শিরোনাম বদল করতে হবে।
ঘরোয়া ক্রিকেট (যুক্তরাজ্যের বৈকল্পিক) অথবা ইনডোর ক্রিকেট (যুক্তরাজ্য সংস্করণ) যে কোন উপযুক্ত আকারের বহু-উদ্দেশ্যসাধক স্পোর্টস হলঘরে খেলা যায়। ১৯২০ এবং ১৯৩০-এর দশকে এ রকম খেলার প্রমাণ পাওয়া যায়। [১] তবে ১৯৬০ এর দশকে এক দল শৌখিন এবং পেশাদার ক্রিকেটার শীতের মাসগুলিতে তাঁদের খেলাধুলো চালু রাখার জন্য এই ধরনের ইনডোর ক্রিকেট খেলে ছিলেন বলে জানা যায়। বিশ্বের প্রথম ইনডোর ক্রিকেট লিগের রেকর্ড লিপিবদ্ধ আছে ১৯৭০ সালে নর্থ শর্পশায়ারে[২] এবং প্রথম জাতীয় টুর্নামেন্টটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৬ সালে। তাতে ৪০০ টিরও বেশি ক্লাব অংশ নিয়েছিল। ১৯৭৯ সালের মধ্যে ১০০০ টিরও বেশি ক্লাব যুক্তরাজ্যের ইনডোর ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিল এবং এটি সারা দেশের বিভিন্ন লিগে আজ অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা। [৩] ইনডোর গেমের বিভিন্নতার ভিত্তিতে ইনডোর ক্রিকেটের অন্যান্য ফর্মগুলি তৈরি করা হয়েছে। [৪]
খেলাটি নিজেই তার বহিরাঙ্গণের জাতভাই-খেলাটির সাথে অনেকটাই একই রকমের - একটি শক্ত বল এবং একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের পিচ ব্যবহৃত হয়। ইনডোর ক্রিকেট যেকোন উপযুক্ত আকারের স্পোর্টস হল বা অনুরূপ আকারের ইনডোর অঙ্গনে খেলা যেতে পারে। প্রয়োজনে ক্রিকেটের পিচের উপর একটি মাদুর বিছিয়ে পিচের প্রতিরূপ তৈরি করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় যে নেট সংস্করণ ইনডোর ক্রিকেট চালু আছে তার সাথে এই বিন্যাসটি নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়।
খেলার ধারণার দিক থেকে ইনডোর ক্রিকেট অনেকটাই ক্রিকেট খেলারই অনুরূপ। আউটডোর ক্রিকেটের মতোই ইনডোর ক্রিকেটেও দু জন ব্যাটসম্যান, একজন বোলার এবং ফিল্ডারদের একটি দল জড়িত। বোলার ব্যাটসম্যানকে বল করেন যিনি নিজের ব্যাট দিয়ে সেই বলটিকে আঘাত করে রান সংগ্রহ করতে পারেন। ফিল্ডিং দল রানের স্কোর ঠেকাতে এবং ব্যাটসম্যানকে আউট করার চেষ্টা করেন। প্রতিটি দলই ব্যাট করতে নামেন এবং ম্যাচের শেষে সর্বোচ্চ স্কোর সংগ্রহকারী দল জয় লাভ করে। এই মৌলিক মিলগুলি সত্ত্বেও খেলাটি নিজেই তার বহিরাঙ্গন ক্রিকেটের থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্যভাবে পৃথক। তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ফারাক হল খেলার মাঠ যার মাধ্যমে রান অর্জিত হয়।
ইনডোর ক্রিকেটের ৬-জনের দলের নিয়ম বহিরাঙ্গণ ক্রিকেটের সাথে এক হলেও নিম্নলিখিত ব্যতিক্রমগুলি লক্ষ্য করা যায়[৫] যার মধ্যে কিছু স্থানীয় লিগে বিভিন্নতা থাকতে পারে।
প্রতি দলে ছয়জন খেলোয়াড় থাকেন এবং ছয় বলের সর্বোচ্চ ১২ ওভার এর ইনিংসে খেলা হয়। সবগুলি ওভারই পিচের একই প্রান্ত থেকে করা হয়।
বোলার সর্বাধিক তিনটি ওভার করতে পারবেন এবং ব্যাটসম্যানকে ব্যক্তিগত পঁচিশ রানে অবসর নিতে হবে। তবে ১২ ওভারের মধ্যে তাঁদের দলের বাকি সবাই আউট হয়ে গেলে ফের তিনি ক্রিজে ফিরে যেতে পারবেন।
১২ ওভারের মধ্যে একটি দল পাঁচ উইকেট খোয়ালে ইভেন্টের শেষে পঞ্চম ব্যক্তি উইকেটে থেকে রানার হিসাবে ব্যাট করবেন।
কোনও ব্যাটসম্যান সরাসরি পাশের দেয়ালে বল লাগানোর পরে ক্যাচ আউট হতে পারেন। তবে শর্ত থাকে যে বলটি সে ক্ষেত্রে যেন মেঝে বা ছাদে আঘাত না করে।
