১৯৪৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর জাপান সাম্রাজ্যের সশস্ত্র বাহিনী মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করলে এশিয়াতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। আত্মসমর্পণের ঘটনাটি ইউরোপে অক্ষ বাহিনীর আত্মসমর্পণের প্রায় চার মাস পরে ঘটে এবং এর মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।
২৮ নভেম্বর, ১৯৪৩
তেহরান সম্মেলন: সোভিয়েত ইউনিয়ন "জার্মানির পরাজয়ের পর" জাপানে আক্রমণ করতে সম্মত এবং দূর প্রাচ্যে সম্পদ মজুদ শুরু করে।
৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৫
ইয়ালটা সম্মেলন: সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানির আত্মসমর্পণের ৩ মাসের মধ্যে জাপানে আক্রমণ করতে রাজি হয়।
৫ এপ্রিল, ১৯৪৫
সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৪১ সালের ১৩ এপ্রিল স্বাক্ষরিত সোভিয়েত–জাপানি নিরপেক্ষতা চুক্তিটির সমালোচনা করে।
২৯ এপ্রিল, ১৯৪৫
রডল্ফো গ্রাজিয়ানির নেতৃত্বাধীন ইতালিয়ান ফ্যাসিস্ট প্রজাতন্ত্রী সেনাবাহিনী "কেসারটার সমর্পণ" -এ আত্মসমর্পণ করে।
৮ মে, ১৯৪৫
জার্মানির আত্মসমর্পণ
১৬ জুলাই, ১৯৪৫
পটসডাম সম্মেলন শুরু।
২৬ জুলাই, ১৯৪৫
পটসডাম ঘোষণা জারি করা হয়, সমস্ত জাপান সশস্ত্র বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়।
৩ আগস্ট, ১৯৪৫
সোভিয়েত জেনারেল ভ্যাসিলেভস্কি স্টালিনকে জানান যে ৭ আগস্ট থেকে সোভিয়েত বাহিনী আক্রমণের জন্য প্রস্তুত।
৬ আগস্ট, ১৯৪৫
কর্নেল পল তিব্বেতস কর্তৃক চালিত এনোলা গে নামের একটি বিশেষ বি-২৯ শক্তিশালী বোমারু বিমান থেকে লিটল বয় নামের একটি ইউ-২৩৫ ধরনের আণবিক বোমা হিরোশিমাতে ফেলা হয়, যুদ্ধে এটিই ছিল প্রথম পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার। (হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা হামলা)
৮ আগস্ট, ১৯৪৫
সোভিয়েত ইউনিয়ন জাপানের বিরুদ্ধে সোভিয়েত–জাপানি নিরপেক্ষতা চুক্তি ভেঙ্গে যুদ্ধের ঘোষণা দেয়।
৯ আগস্ট, ১৯৪৫
ফ্যাট ম্যান নামে দ্বিতীয় এবং আরও শক্তিশালী প্লুটোনিয়াম ইমপ্লোশন পারমাণবিক বোমা বক্সকার নামের অন্য একটি সিলভারপ্লেট বি-২৯ বোমারু বিমান থেকে নাগাসাকির উপর ফেলা হয়, বিমানটির পাইলট ছিল মেজর চার্লস সুইনি (নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলা)
সোভিয়েত সেনাবাহিনী মাঞ্চুরিয়ায় সোভিয়েত আক্রমণ চালায়।
১০ আগস্ট, ১৯৪৫
কোরিয়ায় সোভিয়েত এবং মার্কিন দখল অঞ্চলের মধ্যে বিভাজন হিসাবে ৩৮তম সমান্তরাল রেখা নির্ধারণ করা হয়।
১৪ আগস্ট, ১৯৪৫
পটসডাম ঘোষণা গ্রহণ করার বিষয়ে সম্রাট হিরোহিতোর ডিক্রী রেডিওর মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়।
জেনারেল ডগলাস ম্যাকআর্থার জাপানে দখলদার বাহিনীর প্রধান হিসাবে নিযুক্ত হন।
১৬ আগস্ট, ১৯৪৫
ফিলিপাইনে তাঁর অধীনস্থ মার্কিন বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর ১৯৪২ সালের ৬ মে থেকে যুদ্ধ বন্দী থাকা জেনারেল জোনাথন ওয়াইনরাইটকে মাঞ্চুরিয়ার একটি যুদ্ধ বন্দী ক্যাম্প থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
১৭ আগস্ট, ১৯৪৫
জাপানি আইজিএইচকিউ মাঞ্চুরিয়ায় আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে।
জেনারেল ম্যাকআর্থার সাধারণ আদেশ নম্বর ১ ঘোষণা করে।
১৮ আগস্ট, ১৯৪৫
সোভিয়েত আর্মি দক্ষিণ সাখালিন দ্বীপে কারাফুটো আক্রমণ করে।
উত্তর কোরিয়ায় সোভিয়েত উভচর অবতরণ শুরু হয়।
জাপানের পাইলটরা জাপানের উপর আলোকচিত্রের মাধ্যমে প্রাথমিক নিরীক্ষণ মিশনে আগত ৩১২তম বোমা গ্রুপের ৩৮৬তম বোমা স্কোয়াড্রনের দুটি কনসোলিডেটেড বি-৩২ ডোমিনেটরকে আক্রমণ করে। বি-৩২ হোবো কুইন দুই এর ফটোগ্রাফারের সহকারী ১৯ বছর বয়সী সার্জেন্ট অ্যান্টনি মার্চিয়োন আক্রমণে মারাত্মকভাবে আহত হন। মার্চিয়োন হলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিমান যুদ্ধে নিহত সর্বশেষ আমেরিকান।[১]
