প্রথম পূর্বাঞ্চলীয় নারী সম্মেলন অথবা (ইংরেজিতে ফার্স্ট ইস্টার্ন উইমেন্স কংগ্রেস), যাকে প্রাচ্য নারীদের প্রথম সাধারণ সম্মেলন এবং প্রথম প্রাচ্য নারী সম্মেলন নামেও উল্লেখ করা হয়ে থাকে, এটা ছিল একটা আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন; যে সম্মেলন সিরিয়ার দামাস্কাসে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।[১] নূর হামাদের নেতৃত্বে সিরীয় নারীদের সাধারণ ইউনিয়ন এই সম্মেলনের আয়োজন করে; সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন আরব দুনিয়া এবং পূর্ব এশিয়া থেকে আগত অংশগ্রহণকারীগণ।
১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে আন্তর্জাতিক নারী ভোটাধিকার জোটে সিরিয়া যোগ দিয়েছিল এবং ওই বছরেই বার্লিনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নারী ভোটাধিকার জোটের ১১তম সম্মেলনেও সিরিয়ার অংশগ্রহণ ছিল। পাশ্চাত্যের নারী আন্দোলনের আদলে মধ্যপ্রাচ্যের নারীদের আন্তর্জাতিকভাবে একটা নারী সংগঠন গঠন করার ধারণা বার্লিন সম্মেলন থেকে রূপ পেয়েছিল। অন্য দিকে সমান্তরালভাবে, ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দেই জেরুজালেমে এই সংস্থার পাশাপাশি আরব মহিলা নির্বাহী কমিটির দ্বারা ফিলিস্তিন আরব সম্মেলনের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে প্রথম আরব নারী সম্মেলন গঠনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।[২] প্রথম পূর্বাঞ্চলীয় নারী সম্মেলন গঠনের রাস্তা তৈরি হয়েছিল এইভাবেই। বার্লিন সম্মেলনের ধরনের একটা একই রকম পূর্বাঞ্চলীয় নারী সম্মেলন গঠনের আয়োজন করার বিষয় যার কণ্ঠে প্রথম ধ্বনিত হয় তিনি হলেন সাইজা নবারবি; এটাও উল্লেখযোগ্য যে, নূর হামাদা এই আহ্বানের যথাযথ প্রত্যুত্তর দিয়ে এগিয়ে এসছিলেন, অর্থাৎ সম্মেলন আয়োজনের কাজটা করে দিয়েছিলেন।[৩]
১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের প্রথম পূর্বাঞ্চলীয় নারী সম্মেলন এক কথায় ছিল একটা অগ্রগামী কার্যক্রম, কেননা এই ধরনের প্রথম আয়োজন করা এক অনুষ্ঠান মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার নারীদের মধ্যে ঐক্যের বাতাবরণ সৃষ্টি করার পক্ষে খুবই সহায়ক ছিল। এই সম্মেলনে আন্তর্জাতিক নারী ভোটাধিকার জোটের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আব্রা থিওডোরোপুলাস।
সম্মেলনে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল সেগুলো হল: "বিবাহ বিচ্ছেদ আইনে সমতা, বাল্য বিবাহ, শ্রম, শিক্ষা, মদ, সামাজিক স্বাস্থ্যবিধি, আরবি সাহিত্য, হস্তশিল্প এবং জাতীয় শিল্প"।[৩] সম্মেলনে যেসব প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল সেগুলো হল: বহুবিবাহ এবং বাল্যবিবাহের বিলোপ সাধন করা, মেয়েদের বিয়ের বয়স বাড়িয়ে ১৬ বছর করা, নারীদের জন্য শিক্ষাকে অত্যাবশ্যক করা এবং সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রে পেশাদার জীবন গঠন করে সঙ্গে সমান কাজের জন্য সমান বেতন প্রদানের ব্যবস্থা করা।[৩]
প্রথম সম্মেলনের পর ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ইরানের তেহেরানে দ্বিতীয় পূর্বাঞ্চলীয় নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।[৪]