এডউইন লয়েড সেন্ট হিল (ইংরেজি: Edwin St Hill; জন্ম: ৯ মার্চ, ১৯০৪ - মৃত্যু: ২১ মে, ১৯৫৭) ত্রিনিদাদের পোর্ট অব স্পেন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৩০ সালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে ত্রিনিদাদ ও টোবাগো দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন এডউইন সেন্ট হিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ইংল্যান্ডে প্রত্যাবর্তনের পূর্বে ডানকির্ক পরিত্যাগে অংশ নেন। এরপর পুনরায় লীগে খেলোয়াড়ী জীবন চালিয়ে যান। এ পর্যায়ে অনেকগুলো যুদ্ধকালীন অর্থ সংগ্রহের খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।
শৈশবকাল
১৯০৪ সালে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর পোর্ট অব স্পেনে এডউইন সেন্ট হিলের জন্ম।[১]সি. এল. আর. জেমসের তথ্য মোতাবেক জানা যায় যে, তার পরিবার নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ছিল।[২] তার দুই ভাই সিল সেন্ট হিল ও উইল্টন সেন্ট হিল ত্রিনিদাদের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। তন্মধ্যে, উইল্টন ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে টেস্ট খেলেছেন।[৩][৪][৫] স্থানীয় ক্রিকেট ক্লাবে এডউইন সেন্ট হিল খেলেন। কিছুটা সফলতা লাভের পর ত্রিনিদাদ ও টোবাগো দলের পক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন।
ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর প্রধান ক্রিকেট প্রতিযোগিতা বোনাজা কাপে প্রথম খেলতে নামেন সেন্ট হিল। ১৯২২ সালে ডারবান ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। ক্রিকেটবোদ্ধারা তার মাঝে প্রতিশ্রুতিশীলতার স্বাক্ষর দেখতে পেলেও খুব কমই সফলতা লাভ করেছিলেন। পরের বছর শ্যানন দলের পক্ষে খেলার জন্যে দল ত্যাগ করেন।[৬] এক সময় ত্রিনিদাদ ও টোবাগোয় সম্প্রদায়ের মাধ্যমে ক্রিকেট খেলা বিভাজিত ছিল।[৭] দ্বীপটিতে ক্রিকেট ক্লাবগুলোয় খেলোয়াড়দের চামড়ার রঙ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।[৭] সেন্ট হিল কৃষ্ণাঙ্গ নিম্ন-মধ্যবিত্ত খেলোয়াড় বিশেষতঃ শিক্ষক কিংবা কেরাণীদের নিয়ে গঠিত শ্যানন দলের পক্ষে খেলেন।[৮] আরেকটি ক্লাব ম্যাপলে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সাথে জড়িত উজ্জ্বল রঙের চামড়াধারীদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
শ্যানন দলের সাথে সেন্ট হিলের ক্রমবর্ধমান সফলতা লাভের বিষয়টি আঞ্চলিক দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়। ১৯২৪ সালে ত্রিনিদাদ ও টোবাগো দলের সাথে যুক্ত হন।[৬] ১৯২৩-২৪ মৌসুম থেকে ১৯৩০-৩১ মৌসুম পর্যন্ত এডউইন সেন্ট হিলের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। পরবর্তী পাঁচ বছর নিয়মিতভাবে খেললেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোন প্রতিনিধিত্বকারী দলের পক্ষে খেলার জন্যে তাকে উপযোগী ঘোষণা করা হয়নি। উত্তরোত্তর সাফল্যের প্রেক্ষিতে ১৯২৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হন।
১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৪ তারিখে আন্তঃঔপনিবেশিক প্রতিযোগিতায় ব্রিটিশ গায়ানা দলের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। শ্যাননের দলীয় সঙ্গী লিয়ারি কনস্ট্যান্টাইনের সাথে বোলিং উদ্বোধন করতে নামেন ও খেলায় ছয় উইকেট লাভ করেছিলেন।[৮][৯] পরের খেলাটি ঐ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলা ছিল। বার্বাডোসের বিপক্ষে খেলায় পাঁচ উইকেট পেলেও তার দল পরাজয়বরণ করে।[১০] পরবর্তী পাঁচ বছর ত্রিনিদাদ ও টোবাগো দলের পক্ষে নিয়মিতভাবে খেলতেন। এছাড়াও, শ্যানন দলের পক্ষে সফলতার সাথে বোলিং কর্মে অগ্রসর হতেন।[৬] ব্রিটিশ গায়ানার বিপক্ষে ইনিংসে ৪/৯৯ লাভ করেন। তবে, ১৯২৯-৩০ মৌসুমের পূর্ব-পর্যন্ত কোন ইনিংসেই তিনের অধিক উইকেট লাভ করতে পারেননি। নিজস্ব দ্বিতীয় খেলায় ৩৫ রান তোলার পর কোন ইনিংসেই ২০ রানের কোটা অতিক্রম করতে ব্যর্থ হন।