শুমশুর উপর উভচর অবতরন দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের কুরিল দ্বীপপুঞ্জে আক্রমণ শুরু হয়।[২]
১৯ আগস্ট, ১৯৪৫
কুয়ানটুং আর্মি সদর দফতর মাঞ্চুরিয়ায় জাপানি সেনাদের আত্মসমর্পণ করার জন্য আদেশ প্রেরণ করে।
২৩ আগস্ট, ১৯৪৫
শুমশুতে শেষ জাপানি সেনারা সোভিয়েত বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।[৩]
২৫ আগস্ট, ১৯৪৫
কারাফুটো (দক্ষিণ সাখালিন দ্বীপ) -এ জাপানিদের আত্মসমর্পণ।
২৭ আগস্ট, ১৯৪৫
বি-২৯ চীনে অবস্থিত মিত্রবাহিনীর যুদ্ধ বন্দী শিবিরগুলিতে সরবরাহ ফেলে।
২৯ আগস্ট, ১৯৪৫
সোভিয়েতরা একটি বি-২৯ শক্তিশালী বোমারু বিমান কোরিয়ায় যুদ্ধ বন্দি শিবিরগুলোতে সরবরাহ ফেলার সময় গুলি করে ভূপাতিত করে।
মিত্রশক্তির পক্ষে সুপ্রিম কমান্ডার কর্তৃক জাপান দখল শুরু করতে মার্কিন সেনা টোকিওর কাছে অবতরণ করে।
৩০ আগস্ট, ১৯৪৫
যুক্তরাজ্য পুনরায় হংকং দখল করে।
২ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫
টোকিও উপসাগরে ইউএসএস মিসৌরিতে আনুষ্ঠানিক জাপানি আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান; মার্কিন রাষ্ট্রপতি হ্যারি এস. ট্রুমান ভিজে ডে ঘোষণা করলেন।
পেনাং-এ জাপানি গ্যারিসন আত্মসমর্পণ করে, ব্রিটিশরা অপারেশন জুরিস্টের অধীনে পেনাং পুনরাধিকার করে।
৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫
ফিলিপাইনে জাপানি সেনাপতি জেনারেল ইয়ামাশিতা বাগুইওতে জেনারেল ওয়াইনরাইটের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫
ওয়েক দ্বীপে জাপানি সেনারা আত্মসমর্পণ করে।
৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫
ব্রিটিশদের সিঙ্গাপুরে অবতরণ।
সোভিয়েতরা কুরিল দ্বীপপুঞ্জের দখল সম্পূর্ণ করে।[৪]
৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫
রাবাউলে জাপানী বাহিনী আত্মসমর্পণ করে।
৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫
ম্যাকআর্থার টোকিও প্রবেশ করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৩৮তম সমান্তরালের দক্ষিণে কোরিয়া দখল করতে ইনছনে অবতরণ করে
৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫
চীনে অবশিষ্ট জাপানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে।
কোরিয় উপদ্বীপে অবশিষ্ট জাপানী বাহিনী আত্মসমর্পণ করে।
১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫
জাপানিরা লবুয়ানে আত্মসমর্পণ করে।
১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫
জাপানিরা সারাওয়াকে আত্মসমর্পণ করে।
১২ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫
সিঙ্গাপুরে জাপানিরা আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে।
১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫
বার্মায় জাপানিরা আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে।
১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫
জাপানিরা সুলাওসিতে আত্মসমর্পণ করে।
১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫
হংকংয়ে জাপানিরা আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে।
২৫ অক্টোবর, ১৯৪৫
তাইওয়ানে জাপানিরা জেনারেলিসিমো চিয়াং কাই-শেকের কাছে সাধারণ আদেশ নম্বর ১ এর অংশ হিসাবে আত্মসমর্পণ করে, যা পরে তাইওয়ানকে অস্পষ্ট এবং অমীমাংসিত রাজনৈতিক অবস্থানের দিকে পরিচালিত করে।
