যে সংখ্যা দ্বারা অরবিটের আকার, উপশক্তিস্তরের আকৃতি, অরবিটালের ত্রিমাত্রিক অবস্থান ও ইলেকট্রনের ঘূর্ণন প্রকাশ করা হয় তাকে কোয়ান্টাম সংখ্যা বলে।কোয়ান্টাম সংখ্যা বর্তমানে বহুল আলোচিত একটি বিষয়৷ কোয়ান্টাম সংখ্যা ছাড়া অণু-পরমাণু সর্ম্পকে জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয়।
কোনো একটি ইলেকট্রন কোন শক্তিস্তরে আছে, শক্তি স্তরটি বৃত্তাকার না উপবৃত্তাকার এবং ইলেকট্রনটি নিজ অক্ষের চতুর্দিকে ঘড়ির কাটার দিকে না বিপরীত দিকে আবর্তন করে, এসব বিষয় প্রকাশের জন্য কয়েকটি সংখ্যা অবতরণ করা হয়। এ সংখ্যা সমূহই কোয়ান্টাম সংখ্যা নামে পরিচিত।
কোয়ান্টাম সংখ্যার প্রকারভেদ
১. প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা (n) [Principle quantum number]
যে কোয়ান্টাম সংখ্যার সাহায্যে পরমাণুতে অবস্থিত ইলেকট্রনের শক্তিস্তরের আকার নির্ণয় করা যায় তাকে প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা বলে। একে n দ্বারা প্রকাশ করা হয়,n এর মান যথাক্রমে 1,2,3,4,..... প্রভৃতি পূর্ণ সংখ্যা। প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যার মান বৃদ্ধি হলে নিউক্লিয়াস হতে প্রধান স্তরের দূরত্ব এবং শক্তিস্তরের আকার বৃদ্ধি পায়। বোর মতবাদ অনুসারে n=1 হলে ১ম শক্তিস্তর বা K শেল, n=2 হলে ২য় শক্তিস্তর বা L শেল, n=3 এবং n=4 হলে M ও N ইত্যাদি বোঝায়। যে কোনো প্রধান শক্তিস্তর সর্বোচ্চ 2n² ইলেকট্রন ধারণ করতে পারে (বোরের মতবাদ অনুসারে)।
n এর মান
প্রতীক
১
K
২
L
৩
M
৪
N
৫
O
৬
P
...
...
২. অ্যাজিমুথাল বা সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা (ℓ) [Azimuthal or subsidiary quantum number]
যা (কৌণিক ভরবেগ কোয়ান্টাম সংখ্যা বা অরবিটাল কোয়ান্টাম সংখ্যা, সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা) নামেও পরিচিত, সাবশেলকে বর্ণনা করে এবং সম্পর্কের মাধ্যমে অরবিটাল কৌণিক ভরবেগের মাত্রা দেয়।
L2 = ħ2 ℓ (ℓ + 1)
রসায়ন এবং বর্ণালীবিদ্যায়, ℓ = 0 কে s অরবিটাল, ℓ = 1, p অরবিটাল, ℓ = 2, d অরবিটাল এবং ℓ = 3, f অরবিটাল বলা হয়।
ℓ এর মান 0 থেকে n −1 পর্যন্ত, তাই প্রথম p অরবিটাল (ℓ = 1) দ্বিতীয় ইলেকট্রন শেলে (n = 2) প্রদর্শিত হয়, প্রথম d অরবিটাল (ℓ = 2) তৃতীয় শেলে (n = 2) প্রদর্শিত হয় = 3), এবং তাই:[2]
ℓ = 0, 1, 2,..., n −1