১৯২৬ সালে সফররত মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) বিপক্ষে দুই খেলায় অংশ নেন। ঐ দুটো খেলা বাদে সবগুলো খেলাই ত্রিনিদাদ ও টোবাগো দলের সদস্যরূপে আন্তঃঔপনিবেশিক প্রতিযোগিতায় খেলেছিলেন।[১০] ১৯২৬ সালে এমসিসি’র বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতিনিধিত্বকারী দলের সদস্যরূপে তাকে রাখা হয়নি। দল নির্বাচনে তাকে পাশ কাটিয়ে বেশ কয়েকজন বোলারকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
অক্টোবর, ১৯২৯ সালে সেন্ট হিল তার ব্যক্তিগত সেরা প্রথম-শ্রেণীর বোলিং পরিসংখ্যান ৬/১১৯ পান। আন্তঃঔপনিবেশিক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় ব্রিটিশ গায়ানার বিপক্ষে এ সাফল্য পান। দ্বিতীয় ইনিংসে আরও চার উইকেট নিয়ে খেলায় দশ উইকেট লাভ করেন। এছাড়াও, ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৭ রান করেছিলেন। ব্যাট ও বল হাতে দূর্দান্ত সফলতা লাভ করা সত্ত্বেও তার দল পরাজিত হয়।[১০] পরের মাসে ত্রিনিদাদ স্পোর্টিং ক্রোনিকল মন্তব্য করে যে, দ্বিতীয়সারির খেলোয়াড়দের মধ্যে তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে অন্তর্ভুক্তির কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছেন।[১১]
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে দুইটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন এডউইন সেন্ট হিল। ১১ জানুয়ারি, ১৯৩০ তারিখে ব্রিজটাউনে সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। এরপর, ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩০ তারিখে একই দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।
১৯২৮ সালের দল গঠনে যাচাই-বাছাইয়ের কোন খেলায় তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।[৬] ঐ বছরে ইংল্যান্ড গমনার্থে উইল্টনসহ দল গঠন করা হয় ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেয়ার গৌরব অর্জন করেন।[১২] তাসত্ত্বেও, জুন থেকে আগস্ট, ১৯২৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশের সদস্যরূপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গমন করেন। মূলতঃ প্রবাসী ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের নিয়ে গড়া দলের বিপক্ষে খেলেছিলেন তিনি।[১০] এ সফরে অত্যন্ত সফল ছিলেন তিনি। খুব কম গড়ে ১০০ উইকেটের সন্ধান পান।[৬]
১৯৩০ সালে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমন করে। দলটি চারটি টেস্টে অংশ নেয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে এটিই প্রথম টেস্ট খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এমসিসি দলটি পরিপূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক শক্তিমত্তার অধিকারী ছিল না। দলটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নবীন ও প্রবীণ খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠন করা হয়েছিল।[১৩] বেশ কয়েকজন ইংরেজ তারকা বোলারের অনুপস্থিত লক্ষ্য করা যায়।[এ ১][১৪]
