ভারতের সংবিধানের ৩৭০ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল এবং রাজ্যটিকে ভারতের জাতীয় পতাকার পাশাপাশি নিজস্ব রাজ্য পতাকা ব্যবহারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। জম্মু ও কাশ্মীর ১৯৫২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নিজস্ব রাজ্য পতাকা ব্যবহার করেছে।[১]
জম্মু ও কাশ্মীর
ব্যবহার
রাজ্য পতাকা
অনুপাত
৩:২
গৃহীত
১৯৫২
উৎপত্তি
জম্মু ও কাশ্মীরের সংবিধানের ১৪৪ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে যে রাজ্যের পতাকা আয়তক্ষেত্রাকার ৩: ২ আকারের হবে। এর রং লাল, যা মূলত ১৩ জুলাই ১৯৩১ তারিখে সংঘটিত বিক্ষোভে শহীদদের রক্ত দানের প্রতিনিধিত্ব করে। তবে পরবর্তীতে তা শ্রমিকদের প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। মাঝখানে একটি সাদা লাঙল কৃষকদের শ্রমের প্রতীক। তিনটি উল্লম্ব সাদা সমান্তরাল দাগগুলো রাজ্যের তিনটি অঞ্চল জম্মু, কাশ্মীর এবং লাদাখের উপস্থাপন করে।[২]
এই পতাকাটির মূল ইতিহাস জড়িয়ে আছে ১৩ জুলাই ১৯৩১ তারিখে শ্রীনগরে সংঘটিত বিক্ষোভ আন্দোলন। ডোগরা শাসকদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলাকালীন পুলিশ আম-জনতার উপর গুলি চালায় এবং ২১ জন নিহত হয়। তখন নিহত একজনের রক্ত-দাগযুক্ত শার্টটি জনতা কাশ্মীরের নতুন পতাকা হিসাবে উত্তোলন করেছিল। রাজ্যে ১৩ জুলাই শহীদ দিবস হিসাবে পালিত হয় এবং এ দিন জম্মু ও কাশ্মীরে সরকারি ছুটি থাকে।[২]
১১ জুলাই ১৯৩৯ সালে একটি রাজনৈতিক দল জম্মু ও কাশ্মীর জাতীয় সম্মেলনে পতাকার পুরানো সংস্করণ গৃহীত করে। ১৯৫২ সালের জুন মাসে জম্মু ও কাশ্মীরের গণপরিষদ কর্তৃক প্রস্তাবটি পাশ হয় এবং এটি রাজ্য পতাকা হিসাবে গৃহীত হয়।
২০১৫ সালের বিতর্ক
জম্মু ও কাশ্মীরের সংবিধান ২০১৯ সালের আগস্ট মাস অবধি , ভারতের জাতীয় পতাকার পাশাপাশি রাজ্য পতাকা উত্তোলন বাধ্যতামূলক করেছিল।[১] কিন্তু ২০১৫ সালে, জম্মু ও কাশ্মীর আইনসভায় নবনির্বাচিত ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্যরা তাদের কার্যালয়ে রাজ্য পতাকা উত্তোলন করতে অস্বীকার করে। বিজেপি মন্ত্রীরাও তাদের কার্যালয়ে রাজ্যের পতাকা উত্তোলন করত না। বরঞ্চ একে গুরুত্বহীন মনে করে।
মুখ্যমন্ত্রীমুফতি মুহাম্মদ সাঈদের নেতৃত্বে সরকার তার পরে জাতীয় পতাকার পাশাপাশি রাজ্যের পতাকা উত্তোলন বাধ্যতামূলক করে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে যে
ভারতীয় জাতীয় সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় পতাকার যেমন মর্যাদা ও পবিত্রতা বিদ্যমান তেমনি রাজ্য পতাকারও রয়েছে সংবিধিবদ্ধ মর্যাদা।
তবে, ২০ ঘণ্টার মধ্যে, রাজ্য সরকার এই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।[১][৩][৪] বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের বিষয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের বিজেপির মুখপাত্র বলেছিলেন,
আমাদের নেতারা ভারতের জাতীয় পতাকা ত্রিরঙ্গা ছাড়া অন্য কোন পতাকা ব্যবহার করবেন না। আমরা বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারকে স্বাগত জানাই।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে জম্মু ও কাশ্মীর হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে রাষ্ট্রীয় পতাকাসহ রাজ্য পতাকাকে সংবিধানিক কর্তৃপক্ষের যানবাহনগুলিতে ব্যবহারের নির্দেশ দেন।[৫] তবে ভারতীয় জনতা পার্টি এই সিদ্ধান্তটি বিরোধিতা করেছিল এবং ভারতীয় জনতা পার্টির তৎপরতায় ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে জম্মু ও কাশ্মীর হাইকোর্ট তাদের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছিল। জম্মু ও কাশ্মীরের উপ-মুখ্যমন্ত্রী নির্মল কুমার সিংহ বলেছিলেন যে ভারতের জাতীয় পতাকার সমমর্যাদায় কোন পতাকা উত্তোলন করা যাবে না। অন্য দলগুলি অভিযোগ করেছে যে বিজেপি তার জাতীয়তাবাদী চেতনাকে একটি বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন রাজ্যে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।[৬] বিজেপির এই অবস্থান সত্ত্বেও, জোটের পিডিপি-র মন্ত্রীরা সরকারী বৈঠকে জাতীয় পতাকার পাশাপাশি রাজ্য পতাকা ব্যবহার অব্যাহত রাখেন। জাতীয় সম্মেলনের যুব শাখার লোকেরা তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্টগুলিতে রাজ্যের পতাকাটিকে প্রোফাইল চিত্র হিসাবে ব্যবহার করতে উৎসাহিত করে একটি প্রচারণা চালিয়েছে যে বলেছিল যে[৭]
জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্য পতাকাটি জাতীয় পতাকার মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করে না। জাতীয় পতাকার সাথে রাজ্য পতাকা ব্যবহার করা আমাদের সংবিধানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে।
রদ
ভারতের সংবিধানের ৩৭০ নং অনুচ্ছেদ বাতিল করার ফলে জম্মু ও কাশ্মীর বিশেষ মর্যাদা হারিয়ে ফেলে। ফলে ২০১৯ সালের আগস্ট মাস থেকে পতাকাটি তার রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক মর্যাদা হারায়।[৮] ২৫ আগস্ট ২০১৯ সালে শেষবারের জন্য পতাকাটি উত্তোলন করা হয়েছিল। [৯]
জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যটি ৩১ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং দুটি নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত হয়।