মেঝে বা দেওয়ালের কোনও অংশ বা ছাদের অংশ স্পর্শ না করে বল বোলারের পিছনে বাউন্ডারি প্রাচীরে আঘাত করলে ছয় রান হয়। বলটি যদি মেঝে স্পর্শ করে বোলারের পিছনে বাউন্ডারি প্রাচীরে আঘাত করে কিন্তু দেওয়ালের কোনও অংশ বা ছাদের অংশ স্পর্শ না করে তবে চার রান দেওয়া হয়।
বল এক বা একাধিক পাশের দেয়ালে আঘাত করলে এমনকি পরে পিছনের সীমানা প্রাচীরে আঘাত করলেও এক রান হিসাবে গণ্য হয়। বল পাশের দেয়ালে আঘাত করলে এবং কোনও ব্যাটসম্যানকে কোনওভাবে আউট করা হলে (যেমন ক্যাচড বা রান আউট) তখনও একটি রান গন্য করা হয়।
বলটি সরাসরি ছাদে আঘাত করলে বলটি সঙ্গে সঙ্গে ডেড হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে কোনও রান দেওয়া হয় না এবং কোনও আউটও দেওয়া হয় না। তার জন্য পুনরায় বল করতেও হবে না। বলটি কোনও দেওয়ালে আঘাতের পরে ছাদে আঘাত করলে সেটি চালু বল ব'লে গণ্য থাকে। কিছু কিছু স্থানে ছাদকেও পাশের দেওয়ালের মতো বল স্পর্শ করলে ১ রান বরাদ্দ করা হয়। তবে সে ক্ষেত্রে কোনও ফিল্ডার বলটি ক্যাচ ধরতে পারলে ব্যাটসম্যানকে আউট দেওয়া হয়।
ব্যাটসম্যানরা যে কোনও সময় কোনও রান পূর্ণ করলে দুটি রান হবে। এই রান বাই বা লেগ বাই সহ পাশের দেওয়ালে বল মেরে হতে পারে। তবে তা কোনও বাউন্ডারির উপরে হলে প্রযোজ্য হয় না।
বলটি যদি কোনও দেয়ালে আঘাত করে তবে বাই হিসাবে এক রান গণ্য হয়। ব্যাটসম্যানের প্যাড বা দেহে লাগার পরে যদি বলটি পাশের দেয়ালে আঘাত করে তবে লেগ বাই হিসাবে একটি রান গণ্য করা হয়।
যদি বোলার ক্রিজে ওভারস্টেপ করে অথবা কোমরের উচ্চতার ওপরে একটি ফুল টস বল করে বা ম্যাটে বল পিচ না করে তবে একটি নো-বল ডাকা হবে এবং ব্যাটিং পক্ষকে একটি রান দেওয়া হবে। সেই সাথে বোলারকে একটি অতিরিক্ত বল করতে হবে। এর উপরেও যে কোনও রান হলে যথারীতি তাও গণনা করা হবে।
অর্থোডক্স ক্রিকেট বিধির মতোই ওয়াইড বল ডাকা হয়।
ইনডোর ক্রিকেটের কৌশল তার বিভিন্ন স্কোরিং পদ্ধতির কারণে বহিরাঙ্গন ক্রিকেটের থেকে আলাদা। রান স্কোর করার দ্রুততম উপায় হ'ল পিছনের প্রাচীরে বল মেরে ৪ বা ৬ রান করা। এটি রোধ করতে ফিল্ডিং পক্ষের দুই সেরা ফিল্ডারকে সাধারণত এই দেয়ালের সামনে দাঁড় করানো হয় যাতে মারা বলটি ঐ দেয়ালকে স্পর্শ করতে না পারে।
ব্যাটসম্যান যদি পিছনের প্রাচীরে বলটি না মারতে পারেন তবে পরিবর্তে তিনি পাশের দেয়ালে বলটি মেরে তাঁর সঙ্গীর সাথে দ্রুত সিঙ্গল সম্পন্ন করে মোট ৩ রান সংগ্রহ করার চেষ্টা করতে পারেন। এটি রোধ করার চেষ্টা করার জন্য বাদ বাকি দুই ফিল্ডারকে সাধারণত ব্যাটসম্যানের দুই পাশের দেয়ালের সামনে রেখে দেওয়া হয়।
এই কৌশলগুলি ব্যবহার করে ৬ বলের ১২ ওভারে দল প্রতি সাধারণত ১০০ থেকে ১৪০ রান সংগ্রহ করে নিতে পারে।
ইনডোর ক্রিকেট যুক্তরাজ্যের চারপাশে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং অনেকগুলি আঞ্চলিক এবং স্থানীয় লিগ স্বতন্ত্রভাবে চালিত হলেও ইসিবি-র দ্বারা আলগাভাবে অনুমোদিত। অপেশাদার ক্লাব দল গ্রীষ্মে প্রায়ই ১১ জনের দল এবং শীতকালে ইনডোরে ৬ জনের দল গঠন করে মাঠে নামায়। দেশের সেরা দলগুলি ইসিবি জাতীয় ইনডোর ক্রিকেট কাপের জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে পারে যা যুক্তরাজ্যে খেলা ইনডোর ক্রিকেটের সর্বোচ্চ মান ব'লে বিবেচিত হয়। [৬] খেলাটি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও ব্যাপকভাবে খেলা হয়।[৭]