জেনারেল নোবুয়ুকি আবে (阿部 信行 Abe Nobuyuki, ২৪ নভেম্বর, ১৮৭৫ – ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৫৩) ছিলেন ইম্পেরিয়াল জাপানিজ আর্মির একজন জেনারেল,কোরিয়ার গভর্নর জেনারেল এবং ৩০ আগস্ট ১৯৩৯ থেকে ১৬ জানুয়ারী ১৯৪০ সময়কালে জাপানের ৩৬তম প্রধানমন্ত্রী ।[১]
প্রাথমিক জীবন ও সামরিক জীবন
আবে ইশিকাওয়া প্রদেশের কানাজাওয়া নগরের এক প্রাক্তন সামুরাই পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।তার শ্যালক ছিলেন ইম্পেরিয়াল জাপানিজ আর্মির এডমিরাল শিগেইয়োশি ইন্যুয়ে।
আবে টোকিও ১ নং মিডল স্কুল (টোকিও মেট্রোপলিটান হিবিয়া হাই স্কুল) ও এরপর ৪ নং হাই স্কুলে পড়েন।ছাত্রাবস্থায় তিনি ১ম চীন-জাপান যুদ্ধে সামরিক কর্মে স্বেচ্ছাসেবী ছিলেন।
যুদ্ধের পরে আবে ইম্পেরিয়াল জাপানিজ আর্মি একাডেমি থেকে নভেম্বর ১৮৯৭ সালে উত্তীর্ণ হন।পরের ২৭ জুন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসাবে নিযুক্ত হবার পর নভেম্বর ১৯০০ তে লেফটেন্যান্ট এ পদোন্নত হন। ১৯০১ এর ডিসেম্বরে আর্মি আর্টিলারি স্কুল থেকে উত্তীর্ণ হন। নভেম্বর ১৯০৩ এ ক্যাপ্টেন হিসাবে পদোন্নত হন এবং আর্মি যুদ্ধ কলেজ এর ১৯ তম ক্লাস থেকে ১৯০৭ এর নভেম্বরে উত্তীর্ণ হন।অতিজাতীয়তাবাদী জেনারেল আরাকি সাদাও তার একজন ক্লাসমেট ছিলেন।তিনি ডিসেম্বর ১৯০৮ এ মেজর হন এবং এক বছর পর আর্মি যুদ্ধ কলেজ এর নির্দেশক হিসাবে যোগদান করেন।১৯১০ এর নভেম্বরে তিনি জার্মান সাম্রাজ্যের জাপানি দূতাবাসে মিলিটারি সহদূত হিসাবে নিযুক্ত হন,এবং ফেব্রুয়ারি ১৯১৩ তে ভিয়েনার দূতাবাসে অতিরিক্ত সহদূত হিসাবে যোগ দেন।
আবে ফেব্রুয়ারি ১৯১৫ তে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে এবং ২৪ জুলাই ১৯১৮ তে কর্নেল পদে উন্নীত হন। তিনি ৩য় ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টে ১৯১৮ থেকে ১৯২১ পর্যন্ত কমান্ডারের ভূমিকা পালন করেন। ১৯১৮ এর আগস্টে তার রেজিমেন্টকে জাপানের সাইবেরিয়া হস্তক্ষেপ এর সময় সাইবেরিয়া পাঠানো হলেও কখনো সম্মুখ সমর করতে হয় নি। ৩ জুন ১৯২১ এ তিনি আর্মি যুদ্ধ কলেজের সচিব হন এবং ১৫ আগস্ট ১৯২২ এ মেজর জেনারেলে উন্নীত হন।৬ আগস্ট ১৯২৩ এ তিনি ইম্পেরিয়াল জেনারেল স্টাফের জেনারেল এফেয়ার্স ডিভিশনের পরিচালক নিযুক্ত হন।এর পরেই তিনি ১ সেপ্টেম্বরের ধ্বংসাত্মক ভুমিকম্পের পর কান্তো এলাকায় ৩ সেপ্টেম্বর সামরিক আইন নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন।
তিনি ২৮ জুলাই ১৯২৬ সামরিক মন্ত্রণালয়ে এ সামরিক সেবা বিষয় পরিচালক নিযুক্ত হন।৫ মার্চ ১৯২৭ এ লেফটেন্যান্ট জেনারেল হন। পরবর্তীতে তিনি সামরিক বিষয়ক ব্যুরোর চিফ এবং ১৯২৮ সালের ১০ আগস্ট থেকে আর্মির উপমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ২২ ডিসেম্বর ১৯৩০ থেকে ৪র্থ পদাতিক ডিভিশন পরিচালনা করতেন।
জানুয়ারী ১৯৩২ এ আবে জাপানিজ তাইওয়ান আর্মি পরিচালনা করেন এবং ১৯ জুন ১৯৩৩ এ পূর্ণ জেনারেল হন। সর্বোচ্চ যুদ্ধ কাউন্সিল এ দায়িত্ব পালনের পর ১০ মার্চ ১৯৩৬ এ রিজার্ভ লিস্টে নাম লাভ করেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে
হিরানুমা কিচিরো মন্ত্রিসভা পতনের পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আবে নোবুয়ুকি প্রথম সুনিশ্চিত পছন্দ ছিলেন না। বেসামরিক দিক থেকে ,কোনো ফুমিমারো বা হিরোতা কোকি প্রাথমিক প্রার্থী ছিলেন।কিন্তু আর্মি এবং অতিজাতীয়তাবাদীরা জেনারেল উগাকি কাজুশিগে কে জোরালো সমর্থন দিয়েছিল। "জেনরো" সাইয়নজি কিনমোচি সকল প্রার্থীর প্রতি তার অনীহা প্রকাশ করলে আর্মি নিজেদের পছন্দকে বাস্তবায়িত করার সিদ্ধান্ত নেয়।কিন্তু উগাকি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে অন্তর্বর্তীকালীন যুদ্ধমন্ত্রী জেনারেল আবে অগত্যা পছন্দ হিসাবে মনোনীত হন। তার সুবিধা ছিল,তিনি আর্মির দুইটি রাজনৈতিক বিভাজন তোসেহা বা কোদোহা কোনোটিরই অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না,উপরন্তু আপেক্ষিক রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে ইম্পেরিয়াল জাপানিজ আর্মির সমর্থিতও ছিলেন।অন্যদিকে অনেক জ্যেষ্ঠ আর্মি কর্মকর্তা তার সামরিক অনভিজ্ঞতার কারণে তাকে অপছন্দ করতেন।
আবে ৩০ আগস্ট ১৯৩৯ এ প্রধানমন্ত্রী হন।[২] তিনি একইসাথে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর পদে বহাল ছিলেন।মাত্র ৪ মাসের শাসনকালে তিনি দ্রুত ২য় চীন-জাপান যুদ্ধ সমাপ্ত করতে এবং ক্রমবর্ধমান ইউরোপীয় বিবাদে জাপানের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চান।এছাড়াও আর্মির মধ্যে নাৎসি জার্মানি এবং ফ্যাসিস্ট ইতালির সাথে রাজনৈতিক-সামরিক জোট গঠনের প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেন। সেনাবাহিনী এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে সমর্থনের অভাবে আবে জানুয়ারি ১৯৪০ এ মিতসুমাসা ইয়োনাই কর্তৃক প্রতিস্থাপিত হন।
পরবর্তী ক্যারিয়ার
প্রধানমন্ত্রী হিসাবে পদচ্যুতির ৩ মাস পরে আবেকে চীনে বিশেষ দূত হিসাবে নানজিং এ ওয়াং জিংওয়েই এর জাপান সমর্থিত অঞ্চল কে পরামর্শ দিতে পাঠানো হয়।একই সাথে উত্তর চীনে জাপানের অর্থনৈতিক ও সামরিক অধিকার নিশ্চিত করতে একটি চুক্তি করতে বলা হয় আবে কে।কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আবে চীনে ওয়াং জিংওয়েইর প্রো-জাপানি পুনর্গঠিত জাতীয় সরকারের" প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। জাপানে ফেরার পর আবে ১৯৪২ সালে হাইজ অব পীয়ারসএ যোগদান করেন এবং ইম্পেরিয়াল রুল এসিস্ট্যান্স পলিটিকাল এসোসিয়েশন এর সভাপতির সম্মানিক পদ গ্রহণ করেন।তিনি ১৯৪৪ ও ১৯৪৫ সালে ১০ম (ও শেষ) ব্যক্তি হিসাবে কোরিয়ার গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধএর পরে আবে পাবলিক অফিস থেকে উৎখাত হন এবং দখলদার মার্কিন সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে।তবে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধাপরাধএর অভিযোগ আনা হয় নি এবং দ্রুতই তাঁকে ছেড়ে দেয়া হয়।তার দ্বিতীয় ছেলে ছিলেন নবুহিরো আবে।
সম্মানসমূহ
"জাপানি উইকিপিডিয়া থেকে সংগৃহীত
গ্র্যান্ড কর্ডন অব দ্য অর্ডার অব দ্য স্যাক্রেড ট্রেজার(নভেম্বর ১৯৩০)
গ্র্যান্ড কর্ডন অব দ্য অর্ডার অব দ্য রাইজিং সান (এপ্রিল ১৯৩৪)