১৯৩০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুইটি টেস্টে অংশগ্রহণ করেন। বার্বাডোসে প্রথম টেস্ট অনুষ্ঠিত হয় ও সেন্ট হিল খেলার জন্যে নির্বাচিত হন। ১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩০ তারিখে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে টেস্টে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয় তার। ব্যাট হাতে ০ ও ১২ রান তুলেন। প্রথম ইনিংসে বল হাতে নিয়ে ৩৫ ওভারে ২/১১০ ও দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেট শূন্য অবস্থায় মাঠ ছাড়েন। ঐ টেস্টটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল।[১৫] এরপর, এমসিসি দল ত্রিনিদাদ ও টোবাগো গমন করে। সেখানে দলটি দুইটি খেলায় অংশ নেয়।[১৬] প্রথমটিতে চার উইকেট পান।[১০] কিন্তু, দ্বিতীয়টিতে তাকে বিশ্রাম দেয়া হয়। সবিশেষ সফল না হলেও তিনি একাগ্রচিত্তে বোলিং করতেন।
অস্ট্রেলিয়া গমন
১৯৩০-৩১ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া গমনার্থে তাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রথম-শ্রেণীর খেলাগুলোয় বেশ সফল হন। কিন্তু, দলে একই মানের আরও ফাস্ট বোলারের প্রাচুর্যতা থাকায় তাকে কোন টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়নি।
১৯৩০-৩১ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। পাঁচ টেস্ট নিয়ে গড়া ঐ সিরিজে সফরকারী দলটি ৪-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়।[১৭] এ সফরে তিনি সাতটি খেলায় অংশ নেন। তন্মধ্যে, চারটি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলা হলেও কোনটিই টেস্ট ছিল না। তাসমানিয়ার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৪/৫৭ ও ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে খেলায় ছয় উইকেট পান।[১০] ২৯.৮১ গড়ে সর্বমোট ১৬ উইকেট সংগ্রহ করেছিলেন এডউইন সেন্ট হিল।[১৮] ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর স্পোর্টিং ক্রোনিকল এ সফরের মুদ্রিত সংস্করণে উল্লেখ করে যে, তিনি তার সীমিত সুযোগ নিয়ে বেশ ভালো বোলিং করেন। তবে, অপর তিনজন ফাস্ট বোলারের সফলতা ও খেলার ছন্দের সাথে তিনি পেড়ে উঠেননি। ফলশ্রুতিতে, টেস্ট দল কিংবা নিজেকে পরিচিতি ঘটানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসে।[১৯] এ সফরের পর এডউইন সেন্ট হিলকে আর কোন প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় অংশ নিতে দেখা যায়নি।[১০] সবমিলিয়ে ১৭ খেলায় ১১.৯১ গড়ে ২৭৪ রান ও ২৮.৬২ গড়ে ৬৪ উইকেট লাভ করেন।[১]
ল্যাঙ্কাশায়ার লীগে অংশগ্রহণ
ঐ সফর শেষ হলে ইংল্যান্ডের পেশাদার ল্যাঙ্কাশায়ার লীগেলোয়ারহাউজ দলের পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন। ঐ ক্লাবে অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতে থাকেন। ১৯৩১ থেকে ১৯৩৩ সালে তিন মৌসুমে তুলনামূলকভাবে ব্যাট ও বল হাতে নিয়ে বেশ ভালো খেলেন। এরপর তিনি বেশ কয়েকটি লীগে পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে অংশ নেন। তন্মধ্যে, হাডার্সফিল্ড ও ব্রাডফোর্ড লীগ অন্যতম।
আগস্ট, ১৯৩০ সালে ইংল্যান্ডভিত্তিক ল্যাঙ্কাশায়ার লীগে পেশাদারী পর্যায়ের ক্রিকেটে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে চুক্তিতে আবদ্ধ হন। এরফলে, শ্যানন কিংবা ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর পক্ষে ক্রিকেট খেলার সম্ভাবনা অনেকাংশেই তিরোহিত হয়ে যায়।[২০][২১] এছাড়াও, ঐ সময়ে প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুসারে পেশাদার ক্রিকেটারদেরকে খেলার উপযুক্ত হিসেবে গণ্য করা হতো না।[২২] ফলশ্রুতিতে, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অংশগ্রহণকৃত প্রথম-শ্রেণীর খেলাগুলোই তার খেলোয়াড়ী জীবনের সর্বশেষ খেলা হিসেবে পরিগণিত হয়।[১০] বোনাজা কাপে আট মৌসুম খেলেন। এ পর্যায়ে, ৯.৪২ গড়ে ২২৪ উইকেট লাভ করেন। তন্মধ্যে, ১৯২৪ ও ১৯২৯ সালের প্রতিযোগিতায় বোলিং গড়ে শীর্ষ স্থানে আরোহণ করেন।[৬]
