পরিণীতা ২০১৯ সালে রাজ চক্রবর্তী প্রোডাকশনের ব্যানারে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি ভারতীয় বাংলা প্রণয়ধর্মী চলচ্চিত্র। এটি প্রযোজনা ও পরিচালনা করেন রাজ চক্রবর্তী। চলচ্চিত্রটি শহুরে ভালোবাসা বিচ্ছেদ ও প্রতিশোধের একটি কাহিনী। এতে অভিনয় করেন শুভশ্রী গাঙ্গুলী, ঋত্বিক চক্রবর্তী, গৌরব চক্রবর্তী ও ফালাক রশিদ রায়। অদ্রিত রায় চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় একটি চরিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রের সঙ্গীত সুরকার অর্কপ্রভ মুখোপাধ্যায়।[১] ২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চলচ্চিত্রটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়।[২] এছাড়া অনলাইনে জি৫-এ চলচ্চিত্রটি মুক্তি দেওয়া হয়।[৩]
মেহুল (শুভশ্রী গাঙ্গুলী) বোর্ড পরীক্ষায় বসতে যাওয়া এক কিশোরী, যে তার টিউশন শিক্ষক বাবাইদার (ঋত্বিক চক্রবর্তী) প্রতি অনুরক্ত। বাবাইদা নিজে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী, যে পাড়ায় সবচেয়ে বেশি নম্বর পায়। মেহুলের ধারণা ছিল বাবাইদাও তাকে ভালোবাসে, যখন সে দেখতে পায় শান্ত পরিশীলিত বাবাইদা তার সাথে কেউ খারাপ ব্যবহার করলে সহ্য করতে পারে না। হোলির আগে একদিন বাবাইদা বলে যে তার মেহুলকে কিছু বলার আছে। মেহুল ধরেই নেয় বাবাইদা তাকে প্রেম নিবেদন করবে। হোলির দিন মেহুল সিঁদুরমেশানো আবীর নিয়ে ছাদে অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু বাবাইদা মেহুলের সামনে সায়ন্তিকাকে (ফলক রশিদ রায়) নিয়ে আসে। সে সায়ন্তিকাকে তার নতুন গার্লফ্রেন্ড হিসেবে পরিচয় দেয়, যাকে সে সম্প্রতি প্রেম নিবেদন করেছে এবং সে স্বীকার করেছে। বাবাইদা মেয়েটির সাথে একই অফিসে কাজ করত এবং তার নামে একটি ডায়রি লিখে। বাবাইদা মেহুলকে সিঁদুরমাখানো আবীর মেহুলকে লাগিয়ে দেয় এবং বলে যে এখন থেকে তাকে শুধু তার নয়, বরং তার অর্ধাঙ্গিনীর দায়িত্বও নিতে হবে। মর্মাহত মেহুল সায়ন্তিকাকে আবির লাগিয়ে বলে যে এখন থেকে সে বাবাইদার সমস্ত দায়িত্ব তার হাতে দিয়ে যাচ্ছে। এই বলে বেরিয়ে যায়। এরপর থেকে মেহুল বাবাইদাকে এড়িয়ে চলা শুরু করে এবং পড়াশোনায় মনোনিবেশ করে। একদিন স্কুল থেকে ফেরার সময় হতাশ বাবাইদার সাথে দেখা হলে মেহুল খারাপ ব্যবহার করে। বাবাইদা তাকে একটি চিঠি দিলে অনিচ্ছা দেখিয়েও চিঠিটি গ্রহণ করে এবং বাড়ি চলে আসে। তিন মাস পর বোর্ড পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় মেহুল বাবাইদার রেকর্ড ভেঙেছে। ফল প্রকাশের দিনই বাবাইদার আত্মহত্যার সংবাদ পাওয়া যায়। মেহুল ছুটে বাবাইদার বাড়িতে যায় এবং বাবাইদার মৃতদেহ দেখে সহ্য করতে না পেরে বাড়ি ফিরে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ে। ৪ বছর পর, মেহুলকে একটি সরকারি অফিসে নিম্ন-বেতনে কাজ করতে দেখা যায়, যা দিয়ে মেহুল নিজের ও বাবাইদার বাড়ির খরচ বহন করে। বাবাইদার বাড়িতে বাবাইদার অসুস্থ শয্যাশায়ী মা ছাড়া আর কেউ থাকে না। একদিন আনন্দ নামে মেহুলের এক সহকর্মী মেহুলকে তাদের অফিসের বিপরীতে ইউনিকর্ন নামের কর্পোরেট অফিসে ইন্টারভিউয়ে উৎসাহিত করে। মেহুল সেখানে যায় এবং ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরি পেয়ে যায়। সে আগেও এই চাকরির জন্য চেষ্টা করে পায় নি। প্রথম দিন অফিসে বস রণদেবের (গৌরব চক্রবর্তী) সাথে সাক্ষাৎ করে, যেখানে রণদেব তাকে জীবন উপভোগ করতে এবং সুখী থাকতে বলে। পরবর্তী দিন মেহুল তার পোশাক পরিচ্ছদকে পরিবর্তন করে আকর্ষণীয় করে তুলে, যাতে সুদর্শন বস তার প্রতি অনুরক্ত হয়ে যায়। মেহুলের কাছে