সার্বজনীন: আরবি বাংলাদেশে: বাংলা পাকিস্তান ও ভারত:উর্দু যুক্তরাজ্যে অভিবাসীদের: স্ব স্ব স্থানীয় ভাষা
তাবলীগ জামায়াতে (উর্দু: تبلیغی جماعت, ধর্মপ্রচারকদের সমাজ)[১][২], যা আরব বিশ্বে আহবাব (বাংলা: বন্ধুগণ) নামে পরিচিত, হলো একটি ইসলাম ধর্মভিত্তিক সংগঠন ও ধর্মপ্রচার আন্দোলন, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা, এবং যা মুসলিমদেরকে ও নিজ সদস্যদেরকে সেভাবে ধর্মচর্চায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করে, যেভাবে ইসলামের নবীমুহাম্মদের জীবদ্দশায় তা চর্চা করা হতো,[৩][৪] এবং তা হলো বিশেষত আনুষ্ঠানিকতা, পোশাক ও ব্যক্তিগত আচরণের বিষয়গুলোতে।[৫][৬] বিশ্বজুড়ে সংগঠনটির আনুমানিক ১.২ কোটি থেকে ৮ কোটি অনুগামী রয়েছে ,[৭] যার অধিকাংশই দক্ষিণ এশিয়ায় বাস করে,[৮] এবং প্রায় ১৮০ থেকে[৯] থেকে ২০০ টি দেশে এর উপস্থিতি রয়েছে।[৫] একে "২০-শতকের ইসলামের সবচেয়ে প্রভাবশালী ধর্মীয় আন্দোলনগুলোর মধ্যে অন্যতম" হিসেবে গণ্য করা হয়।[১০]
১৯২৬ সালে মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভি কর্তৃক ভারতের মেওয়াতে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটি দেওবন্দি আন্দোলনের একটি শাখা হিসেবে এবং ইসলামের বিভিন্ন বিষয়কে অবজ্ঞা ও নৈতিক মুল্যবোধের সমসাময়িক অবক্ষয়ের প্রতিক্রিয়া হিসেবে তাদের যাত্রা শুরু করে। আন্দোলনটি তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করার মাধ্যমে ইসলামের আধ্যাত্নিক পুনর্গঠনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে।[৫][১১] তাবলিগ জামাত-এর মূল ভিত্তি হিসেবে ৬টি উসুল বা মূলনীতিকে ধারণ করা হয়। এগুলো হলো: কালিমা, নামায, ইলম ও যিকির, একরামুল মুসলিমিন (মুসলমানদের সহায়তা করা), সহিহ নিয়ত বা এখলাসে নিয়ত (বিশুদ্ধ মনোবাঞ্ছা), এবং দাওয়াত-ও-তাবলিগ (ধর্মপ্রচারের আহ্বান)।[১২]
তাবলিগ জামাত রাজনীতি ও ফিকহে (আইনশাস্ত্র) সকলপ্রকার সম্পৃক্ততাকে অস্বীকার করে [১৩][১৪] এর পরিবর্তে কোরআন ও হাদিসে দৃষ্টি দেয়।[১৩][১৫] তবে, দলটির উপর রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয়েছিল।[৫] যুক্তরাষ্ট সরকার ২০০১ এর সেপ্টেম্বরের পর থেকে তাবলীগ জামাতকে কড়া নজরদারিতে রেখেছে।[১৬] সংগঠনটির সাথে সন্ত্রাসবাদের কোন সরাসরি সম্পৃক্ততা এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।[১৬] তাবলীগী জামায়াত কঠোরভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং বিতর্ক এড়িয়ে চলে এবং এর পরিবর্তে কেবল ধর্মের দিকে মনোনিবেশ করে।[১৬] তাবলিগ জামায়াত স্বীকার করে যে এটি সামাজিক বা রাজনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে সকল ধরনের ব্যক্তিকে আকৃষ্ট করে এবং এর সদস্যপদ নিয়ন্ত্রণ করে না।
তাবলীগ জামাত আন্দোলনের প্রসার বিভিন্ন হিন্দু পুনর্জাগরণমূলক আন্দোলনের সঙ্গেও নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত ছিল যেমন শুদ্ধি এবং সংঘটন (একত্রিতকরণ) যা বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে চালু হয় ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হিন্দুদের পুনরায় হিন্দুধর্মে ধর্মান্তরিত করার জন্য। [১৭]
উৎপত্তি
প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভি এমন একটি সংঘবদ্ধ আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন যার মাধ্যমে কুরআনে নির্দেশিত[১৯][২০] সঠিক কাজ ও নিষেধ কে বাস্তবায়ন করার একটি দল তৈরী হবে ঠিক যেমনটি বাস্তবায়নের স্বপ্ন তার শিক্ষক দেওবন্দের রশিদ আহমেদ গাঙ্গোহি ব্যক্ত করেছিলেন[২১]। ১৯২৬ সালে মক্কায় তার দ্বিতীয় তীর্থযাত্রাতে (হজ্জ্ব) তিনি এই আন্দোলন বাস্তবায়নের মূল অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন[২২]৷ জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার সময় তিনি তার পান্ডিত্য, বক্তব্য দক্ষতা বিষয়সমূহ নিয়ে নিজের মধ্যে অনেক সীমাবদ্ধতা অনুধাবন করেছিলেন তবে আন্দোলন বাস্তবায়নে দৃঢপ্রতিজ্ঞ ছিলেন[২৩]। শুরুতে তিনি একগুচ্ছ মসজিদ-ভিত্তিক ইসলামি পাঠশালা-বয়স্কশিক্ষা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন যাতে সনাতন সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মুখোমুখি মেওয়াত অঞ্চলের অশিক্ষিত দরিদ্র মুসলিমদেরকে সঠিক আকিদা ও ধর্মচর্চার শিক্ষা দিতে পারেন[২৪]৷ তবে কিছুকাল পর তিনি অনুধাবণ করেন যে এ পদ্ধতিতে বেশকিছু নতুন ইসলামি পণ্ডিত তৈরী হলেও কোন ধর্মপ্রচারক তৈরী হচ্ছে না।[২৫]
