ক্রিস্টোফার মার্ক ওয়েলস রিড (ইংরেজি: Chris Read; জন্ম: ১০ আগস্ট, ১৯৭৮) পাইগন্টনে জন্মগ্রহণকারী সাবেক প্রথিতযশা ইংরেজক্রিকেটার। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। নটিংহ্যামশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের অধিনায়কের দায়িত্বে রয়েছেন ক্রিস রিড। দলে তিনি মূলতঃ উইকেট-রক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে থাকেন। খেলোয়াড়ী জীবনে অনেকবারই ইংল্যান্ডের প্রথম পছন্দের উইকেট-রক্ষকের মর্যাদা লাভ করেন। তবে এ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে রাখতে পারেননি তিনি।
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে চমকপ্রদ ক্রীড়ানৈপুণ্যের ফসল হিসেবে এজবাস্টনে সফরকারী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলার জন্য তাকে মনোনীত করা হয়। ২১ বছর বয়সে পদার্পণের পূর্বেই রিড বেশ সুন্দর প্রতিশ্রুতিশীলতার পরিচয় দেন। যদিও ব্যাট হাতে তেমন সফলতা পাননি, তবে খেলায় তিনি আটটি ডিসমিসাল ঘটিয়েছিলেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসেই করেছিলেন ছয়টি। লর্ডস টেস্টেও তাকে দলে রাখা হয়। শূন্য রানে আউট হলে দর্শকদের রোষানলের শিকারে পরিণত হন তিনি। ক্রিস কেয়ার্নস বিমারে ছুড়েছেন ভেবে এ আউটে পরিণত হলেও আসলে বলটি ধীরগতিসম্পন্ন বল ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৭ রানে করলেও ওল্ড ট্রাফোর্ডের পরবর্তী টেস্টে আবারও শূন্য রান পান। এরফলে দল থেকে বাদ পড়লেও ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওডিআইয়ে সিরিজে অংশগ্রহণ ছিল তার।
বেশ কয়েক বছর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দৃপ্ত পদচারণ করার পর প্রথমে পল নিক্সন ও পরবর্তীকালে অ্যালেক স্টুয়ার্টের অবসর প্রস্তুতিকালীন জেমস ফস্টারের উইকেটরক্ষণ অপেক্ষার অবসানকল্পে দল নির্বাচকমণ্ডলী কর্তৃক উপেক্ষিত হতে থাকেন। কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের খেলাগুলোয় মনোনিবেশ ঘটান। ২০০২ সালে ৬৮টি ডিসমিসালের সাথে জড়িত থাকেন। ব্যাটিংয়েও বেশ উন্নতি ঘটান। ঐ বছরে প্রায় ৩৫-এর কাছাকাছি গড়েরান তুলেন। তন্মধ্যে নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে মনোজ্ঞ সেঞ্চুরি হাঁকান। ২০০৩ সালে একই দলের বিপক্ষে ওডিআইয়ে সেঞ্চুরি করেন। একদিনের আন্তর্জাতিক দল থেকে স্টুয়ার্টের অবসরের পর তিনি পুনরায় ইংল্যান্ড দলে আহুত হন এবং দশটি ওডিআইয়ের সবকটিতেই অংশ নেন তিনি।
২০০৩-০৪ মৌসুমে রিড ইংল্যান্ডের প্রথম পছন্দের উইকেট-রক্ষক ছিলেন ও ঐ মৌসুমের শীতকালে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত নয় টেস্টের আটটিতেই তার অংশগ্রহণ ছিল। তবে এন্টিগুয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের চূড়ান্ত টেস্টে কেন্টের উইকেট-রক্ষক জেরাইন্ট জোন্সকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছিল। ঐ টেস্টেই ব্যাটিং বিস্ময় ব্রায়ান লারাঅপরাজিত ৪০০* রান তুলে বিশ্বরেকর্ড স্থাপন করেছিলেন। তবে একদিনের আন্তর্জাতিক দলে তিনি বহাল থাকেন। সিরিজের প্রথম ওডিআইয়ে দ্রুতগতিতে অপরাজিত ২৭* রান তুললে বৃষ্টিবিঘ্নিত খেলায় দল জয়লাভে সক্ষম হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচেরপুরস্কার লাভ করেন।