n = 3, ℓ = 0 থেকে শুরু হওয়া একটি কোয়ান্টাম সংখ্যা, একটি পরমাণুর তৃতীয় ইলেকট্রন শেলের s কক্ষপথে একটি ইলেকট্রনকে বর্ণনা করে। রসায়নে, এই কোয়ান্টাম সংখ্যাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি একটি পারমাণবিক কক্ষপথের আকৃতি নির্দিষ্ট করে এবং রাসায়নিক বন্ধন এবং বন্ধন কোণকে দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত করে। আজিমুথাল কোয়ান্টাম সংখ্যাটি একটি কক্ষপথে উপস্থিত কৌণিক নোডের সংখ্যাও নির্দেশ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, p অরবিটালের জন্য, ℓ = 1 এবং এইভাবে একটি p অরবিটালে কৌণিক নোডের পরিমাণ হল 1।
অরবিটালের আকৃতি আজিমুথাল কোয়ান্টাম সংখ্যা দ্বারাও দেওয়া হয়।
৩. চৌম্বকীয় কোয়ান্টাম সংখ্যা (m) [Magnetic quantum number]
যে সকল কোয়ান্টাম সংখ্যার সাহায্যে ইলেকট্রনের কক্ষপথের ত্রিমাত্রিক দিক বিন্যাস প্রকরণ সমূহ প্রকাশ করা হয়, তাকে ম্যাগনেটিক কোয়ান্টাম সংখ্যা বা চুম্বকীয় কোয়ান্টাম সংখ্যা বলে। চুম্বকীয় কোয়ান্টাম সংখ্যা, m এর মান - l থেকে + l এর পর্যন্ত পূর্ণসংখ্যা। নন-ডিজেনারেট অবস্থায় অরবিটালসমূহ সমশক্তির, তবে চৌম্বকক্ষেত্রে রাখলে শক্তির পার্থক্য তৈরি হয়। আর বলা বাহুল্য, z অক্ষ বরাবর অরবিটাল, যেমন pz, dz² এর বেলায় m=0
s p d f অরবিটাল গুলোর জন্য চৌম্বকীয় কোয়ান্টাম সংখ্যাগুলোর লিখিত আকার হলো:
s অরবিটালে কেবল 1টি মাত্র ত্রিমাত্রিক বিন্যাস সম্ভব।
p অরবিটালের জন্য Px Py Pz ( অর্থাৎ সমশক্তি সম্পন্ন 3টি অরবিটাল আছে)
l= 2 হলে, m এর মান (2×2+1)=5,
অর্থাৎ d অরবিটাল।
l= 1 হলে, m এর মান (2×1+1)=3,
অর্থাৎ p অরবিটাল।
৪. ঘূর্ণন কোয়ান্টাম সংখ্যা (s) [Spin quantum number]
নিজস্ব অক্ষের চারদিকে ইলেকট্রনের ঘুর্ণনের দিক প্রকাশক কোয়ান্টাম সংখ্যা সমূহকে স্পিন কোয়ান্টাম সংখ্যা বা ঘূর্ণন কোয়ান্টাম সংখ্যা বলে। এই কোয়ান্টাম সংখ্যা, s, ফার্মিয়ন কণার বেলায় তা ±½ এর গুণিতক। ইলেক্ট্রনের বেলায় তা ½। +½ ও -½ এর মধ্যে যেকোনো একটিকে ঘড়ির কাটার দিকে ঘূর্ণায়মান ও অপরটি ঘড়ির কাটার বিপরীত অভিমুখে ঘূর্ণায়মান । এটিকে upspin ও downspin electrons ও বলা হয়।
সংক্ষিপ্ত রূপ
কোয়ান্টাম উপস্তরের শক্তিক্রম
অরবিট
বোরের পরমাণুবাদ মতে নিউক্লিয়াসের চারপাশে ইলেকট্রন কতগুলো অনুমোদিত গোলাকার কক্ষপথে/শক্তিস্তরে আবর্তিত হয় । এদের অরবিট বা কক্ষপথ বলে।
প্রতিটি শক্তিস্তরে নির্দিষ্ট সংখ্যক (2n2) ইলেকট্রন থাকে।
কোয়ান্টাম মতবাদের উপর ভিত্তি করেই অরবিটের ধারণা প্রতিষ্ঠিত।
অরবিটাল
পরমাণুর ভেতর যে ত্রিমাত্রিক জায়গা জুড়ে ইলেকট্রনকে পাবার সম্ভাবনা বেশি, তাকে অরবিটাল বা কক্ষক বলা হয় ।
শক্তিস্তরে ইলেক্ট্রন সংখ্যা অনুসারে মৌলিক পদার্থের তালিকা