এই ধর্মপ্রচার আন্দোলন শুরু করার জন্য ইলিয়াস মাদ্রাসা মাজহারুল উলুমে তার শিক্ষকতার চাকরীটি ছেড়ে দেন যাতে মুসলিমদের আত্নশুদ্ধির কার্যক্রমে নিজেকে পুরোপুরি আত্ননিয়োগ করতে পারেন। অতঃপর তিনি দিল্লির নিজামুদ্দিন এলাকাতে চলে আসেন এবং ১৯২৬[২৫] বা ১৯২৭ [২৬] সালে আন্দোলনটি শুরু করেন। ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুহাম্মাদ যে কর্মপদ্ধতী অনুসরণ করেছিলেন; আন্দোলনের কর্মপন্থা, নীতিনির্ধারণ করার সময় ইলিয়াস তা থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন[২০]। যে স্লোগানটিকে সামনে রেখে তিনি আন্দোলন শুরু করেছিলেন; উর্দু: "!اﮮ مسلمانو! مسلمان بنو", তার অর্থ হল, "হে মুসলমান, [সত্যিকারের] মুসলমান হও!" যা প্রকৃতপক্ষে তাবলীগ জামাত আন্দোলনের মূল লক্ষ্যকে প্রকাশ করে। আর, পুনঃজাগরণ ঘটিয়ে সর্বোক্ষেত্রে মুহাম্মাদের জীবনপদ্ধতী দৃঢভাবে অনুসরণ করে সমগ্র মুসলিম সমাজকে তার আমলের ন্যায় একত্রিত করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য, বলে তারা দাবী করেন। এই আন্দোলন দ্রুতই গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছিল এবং জানা গিয়েছিল যে, ১৯৪১ সালে তাদের বার্ষীক আলোচনাসভায় ২৫,০০০ জন অনুসারী অংশগ্রহণ করেছিলেন।[২৫]
আন্দোলনটি এমন সময়কালে শুরু হয়েছিল যেসময় ভারতবর্ষের কিছু মুসলিম নেতা আশঙ্কা করছিলেন যে মুসলিমরা তাদের ধর্মীয় পরিচয় হারিয়ে ফেলছেন এবং ধর্মীয় প্রথা-প্রার্থনাও (প্রধানত নামাজ) ঠিকমতো মান্য করতে পারছেন না। তবে এই আন্দোলনটিকে কখনোই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ও নাম দেয়া হয়নি, ইলিয়াস এটিকে 'তাহরিক-ই-ঈমান' বলতেন। [২৭][২৮]
উৎপত্তিস্থান দিল্লির[২৬] মেওয়াত অঞ্চলটিতে, মেও নৃগোষ্ঠীর কৃষিসংশ্লিষ্ট দরিদ্র জনগণ বসবাস করতেন যারা রাজপুত জাতীগোষ্ঠীর অর্ন্তভুক্ত। ভারতবর্ষে ইসলামপ্রচার শুরু হওয়ার পর এবং মুঘল আমলে তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন তবে পরবর্তীতে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক পালাবদল ঘটার সময়কালে অনেকেই পুনরায় সনাতন ধর্মাবলম্বন ও সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মুখে পড়েন। রজার ব্যলার্ড এর মতানুসারে, তৎকালীন সময়ে বাঁকী মেও জনগোষ্ঠীর পক্ষেও তাদের জনজীবনে এই সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রোধ করা সম্ভব হতনা যদিনা তাবলীগ জামাত আন্দোলনের উত্থান ঘটতো।[১৭]
আন্তর্জাতিক প্রচারণা
১৯৪৬ সালে হেজাজে (পশ্চিম সৌদি আরব) এবং ব্রিটেনে সংগঠনটির প্রথম বিদেশী প্রচারণা সফর পাঠানো হয়।[২৯] এরপর
যুক্তরাষ্ট্রে এবং ১৯৭০ ও ১৯৮০র মধ্যবর্তী সময়ে ইউরোপ মহাদেশেও তাবলীগ জামাত একটি বৃহত্তর অবস্থান প্রতিষ্ঠিত করে।[২৭] ১৯৬০-এর দশকে এটি ফ্রান্সে কাজ শুরু করে, এবং ১৯৭০ থেকে পরবর্তী দুই দশকে এটি লক্ষনীয়ভাবে প্রসারিত হতে থাকে।[৩০]
ইউরোপে, তাবলীগ জামাত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দিকে মনোনিবেশ করে - অর্থাৎ যারা "ইউরোপীয় সংষ্কৃতিতে প্রবেশাধিকার হতে বঞ্চিত প্রবাসী কর্মী, 'হতাশ ও আত্মহারা' কিশোর-কিশোরী এবং মাদকাসক্ত"। ১৯৭০ থেকে ১৯৮০-এর মাঝামাঝি সময়ে, সংগঠনটি জনপ্রিয়তা ও সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষে পৌছায়, এবং এরপরই এ অবস্থার অবনতি ঘটে (ফ্রান্সে এই অবনতি শুরু হয় আনুমানিক ১৯৮৯ সালে[২৭]) কারণ ইউরোপে শিক্ষিত মুসলিম পরিবারের তরুণ যুবকেরা "তাদের ধর্মের আরও অধিক বুদ্ধিবৃত্তিক কাঠামো" অনুসন্ধান শুরু করে, এবং সালাফি ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়ে।[৩১]
২০০৪ ফ্রান্সে ফ্রেঞ্চ কাউন্সিল অব মুসলিম ফেইথে তা তুলে ধরা হয়।[২৭] ২১ শতকের প্রথম অর্ধ-দশকে তাবলীগ জামাত ফ্রান্সে একটি বৃহত্তর পুনর্জীবন লাভ করে, যার ফলে ২০০৬ সালে এর অনুসারীর সংখ্যা ১০০,০০০-এ পৌছায়। [৩২] তবে, ইউরোপে সংগঠনটির বর্তমান দৃষ্টি হল যুক্তরাজ্যের দিকে, যার প্রধান কারণ হল ১৯৬০-এর দশক হতে দক্ষিণ এশিয়ার একটি বিশাল জনগোষ্ঠী এখানে অভিবাসিত হতে শুরু করেছে।[৩৩] ২০০৭ সালের মধ্যে, তাবলীগ জামাতের সদস্যগণ বৃটেনের ১,৩৫০ টি মসজিদের মধ্যে ৬০০টিতে নিজস্ব জামাত প্রতিষ্ঠা করে। [৩৪]
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর, আন্দোলনটি মধ্য এশিয়ায় তাদের প্রচারে মনোনিবেশ করে। ২০০৭ সালের হিসাব অনুযায়ী, কিরগিজস্তানে তাবলীগ জামাতের সদস্য ছিল আনুমানিক ১০,০০০,[৩৫] যাদের অধিকাংশ সদস্যই সংগঠনের পাকিস্তানি সদস্যদের কাছ থেকে প্রারম্ভিক অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের অনুমান অনুসারে, ১৫০ টিরও অধিক দেশজুড়ে তাবলীগ জামাতের ১.২ থেকে ৮ কোটি অনুসারী রয়েছে।[৯] তাবলীগ জামাতের অধিকাংশ অনুসারী দক্ষিণ এশিয়ায় বাস করে।[৫][৮] তাবলীগ জামাতের আনুমানিক প্রায় ৫০,০০০ সদস্য যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় রয়েছে।[৫]
ভিয়েতনামে চামস জনগোষ্ঠীর মুসলিমদের মাঝে সালাফি মতবাদ সম্প্রসারণের একটি উদ্যোগ ভিয়েতনাম সরকারের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের দ্বারা রদ করা হয়, যা সেখানে তাবলীগ জামাতকে আরও অধিক সুবিধা দিয়েছে।[৩৬]
বিশ্বাস ও উদ্দেশ্য
