গ্রীনল্যান্ডের ইতিহাস হলো চরম আর্কটিক পরিস্থিতিতে জীবনযাপনের ইতিহাস: বর্তমানে একটি বরফ চাদর দ্বীপের প্রায় ৮০ শতাংশ জুড়ে রয়েছে। ফলে মানুষের কার্যকলাপকে মূলত উপকূলে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে।
মানুষ প্রথম গ্রিনল্যান্ড-এ পৌঁছেছিল খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ সালের দিকে বলে মনে করা হয়। তাদের বংশধররা সম্ভবত বিলুপ্ত গেলে আরও বেশ কয়েকটি গোষ্ঠী উত্তর আমেরিকা মহাদেশ থেকে এখানে অভিবাসনে চলে আসতে সফল হয়েছিল। ১০ম শতাব্দী অবধি ইউরোপীয়দের কাছে গ্রিনল্যান্ড পরিচিত ছিল এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় নি। আইসল্যান্ড এর ভাইকিংরা এর দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে বসতি স্থাপন করেছিল এবং মনে হয় তারা সেখানে পৌঁছোনোর আগে পর্যন্ত সেটি জনবসতিহীন ছিল। ইনুইট গ্রীনল্যান্ডার যারা এখন সেখানে বাস করেন তাদের পূর্বপুরুষ ১২০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে অভিবাসন করে উত্তর-পশ্চিম গ্রিনল্যান্ড থেকে সেখানে পৌঁছেছিলেন বলে মনে হয়। ইনুইট ক্ষুদ্র তুষারযুগ এর বরফ জগতে টিকে থাকার পরেও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে প্রারম্ভিক নর্স বসতি অদৃশ্য হয়ে যায় এবং কয়েক শতাব্দী ধরে দ্বীপের একমাত্র বাসিন্দা হিসাবে ইনুইটরা রয়ে যায়। এই সময়-কালে ডেনমার্ক-নরওয়ে তখনো আপাতভাবে নর্স বসতির টিকে থাকার কথা বিশ্বাস করত এবং তাদের স্ক্যান্ডিনেভিয়ান জ্ঞাতি ভাইদের সাথে যোগাযোগের অভাব সত্ত্বেও সেই দ্বীপটির উপর সার্বভৌমত্বের দাবি করে চলত। ১৭২১ সালে ডেনমার্ক-নরওয়ে উপনিবেশিক শক্তি হিসাবে গড়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষায় নর্স গ্রিনল্যান্ডারদের মধ্যে খ্রিস্টানকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে যাতে তারা প্যাগানিজমে (পৌত্তলিকতা) ফিরে যেতে পারে - তার জন্য একটি মিশনারি অভিযান পাঠায়। মিশনারিরা যখন নর্স গ্রিনল্যান্ডারদের কোন বংশধর খুঁজে পেল না পরিবর্তে তারা ইনুইট গ্রিনল্যান্ডারদের ব্যাপটাইজ করে ফিরে আসে। ডেনমার্ক-নরওয়ে তখন উপকূলে বাণিজ্যিক উপনিবেশ গড়ে তোলে এবং এই অঞ্চলে বাণিজ্য একচেটিয়া এবং অন্যান্য উপনিবেশিক সুযোগ-সুবিধা চাপিয়ে দেয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এর সময় তৎকালীন নাৎসি জার্মানি ডেনমার্ক আক্রমণ করে। তখন গ্রিনল্যান্ডাররা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ডেনমার্কের সাথে কম সংযুক্ত ছিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর সাথে আরও সংযুক্ত হয়েছিল।[১] যুদ্ধের পরে ডেনমার্ক গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার শুরু করে। ১৯৫৩ সালে তারা বিদেশে তাদের স্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। তাই উপনিবেশ রূপান্তরিত হয় এএমটি (কাউন্টি)-তে। যদিও গ্রিনল্যান্ড এখনও ডেনমার্ক রাজ্যের একটি অঙ্গ তবুও তারা ১৯৭৯ সাল থেকে স্বদেশের শাসন উপভোগ করছে। ১৯৭৩ সালে ডেনমার্কের অংশ হিসাবে তারা যোগদান করলেও ফ্যারো কখনও যোগদান করে নি। ১৯৮৫ সালে দ্বীপটি ইউরোপীয় অর্থনৈতিক সম্প্রদায় (ইসি) ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
পরবর্তী ডরসেট সংস্কৃতি চৌদ্দ শতকের গোড়ার দিক পর্যন্ত গ্রিনল্যান্ডে টিকে ছিল।[২] এই সংস্কৃতিটির অবস্থান ছিল মূলত গ্রীনল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিমে এবং তা দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলের নর্সদের থেকে অনেক দূরের ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ ইঙ্গিত করে যে এটি নর্স বা থুলে বসতিগুলিরও পূর্বেকার। [৩] এই সংস্কৃতির অঞ্চলে প্রায় চার থেকে ত্রিশটি পরিবার অন্যত্র যাওয়ার আগে স্বল্প সময়ের জন্য একসাথে বসবাস করেছিল। তাদের এই জমায়েতের প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।
১৩০০-১৪০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে থুলে পশ্চিম থেকে গ্রিনল্যান্ডের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে এসে বসতি স্থাপন করেছিল।[৪] এই মানুষরা ছিল আধুনিক গ্রিনল্যান্ডের ইনুইট-দের পূর্বপুরুষ।[৩][৫] শিকারে তারা এমন নমনীয় ছিল যে ডাঙ্গার এবং সমুদ্রের ওয়ালরাস, নারহোয়েল এবং সিল সহ প্রায় সমস্ত প্রাণী শিকারে লিপ্ত থাকত।[৬][৭] থুলে সংস্কৃতি গ্রিনল্যান্ডের পরিবেশের সাথে ভালভাবে খাপ খেয়েছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে জানা গেছে অন্যান্য আর্কটিক গোষ্ঠীর তুলনায় এক জন থুলে শিকারের হত্যার সময় তার সমস্ত অংশ ব্যবহার করত না। এর অর্থ হলো উদ্বৃত্ত বা ভাল অভিযোজিত আচরণের কারণে প্রয়োজনে তারা তাদের আরও সংস্থান ব্যয় করতে সক্ষম ছিল।[৬]
ডরসেট এবং নর্স সংস্কৃতির মধ্যে পরিচিতির প্রকৃতি পরিষ্কার নয়। তবে এতে বাণিজ্য উপাদান অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। যোগাযোগের স্তরটি বর্তমানে বিতর্কের বিষয়। সম্ভবত কানাডার থুলে বা ডরসেটের সাথে নর্সের বাণিজ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।