২০০৬-০৭ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজের পূর্বে জারাইন্ট জোন্স তার পরিবর্তে দলে অন্তর্ভুক্ত হন। এ প্রসঙ্গে ইংরেজ কোচ ডানকান ফ্লেচার মন্তব্য করেন যে, সাত নম্বরে ব্যাটিংয়ের জন্য জোন্সই মানানসই।[১] অস্ট্রেলিয়া সফরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় টেস্টের মাঝে দুইটি প্রস্তুতিকালীন খেলার ব্যবস্থা রাখা হয়। অস্ট্রেলিয়া সভাপতি একাদশের বিপক্ষে রিড শূন্য রানে আউট হন।[২] ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুইদিনের খেলায় রিড অপরাজিত ৫৯ রান তুললেও ব্যাটসম্যান হিসেবে জোন্স প্রথম বলেই শূন্য রানে ফেরৎ যান। ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে থেকেও জোন্সকে তৃতীয় টেস্টে রাখা হয়। উভয় ইনিংসেই কোন রান সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হলে রিডকে চতুর্থ টেস্টেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যদিও চূড়ান্ত টেস্ট দুটিতে ব্যাট হাতে তেমন সুবিধা করতে না পারলেও চতুর্থ টেস্টের প্রথম ইনিংসেই ৬টি ক্যাচ নেন। এরফলে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে দুইবার ৬টি ডিসমিসালের সাথে নিজেকে জড়িত রাখেন।[৩] সিডনিতে অনুষ্ঠিত পঞ্চম টেস্টেও এ ক্রীড়াশৈলীর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন। এরফলে প্রথম ও একমাত্র উইকেট-রক্ষক হিসেবে উপর্যুপরি টেস্টে এ কৃতিত্ব অর্জন করেন তিনি। তবে পরবর্তী একদিনের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ও বিশ্বকাপ ক্রিকেটে রিডকে উপেক্ষিত করা হয় এবং তার পরিবর্তে পল নিক্সনকে দলে নেয়া হয়। পরবর্তী গ্রীষ্মকালে টেস্ট দলের উইকেটরক্ষণকল্পে ম্যাট প্রায়রকে দলে নেয়া হয় ও অভিষেক টেস্টেও সেঞ্চুরি করেন এবং একদিনের খেলাগুলোয় রাখা হয়।
সেপ্টেম্বর, ২০০৭ সালে নটিংহ্যামশায়ারের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।[৪] ঐ গ্রীষ্মে দলটি চ্যাম্পিয়নশীপে খেলার সুযোগ পায়। ব্যাটহাতে তিনি ৫৪.১৭ গড়ে রান তুলেন। জুলাই, ২০১৪ সালে লর্ডসে দ্বি-শততম বার্ষিকী খেলায়এমসিসির পক্ষে খেলেন।[৫]
ব্যক্তিগত জীবন
লুইস নাম্নী এক রমণীকে বিয়ে করেন। কালেব ম্যাতিয়াস ওয়েলস রিড নামীয় এক পুত্র ও কালিস্তা লিলি রিড নাম্নী এক কন্যা তাদের সংসারে রয়েছে। তার প্রথম ক্রিকেটে কোচ প্রয়াত ট্রেভর ওয়ার্ডের সম্মানার্থে ও বাউয়েল ক্যান্সার ইউকে'র তহবিল বৃদ্ধিকল্পে নিউইয়র্ক সিটি ম্যারাথনে অংশ নেন। এতে তিনি ৯০০০০-এর অধিক দৌড়বিদের মধ্যে ৪৩৫৮তম স্থান দখল করেন যা তাকে শীর্ষ ৫%-এ নিয়ে যায়।