তাবলিগ জামাতের সদস্যদের তাদের নিজস্ব ফিকহ অনুসরণে কোন বাধা দেওয়া হয় না, যতক্ষণ না তা সুন্নি ইসলাম হতে বিচ্যুত হয়।[১৩][৩৩] তাবলীগ জামাত দাওয়াতের উদ্ধৃতির মাধ্যমে এর উদ্দেশ্যকে সংজ্ঞায়িত করে, যা হল ইসলামের প্রচার বা ধর্মান্তরিতকরণের আহ্বান। তাবলীগ জামাত দাওয়াতকে শুধুমাত্র সৎকাজের আদেশ আর অসৎকাজের নিষেধ হিসেবে ব্যাখ্যা করে। তাদের মতে, মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, ইসলাম আল্লাহর মনোনীত একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা এবং সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছে দেয়ার জন্য আল্লাহ পৃথিবীতে অসংখ্য নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছিলেন; কিন্তু যেহেতু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর শেষ বাণীবাহক, তার পরে আর কোনো নবী বা রাসূল আসবেন না, তাই নবী মুহাম্মদ বিদায় হজের ভাষণে মুসলমানদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার দায়িত্বটি দিয়ে গিয়েছেন।[৩৭][৩৮][৩৯] তাবলিগ জামাত দাওয়াতের এই উদ্দেশ্যকে দুটি নির্দিষ্ট আয়াতের আওতায় সংজ্ঞায়িত করে, যাতে উক্ত লক্ষ্যের উল্লেখ রয়েছে।[৪০] এই দুইটি আয়াত হল:[৪১][৪২]
“
তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের(কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।" (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)[৪৩]
”
“
তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)[৪৩]
”
তাদের মতে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে ইসলামী নবী মুহাম্মদের মৃত্যুর পর সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীগণের মাধ্যমে ইসলামী জীবন বিধান প্রচার ও প্রসারের কার্যক্রম আরো বিস্তৃতি লাভ করে,[৩৮]
কিন্তু মুসলিম শাসকদের ক্ষমতা বিলুপ্তির পর ইসলামী প্রচার কার্যক্রমে ভাটা পড়তে থাকে, যা থেকে পরিত্রাণের জন্য মুসলিম মনীষীদের প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল; আর অনুরূপ চিন্তাধারা থেকে মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভি ভারতের দিল্লিতে তাবলিগ জামাতের সূচনা করেন,[২৬] যার প্রচেষ্টার ফলে তাবলিগ জামাত একটি বহুল প্রচারিত আন্দোলনে রূপ নেয়।[৫][৮] তাবলিগ জামাত সারা বিশ্বে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়াকে তাদের প্রধানতম উদ্দেশ্য হিসেবে ব্যাখ্যা করে থাকে।[৯][১৩][১৫][৩৫][৪৪]
তাবলিগ জামাত সকলকে দাওয়াতের ইসলামী চাহিদা পুরণ করতে উৎসাহিত করে, যদিও কোন ব্যক্তি শক্তিশালী ধর্মীয় বুদ্ধিবৃত্তির অভাবসম্পন্ন হয় তবুও। এই বৈশিষ্টটি ছিল অন্যান্য ইসলামী আন্দোলন থেকে আলাদা, যেগুলো প্রধানত ওলামা পরিচালিত এবং যাতে নেতৃত্বের ভূমিকা ধর্মীয় পণ্ডিতদের মধ্যে বিস্তৃত ছিল। এছাড়াও ধর্মপ্রচারের জন্য ইসলামী পাণ্ডিত্যের সর্বোচ্চ মানদণ্ড অর্জন করা পূর্বশর্ত হওয়ার যে নেতৃস্থানীয় মতবাদ আছে, তাবলীগ জামাত তা অস্বীকার করে এবং তারা দাওয়াত দেওয়াকে আত্মসংশোধনের একটি ক্রিয়াকৌশল হিসেবে হিসেবে প্রচার করে।[৪৫]
সালাফিদের মতই, তাবলীগ "তাদের চারপাশের 'অধার্মিক' সমাজ থেকে তাদের দৈনন্দিন জীবনে বিচ্ছেদ" কামনা করে। তাবলিগ জামাতের একমাত্র উদ্দেশ্য হিসেবে বেশিরভাগ খুতবায় সুষ্পষ্টরূপে বলা হয়ে থাকে যে, মুসলমানগণ ইসলামী নবী মুহাম্মদ দ্বারা অনুকরণীয় ইসলামী জীবনযাত্রাকে পরিপূর্ণরূপে গ্রহণ করে থাকে এবং তার আমন্ত্রণ জানায়। এর সাথে বিশদভাবে বর্ণিত একগুচ্ছ ধর্মীয় সঠিক আচরণও জড়িত থাকে: "(নবীর) অনুসারীদের অবশ্যই উচিৎ নবীর মতো পোশাক পরা, তিনি যেভাবে মেঝেতে ঘুমাতেন সেভাবে ঘুমানো, ডানদিকে পাশ ফিরে";[৪৬] বাম পায়ে টয়লেটে প্রবেশ করা, কিন্তু ডান পায়ে পায়জামা পরিধান শুরু করা; খাবারের সময় কাটাচামচ ব্যবহার না করা, এর পরিবর্তে হাত ব্যবহার করা; এবং আরও অন্যান্য।[৩০]
মুহাম্মদ ইলিয়াস যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন তা হল কমপক্ষে দশ জন ব্যক্তির একটি দল (যার নাম জামাত, আরবি: جماعاتِ অর্থ সমাবেশ) সংগঠিত করা এবং তাদেরকে ধর্মপ্রচারের জন্য বিভিন্ন গ্রামে বা আশেপাশে প্রেরণ করা। এই 'বহির্গমন', বা দাওয়াতের সফরগুলো বর্তমানে তাবলিগ জামাতের নেতাদের দ্বারা সংগঠিত হয়।[৪৬] এই সফরগুলোতে, "কর্মের ফজিলত সম্পর্কিত" (মুহাম্মাদকে অনুকরণ বিষয়ক) মুহাম্মদের একটি হাদীসে"র উপর জোর দেওয়া হয়। উক্ত ফাযায়েল (গুণাবলী) এর হাদীসে এগুলিকে ঈমান (ধর্মবিশ্বাস) এবং ইহতিসাব (আল্লাহর খাতিরে) বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং তাবলিগ জামাত বিশ্বাস করে যে, এটি আখিরাতের (পরকালের) পুরষ্কারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আহরিত শক্তি। তাবলীগ জামাত প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস প্রচার করতেন যে, সদ্গুণের জ্ঞান ও আমালু-সালিহা (সৎকাজ) হল মাসআলা-মাসায়েল (আইনশাস্ত্র) এর জ্ঞানের চেয়ে অধিক অগ্রগণ্য। ফিকহের বিস্তারিত জানা (নামাজের ফরজ ও সুন্নত) তখনই উপকারী হবে যখন একজন লোক নামাজ আদায়ের মত রীতিনীতি পালনে সক্ষম হবে। তারা জোর দেয় যে শিক্ষার সর্বোত্তম উপায় হল অন্যদেরকে শিক্ষা দেওয়া ও উৎসাহিত করা, কুরআন ও হাদিসের নবী, সাহাবা এবং আল্লাহর ওলী-আওলিয়া ("আল্লাহর বন্ধু")দের গল্পের আলোকে লিখিত তাবলিগ জামাত আন্দোলনের দ্বারা প্রস্তাবিত বইগুলোর সাহায্যে। যদিও এই আন্দোলনের সাথে সম্পর্কিত কিছু বই রয়েছে, বিশেষত জাকারিয়া কান্ধলভি দ্বারা লিখিত, এতে বইয়ের পড়াশোনার উপর জোর দেওয়া হয়নি, বরং সরাসরি ব্যক্তিগত যোগাযোগের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।