাপনা বিভাগ
পরিবহন ও লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ
ধরিত্রী ও সমুদ্র বিজ্ঞান অনুষদ
সমুদ্রবিজ্ঞান ও জলবিজ্ঞান বিভাগ
খনি বিভাগ
সামুদ্রিক মৎস্য ও জলজচাষ বিভাগ
সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান বিভাগ
জেনেটিক প্রকৌশল ও জৈবপ্রযুক্ত বিভাগ
পরিবেশ অধ্যয়ন বিভাগ
প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ
নৌ স্থাপত্য ও অফশোর প্রকৌশল বিভাগ
মহাসাগর প্রকৌশল বিভাগ
সামুদ্রিক প্রকৌশল বিভাগ
পোতাশ্রয় ও নদী প্রকৌশল বিভাগ
তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক্স প্রকৌশল বিভাগ
টেলিযোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগ
নিয়ন্ত্রণ প্রকৌশল ও মেকাট্রনিক্স বিভাগ
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও ইনফরম্যাটিকস অনুষদ
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ
সফটওয়্যার ও নেটওয়ার্ক প্রকৌশল বিভাগ
তথ্য ব্যবস্থা নিরাপত্তা বিভাগ
মেরিটাইম ব্যবসা অধ্যয়ন অনুষদ
ব্যবস্থাপনা বিভাগ
হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগ
অর্থ বিভাগ
অর্থনীতি বিভাগ
বিপণন বিভাগ
সামুদ্রিক পর্যটন ও আতিথেয়তা ব্যবস্থাপনা বিভাগ
সাধারণ শিক্ষা অনুষদ
ইংরেজি বিভাগ
গণিত বিভাগ
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ
রসায়ন বিভাগ
প্রাণরসায়ন বিভাগ
সামাজিক বিজ্ঞান ও নৃতত্ত্ব বিভাগ
বস্তুবিজ্ঞান বিভাগ
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
ইতিহাস বিভাগ
ভূমি প্রশাসন ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগ
স্নাতকোত্তর শিক্ষা কার্যক্রম
উল্লিখিত কোর্সের বাইরে অন্যান্য কিছু বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রিও প্রদান করা হয়:
জাহাজ ব্যবস্থাপনা অনুষদ
মাস্টার্স ইন পোর্ট অ্যান্ড শিপিং ম্যানেজমেন্ট
ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ
এমবিএ ইন মেরিটাইম বিজনেস
এমবিএ ইন ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট
মেরিটাইম বিজ্ঞান
মাস্টার্স অব মেরিটাইম বিজ্ঞান
শর্ট (সার্টিফিকেট) কোর্স
সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট
ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং
মেরিন ইন্সুরেন্স অ্যান্ড ক্লেইম
বিপজ্জনক পণ্য নিয়ন্ত্রণ ও পরিবহন
ইনস্টিটিউটসমূহ
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ১টি ইনস্টিটিউট রয়েছে এবং শীঘ্রই আরো ৩টি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর গবেষণার জন্য বর্তমানে একটি গবেষণা কেন্দ্র আছে:
স্নাতকোত্তর গবেষণা ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি স্থানান্তর কেন্দ্র [৮]
বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টার
এ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টার রয়েছে যার নাম স্টার্টআপ ব্লু। সুনীল অর্থনীতিকে বেগবান করতে ও মেরিটাইম সেক্টরকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন ব্যবসাকে ফান্ড প্রদানের মাধ্যমে সাহায্য করে এই সেন্টারটি।
বিজনেস প্রতিযোগিতা
স্টার্টআপ ব্লু কর্তৃক এখন পর্যন্ত হওয়া ব্যবসা বিষয়ক প্রতিযোগিতা একটি। ২০২৩ সালের ১২ই জুন এটি অনুষ্ঠিত হয়।[৯][১০]
অবস্থান
স্থায়ী ক্যাম্পাস
হামিদচর, বাকলিয়া, চট্টগ্রাম।
অস্থায়ী ক্যাম্পাস
পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬।
কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার
শিক্ষার্থীদের পড়ার এবং বই নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নিজস্ব গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরি আছে। এখানে শিক্ষার্থীরা চাইলে বই পড়তে পারে কিংবা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাসায়ও নিয়ে যেতে পারে।
কেন্দ্রীয় মিলনায়তন
ভবন-১ এর পঞ্চম তলায় একটি বড় এবং অত্যাধুনিক সুবিধা সংবলিত মিলনায়তন রয়েছে। এতে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টের এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল অনুষ্ঠান, লেকচার, সেশন ইত্যাদি এখানেই আয়োজন করা হয়।
আবাসিক হল
শিক্ষার্থীদের থাকার সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা ক্যাম্পাসে ৩টি আবাসিক হল রয়েছে। হলদুইটি মিরপুর ডিওএইচএসে অবস্থিত। আবাসিক হলতিনটিতে অত্যাধুনিক সকল প্রকারের সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান। হলতিনটি হল:
হল-১ (মেল উইং)
হল-২ (মেল উইং)
হল-১ (ফিমেল উইং)
স্বাস্থ্য কেন্দ্র
বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য রক্ষার মৌলিক সুবিধাদি সংবলিত একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। এটি ভবন-১ এর নিচতলায় অবস্থিত। পাশাপাশি জরুরি সেবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আধুনিক অ্যাম্বুলেন্সও রয়েছে।
ক্যাফেটেরিয়া
বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ২ টি ক্যাফেটেরিয়ার ব্যবস্থা আছে। এগুলোতে সকাল ও দুপুরের খাবার পাওয়া যায়। এগুলো সকাল ০৮:৩০ থেকে বিকেল ০৫:০০ পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে একটি এলইডি টেলিভিশন এবং নিরাপদ পানির ব্যবস্থা আছে।
ক্যাফেটেরিয়ার তালিকা:
পদ্মা ভবন ক্যাফেটেরিয়া (৮ম তলা)
মেঘনা ভবন ক্যাফেটেরিয়া (৩য় তলা)
সহযোগী বিশ্ববিদ্যালয়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির সাথে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পারস্পরিক সহযোগিতার চুক্তি রয়েছে। [১১]