তাইওয়ান–বুর্কিনা ফাসো সম্পর্ক হল প্রজাতন্ত্রী চীন বা তাইওয়ান এবং বুর্কিনা ফাসো রাষ্ট্রদ্বয়ের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। প্রজাতন্ত্রী চীনকে ২১টি জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেয়, হোলি সী বাদে, যার একটি হল বুর্কিনা ফাসো। গাম্বিয়া এবং তাইওয়ানের মধ্যকার সম্পর্কচ্ছেদের পর আরওসিকে স্বীকৃতি দেওয়া আফ্রিকার তিনটি রাষ্ট্রের মধ্যে বুর্কিনা ফাসো একটি হয়। অন্য দুটি রাষ্ট্র হল গণপ্রজাতন্ত্রী সাঁউ তুমি ও প্রিন্সিপি এবং সোয়াজিল্যান্ড রাজ্য। এটি ইউএনের সবচেয়ে জনপ্রিয় সদস্য রাষ্ট্র যারা প্রজাতন্ত্রী চীনকে সম্পূর্ণ সমর্থন করে।
উয়াগাদুগুতে তাইওয়ানের এবং তাইপেইতে বুর্কিনা ফাসোর দূতাবাস রয়েছে।
বুর্কিনা ফাসো, ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত প্রজাতন্ত্রী আপার ভোল্টা হিসেবে পরিচিত দেশটি ১৯৬১ সালে প্রজাতন্ত্রী চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে, ফ্রান্সের উপনিবেশ থেকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার এক বছরের মাথায়। প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এ সম্পর্ক চলতে থাকে, তবে ১৯৭৩ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৬৬ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা মেজর জেনারেল স্যানগোলে লামিজানার নেতৃত্বে আপার ভোল্টা সরকার আরওসিকে অস্বীকৃতি দিয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেন। ইউএনজিএ রেজোল্যুশনে এই ঘটনা সংঘটিত হয়, ফলশ্রুতিতে আরওসিকে বহিষ্কার করে পিআরসি স্থান করে নেয়।
একের পর এক সামরিক সরকারের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সাথে সম্পর্ক বজায় থাকে। এর মধ্যে কর্নেল সায়ে জার্বো, মেজর জিন-ব্যাপ্টিস্তে উয়াগাদুগু এবং ক্যাপ্টেন থমাস স্যানকারা অন্যতম। এর বেশকিছু বছর পর ব্লেইজ কম্পাওরে প্রশাসনে আসেন, যিনি তার পূর্বসূরীদের মতই সামরিক অভ্যূত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। ১৯৯৪ সসালের ৪ই ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি কম্পাওরে পিআরসির সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে তাইওয়ানের সাথে সম্পর্ক পুনরায় স্থাপন করেন। এটি একটি অবাক করা কূটনৈতিক পদক্ষেপ ছিল।[১]
তখন থেকেইই তাইওয়ান সম্পর্ক বজায় রাখতে সদা তৎপর থাকে। তারা বুর্কিনা ফাসোর অর্থনীতিতে যথেষ্ট মানবিক সাহায্য এবং বিনিয়োগ করছে। উদাহরণস্বরূপ, বুর্কিনা ফাসোতে উৎপাদিত ধানের ৩৪ শতাংশেরও বেশির পিছনে অবদান রাখে বুর্কিনা ফাসোতে নিয়োজিত তাইওয়ানের প্রযুক্তিক মিশন। তাইওয়ানের প্রযুক্তিগত সাহাযয্যে স্থাপিত ন্যাশনাল ব্লেইজ কম্পাওরের হাসপাতালই হল পশ্চিম আফ্রিকার প্রথম কম্পিউটার-পরিচালিত সাধারণ হাসপাতাল। স্বাস্থ্যখাতে অন্যান্য সাহায্যের মধ্যে রয়েছে এইডস রোগের দ্রুত বিস্তার রোধে তাইওয়ান কর্তৃক বিপুল পরিমাণ কনডম ও ঔষধ সরবরাহ।[২][৩]
২০০৮ সালের ৪ ডিসেম্বর, তাইপেই এবং উয়াগাদুগু "সিস্টার সিটি" হিসেবে অভিহিত হয়।[৪]
২০১২ সালের এপ্রিল মাসে তাইওয়ানের রাষ্ট্রপতি মা ইং জিও তার প্রথম আফ্রিকা সফরে যান। তখন তিনি বুর্কিনা ফাসোতেও সফর করেন এবং রাষ্ট্রপতি কমপাওরের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ সফরে তিনি বুর্কিনা ফাসোর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যাতায়াত ব্যবস্থা এবং কৃষি খাতে আরও বেশি সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন।[৫] তিনি ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে বুর্কিনা—তাইওয়ান সম্পর্কে বিশ বছর উদ্যাপন উপলক্ষ্যে আবারও সফর করেন। তখন আবারও কমপাওরের সাথে সাক্ষাৎ করেন।[৬]
পরবর্তীতে একই বছরের ২৮ অক্টোবর, বুর্কিনা ফাসো অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়।[৭][৮][৯][১০] ফলশ্রুতিতে আরওসির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশটিতে অবস্থিতে সকল তাইওয়ান নাগরিক এবং ব্যবসায়ীদের খোঁজ নেয়। আরওসির সকল কূটনৈতিক কর্মকর্তা নিরাপদে আছেন বলে জানা যায়।[১১] অভ্য়ুত্থানের কিছুদিন পর রাষ্ট্রপতি ব্লেইজ কম্পাওরেরর পদত্যাগ করে আইভরি কোস্ট পালিয়ে যান, এর পরপরই সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে নেয়।[৭] আইজ্যাক জিদাকে রাষ্ট্রটির প্রধান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আরওসির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড লিন জানান যে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আগের মতই থাকবে, এবং সম্পর্কের ভবিষ্যৎ রূপ কেমন হবে তা নির্ভর করবে বুর্কিনা ফাসোর পরিবর্তনশীল সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের উপর।[১২]
টেমপ্লেট:তাইওয়ানের বৈদেশিক সম্পর্ক টেমপ্লেট:বুর্কিনা ফাসোর বৈদেশিক সম্পর্ক