[৪৭][৪৮] সাধারণত "তাবলীগী নিসাব" (তাবলিগী পাঠ্যক্রম) নামে পরিচিত কিছু বইয়ের একটি সংগ্রহকে সাধারণ পাঠের জন্য তাবলীগ জামাতের প্রবীণরা সুপারিশ করেন। এই বইগুলো হল (হায়াতুস সাহাবা, ফাযায়েলে আমল, রিয়াদুস সালিহীন, ফাযায়েলে সাদাকাত, ও মুন্তাখাব হাদীস)।[৪৯][৫০][৫১]
আন্দোলনটি মুসলিমদেরকে তাদের দৈনিক রুটিনের বাইরে কিছু সময় তাবলিগী কাজকর্মে ব্যায় করতে উৎসাহিত করে যেন বাকি রুটিনও তাবলীগী জীবনশৈলীর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়। এছাড়াও অনুসারীদেরকে তাদের বিশ্বাসকে আরও গভীর করতে (বিশ্বব্যাপী প্রাপ্ত) দেওবন্দি মাদারিস বা মাদ্রাসাসমূহে ভর্তি হতে উৎসাহিত করা হয়।[৪৬]
তাবলিগী নৈতিকতায় সামাজিক মিলনায়তন বা কিছু অ-সনাতন প্রথাগত এবং আনুষ্ঠানিক রীতিরেওয়াজে অংশগ্রহণকে নিরুৎসাহিত করা হয়, যা সাধারণত দক্ষিণ এশিয়ায় অতিরঞ্জিতভাবে অনুসরণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, বার্ষিক ধর্মীয় সভা বা ইজতেমা এবং অন্যান্য অনুরূপ গণসভাগুলোতে বিয়ের অনুষ্ঠান করা হয়, যাতে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রচলিত ব্যয়বহুল উদযাপনব্যবস্থা এড়ানো যায়।[৫২]
সংগঠনটির সূচনাকালীন সময়ে এবং দক্ষিণ এশিয়ায়, তাবলিগ আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল সনাতন মতবাদে ফিরে আসা এবং প্রথাবিরোধী বা "প্রান্তিক" মুসলমানদের মুসলিম ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক পরিচয় "শুদ্ধ" করা যারা এখনও হিন্দু ধর্মের সাথে সংযুক্ত রীতিনীতি এবং ধর্মীয় আচার পালন করছিল। বিশেষত যার উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু ধর্মান্তরিতকরণ আন্দোলনের প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করা যারা প্রায়শই হিন্দু ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত এসকল মুসলিমদের লক্ষ্য করে কাজ করতো।[৫৩] প্রচলিত ধর্মান্তরিতকারী আন্দোলনসমূহের বিপরীতে, তাবলিগ জামাত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অমুসলিমদের কাছে ধর্মপ্রচার করার পরিবর্তে মুসলমানদের আরও ভাল ও বিশুদ্ধ এবং আদর্শিক ও "ধর্মীয়ভাবে নিখুঁত" করার দিকে মনোনিবেশ করেছে। এর কারণ হল (এটি বিশ্বাস করে) অমুসলিমদের কাছে দাওয়াত কেবল তখন কার্যকর হবে (বা আরও কার্যকর হবে) যখন কোন মুসলমান নিজে "পরিপূর্ণতা"য় পৌঁছাবে।[৫৩][৫৪]
ছয়টি গুণ (সিফাত)
তাবলিগ জামাত কোন একটি গ্রাম বা আশেপাশের এলাকা পরিদর্শন করে, স্থানীয় মুসলমানদের মসজিদে একত্রিত হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায় এবং ছয়টি বৈশিষ্ট্যের আকারে তাদের কাছে বার্তা উপস্থাপন করে। তাদের মতে, এই ছয়টি বৈশিষ্ট্যটি মুহাম্মদের সাহাবীদের জীবন থেকে উদ্ভূত। হাদীসের একটি বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে, "আমার সাহাবা (সাহাবীগণ) তারা [পথনির্দেশক] নক্ষত্রের মতো, যে কেউ [কারও] অনুসরণ করে, সে সৎপথ প্রাপ্ত হবে।"[২৩][৫৫], মুসলমানদের বিশ্বাস, তারা ছিল মুহাম্মদের পরে সেরা মানুষ। তাবলীগ জামাতের মতে, মুহাম্মদ ইলিয়াস শুধু একে ছয়টি সিফাত আকারে পেশ করেছেন মাত্র, যা তাবলীগী জামায়াতের শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের মতে, এটির মূলত ৬ টি বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা যা প্রত্যেককে অর্জন করতে হয়, যা পুরো দ্বীন অনুসরণ করা সহজ করে দেবে। এগুলো হলঃ কালিমা, নামাজ, যিকির, এখলাসে নিয়ত, একরামুল মুসলিমীন ও দাওয়াতে তাবলীগ।[৫৬]
নিজামউদ্দিন মারকাজ মসজিদভারতেরদক্ষিণ দিল্লিরপশ্চিম নিজামউদ্দিনে অবস্থিত একটি মসজিদ। এটি তাবলিগ জামাতের আলমি মারকাজ বা বৈশ্বিক কেন্দ্রস্থল। ভারতের তাবলিগ জামাত এই মসজিদকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয় এবং বার্ষিক সমাবেশ এতে অনুষ্ঠিত হয়। এটি ভারতে তাবলিগের ইসলাম প্রচারকদের সদরদপ্তর। মূলত এই মসজিদকে কেন্দ্র করেই সারা পৃথিবীতে ইসলাম প্রচারের কাজ পরিচালিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ইসলাম শেখার জন্য এখানে আসে।
কাকরাইল মসজিদ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কাকরাইল এলাকায় রমনা পার্কের পাশে অবস্থিত একটি মসজিদ। এটি বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের মারকায বা প্রধান কেন্দ্র। ১৯৫২ সালে এই মসজিদটি তাবলিগ জামাতের মারকায হিসেবে নির্ধারিত হয়। মসজিদটির আদি নাম ছিল মালওয়ালি মসজিদ।[৫৭][৫৮] পরবর্তীতে ১৯৬০-এর দশকে তাবলিগ জামাতের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ইঞ্জিনিয়ার মরহুম হাজী আব্দুল মুকিতের তত্ত্বাবধানে তিন তলা মসজিদটি পুনঃনির্মাণ করেন।[৫৯]
