দিনাজপুর গোরে-এ-শহীদ বড় ময়দান আঞ্চলিকভাবে দিনাজপুর বড় মাঠ নামে পরিচিত। এর আয়তন ৭৮ একর। এটি দিনাজপুরের প্রাণনাথপুর ও খামার ঝাড়বাড়ী মৌজায় অবস্থিত। দিনাজপুর গোরে-এ-শহীদ ময়দানের পূর্ব পার্শ্বে দিনাজপুর শহরের জিরো পয়েন্ট অবস্থিতো।[১]
জামাতে ইমামতি করেন দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল মসজিদের খতীব, দারুল উলুম আহমদাবাদ সরকার দিঘীর মোহতামীম মাও: শামসুল হক কাসেমী। তিনি ১৯৯৭ সালে প্রধান ইমাম নিযুক্ত হোন এবং ২০২৪ সাল পর্যন্ত একাধারে ২৭ বছর প্রধান ইমামের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি ১৯৮৩ সালে উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে ইসলামি শিক্ষা সমাপ্ত করেন।
দিনাজপুর বড় মাঠে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর উত্তর ফ্রন্টের বৃহৎ সমাবেশ ঘটেছিল বলে সি এস রেকর্ডে জানা যায়। ব্রিটিশ-ভারত রাজ্যের পক্ষ হতে মিলিটারি ডির্পাটমেন্ট এর নামে প্রায় ৬২ একর জমি দান করে। অতিরিক্ত ১৬ একর ভারত সাম্রাজ্য সরাসরি প্রদান করে। ইংরেজ আমলে এর উত্তর দিকে নির্মিত হয় খাদ্য গুদাম। যা অবিভক্ত দিনাজপুরের একমাত্র খাদ্য গুদাম ছিল। এখানে উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপিয়ান সাহেবদের জন্য স্টেশন ক্লাব স্থাপন করা হয়। ইংরেজ আমলে এ মাঠে ঘৌড় দৌড় অনুষ্ঠিত হত এবং পাকিস্তান আমলে নর নারায়ণ শীল্ড ফুটবল প্রতিযোগিতা হত। ১৯৬২ সালে এ মাঠে হেলিকপ্টার আবতরণের জন্য হেলিপোর্ট নির্মিত হয়। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর ২০ ডিসেম্বর এ মাঠে দিনাজপুরে প্রথম পতাকা উত্তোলন করেন এম আব্দুর রহিম। দেশ স্বাধীনের পর দিনাজপুর বড় মাঠের এক পাশে জেলার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ নির্মিত হয়। ১৯৮৬ সালে এ মসজিদের পাশে তেভাগা আন্দোলনের নেতা দিনাজপুরের কৃতি সন্তান হাজী মোহাম্মদ দানেশ সমাহিত হন।
এ মাঠের পশ্চিম পার্শ্বে রাজাদের জন্য নির্মিত জুলুম সাগর প্রসাদ, সার্কিট হাউজ এবং কালেক্টর বাসভবন (যা দিনাজপুর ভবন নামে পরিচিত) অবস্থিত। দিনাজপুরের জিরো পয়েনেটে অবস্থান, নির্মল বাতাস, খোলা আকাশ আর সবুজের সমারোহের জন্য এটিকে লিভার অব দিনাজপুর অ্যাখায়িত করা হয়।
এ মাঠের মাঝ ভাগে চেহেলগাজীর সমসাময়িক ইসলাম প্রচারক শাহ আমির উদ্দীন ঘুরী (র:) মাজার রয়েছে যিনি ঘোড়ায় চড়ে দিনাজপুরে ইসলাম প্রচার করেন এবং সেজন্য এ মাঠের নামকরণ হয় গোর এ শহীদ ময়দান।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহটি দিনাজপুরের গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে অবস্থিত। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় হতে এ মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে স্থায়ী কোন মিম্বার সেখানে নির্মাণ করা হয়নি। জেলা প্রশাসন স্থায়ী ঈদগাহ মিম্বার নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলো ২০১৫ সালে। ঈদগাহটির পরিকল্পনা ও অর্থায়ন করেছেন দিনাজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম।