গ্লোবাল রাইটসগঠিত | ১৯৭৮ |
---|
ধরন | এনজিও |
---|
উদ্দেশ্য | সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকারের প্রচার ও সুরক্ষা |
---|
সদরদপ্তর | ওয়াশিংটন ডিসি |
---|
এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর | আবিউদুন বাইয়েউ |
---|
ওয়েবসাইট | www.globalrights.org |
---|
গ্লোবাল রাইটস (ইংরেজি: Global Rights) একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং প্রচারে কাজ করে। এই এনজিওটির প্রধান লক্ষ্য হলো প্রান্তিক এবং অবহেলিত জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এটি স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীদের সাথে কাজ করে এবং তাদেরকে আইনি সহায়তা, প্রশিক্ষণ, এবং ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করে। গ্লোবাল রাইটস জাতিগত, লিঙ্গভিত্তিক, এবং সামাজিকভাবে দুর্বল গোষ্ঠীগুলোর অধিকার রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে।[১]
ইতিহাস ও প্রতিষ্ঠা
গ্লোবাল রাইটস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৮ সালে, এবং মূলত এটি "আদভোকেটস ফর হিউম্যান রাইটস" নামে পরিচিত ছিল। সংস্থাটির লক্ষ্য ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা এবং বিশ্বজুড়ে বিচার ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো। ২০০৩ সালে সংস্থার নাম পরিবর্তন করে গ্লোবাল রাইটস রাখা হয় এবং এটি আরও বিস্তৃত পরিসরে কাজ করতে শুরু করে, বিশেষত আফ্রিকা, এশিয়া, লাতিন আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে।[২]
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
গ্লোবাল রাইটস-এর মূল উদ্দেশ্য হলো:[২]
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষা: সংখ্যালঘু, আদিবাসী, এবং লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় কাজ করা।
আইনি সহায়তা প্রদান: স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী ও সংস্থাগুলোকে আইনি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সক্ষম করে তোলা।
ক্ষমতায়ন: জনগণকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা এবং সরকার ও সমাজে তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।
অধিকার লঙ্ঘনের প্রতিরোধ: বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধের জন্য কার্যকর নীতি প্রণয়নে সহায়তা করা।
কার্যক্রম
গ্লোবাল রাইটস বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে মানবাধিকার রক্ষার কাজ করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:[২][৩]
আইনি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ: স্থানীয় আইনজীবী এবং মানবাধিকার কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও আইনি পরামর্শ প্রদান করা।
মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ: মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা পর্যবেক্ষণ ও নথিভুক্ত করা এবং আন্তর্জাতিক মহলে সেগুলো তুলে ধরা।
ক্যাম্পেইন ও অ্যাডভোকেসি: নির্যাতন, গুম, এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রচারাভিযান পরিচালনা করা।
স্থানীয় কর্মীদের ক্ষমতায়ন: স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের কার্যক্রমকে আরো কার্যকর করা।[৪]
কর্মক্ষেত্র
গ্লোবাল রাইটস প্রধানত নিম্নোক্ত অঞ্চলে কাজ করে:[৩]
আফ্রিকা
আফ্রিকার দেশগুলোতে গ্লোবাল রাইটসের কার্যক্রম প্রধানত সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার প্রতিরোধ, এবং নির্বাচন সম্পর্কিত কার্যক্রম পরিচালনার ওপর কেন্দ্রিত।[২]
- সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা: সংস্থাটি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে, বিশেষ করে রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং অর্থনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলো জনগণের সাংস্কৃতিক পরিচয় সংরক্ষণ এবং তাদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা।
- লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ: নারীর প্রতি সহিংসতা হ্রাসে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মসূচির মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়। গ্লোবাল রাইটস এই অঞ্চলে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা রোধে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির সাথে সহযোগিতা করে।[৫]
- নির্বাচন সম্পর্কিত কার্যক্রম: নির্বাচনের সময় স্বচ্ছতা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গ্লোবাল রাইটস আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলের ব্যবস্থা করে, যাতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনও প্রকার অসঙ্গতি না ঘটে।
মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা
মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায়, গ্লোবাল রাইটস নারীর অধিকার, বিচারব্যবস্থার সংস্কার, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে কাজ করে।[৬]
- নারীর অধিকার: নারীদের অধিকার সুরক্ষায় বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন এবং প্রচারণা পরিচালনা করা হয়। সংস্থাটি নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং বৈষম্যের অবসানকল্পে স্থানীয় সংগঠনগুলোর সঙ্গে একত্রে কাজ করে।
- বিচারব্যবস্থার সংস্কার: ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বিচারব্যবস্থার উন্নয়নে প্রচেষ্টা চালানো হয়। এটি আইনি সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে।
- মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ: মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে তা নথিভুক্ত করা এবং আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তা করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর অধিকার রক্ষায়ও গ্লোবাল রাইটস কাজ করে।
ল্যাটিন আমেরিকা
ল্যাটিন আমেরিকায় গ্লোবাল রাইটস আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার এবং জমি সংক্রান্ত বিরোধ সমাধানে সহযোগিতার ওপর মনোনিবেশ করে।
- আদিবাসী জনগণের অধিকার: আদিবাসী জনগণের সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক অধিকার রক্ষায় বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোর ভূমি অধিকার এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তা।
- জমি সংক্রান্ত বিরোধ সমাধান: জমি অধিকার নিয়ে বিরোধের ক্ষেত্রে গ্লোবাল রাইটস স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা পরিচালনা করে এবং আদিবাসী জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে।
এশিয়া
এশিয়ায় গ্লোবাল রাইটস শ্রমিকের অধিকার এবং অভিবাসীদের সুরক্ষার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করে।[৭]
- শ্রমিকের অধিকার: শ্রমিকদের ন্যূনতম অধিকার এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গ্লোবাল রাইটস বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করে। এটি শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ কর্মস্থল এবং সঠিক মজুরি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে।
- অভিবাসীদের সুরক্ষা: অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং আইনগত সহায়তা প্রদান করে। গ্লোবাল রাইটস অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বৈষম্য এবং শোষণ রোধে বিভিন্ন প্রচারণা এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে।
সফলতা ও প্রভাব
গ্লোবাল রাইটস বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার সুরক্ষায় বহু সাফল্য অর্জন করেছে। বিশেষ করে আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে তাদের কাজের ফলে নারী অধিকার এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। সংস্থাটি স্থানীয় এনজিও এবং মানবাধিকার কর্মীদের সহযোগিতায় দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তন আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছ।[৫]
চ্যালেঞ্জ
গ্লোবাল রাইটস-এর কাজের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে:[৭]
সরকারি বাধা: অনেক দেশে মানবাধিকার কার্যক্রম পরিচালনায় সরকারি বিধিনিষেধ এবং প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হয়।
নিরাপত্তা হুমকি: মানবাধিকার কর্মীরা প্রায়ই নিরাপত্তাজনিত হুমকির সম্মুখীন হন, বিশেষত সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে।
অর্থায়নের অভাব: দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পের জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়ন না থাকায় কার্যক্রম পরিচালনায় সীমাবদ্ধতা দেখা দেয়।
তথ্যসূত্র