নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ এলাকায় অবস্থিত একটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় যা ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি পাঁচলাইশ থানার অন্তর্গত। শুধুমাত্র ছাত্ররা এই বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করতে পারে।[১] ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এই বিদ্যালয়টি চট্টগ্রাম বোর্ডে ৪র্থ স্থান অধিকার করে।[২]
১৯৬৭ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ এলাকায় এই বিদ্যালয়টি স্থাপন করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এটি বাংলাদেশ সরকারের তত্ত্বাবধানে আসে।[৩]
স্কুল আঙিনা প্রায় ১৫ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। স্কুলের মূল ভবনটি ইংরেজি T আকৃতির। মূল ভবনটি দ্বিতল। যার অভ্যন্তরে রয়েছে লাইব্রেরী, উপাসনা কক্ষ, মিলনায়তন, শিক্ষকদের সমাবেশ কক্ষ, স্কাউট কক্ষ, বিএনসিসি কক্ষ, প্রধান শিক্ষকের অফিস, সহকারী-প্রধান শিক্ষকের অফিস, একাউন্ট ও কর্মচারীদের অফিস, বিভিন্ন বিষয়ের জন্য আলাদা গবেষণাগার এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ শ্রেনী কক্ষ। মূল ভবনের সাথেই একটি বর্ধিত অংশও রয়েছে যাতে নবম ও দশম শ্রেনীর ক্লাস নেওয়া হয়ে থাকে। স্কুলের সীমানার মধ্যেই অপর একটি দ্বিতল ভবন রয়েছে যেখানে রয়েছে চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় এবং ছাত্রদের ছাত্রাবাস। প্রধান শিক্ষকের বাসভবনও স্কুল সীমানার মধ্যেই অবস্থিত। প্রধান শিক্ষকের বাসভবনের পাশেই রয়েছে বিশাল খেলার মাঠ যেখানে বছরের বিভিন্ন সময় নানান আন্তঃস্কুল এবং আন্তঃনগর ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার আয়োজন হয়ে থাকে। এই মাঠে খেলাধুলার মধ্যদিয়ে বহু ক্রীড়াবিদ তাদের ক্যারিয়ার শুরু করেন।
নাসিরাবাদ সরকারি স্কুলমাঠটা সবচেয়ে প্রিয় আমার। এখান থেকেই সত্যিকারের ক্রিকেট বলে খেলা শুরু আমার। প্রথম ছক্কা মেরেছি নাসিরাবাদ সরকারি স্কুল মাঠ, চট্টগ্রামে। - তামিম ইকবাল, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বর্তমান খেলোয়াড় ও অধিনায়ক।[৪]
স্কুলের সীমানার অভ্যন্তরে একটি মসজিদ রয়েছে।
বিদ্যালয়ের মূল ভবনের দোতলায়গ্রন্থাগার অবস্থিত। ছাত্ররা লাইব্রেরী কার্ডের মাধ্যমে বই বাসায় নিয়ে যেতে পারে। এছাড়া গ্রন্থাগার কক্ষে বসেও ছাত্ররা পড়াশুনা করতে পারে। একজন গ্রন্থাগারিক ও একজন সহকারী গ্রন্থাগারিক ছাত্রদের প্রয়োজনীয় বই খুঁজে দিতে সাহায্য করে থাকেন।
এই স্কুলে দুটি ভিন্ন শাখায় পাঠদান করা হয়ে থাকে। একটি প্রভাতী শাখা ও অপরটি দিবা শাখা। প্রত্যেক শাখার জন্য আলাদা শিক্ষক রয়েছেন। শিক্ষার মধ্যম বাংলা। সিলেবাস শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত। বছরে মোট দুইটি পরীক্ষা নেওয়া হয়ে থাকে। মধ্য সাময়িক এবং বার্ষিক। কোন ছাত্র বার্ষিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে তাকে পরবর্তী শ্রেনীতে ভর্তি করানো হয় না। নবম ও দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা দুটি বিভাগ রয়েছে। সকল শ্রেণিতে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া হয়। নবম ও দশম শ্রেনীর ছাত্রদেরকে লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি ব্যবহারিক পরীক্ষায়ও অংশগ্রহণ করতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন সময় ব্রিটিশ কাউন্সিলের পক্ষ থেকে সংযোগকরণ ক্লাস গ্রহণ কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়ে থাকে।পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্ররা প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা, অষ্টম শ্রেণির ছাত্ররা জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা এবং দশম শ্রেনীর ছাত্ররা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে থাকে।[৫]
এই স্কুলে সাধারণত জানুয়ারিতে পঞ্চম, ষষ্ঠ এবং নবম শ্রেণিতে ছাত্র ভর্তি করা হয়ে থাকে। একটি প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে ছাত্ররা ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করত। সাধারণত পঞ্চম শ্রেনিতে ১৪০ জন, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১৪০ জন এবং নবম শ্রেণিতে ৬০ জন ছাত্র ভর্তি করা হয়ে থাকে।[৬]ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিটি আসনে ভর্তির জন্য ১০ জনেরও বেশি পরীক্ষার্থী লড়াই করত।[৭] কিন্তু বর্তমানে লটারি পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের আসন নির্ধারণ করা হয় এবং ভর্তি করানো হয়।
এই বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ সারাদেশে একযোগে গৃহীত সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মধ্যদিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে থাকেন।
চট্টগ্রামে সকল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মধ্যে এক মাত্র নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ই ২৫ নভেম্বর ২০১৮ সর্বপ্রথম বিজ্ঞান ক্লাবের উদ্যেগে বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত হয়। আর প্রথম এই বিজ্ঞান মেলায় ই ১৫৭ টি প্রোজেক্ট নিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের সৃজনশীলতা দেখায়।
শিক্ষার্থীদের জন্য ২০২৩ সালে এই বিদ্যালয়ে একটি কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়। এই ল্যাব এ ২০ টি ল্যাপ্টপ রয়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের "তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি" বিষয়টি হাতে কলমে শিখতে পারবে।