আমির হল তাবলীগ জামাতে তত্ত্বাবধায়ক (সর্বোচ্চ সম্মানিত পদ) এর উপাধি এবং এ পদের জন্য পার্থিব মানমর্যাদার তুলনায় ধর্মীয় বিশ্বাসের মাপকাঠিকে অধিক গ্রহণযোগ্য গুণ হিসেব গণ্য করা হয়।[৫২] তাবলীগ জামাতের আমির কেন্দ্রীয় পরামর্শ পরিষদ (শূরা) ও বয়োজ্যেষ্ঠদের দ্বারা আজীবনের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন।[৪৮] প্রথম আমির ছিলেন মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভি, এরপর তার উত্তরসূরি হন তার পুত্র মুহাম্মদ ইউসুফ কান্ধলভি এবং এরপর ইনামুল হাসান বর্তমানে শুরায়ি নেজাম বা পরামর্শ পরিষদের মাধ্যমে পরিচালিত হয় ।
কার্যক্রম ও প্রথাগত ঐতিহ্য
খুরুজ (ধর্মপ্রচার সফর)
তাবলিগ জামাতে সাধারণত এর সদস্যদেরকে আখিরাত, ঈমান, আমল-এর কথা বলে তিনদিনের চিল্লা নামক সফরের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয় ও আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর পর যথাক্রমে সাতদিন, চল্লিশদিন ও একশবিশ দিন-এর জন্য চিল্লা নামক সফরে আল্লাহর রাস্তায় দাওয়াত-এর কাজে উদ্বুদ্ধ করা হয়ে থাকে [৬০]। এই সফরগুলো চলাকালে, এর সদস্যদের সাধারণত সরল, সাদা, আলগা পোশাক পরিহিত অবস্থায় এবং তাদের পিঠে রাত্রিযাপনের ঝুলি বহন করতে দেখা যায়। এই সদস্যরা এই ভ্রমণের সময় মসজিদগুলিকে তাদের ভিত্তি হিসাবে ব্যবহার করেন তবে ঘন ঘন তাবলিগিয়াত কার্যক্রমের কারণে এই মসজিদগুলো এই সংস্থার সাথে বিশেষভাবে যুক্ত হয়ে উঠেছে। এই মসজিদগুলো সাধারণত প্রতিবেশী সদস্যদের জন্য পর্যায়ক্রমিক এবং ছোট আকারের সমাবর্তন বৈঠকের ব্যবস্থা রাখে। মসজিদে অবস্থানকালে এই জামাআতগুলি প্রতিদিনের গাশত পরিচালনা করে, যার মধ্যে স্থানীয় পাড়ামহল্লা পরিদর্শন করা হয়, বিশেষত রাহবার নামে পরিচিত একটি পথনির্দেশকের সাহায্যে। তারা লোকদের তাদের মসজিদে মাগরিবের নামাজে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায় এবং যারা উপস্থিত হন তাদের জন্য নামাজের পরে একটি খুতবা দেওয়া হয়, যাতে মূলত ছয় সিফাতের রূপরেখার আলোচনা থাকে। তারা উপস্থিতদেরকে আত্ম-সংশোধন এবং ইসলাম প্রচারের জন্য তাবলীগে সময় কাটাতে অনুরোধ করে।
সাধারণত, এই জামাত সদস্যদের অনুমিত ভূমিকা এমনভাবে চক্র আকারে নির্ধারণ করা হয় যে তারা অন্য সময়ে প্রচারক, রান্না বা পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসাবে নিযুক্ত হতে পারে। তাবলীগ জামায়াতের সদস্যদের মধ্যে এটিকে সাধারণত খিদমত হিসাবে উল্লেখ করা হয়, যা মূলত তাদের সঙ্গীদের সেবা করা এবং তাবলিগী ব্যস্ততার জন্য তাদের মুক্ত করাকে বোঝায়। জামায়াতের সদস্যগণকে দিনের মাশওয়ারার উপর ভিত্তি করে এই ভূমিকা অর্পণ করা হয়। মারকাজ প্রতিটি জামাতের এবং এদের সদস্যদের নাম লিখে রাখে, যার পরিচয় তাদের নিজ নিজ মসজিদ থেকে যাচাই করা হয়। মসজিদগুলি পৃথক পৃথক জামাতের তাবলিগী কর্মকাণ্ডে সহায়তা করার জন্য ব্যবহৃত হয়, যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধর্মপ্রচারের কার্যভার গ্রহণ করে থাকে। জামাতের সদস্যরা, আদর্শিকভাবে নিজেরা এর ব্যয়ভার বহন করে যাতে এককভাবে কারও উপর আর্থিকভাবে নির্ভর করতে না হয়।
বিশ্ব ইজতেমা বা বিশ্ব ইজতিমা হল , তাবলিগ জামাতের বার্ষিক বৈশ্বিক সমাবেশ, যা বাংলাদেশেরটঙ্গীরতুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তাবলিগ জামাতের এই সমাবেশটি বিশ্বে সর্ববৃহৎ এবং এতে অংশগ্রহণ করেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। 'বিশ্ব ইজতেমা' শব্দটি বাংলা ও আরবি শব্দের সম্মিলনে সৃষ্ট: আরবি 'ইজতেমা' অর্থ সম্মিলন, সভা বা সমাবেশ, একত্রিত হওয়া। সাধারণত প্রতিবছর শীতকালে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়ে থাকে, এজন্য ডিসেম্বর বা জানুয়ারি মাসকে বেছে নেয়া হয়।
১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রতি বছর এই সমাবেশ নিয়মিত আয়োজিত হয়ে আসছে।[৬১] প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম-শহর-বন্দর থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবং বিশ্বের প্রায় ৫০ থেকে ৫৫টি দেশের তাবলিগি দ্বীনদার মুসলমান জামাতসহ ২৫ থেকে ৩০ লক্ষাধিক মুসল্লি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক ইসলামি মহাসম্মেলন বা বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেন।[৬২]
বিতর্ক
সমালোচনা