১৯৪৫ সালে সেরি থাইয়ের সহায়তায় জাপানের পরাজয়ের পরে ব্রিটিশ ও ফরাসিরা থাইল্যান্ডকে পরাভূত দেশ হিসাবে বিবেচনা করেছিল, যদিও আমেরিকার সমর্থনের ফলে মিত্রশক্তির শর্ত হ্রাস করা হয়। থাইল্যান্ড মিত্রদের দখলে ছিল না, তবে পুনরায় অর্জন করা অঞ্চল ব্রিটিশ এবং ফরাসিদের কাছে ফেরৎ দিতে বাধ্য করা হয়। যুদ্ধোত্তর যুগে থাইল্যান্ডের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ছিল যাকে তারা প্রতিবেশী দেশগুলিতে কমিউনিস্ট বিপ্লবের হাত থেকে রক্ষাকারী দেশ হিসাবে দেখেছিল।[৫]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে মিত্রশক্তি জাপান দখল করে, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, নিউজিল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যও এত অবদান রাখে। এই বৈদেশিক উপস্থিতি জাপানের ইতিহাসে প্রথম বারের মতো দ্বীপরাষ্ট্রটি কোনও বিদেশী শক্তি দ্বারা দখলকৃত হয়।[৬] ১৯৫১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত সান ফ্রান্সিসকো শান্তি চুক্তির ফলে মিত্রশক্তির দখলের সমাপ্তি ঘটে এবং ২৮ এপ্রিল, ১৯৫২ সালে চুক্তিটি কার্যকর হওয়ার পর জাপান আবার স্বাধীন দেশে পরিনত হয়।
দখলের সময় যারা যুদ্ধ শুরু করা এবং যুদ্ধ চালানোর যৌথ চক্রান্তে অংশ নিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে প্রধান জাপানী যুদ্ধাপরাধের অভিযোগসমূহ আনা হয়েছিল, এটি "শ্রেণি এ" (শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ) বলে অভিহিত হয় এবং সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল; যারা "প্রচলিত" নৃশংসতা বা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদের জন্য "শ্রেণি বি" অপরাধ আনা হয়; "পরিকল্পনা, আদেশ, অনুমোদন বা কমান্ড কাঠামোর উচ্চ স্তরে এই ধরনের লঙ্ঘন প্রতিরোধ করতে ব্যর্থতার " জন্য "শ্রেণি সি" অপরাধ সংরক্ষিত ছিল।
আটাশজন জাপানি সামরিক ও রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে শ্রেণি এ অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল এবং ৫,৭০০ জনেরও বেশি জাপানি নাগরিককে শ্রেণি বি এবং সি অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছিল, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বন্দীদের উপর নির্যাতন করা হয়। চীন নিজস্ব ১৩ টি ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল, যার ফলশ্রুতিতে ৫০৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং ১৪৯ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
জাপানী সম্রাট হিরোহিতো এবং যুবরাজ আসাকার মতো রাজ পরিবারের সমস্ত সদস্যের বিরুদ্ধে এই তিন বিভাগের অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা করা হয়নি। হারবার্ট বিক্স ব্যাখ্যা করেন যে "ট্রুমান প্রশাসন এবং জেনারেল ম্যাক আর্থার দু'জনেরই বিশ্বাস ছিল যে যদি তারা হিরোহিতোকে তাদের পরিবর্তনগুলিকে বৈধতা দিতে ব্যবহার করে তাহলে দখল সংস্কারগুলি সুষ্ঠুভাবে কার্যকর করা যাবে।"[৭] ১৯৪৭ এবং ১৯৪৮ সালের বিচারে পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রী হওয়া নবুসুকে কিশি এবং জাইবাৎসু নিসান গ্রুপের প্রধান এবং চুসিরেনের (ছোট ও মাঝারি আকারের জাপানি সংস্থার প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা) ভবিষ্যতের নেতা ইয়ুশিসুকে আইকাওয়ার মতো ৫০ জন সন্দেহভাজনকে অভিযুক্ত করা হলেও মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা জীবিত বন্দীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে শিরো ইশী খালাস পায়। সকল অভিযুক্ত ব্যক্তিকে খালাস দেওয়ার পক্ষে একমাত্র বিচারপতি ছিলেন ভারতীয় আইনবিদ রাধাবিনোদ পাল।
ট্রাইব্যুনাল ১৯৪৮ সালের ১২ নভেম্বর মুলতুবী করা হয়।
এই নিবন্ধটি বাংলা ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় লেখা হয়েছে। নিবন্ধটি যদি ঐ নির্দিষ্ট ভাষা ব্যবহারকারীদের উদ্দেশ্যে লেখা হয়ে থাকে তবে, অনুগ্রহ করে নিবন্ধটি ঐ নির্দিষ্ট ভাষার উইকিপিডিয়াতে তৈরি করুন। অন্যান্য ভাষার উইকিপিডিয়ার তালিকা দেখুন এখানে।