ক্রিস্টোফার লায়ল স্মিথ (ইংরেজি: Chris Smith; জন্ম: ১৫ অক্টোবর, ১৯৫৮) নাটাল প্রদেশের ডারবানে জন্মগ্রহণকারী দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত বিখ্যাত ও সাবেক ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা।[১]ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন ‘কিপ্পি’ ডাকনামে পরিচিত ক্রিস স্মিথ। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে হ্যাম্পশায়ার এবং দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে নাটাল দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। পাশাপাশি, গ্ল্যামারগনের পক্ষেও একটি খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন তিনি।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
বাবা ওয়ালসলের ও মাতা স্কটল্যান্ডীয় ছিলেন। ১৯৭৬ সালে নাটাল অনূর্ধ্ব-২৫ দল কিংসমিড মাইনাসের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। আবাসকালীন যোগ্যতা লাভের জন্যে মাঝে-মধ্যেই প্রথম একাদশে খেলার সুযোগ পেতেন ও বাদ-বাকী সময় দ্বিতীয় একাদশে খেলতে হতো ক্রিস স্মিথকে। ১৯৭৯ সালে ব্যারি রিচার্ডসের যোগ্য উত্তরাধিকারী হন তিনি। বিশ্রাম কক্ষে ঘুমানোর কারণে ‘কিপ্পি’ ডাকনামে পরিচিতি পান।
কনিষ্ঠ ভ্রাতা রবিন স্মিথের ন্যায় সহজাত প্রতিভার অধিকারী ছিলেন না। তাসত্ত্বেও, হ্যাম্পশায়ারের সাথে বেশ মানিয়ে নেন। চল্লিশোর্ধ্ব ব্যাটিং গড়ে রান তুলেছিলেন। কাউন্টি ক্রিকেটে হ্যাম্পশায়ারের নিয়মিত সদস্য ছিলেন। ১৯৭৯ সালে দক্ষিণ ওয়েলস লীগে খেলাকালীন গ্ল্যামারগনের সদস্যরূপে একটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় নাটাল বি দলে খেলেন।
১৯৮০ সালে বসন্তের শেষদিকে সাউদাম্পটনে প্রথমবারের মতো ক্রিস স্মিথের পদার্পণ ঘটে। হ্যাম্পশায়ারের পক্ষে সফলতম খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন। ৪০-এর অধিক প্রথম-শ্রেণীর শতরানের ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন তিনি। ভিভ রিচার্ডস, অ্যান্ডি রবার্টস, গর্ডন গ্রীনিজ ও ম্যালকম মার্শালকে নিয়ে হ্যাম্পশায়ার দলের স্বর্ণালী অতীত পেরোনোর পর হ্যাম্পশায়ার দলকে টেনে তোলার চেষ্টা চালান।
প্রথম মৌসুমেই একমাত্র হ্যাম্পশায়ার ব্যাটসম্যান হিসেবে সহস্রাধিক রানের মাইলফলক স্পর্শ করার গৌরব অর্জন করেছিলেন ক্রিস স্মিথ। মূলতঃ দুই নম্বর অবস্থানে থেকে এ সফলতা পান। পরবর্তী দুই মৌসুমও এ ধারা অব্যাহত রাখেন। ১৯৮৩ সালে ১,৫০০ রানের অধিক সংগ্রহ করেন ও দলনির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টিতে নিবদ্ধ হন। লিচেস্টারে অপরাজিত ১২৯ রান তুলেন। মাত্র উনিশ ইনিংসে জুনের শেষদিকে গ্লুচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে সহস্রাধিক রানের মাইলফলকে পৌঁছেন। এ সময় তিনি খেলোয়াড়ী জীবনের সেরা ১৯৩ রান তুলেন ডার্বিতে ও পরের খেলাতেই বোর্নমাউথে ল্যাঙ্কাশায়ারের বিপক্ষে ঠিক একশত রান তুলেন। ঐ একই ইনিংসে উনিশ বছর বয়সী কনিষ্ঠ ভ্রাতা রবিন স্মিথও প্রথম-শ্রেণীর অভিষেকে সেঞ্চুরি করেছিলেন।
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ৮ টেস্ট ও ৪টি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণ করার সুযোগ লাভ হয়েছিল তার। ১১ আগস্ট, ১৯৮৩ তারিখে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে ক্রিস স্মিথের।
বর্ণবৈষম্যবাদ নীতির কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে। ফলশ্রুতিতে, দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে কোন আন্তর্জাতিক খেলায় অংশ নিতে পারেননি তিনি। কিন্তু, পিতা-মাতার জাতীয়তায় ইংল্যান্ডের পক্ষে খেলার সুযোগ পান। এরপর ইংল্যান্ড দলের সদস্যরূপে আটটি টেস্টে অংশ নিতে পেরেছিলেন। তবে, কখনোই দলে পাকাপোক্ত আসন গড়তে সক্ষম হননি ক্রিস স্মিথ। লর্ডসে সফরকারী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নেন। তবে তার এ অভিষেক পর্ব মোটেই সুখকর হয়নি। রিচার্ড হ্যাডলির প্রথম বলেই লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়ে শূন্য রানে বিদেয় নিতে হয় তাকে।
তাসত্ত্বেও, পরবর্তী শীতকালে নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তান গমনের জন্য দলের সদস্য করা হয় ক্রিস স্মিথকে।[৩] ঐ সফরে কিছু উল্লেখযোগ্য অবদানের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন। অকল্যান্ড টেস্টে ৯১ রান তুলেন।
ফয়সালাবাদে স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬৬ রান তুলেছিলেন। তবে, ১৯৮৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমনের জন্যে তাকে দলে রাখা হয়নি। এরপর তিনি আর একটিমাত্র টেস্টে অংশ নিতে পেরেছিলেন।
অবসর
ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর প্রশাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন ক্রিস স্মিথ।[৩] বিখ্যাত ইংরেজ ক্রিকেটার রবিন স্মিথ সম্পর্কে তার ভ্রাতা হন।