তাবলীগ জামাত তার সনাতনি প্রকৃতির কারণে পশ্চাৎপদ হিসেবে সমালোচিত হয়েছে। এই আন্দোলনের নারীরা পূর্ণ হিজাব পালন করায় তা নারীদের "কঠোরভাবে আজ্ঞাবহ ও অসমভাবে" রাখার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।[৩২]মধ্য এশিয়ার কিছু দেশে তাবলিগ জামাত নিষিদ্ধ হয়েছে, এগুলো হল উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান ও কাজাখস্তান, যেখানে সনাতনি ধর্মপ্রচারকে চরমপন্থী হিসেবে দেখা হয়।[৬৩]সৌদি আরবে তাবলীগ জামাতের কার্যক্রম ও তাদের ফাজায়েলে আমল[৬৪] বইটি সরকারিভাবে নিষিদ্ধ।[৬৫][৬৬][৬৭] ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর সৌদি আরবের ইসলামী বিষয়ক মন্ত্রী আবদুল লতিফ আল আশ-শাইখ সৌদি আরবের সকল জুমা মসজিদে ১০ ডিসেম্বর ২০২১ এর জুমার খুৎবায় তাবলীগ জামা'আত সম্পর্কে সতর্ক করে খুৎবা দেয়ার নির্দেশনা দেন এবং বলেন, খুৎবায় যেন নিম্নলিখিত বিষয়গুলো উল্লেখ থাকে: ১) তাবলীগ জামা'আতের বিপথগামিতা, বিচ্যুতি, ভ্রষ্টতা এবং ক্ষতি ২) তাবলীগ জামা'আত সন্ত্রাসবাদের একটা মাধ্যম, যদিও তারা এটা অস্বীকার করে ৩) তাবলীগ জামা'আতের প্রধান প্রধান বিচ্যুতিগুলো উল্লেখ করা ৪) সমাজের জন্য তাদের ক্ষতিকর দিকগুলো উল্লেখ করা ৫) এটা সবার কাছে স্পষ্ট করা যে, তাবলিগী জামা’আত সৌদি আরবে নিষিদ্ধ।[৬৮]
ইসলামী পরিসরের মাঝেও তাবলিগ জামাত সমালোচিত হয়েছে এবং এর ভারত উপমহাদেশে এর প্রধান বিরোধী হল বেরলভি আন্দোলন। তাদের বিরুদ্ধে অন্যতম প্রধান সমালোচনা হল এর পুরুষেরা পরিবারকে অবহেলা ও উপেক্ষা করে, বিশেষত দাওয়াতের সফরে বাইরে বের হওয়ার মাধ্যমে। তাবলীগ জামাতের সদস্যরা এর জবাবে দাবি করেন যে, পুরুষের ন্যায় নারীদেরকেও সমানভাবে তাবলীগে অংশ নেওয়া উচিৎ। তারা আরও বলেন যে, পুরুষদের ন্যায় নারীদের জন্য তাবলীগের দায়িত্ব বহন গুরুত্বপূর্ণ এবং তাবলীগে নারীর অংশগ্রহণে পুরুষের সহায়তা করা উচিৎ সন্তানের দেখাশোনার মাধ্যমে। [৫২]
আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার হাদিসের নামে জালিয়াতি বইতে তাবলীগ জামাতের চিল্লা ও গাশত নামক দাওয়াতের উদ্দেশ্যে বাহিরে বের হওয়া সম্পর্কে বলেন,
হাদীসের নামে মিথ্যা বলার একটি প্রকরণ হলো, অনুবাদের ক্ষেত্রে শাব্দিক অনুবাদ না করে অনুবাদের সাথে নিজের মনমত কিছু সংযোগ করা বা কিছু বাদ দিয়ে অনুবাদ করা। অথবা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যা বলেছেন তার ব্যাখ্যাকে হাদীসের অংশ বানিয়ে দেয়া। আমাদের সমাজে আমরা প্রায় সকলেই এ অপরাধে লিপ্ত রয়েছি। আত্মশুদ্ধি, পীর-মুরিদী, দাওয়াত-তাবলীগ, রাজনীতিসহ মতভেদীয় বিভিন্ন মাসআলা-মাসাইল-এর জন্য আমরা প্রত্যেক দলের ও মতের মানুষ কুরআন ও হাদীস থেকে দলীল প্রদান করি। এরূপ দলীল প্রদান খুবই স্বাভাবিক কর্ম ও ঈমানের দাবি। তবে সাধারণত আমরা আমাদের এ ব্যাখ্যাকেই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামে চালাই। যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন, কিন্তু প্রচলিত অর্থে ‘দলীয় রাজনীতি’ করেন নি, অর্থাৎ ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তনের মত কিছু করেন নি। বর্তমানে গণতান্ত্রিক ‘রাজনীতি’ করছেন অনেক আলিম। ন্যায়ের আদেশ, অন্যায়ের নিষেধ বা ইকামতে দীনের একটি নতুন পদ্ধতি হিসেবে একে গ্রহণ করা হয়। তবে যদি আমরা বলি যে, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রাজনীতি করেছেন’, তবে শ্রোতা বা পাঠক ‘রাজনীতি’র প্রচলিত অর্থ, অর্থাৎ ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের কথাই বুঝবেন। আর এ রাজনীতি তিনি করেন নি। ফলে এভাবে তাঁর নামে মিথ্যা বলা হবে। এজন্য আমাদের উচিত তিনি কী করেছেন ও বলেছেন এবং আমরা কি ব্যাখ্যা করছি তা পৃথকভাবে বলা। রাসূলুল্লাহ ﷺ দীন প্রচার করেছেন আজীবন। দীনের জন্য তিনি ও তাঁর অনেক সাহাবী চিরতরে বাড়িঘর ছেড়ে ‘হিজরত’ করেছেন। কিন্তু তিনি কখনোই দাওয়াতের জন্য সময় নির্ধারণ করে ২/১ মাসের জন্য সফরে ‘বাহির’ হন নি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেকে হিজরত না করলেও অন্তত কিছুদিনের জন্য বিভিন্ন স্থানে যেয়ে দাওয়াতের কাজ করছেন। কিন্তু আমরা এ কর্মের জন্য যদি বলি যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ দাওয়াতের জন্য ‘বাহির’ হতেন, তবে পাঠক বা শ্রোতা ‘নির্ধারিত সময়ের জন্য বাহির হওয়া’ বুঝবেন। অথচ তিনি কখনোই এভাবে দাওয়াতের কাজ করেন নি। এতে তাঁর নামে মিথ্যা বলা হবে।[৬৯][৭০][৭১]
বহু সমালোচক, বিশেষত হিজবুত তাহরীর ও জামায়াতে ইসলামীর সদস্যগণ, তাবলীগ জামাতকে তাদের রাজনৈতিক নিরপেক্ষ অবস্থানের জন্য সমালোচনা করে। তারা বলে ইসলামপন্থী শক্তিগুলোকে ধর্মনিরপেক্ষ ও অ-ইসলামী বিরোধীদের সাথে তাদের দন্দ্ব সংঘাতের সময় তাবলীগ জামাতের অনুসারীরা চাইলে সহায়তা করতে পারতো। বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন বিষয়ে তাবলীগ জামাতের নিরপেক্ষ অবস্থানকে তারা সমালোচনা করে, যেমন ১৯৫০ সালে পাকিস্তানের ইসলামী সংবিধান, ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১-এর ইসলাম বনাম সমাজতন্ত্র, ১৯৭০-৮০ সময়কালে ভারতের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ১৯৭৪-এর খতমে নবুয়াত আন্দোলন এবং ১৯৭৭-এর তেহরীক নিজাম-এ-মুস্তফা আন্দোলন।[৭২] তাবলীগ জামাত এর উত্তরে বলে একমাত্র রাজনৈতিক বিতর্ক এড়িয়ে যাওয়ার মাধ্যমেই তাবলীগ জামাত তাদের অনুসারীদের মাঝে আধ্যাত্মিক চেতনা পুনর্জাগরিত করতে সক্ষম হয়েছে। কঠিন সময়গুলোতে চলমান থাকতেও অরাজনৈতিক অবস্থান তাদের সহায়তা করেছে, যেমন ১৯৬০ সালে আইয়ুব খান ও ১৯৭৫-৭৭ সালে ইন্দিরা গান্ধীর সরকারের আমলে, যখন অন্যান্য সামাজিক রাজনৈতিক দলগুলো নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয়েছিল। [৭২][৭৩]