পৌঁছানোর জন্য সে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে। মেহুলও তার প্রতি সাড়া দিতে শুরু করে। এর মধ্যে বাবাইদার মা মারা যায়। একদিন রণদেব তাকে ডিনারের জন্য আমন্ত্রণ জানায় এবং প্রকারান্তরে একসাথে রাত কাটানোর পরিকল্পনা করে। সেই সময়েই রণদেবের ফোন বেজে উঠে এবং দেখতে পায় ফোনটা তার স্ত্রী সায়ন্তিকা করেছে, যাকে বাবাইদা ভালোবাসার মানুষ হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল। রণদেব মেহুলকে বিছানায় যেতে জোর করে এবং মেহুল তাকে মাথায় আঘাত করে। এমন অবস্থায় পর্দার দৃশ্যপট বদলে দেখা যায় মেহুল খালি পায়ে, ছেঁড়া কাপড়ে পুলিশ স্টেশনের দিকে দৌঁড়াচ্ছে। সে পুলিশ স্টেশনে ঢুকে ধর্ষিত হওয়ার ইঙ্গিত দেয় এবং জ্ঞান হারায়। এরপর থেকেই বাবাইদার আত্মহত্যার রহস্য উন্মোচিত হতে শুরু করে। বাবাইদার দেওয়া চিঠি থেকে মেহুল জানতে পারে বাবাইদা এবং সায়ন্তিকা কলেজ থেকে বন্ধু ছিল। ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করার পর দুজনই তাদের আরও কিছু বন্ধুদের সাথে ইউনিকর্নে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করতে শুরু করে। কিন্তু বস রণদেব সায়ন্তিকার ওপরে আগ্রহ দেখাতে শুরু করলে সায়ন্তিকা বদলে যায়। বাবাইদা প্রায়ই সায়ন্তিকা ও রণদেবকে রণদেবের কামরায় ঘনিষ্ঠভাবে পেতে থাকে। একদিন বাবাইদা তার বন্ধুর সাথে হওয়া অবিচারের প্রতিবাদ করতে রণদেবের কামরায় গেলে সায়ন্তিকা ও রণদেবকে খুনই ঘনিষ্ঠভাবে আবিষ্কার করে। রাগান্বিত হয়ে বাবাইদা আর রণদেবের মধ্যে হালকা বচসা হয়। পরবর্তীতে সায়ন্তিকা ও রণদেব বাবাইদার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। সায়ন্তিকা বর্তমানের মেহুলের মতোই সায়ন্তিকা পুলিশ স্টেশনে গিয়ে বাবাইদার বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণের অভিযোগ আনে। যার কারণে বাবাইকে আইনের মুখোমুখি হতে হয়। খুবই পড়ুয়া এবং নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনকারী ব্যক্তি হিসেবে ধর্ষণের অভিযোগ বাবাই গ্রহণ করতে পারে নি। সেইসাথে তার কর্মজীবনও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিল। এসব সহ্য করতে না পেরে বাবাই আত্মহত্যা করে। কিন্তু মৃত্যুর আগে বাবাই মেহুলের কথা ভাবে যে একমাত্র মেহুলই তাকে বিশ্বাস করবে যেহেতু সে তাকে ভালোবাসে। বাবাইয়ের মৃত্যুর পর সায়ন্তিকা ও রণদেব বিবাহ করে। বাবাইয়ের মৃত্যু রহস্য উন্মোচিত হওয়ার পর দেখা যায় রণদেবকে পুলিশ আটক করছে, এবং তাকে ও তার স্ত্রী সায়ন্তিকাকে প্রতারণার জন্য অভিযুক্ত করা হচ্ছে। শেষপর্যন্ত এটা পরিষ্কার হয়ে যায় বাবাইদার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশ্যেই ইউনিকর্নে মেহুল যোগদান করে। শেষ মুহূর্তে মেহুল বাবাইদার ছবির সামনে বলে যে, সে তার স্ত্রী, যেহেতু চার বছর আগে হোলির দিন সিঁদুর মেশানো আবীর দিয়ে মেহুলের মাথা রাঙিয়েছিল। এবং স্ত্রী হিসেবে ন্যায়বিচার পাইয়ে দেওয়া তার দায়িত্ব ছিল।
২০১৯ সালের ৪ জুলাই রাজ চক্রবর্তী এন্টারটেইনমেন্ট প্রা. লিমিটেড থেকে ইউটিউবে আনুষ্ঠানিকভাবে চলচ্চিত্রের ট্রেইলার প্রকাশিত হয়।[৭] প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্রটি মুক্তি দেওয়া হয় ২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর।[৮] মুক্তির পর সমালোচক মহলে ছবিটি বেশ প্রশংসিত হয়। সাধারণ দর্শকরাও চলচ্চিত্রটির বেশ প্রশংসা করেন এবং তাদের ইতিবাচক থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়।
অর্ক তার নিজের তৈরি সঙ্গীতে সুরারোপ করেন।
সকল গানের গীতিকার অর্ক; সকল গানের সুরকার অর্ক।