১৯৩১ সালে ল্যাঙ্কাশায়ার লীগের ক্লাব ক্রিকেটে লোয়ারহাউজ দল পয়েন্ট তালিকার সর্বনিম্ন স্থানে অবস্থান করে। সেন্ট হিল পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে চুক্তিতে আবদ্ধ হন। তিনজন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান খেলোয়াড়ের অন্যতম হিসেবে ইংল্যান্ডের পেশাদারী লীগ ক্রিকেটে অংশ নেন। বাদ-বাকীরা হচ্ছেন - লিয়ারি কনস্ট্যান্টাইন ও জর্জ ফ্রান্সিস।[২০][২৩] মৌসুমের শুরুতে তাকে স্বাগতঃ জানানোয় দর্শকদেরকে জনসমক্ষে ধন্যবাদজ্ঞাপন করেন।[২৪]
১৯৩১ সালে লোয়ারহাউজ যুগ্মভাবে চতুর্থ স্থান দখল করে। ১৯০৮ সালের পর এটিই দলের সেরা সাফল্য ছিল। এ মৌসুমের পর্যালোচনান্তে বার্নলি নিউজ মন্তব্য করে যে, দলের উত্থানে সেন্ট হিলের ভূমিকা প্রশংসনীয় ছিল। নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি বল হাতে নিয়েও দারুণ সাফল্য পেয়েছেন। ১৪.৪০ গড়ে ২৮৮ রান করেন। সর্বোচ্চ করেন ৪৬ রান। এরফলে, ব্যাটিং গড়ে ক্লাবের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন। বল হাতে নিয়ে ১২.২০ গড়ে ৬৮ উইকেট পান। তন্মধ্যে, ৪৬টি উইকেট পান বোল্ড করে।[২৫] পরের মৌসুমে সেন্ট হিলের স্ত্রী লোয়ারহাউজে যোগ দেন।[২৬] মৌসুম শেষে বার্নলি এক্সপ্রেসে মন্তব্য করা হয় যে, তার ব্যাটিংয়ের ক্রমশঃ উত্তরণ ঘটেছে ও তার সক্ষমতা নিয়ে দর্শকদেরকে বিস্মিত করে চলেছেন। বেশ কয়েকটি বড় ধরনের ইনিংস খেলেন। সর্বোচ্চ করেন ৮৫ রান। ক্রিকেটের দৃষ্টিনন্দন খেলা উপহার দিয়ে রানগুলো সংগ্রহ করেন। ব্যাটিং ও বোলিং গড়ে ক্লাবের শীর্ষস্থান অধিকার করেন। ২০.৭৩ গড়ে ৪৭৭ রান ও ১৩.৮৭ গড়ে ৭৭ উইকেট পান তিনি। তবে, প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, তার বোলিংয়ে ধারাবাহিকতা ছিল না। তাসত্ত্বেও, চমৎকার গড় নিয়ে মৌসুম শেষ করা বিস্ময়ের কারণ হয়ে দাঁড়ান।[২৭] এছাড়াও, তার এ পরিসংখ্যান ল্যাঙ্কাশায়ার লীগে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় পেশাদার ক্রিকেটারদের সাথে তুলনায় চলে আসে।[২৮] লীগে ক্লাবের অবস্থান নিচেরদিকে চলে যায় ও যৌথভাবে পঞ্চম স্থান দখল করে।[২৭]
১৯৩৩ সালে সেন্ট হিলের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ক্লাবে তিনি কম সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। লোয়ারহাউজ দল একাদশ অবস্থানে পৌঁছে। আবারও তিনি ব্যাটিং ও বোলিং গড়ে শীর্ষে আরোহণ করেন। ব্যাটিং গড় বৃদ্ধি পেয়ে ২৮.৬৬ হয় ও ৬০২ রান তুলেন। তন্মধ্যে, একটি সেঞ্চুরির সন্ধান পেয়েছিলেন তিনি। বার্নলি এক্সপ্রেসের মতে, কয়েকটি দর্শনীয় ব্যাটিং প্রদর্শন করেছিলেন তিনি।[২৯] বল হাতে কম সফল হয়েছিলেন। ১৮.৮২ গড়ে ৫৬ উইকেট লাভ করেন।[২৯] এ পর্যায়ে হাডার্সফিল্ড লীগে স্লেইদওয়েট ক্রিকেট ক্লাবে খেলার জন্যে নতুন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। লোয়ারহাউজে থাকাকালে সকলের সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন।
এ মৌসুম শেষে শীতকালে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোয় প্রত্যাবর্তন করেন।[৩০] খেলোয়াড়ী জীবনের এ পর্যায়ে এসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের গণমাধ্যমে তার উন্নতির কথা তুলে ধরলেও টেস্ট খেলার ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দীহান ছিলেন। লীগ ক্রিকেটে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানকে টেস্ট দলের সদস্য করা হয় কিংবা নির্বাচনের দাবীদার করা হয়।[৩১]
