প্রথম মুহাম্মদ চেলেবি (উসমানীয় তুর্কি: چلبی محمد, Mehmed I বা Mehmed Çelebi) (৩ আগস্ট১৩৮১ – ২৬ মে ১৪২১) ছিলেন উসমানীয় সুলতান। ১৪১৩ থেকে ১৪২১ সাল পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করেছেন। তিনি সুলতান প্রথম বায়েজিদ ও তার স্ত্রী দাওলাত খাতুনের পুত্র।[১] তার শাসনামল উসমানীয় গৃহযুদ্ধের কারণে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এই গৃহযুদ্ধের ফলে সালতানাত বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। মৃত্যুর পূর্বে তিনি সাম্রাজ্যকে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হন।
প্রারম্ভিক জীবন
প্রথম মুহাম্মদ ১৩৯০ সালে বুরসায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সুলতান বায়েজিদের তৃতীয় পুত্র। তার অন্যান্য ভাইদের মত তার নামেও চেলেবি পদবী যুক্ত ছিল।
১৪০২ সালের ২০ জুলাই সুলতান বায়েজীদ তুর্কি-মোঙ্গল শাসক তৈমুরের কাছে আঙ্কারার যুদ্ধে পরাজিত হন। বায়েজীদকে বন্দী করে সমরকন্দ নিয়ে যাওয়া হয়। মুস্তাফা চেলেবি ছাড়া মুহাম্মদ ও তার বাকি ভাইয়েরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। মুস্তাফাকেও বন্দী করে সমরকন্দে নেয়া হয়েছিল। বায়েজীদ পাশা মুহাম্মদকে উদ্ধার করে নিজের শহর আমাসিয়া নিয়ে যান। পরবর্তীতে মুহাম্মদ বায়েজীদ পাশাকে তার উজিরে আজম নিয়োগ দিয়েছিলেন।
যুদ্ধের পর মুহাম্মদ তার ভাই সুলাইমান, ঈসা ও মুসার সাথে লড়াই করেন। ১৪০২ থেকে ১৪১৩ সাল পর্যন্ত চলমান এই যুদ্ধ উসমানীয় গৃহযুদ্ধ নামে পরিচিত। যুদ্ধে মুহাম্মদ জয়ী হন এবং বাকি ভাইয়েরা নিহত হন। পরবর্তীতে মুস্তাফা চেলেবি মুক্তি পাওয়ার পর মুহাম্মদ ও তার ছেলে দ্বিতীয় মুরাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন।
শাসনকাল
গৃহযুদ্ধে জয়ী হওয়ার পর প্রথম মুহাম্মদ সুলতান হিসেবে সিংহাসনে বসেন। তিনি আলবেনিয়ার অংশবিশেষ, জানদারি আমিরাত ও মামলুকদের কাছ থেকে সিলিসিয়ার আর্মেনীয় রাজ্য অধিকার করে নেন। তার অনেক অর্জনের জন্য তিনি উসমানীয় সালতানাতের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত।
শাসনকার্য শুরুর পর গৃহযুদ্ধের সময় আত্মগোপনে থাকা তার ভাই মুস্তাফা চেলেবি বেরিয়ে আসেন এবং সাম্রাজ্য ভাগের দাবি জানান। মুহাম্মদ এর দাবি প্রত্যাখ্যান করেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে তারা মুখোমুখি হন। যুদ্ধে মুস্তাফা পরাজিত হন। মুস্তাফা বাইজেন্টাইন শহর সেলোনিকিতে পালিয়ে যান। কিন্তু মুহাম্মদের সাথে একটি চুক্তির পর বাইজেন্টাইন সম্রাট দ্বিতীয় পেলাইওলোগোস মুস্তাফাকে লেমনস দ্বীপে নির্বাসিত করেন।
এরপরও মুহাম্মদকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তার ভাইপো ওরহানের কারণে তিনি সমস্যাগ্রস্থ হন। বাইজেন্টাইন সম্রাট দ্বিতীয় মানুয়েল পেলাইওলোগোস ওরহানকে সুলতান মুহাম্মদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। তবে মুহাম্মদ ষড়যন্ত্র ধরে ফেলেন এবং ওরহানকে বিশ্বাসঘাতকতার জন্য অন্ধ করে দেয়া হয়।
১৪১৬ সালে শাইখ বদরুদ্দিন বিদ্রোহ শুরু করেন। চার বছর লড়াইয়ের পর উজিরে আজম বায়েজীদ পাশা তাকে বন্দী করতে সক্ষম হন। ১৪২০ সালে বদরউদ্দিনকে সেরেস শহরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।[২]
মৃত্যু
সাম্রাজ্যকে ঐক্যবদ্ধ করার পর প্রথম মুহাম্মদ আট বছর ক্ষমতায় ছিলেন। ১৪২১ সালের ২৬ মে তিনি বুরসায় মৃত্যুবরণ করেন। তাকে বুরসায় দাফন করা হয়।