শহীদ খন্দকার ফজলুর রহমান (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। [১]
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
খন্দকার ফজলুর রহমানের বাড়ি বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার গুড়িয়া গ্রামে। তার পিতার নাম হোসেন আলী খন্দকার এবং মায়ের নাম আমিরুন্নেছা। তার স্ত্রীর নাম মমতাজ বেগম। তাদের তিন মেয়ে।
খন্দকার ফজলুর রহমান এর জন্মস্থান হলো বাকের গঞ্জ এর কলসকাঠী ইউনিয়ন এর গুড়িয়া গ্রামের মীরা বাড়ি তে।তার বাবার কবর ও ওখানে এখোনো আছে মীরা বাড়ি মসজিদের পাশে। শৈশব ও কৈশোরে কেটেছে ওখানে তার নানা বাড়িতে। ওনার নানার নাম মীর নূর মোহাম্মদ।পরে তিনি লেখা পড়ার জন্য আউলিয়া পুর এর মেঝ মামার ওখানে যান।ওখান থেকেই তিনি সেনাবাহিনী তে যোগদান করেন।ওনার বড় ভাই খন্দোকার লুতফুর রহমান এখোনও বেচে আছেন এবং তিনি একজন ভাষা সৈনিক।
কর্মজীবন
১৯৭১ সালে খন্দকার ফজলুর রহমান কর্মরত ছিলেন রংপুর ইপিআর উইংয়ে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। তিনি প্রথমে সাহেবগঞ্জ সাবসেক্টরে ও পরে পাটগ্রাম সাবসেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৭১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলায় ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্প। সেখানে সন্ধ্যা থেকে শুরু ছিল বৃষ্টি এবং ঝোড়ো বাতাস। বিরূপ এই আবহাওয়ার মধ্যেই নৌকা করে নদী পার হলেন মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকাংশই ছিলেন ইপিআরের সদস্য। এদেরই একটি কোম্পানির নেতৃত্বে দিচ্ছিলেন খন্দকার ফজলুর রহমান । সাব-সেক্টর কমান্ডার মতিউর রহমান তাদের সবার নেতৃত্বে ছিলেন। নদী পার হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে ছিল আরও একটি বড় খাল। এই খালের ওপারেই পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থান। ফজলুর রহমান ও তার সঙ্গীরা খাল পার হয়ে দ্রুত অবস্থান নেন। ভোর হয়ে গেলে প্রথম গুলি করলেন মতিউর রহমান। এরপর পরই মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে আক্রমণ চালালেন। দিনব্যাপী যুদ্ধ চলে। ক্রমাগত এ গোলাগুলির মধ্যেই ফজলুর রহমান সন্ধ্যার আগে দল নিয়ে এগিয়ে গেলেন পাকিস্তানি সেনাদের খুব কাছাকাছি অবস্থানে। আকস্মিক এই ঘটনায় পাকিস্তানি সেনারা দিশেহারা হয়ে যায়, তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ধাবমান এই দলের গতি রোধ করতে পারে না। মুক্তিযোদ্ধারা তীব্র বেগে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।
এমন সময় পাকিস্তানি সেনাদের দিক থেকে তীব্র গোলাবৃষ্টি শুরু হয়। ফজলুর রহমান অতি কষ্টে তার দলকে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করলেন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাদের বিপুল সমরাস্ত্রের সামনে টিকে থাকা তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ল। তার পরও তিনি ও তার অন্যান্য সহযোদ্ধা সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করে যাচ্ছিলেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে হঠাৎ গোলার টুকরোর আঘাতে তিনি গুরুতর আহত হলেন। তা সত্ত্বেও তিনি লড়াই করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু একটু পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। তিন দিনের এই যুদ্ধে পাকিস্তানিদের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও মুক্তিবাহিনীর আরও ছয়জন শহীদ এবং ৩০ জন আহত হন। খন্দকার ফজলুর রহমানসহ অন্য শহীদ যোদ্ধাদের সমাহিত করা হয় হাতীবান্ধা হাইস্কুল প্রাঙ্গণে।[২]
পুরস্কার ও সম্মাননা
পাদটীকা
তথ্যসূত্র
বহি:সংযোগ