রাজনৈতিক অংশগ্রহণ সম্পর্কে মতামতের পার্থক্য তাবলীগী জামায়াত এবং ইসলামপন্থী আন্দোলনের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য চিহ্নিত করে। যদিও ইসলামপন্থীরা বিশ্বাস করে যে রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন একটি ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পরম প্রয়োজনীয়, তাবলীগী জামায়াত বিশ্বাস করে যে কেবল রাজনৈতিক শক্তিই ইসলামী সামাজিক শৃঙ্খলার কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার পক্ষে যথেষ্ট নয়।[৭৪] তাবলিগী জামায়াতের একচেটিয়া মনোযোগ হল ব্যক্তিকেন্দ্রিক, এবং সদস্যরা বিশ্বাস করেন যে সমাজ ও প্রতিষ্ঠানের সংস্কার কেবল ব্যক্তির শিক্ষা ও সংস্কারের মাধ্যমে কার্যকর হবে। তারা জোর দেয় যে জাতি এবং সামাজিক ব্যবস্থাগুলি তাদের গঠনকারী ব্যক্তিদের গুণে টিকে থাকে; সুতরাং, সংস্কারটি তৃণমূল পর্যায়ে ব্যক্তিকেন্দ্রিকভাবে শুরু হওয়া উচিত, রাজনৈতিক কাঠামোর উচ্চ স্তরে নয়।[৭৫]
নাসিরুদ্দিন আলবানী তার দারসুশ শাইখুল আলবানী গ্রন্থে তাবলীগ জামাতের রাজনীতি থেকে দুরে থাকার বিষয়ে বলেন,[৭৬]
প্রশ্নঃ আমাদেরকে প্রথমে যে প্রশ্ন করা হয়েছিল তা একটি সমালোচিত বিষয় সম্পর্কে, তাই আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিক, কারণ আপনি তাবলিগ জামাতের বহু সমালোচিত বিষয় সম্পর্কে আপনার মতামত দেওয়ার মানসিক শ্রমসাধ্য কাজ করেছেন, কিন্তু এখানে আরও কিছু সমালোচিত বিষয় রয়েছে যেগুলো অন্যান্য দৃষ্টিকোণ সম্পর্কিত, যেগুলোর উত্তর আমরা জানতে চাই, মূলত সংক্ষেপে, এরপর বিশদভাবে, আল্লাহ আপনাকে রহম করুনঃ প্রশ্নকর্তা বলেনঃ তাবলিগ জামাতের একটি মূলনীতি সম্পর্কে আপনি কি বলেন, যাতে তারা বলেঃ আমরা বাহিরে (দাওয়াতী কাজে) বের হওয়ার সময় চারটি বিষয়ে কথা বলি না, ঐ চারটি বিষয়ে কথা বলার ফলে ফিতনা তৈরি হওয়ার কারণে, এগুলো হলোঃ রাজনীতি, ফিকহ, মতানৈক্য বা ইখতিলাফ ও দলীয় পার্থক্য? উত্তরঃ আর আমরা আল্লাহর কাছে দোআ করি আল্লাহ তাদের পথ দেখাক! প্রাথমিকভাবে আমরা রাজনীতির বিষয়ে তাদের (তাবলীগ জামাতের) সাথে একমত, কিন্তু সামগ্রিকভাবে না। একে আমরা যেভাবে দেখি, তা আমি এর আগে একাধিকবার বলেছি। আমরা সিরিয়াতে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছিলাম, আর সেখানে আমরা গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা প্রশ্নের সম্মুখীন হই, দুর্ভাগ্যবশত যেমনটা তারা প্রতিটি মুসলিম দেশে করে থাকে: তোমরা সমাবেশ করছো, দল করছো, এমন ইত্যাদি ইত্যাদি। আর আমি বললামঃ এই দল সংস্কারের জন্য, রাজনীতির জন্য নয়, আর এক ঘন্টারও বেশি সময়ের একটি দীর্ঘ আলোচনার পর যখন এই বা'সপন্থী (বাস পার্টি বা হিজবুল বাস, সিরিয়ার একটি রাজনৈতিক দল) প্রশ্নকর্তাটি আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে আমলে নেওয়ার মত কোন পথ পেলো না, সে বললোঃ তাহলে যাও, গিয়ে তোমার দরস (শিক্ষা) দিতে থাকো, কিন্তু রাজনীতি নিয়ে কথা বলো না, যদিও আমি তাকে ব্যাখ্যা করে বললামঃ আমরা সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে নিজের দিকে ডাক দেই, তা হলো কুরআন ও সুন্নাহর দিকে ফিরে আসা যেমনটি আপনারা সবসময় ও সারাজীবন শুনে থাকেন, আর আমি এর আগে তা ব্যাখ্যাসহ বলেছি, কিন্তু এখন আপনি আবার সেই কথায় ফিরে গেলেনঃ কিন্তু রাজনীতিতে জড়িয়ো না। তাই এটি আমাকে বাধ্য করছে আপনার কাছে কিছু বিষয় তুলে ধরার জন্য। এটি সত্য যে, আমরা রাজনীতিতে জড়াই না। কারণ রাজনীতিতে জড়ানো ইসলামের অংশ না, একথা ঠিক নয়। রাজনীতি ইসলামের অংশ, আর কিছু ইসলামী আলেমগণ ইবনে তাইমিয়ার "সিয়াসাহ শরিয়াহ, কাদিমান ওয়া হাদিসান" (শরিয়াহর (রাজ)নীতি, অতীত ও বর্তমান) বইটির সাথে পরিচিত। ইসলামী রাষ্ট্রও রাজনীতির বাইরে পড়ে না, আর রাজনীতি (সিয়াসাত) শব্দের অর্থ কি? তা হলোঃ মানুষের বা জনগণের নীতি (সিয়াসাতুন নাস, বিঃ দ্রঃ আরবিতে নীতি ও রাজনীতি উভয়কেই সিয়াসাত শব্দটি দ্বারা বুঝানো হয়) এবং তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান প্রতিষ্ঠা করা, তাদের ইহকালীন ও পরকালীন স্বার্থ অনুযায়ী। আমরা নিজেদেরকে রাজনীতির সাথে জড়ানোর প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করি না, কিন্তু আমরা দেখেছি - আর এ ব্যাপারে আমাদের সাক্ষ্যপ্রমাণও আছে - তা হলো - রাজনীতি ত্যাগ করা রাজনীতিরই অংশ (أيّها المتأسلمون: من السياسة ترك السياسة) (মিন আস-সিয়াসাহ তারাকা আল-সিয়াসাহ, রাজনীতি থেকে(ই আসে) রাজনীতি