ফ্লোরা জাইবুন মাজিদ |
---|
জন্ম | ফ্লোরা জাইবুন মাজিদ ৬ ডিসেম্বর, ১৯৩৯
|
---|
পেশা | শিক্ষকতা |
---|
পরিচিতির কারণ | বিজ্ঞানী,গবেষক, লেখক |
---|
ফ্লোরা জাইবুন মাজিদ একজন বাংলাদেশী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী। তিনি বি.সি.এস.আই.আর-এর চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৯৭ সালে স্পিরুলিনা প্রকল্পে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য বাংলাদেশ মহিলা বিজ্ঞানী সমিতি ড. মাজিদকে স্বর্ণপ্রদক প্রদান করেন। নারীকণ্ঠ ফাউন্ডেশন (এনকেএফ) তাকে প্রামান্য ডেস্ক ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত করেন ২০১০ সালে।[১] তিনি প্রখ্যাত বিজ্ঞানী কুদরাত-এ-খুদার সাহচর্যে এসেছিলেন।
বংশ পরিচয়
ফ্লোরা জাইবুন মাজিদের পিতা মোল্লা আব্দুল মাজিদ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচেলর স্নাতক এবং মা বেগম নাজমান্নেছা মাজিদ ছিলেন একজন বিশিষ্ট সমাজসেবী যিনি স্বীকৃতিস্বরূপ পদক লাভ করেন। ১৯৫০ এর দাঙ্গার সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে তিনি আশ্রয় দেন এবং একইভাবে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের দুস্থ ও অসহায় মানুষকে তিনি আশ্রয় দিয়েছিলেন। ১৯৫৪ সালে ময়মনসিংহের প্রথম প্রসূতি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন এবং ঢাকা মহিলা সমিতির প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি ফকিরাপুলে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের লেখাপড়া এবং ভোকেশনাল ট্রেনিং -এর ব্যবস্থা করেছিলেন। [২]
ফ্লোরা জাইবুন মাজিদের দাদা মোল্লা সাদাত্ আলী নরসিংদীর আশরাফপুর গ্রামে অনেক জমি-জমার মালিক ছিলেন। তার নানা খান বাহাদুর দলিল উদ্দীন আহমদ ম্যাজিস্ট্রেট হলেও তার লেখা ইংরেজি গ্রামার ও ট্রান্সলেশন বই প্রকাশিত হয়েছিল। নানী ফায়জুন্নেসা সমাজসেবী ছিলেন এবং কঠোর পর্দার অন্তরালে থেকেও তিনি গরীব-দুঃখীদের সাহায্য করতেন নিজ বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতে ও দাঙ্গার সময় তিনি উভয় সম্প্রদায়ের লোকজনকে আশ্রয় দিয়ে। ফ্লোরা জাইবুন মাজিদের বড় বোন রুবি রহমান কূটনীতিক স্বামীর সঙ্গে সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং তিনিই প্রথম বাঙালি নারী শিল্পী যিনি চীনা পদ্ধতিতে জল রঙে ছবি এঁকেছেন যা মুগ্ধ করেছিল কামরুল হাসান ও মুস্তাফা মনোয়ারের মতো শিল্পীদের। রুবি রহমানের লেখা পড়ে মুগ্ধ হয়েছেন সুফিয়া কামাল। তিনি মৃত্যুবরণ করেন মাত্র ৩৫ বছর বয়সে দামাস্কাস-বৈরুতের পথে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ।[২]
প্রাথমিক জীবন
ফ্লোরা জাইবুন মাজিদের সাত ভাই বোনের মধ্যে তার স্থান চতুর্থ। ঢাকায় তার জন্ম হলেও কলকাতা শহরে তার ছেলেবেলা কেটেছে।কারণ বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসে চাকরির জন্য তার পিতা সেখানে কর্মরত ছিলেন।ছোট বেলা থেকেই খুব গাছপালা ভালবাসতেন। শৈশবে মাত্র দেড় বছর বয়সে পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়ে তার ডান পা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তিনবার দুর্ঘটনায় পতিত হন ।[২]
