আবদুস সালেক চৌধুরী (জন্ম: ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৪৬ - মৃত্যু: ১৯ নভেম্বর, ১৯৭২) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। তার গেজেট নম্বর ১৯। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মেজর পদধারী ছিলেন।[১] মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র মেজর খালেদ’স ওয়ার-এ সম্মুখসমরে তার সাহসিকতা চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
আবদুস সালেক চৌধুরী'র পৈতৃক বাড়ি ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার হাতুরপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুল রহিম চৌধুরী এবং মায়ের নাম সায়মা খানম। আট ভাইবোনদের মধ্যে তিনি চতুর্থ ছিলেন।
কর্মজীবন
১৯৭১ সালে আবদুস সালেক চৌধুরী চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। সে সময়ে তিনি কর্মরত ছিলেন ঢাকা সেনানিবাসে। মার্চ মাসে তিনি ঢাকায় ছিলেন। ২২ এপ্রিল পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রাথমিক পর্যায়ে খালেদ মোশাররফের (বীর উত্তম) অধীনে কুমিল্লা অঞ্চলে যুদ্ধ করেন। পরে সেক্টর গঠিত হলে দুই নম্বর সেক্টরের সালদা নদী সাবসেক্টরের অধিনায়ক নিযুক্ত হন তিনি। অক্টোবর মাসে খালেদ মোশাররফ আহত হলে নিয়মিত মুক্তিবাহিনী ‘কে’ ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মেজর আবদুস সালেক চৌধুরী।[২]
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত সালদা নদী রেলস্টেশনের কাছে নয়নপুরসহ আশপাশের গোটা এলাকা ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থান। সেপ্টেম্বর মাসে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের এই প্রতিরক্ষা অবস্থান শক্তিশালী করে তোলে। সে সময়ই মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে আক্রমণ করেন। ভয়াবহ সে যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলের নেতৃত্ব দেন আবদুস সালেক চৌধুরী। নিজ দল নিয়ে আবদুস সালেক চৌধুরী অবস্থান নেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানের কাছে। নির্ধারিত সময় তিনি সংকেত দেওয়া মাত্র মুক্তিযোদ্ধারা হামলা করল। যুদ্ধের একপর্যায়ে ভীতসন্ত্রস্ত পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে শুরু করেন। ঠিক তখনই মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাবারুদ শেষ হয়ে চরম বিপন্ন অবস্থার সম্মুখীন হলেন। আবদুস সালেক চৌধুরী সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেন। ঠিক ভোর পাঁচটায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর আর্টিলারির সমর্থন নিয়ে সালেক চৌধুরী ও গাফফার শত্রুর পেছন দিক দিয়ে আক্রমণ শুরু করলেন। গোলাগুলির ব্যপকতায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কোম্পানি আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হলেও তারা করেনি। তবে মুক্তিযোদ্ধারা তখনও যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এটা ছিল শত্রুর বিরুদ্ধে প্রথম সরাসরি আক্রমণ। এতে কৃতিত্ব দেখান সালেক চৌধুরী।[৩]
উত্তরাধিকার
১১ ফেব্রুয়ারী ২০১০, তার জীবনীভিত্তিক "মেজর আবদুস সালেক চৌধুরী ও সালদা যুদ্ধ" শীর্ষক বইটি প্রকাশিত হয়।[৪]
পুরস্কার ও সম্মাননা
পাদটীকা
তথ্যসূত্র