ত্যাগ করা(র বিষয়টি)/রাজনীতি ত্যাগ করার বিষয়টি রাজনীতি থেকেই আসে/এসেছে)। রাজনীতিতে অংশ নিতে হয় সাময়িক বা অস্থায়ীভাবে, কিন্তু তা ত্যাগ করা যায় না, তা নাহলে এমন রাজনীতি ছাড়া কীভাবে মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে? কিন্তু যাদের রাজনীতিতে অংশ নেওয়া উচিৎ তাদের অবশ্যই আলেম হতে হবে, আলেম হতে হবে কিতাব (কুরআন) ও সুন্নত (ইসলামী নবী মুহাম্মাদের আদর্শ) এর সঠিক বুঝ ও সালফে সালেহীনদের বুঝ অনুসারে ইত্যাদি, আর এজন্য আমরা তাদের (তাবলীগ জামাতের) সাথে এই বিষয়ে একমত প্রাথমিকভাবে, আমরা সাধারণভাবে তাদের সাথে একমত, কিন্তু বিশদভাবে আমরা তাদের সাথে একমত নই, তাই এখন আমরা বলি: রাজনীতি ত্যাগ করা রাজনীতিরই অংশ।
তাবলীগ জামাত সনাতন ধারার অপর্যাপ্ত অনুসরণ ও সুফিদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগেও অভিযুক্ত হয়েছে।[৭৭][৭৮]আব্দুল আজিজ ইবনে বায, সৌদি আরবের প্রাক্তন মুফতি, বলেন যে, "জামাতুত তাবলীগ ... এর বহু ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে। তাদের কিছু বিষয়ে শির্ক ও বিদআত রয়েছে, তাই তাদের সাথে যাওয়া বৈধ নয়।"[৭৯][৮০]
উল্লেখযোগ্য সদস্য
তাবলিগ জামাতের সদস্যপদের কোনো নির্দিষ্ট তালিকা বা সদস্যতা লাভের কোনো আনুষ্ঠানিক পদ্ধতি নেই, যা সংগঠনের সদস্য অন্তর্ভুক্তির পরিমাণ নির্ধারণ ও যাচাইকরণে সমস্যা তৈরি হয়। তবে তাবলীগ জামাতে কেন্দ্রীয় কমিটি আছে যার প্রধান হলো বর্তমানে মাওলানা সাদ সাহেব দা.বা.। যিনি তাবলীগ জামাতের সদস্যদের কাছে আমির হিসেবে পরিচিত[৮১][৮২]
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পারভেজ এলাহীও তাবলিগ জামায়াতের একজন শক্তিশালী সমর্থক। ২০১১ সালে তার আমলে, রায়উইন্ড মারকাজে তাবলিগী জামায়াতের মসজিদের জন্য ৭৫ ক্যানাল (৩.৮ হেক্টর, ৯.৪ একর) জমি কেনা হয়েছিল।[৮৩]
↑Desai, Ebrahim (৯ জুন ২০০৭), "Fatwa # 15332 from Sri Lanka", Ask Imam, Online Islamic Q & A with Mufti Ebrahim Desai Darul Iftaa, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করাউদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link) "তাবলীগের আক্ষরিক অর্থ প্রচার করা। প্রাসঙ্গিকভাবে এরদ্বারা ইসলামের বার্তা প্রচার করাকে বোঝানো হয়।"
↑Taylor, Jenny (৮ সেপ্টেম্বর ২০০৯)। "What is the Tablighi Jamaat?"। The Guardian। ২২ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জানুয়ারি ২০১৬।
↑ কখগSameer Arshad (২২ জুলাই ২০০৭)। "Tabligh, or the enigma of revival"। The Times of India। ৮ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ মে ২০০৯।
↑ কখগMasoodi, Ashwaq (১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩)। "Inside the Tablighi Jamaat"। Live Mint। ১৯ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০১৬।
↑ কখগDietrich Reetz, Sûfî spirituality fires reformist zeal: The Tablîghî Jamâ‘at in today's India and Pakistan, Archives de sciences sociales des religions [En ligne], 135 (ইংরেজি ভাষায়) |juillet - septembre 2006, mis en ligne le 01 septembre 2009, consulté le 29 novembre 2014. p 33.
↑যার যা ধর্ম, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ঐতিহ্য, ফেব্রুয়ারি ২০০৯ প্রকাশ। ISBN 984-701-930047-6। অভিধান ভুক্তি: "বিশ্ব ইজতেমা" (পৃ. ৩৪৭) ও "তাবলিগ" (পৃ. ২৫৫)।
↑ কখগMetcalf, Barbara (২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬)। "Islam and women: The case of the Tablighi Jama'at"। Stanford University। ২৫ মার্চ ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০১০।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑[(Sahih Muslim 6466; 207-(2531) Darussalam ed.) উদ্দেশ্য'বিচার' করার জন্য উল্লেখযোগ্য ফিকহ বইতে ব্যবহৃত হয়েছে]
↑তাবলীগী ছয় উসূল, Justic Siddiqur Rahman Miah, ১৫ নং পৃষ্ঠা, দ্বিতীয় সংস্করণ ২০০৮, ভাষা: ইংরেজী,আরবী ও বাংলা, প্রকাশনী: কামরুল বুক হাউজ, আইএসবিএন: 9789843319753
↑হাসান মোহাম্মদ (২০১২)। "তাবলীগ"। সম্পাদনা পরিষদ। বাংলাপিডিয়া (দ্বিতীয় সংস্করণ)। বাংলাদেশ: এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বাংলাদেশ। ২৫ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১৪।
↑মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান (জানুয়ারি ২৪, ২০১৪)। "বিশ্ব ইজতিমার উৎপত্তি ও বিকাশ"। প্রথম আলো ডট কম। ২৬ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৪।
↑জাহাঙ্গীর, খোন্দকার আব্দুল্লাহ (এপ্রিল ২০১৭)। হাদীসের নামে জালিয়াতি: প্রচলিত মিথ্যা হাদীস ও ভিত্তিহীন কথা (৫ম সংস্করণ)। ঝিনাইদহ, বাংলাদেশ: আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স। পৃষ্ঠা ১৮৪। আইএসবিএন978-984-90053-3-9।|সংগ্রহের-তারিখ= এর |ইউআরএল= প্রয়োজন (সাহায্য)