শিক্ষা জীবন
ফ্লোরা জাইবুন মাজিদ ১৯৪৫ সালে কলকাতার সেন্ট জন্স ডিওসেসান গার্লস হাই স্কুলের কেজি টুতে ভর্তি হন। এই বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর দেশ ভাগ হওয়ার কারণে তিনি ঢাকা চলে আসেন এবং ঢাকার ইডেন স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হন। কামরুন্নেছা স্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ফ্লোরা প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন এবং তারপর বকশীবাজারের ইডেন কলেজে থেকে ১৯৫৭ সালে তিনি প্রথম বিভাগে আই.এস.সি পাশ করেন । ১৯৫৭ সালেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় উদ্ভিদবিদ্যাকে পাঠ্যবিষয় হিসেবে বেছে নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেও মায়ের উৎসাহে ভর্তি হয়ে যান বোটানিতে। তার মা নাজমান্নেছা মাজিদ জন্য বিভিন্ন জায়গায় থেকে মাশরুম, বিভিন্ন রোগাক্রান্ত গাছ নিয়ে আসেন পড়ালেখার জন্য এবং তাই তিনি সর্বোচ্চ মার্কস পান পরীক্ষাতে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ থেকে ১৯৬০ সালে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতক (সম্মান) পাশ করেন তিনি। ১৯৬১ সালে উদ্ভিদবিজ্ঞানে এম.এস.সিতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন করে তিনি মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৬৫ সালে তিনি মাত্র দু'বছরে উদ্ভিদ বিদ্যায় পিএইচ.ডি ডিগ্রী অর্জন করেন। [২]
কর্মজীবন
ফ্লোরা মাজিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬১ সালে উদ্ভিদবিদ্যায় মাস্টার্স ডিগ্রির তাত্ত্বিক পরীক্ষা দেয়ার যখন ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন 'কায়েদে আযম বেসরকারি কলেজের ব্যবহারিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। এরপর ইডেন সরকারি কলেজে ফ্লোরা মাজিদ শিক্ষকতা করেন।১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ডক্টরেট অর্জন করে দেশে ফিরে পুনরায় তিনি ইডেন কলেজের চাকুরীতে যোগ দেন ডক্টরেট ডিগ্রী প্রফেসর হিসেবে । গবেষণা করার সুযোগ না থাকায় শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে ১৯৬৬ সালের ২৫ মার্চ থেকে তিনি তত্কালীন পাকিস্তান বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (পি.সি.এস.আই.আর, বর্তমান বি.সি.এস.আই.আর)-এর পূর্বাঞ্চলিক গবেষণাগারে ঊর্ধ্বতন গবেষণা কর্মকর্তা পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ফ্লোরা জাইবুন মাজিদ ১৯৭৭ সালে প্রধান বৈজ্ঞানিক পদে এবং ১৯৮৬ সালে মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি লাভ করেন। [৩]
সন্মাননা
পুরস্কার |
সাল |
দাতা
|
স্বর্ণপ্রদক |
১৯৯৭ |
বাংলাদেশ মহিলা বিজ্ঞানী সমিতি
|
স্বর্ণপ্রদক |
১৯৮৪ |
বেগম জেবুন্নেছা ও কাজী মাহবুবুল্লাহ জনকল্যাণ ট্রাস্ট
|
স্বর্ণপ্রদক |
১৯৮১ |
বাংলাদেশ মহিলা বিজ্ঞানী সমিতি
|
স্বর্ণপ্রদক |
১৯৮৫ |
বাংলাদেশ একাডেমী অব সাইন্স
|
সুবর্ণ জয়ন্তী স্মারক পদক |
২০০৬ |
বি সি এস আই আর
|
তথ্যসূত্র