দলে প্রত্যাখ্যান
হাডার্সফিল্ড লীগে স্লেইদওয়েট দল মাঝারিমানের ক্লাব হিসেবে বিবেচিত ছিল। ক্রিকেট খেলার মান ল্যাঙ্কাশায়ার লীগের ন্যায় অনুরূপ ছিল না।[৩২] স্লেইদওয়েটে মাত্র এক মৌসুম সেন্ট হিল অতিবাহিত করেন। ঐ মৌসুম শেষে তার সাথে চুক্তি নবায়ণ করা হয়নি। তাসত্ত্বেও, ক্লাব কর্তৃপক্ষ তাকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের খেলার জন্যে মনোনীত করে। এ পর্যায়ে স্লেইদওয়েট লিয়ারি কনস্ট্যান্টাইনের নেতৃত্বাধীন দলের সাথে খেলতে আগ্রহী।[৩৩] ঐ মৌসুমে সেন্ট হিল হাডার্সফিল্ড লীগের প্রতিনিধিত্বকারী দলের সদস্যরূপে ব্রাডফোর্ড লীগের বিপক্ষে খেলে।[৩৪]
এরপর ব্রাডফোর্ড লীগে খেলেন। প্রথমে ইস্ট ব্রায়ার্লি ক্রিকেট ক্লাব ও পরে ১৯৩৭ সালে স্পেন ভিক্টোরিয়ার পক্ষে চুক্তিতে আবদ্ধ হন। ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত দলটিতে খেলেন।[৩৫] ব্যক্তিগতভাবে স্পেন ভিক্টোরিয়ার সদস্যরূপে সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৩৯ সালে প্রথম বোলার হিসেবে ৫০ উইকেট লাভের ন্যায় মাইলফলক স্পর্শ করেন। তবে, ঐ সময়ে ব্রাডফোর্ড লীগ জনপ্রিয়তা ও খেলার মানদণ্ডে ব্যর্থ ছিল।[৩৬]
১৯৪০ সালে খেলতে পারেননি। সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন ও ডানকির্ক অভিযানে অংশ নেন।[৩৭] তাকে বাদ দেয়ার পরের মৌসুমেই খেলার জগতে ফিরে আসেন।[৩৮] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পূর্ব-পর্যন্ত ব্রাডফোর্ড লীগে অবস্থান করেন।[৩৯] এছাড়াও, বেশ কয়েকটি যুদ্ধকালীন অর্থ সংগ্রহের খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।[১০][৪০] অনেকগুলোই যুদ্ধকালীন সময়ে ইংল্যান্ডে বসবাসকারী বা কাজে নিয়োজিত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের নিয়ে গঠিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ ছিল।[৪১]
১৯৪৭ সালে স্লেইদওয়েটে ফিরে যান। ঐ সময়ে দলটিতে সংরক্ষিত পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে ছিলেন।[৪২] ১৯৪৮ সালে বোল্টন ক্রিকেট লীগে কিয়ার্সলি ক্রিকেট ক্লাবে পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে অংশ নেন। শেষের বছরগুলো ক্রিকেটার জ্যাক বন্ড সেন্ট হিলকে ক্লাবের অত্যন্ত কার্যকর কোচ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এ ক্লাবে বন্ড তার শুরুরদিকের খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছিলেন।[৪৩] ১৯৫১ সাল পর্যন্ত লীগ ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন এডউইন সেন্ট হিল।[৪৪]
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন তিনি। ২১ মে, ১৯৫৭ তারিখে ৫৩ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার এলাকায় এডউইন সেন্ট হিলের দেহাবসান ঘটে।[১]
পাদটীকা
↑On most MCC tours of the lesser Test playing countries, leading players often chose not to tour, opting to rest at home. The side was usually competitive enough without them, and only on the more taxing tour of Australia was a fully representative team selected.
Barker, Tony (২০০৯)। Cricket's Wartime Sanctuary: The First-Class Flight to Bradford। Cardiff: Association of Cricket Statisticians and Historians। আইএসবিএন978-1-905138-74-6।