মানুষের বিবিধ যৌনাচার অনুমোদনযোগ্য কিনা তা দুটি প্রপঞ্চের ওপর নির্ভর করে। প্রথমত: যৌনাচারের মূল উদ্দেশ্য বংশবৃদ্ধি এবং দ্বিতীয়ত: নারী ও পুরুষ কেবল রীতিসিদ্ধ উপায়ে বিয়ের মাধ্যমে যৌনাচারের প্রাধিকার অর্জন করে। ইসলামে যৌনতা বিষয়ক নিয়মাবলি ইসলামি প্রধান ধর্মগ্রন্থ কুরআন, ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সঃ)-এর বাণী ও কর্ম যা হাদীস নামে পরিচিত, ইসলামিক নেতৃবৃন্দ কর্তৃক প্রদত্ত ফতোয়া প্রভৃতিতে ব্যাপক ও বিস্তারিত ভাবে বলা হয়েছে, যা নারী ও পুরুষের মাঝে নিয়মতান্ত্রিক যৌন সম্পর্কের মধ্যে সীমিত।[৯]। যদিও অধিকাংশ ঐতিহ্য সন্ন্যাসদশা ও কৌমার্যকে নিরুৎসাহিত করে থাকে[১১], তবু সকল ঐতিহ্যেই লিঙ্গসমূহের মধ্যে যে কোন সম্পর্কের ক্ষেত্রে কঠোর সতীত্ব ও শালীনতাকে উৎসাহিত করে, যা এই বিষয়টিকে তুলে ধরে যে, তাদের ইসলাম স্বীকৃত জৈবিক সম্পর্ক জীবনের জন্য একটি পরিবেষ্টনীস্বরূপ এবং যৌন কর্মকাণ্ড থেকেও অনেক বিস্তৃত, যা বিবাহের জন্য ব্যাপকভাবে সংরক্ষিত। বিবাহের বাইরে লিঙ্গ পার্থক্যকরণ ও শালীনতার এই চেতনা ইসলামের বর্তমান পরিচিত বৈশিষ্ট্যের মাঝে দেখতে পাওয়া যায়, যেমন ইসলামি পোশাকের ব্যাখ্যা এবং লিঙ্গ বিভাজনের মূল্যবোধসমুহ।
ইসলামে বিবাহবহির্ভূত যৌনতার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রবল এবং বৈবাহিক যৌনতা ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। [৯][১০] ভালোবাসা ও নৈকট্যের মহৎ উপকারিতা হিসেবে কুরআন ও হাদিসে বিবাহ ও উপপত্নীত্ব নামক অনুমোদিত যৌন সম্পর্কসমূহ বিশদভাবে আলোচিত হয়েছে। এমনকি বিয়ের পরেও কিছু নিষেধাজ্ঞা রয়েছেঃ কোন পুরুষ তার স্ত্রীর রজঃস্রাবকালীন সময়ে এবং সন্তানপ্রসবের পর একটি নির্ধারিত সময়কালে তার সাথে সঙ্গম করতে পারবে না। স্ত্রীর পায়ূতে লিঙ্গ প্রবেশকরণ তার জন্য কঠিন পাপ হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রজননশীল ধর্ম হওয়ার খাতিরে, ইসলাম বৈবাহিক যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে বর্ধনশীল বংশবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে। গর্ভপাত (গর্ভবতী নারীর স্বাস্থ্যঝুঁকি ব্যতিরেকে) এবং সমকামিতার মত কর্মকাণ্ড ও আচরণ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য অস্থায়ী গর্ভনিরোধক পদ্ধতি গ্রহণ অনুমোদিত।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর হতে বর্ণিত যিনি বলেন: আমি আল্লাহর রাসুলের কাছ থেকে শুনেছি: “তোমাদের প্রত্যেকেই মেষপালক আর প্রত্যেকেই তার নিজ মেষপালের জন্য দায়ী। একজন শাসকও একজন মেষপালক এবং সেও তার মেষপালের জন্য দায়ী। একজন পুরুষ তার নিজ গৃহের মেষপালক এবং সে তার নিজ পোষ্যর ব্যাপারে দায়িত্ববান। একজন নারী তার স্বামীর গৃহের মেষপালক এবং সে তার নিজ পোষ্যর ব্যাপারে দায়িত্ববান।”
— আল-বুখারি (৮৫৩) ও মুসলিম (১৮২৯)
তিনি দাবি করেন, শিশুদের প্রতি পিতামাতার দায়িত্ব হল তাদের সে সকল জিনিস থেকে নিরাপদ রাখা যা তাদের নৈতিকতায় নেতিবাচক প্রভাব রাখে, এবং তিনি দাবি করেন, যেহেতু কম বয়সে শিশুদেরকে যৌনতা ও সম্পর্কিত বিষয় সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া হলে তা তাদের নেতিবাচক পরিস্থিতির দিকে পরিচালিত করে, মুসলিমদের জন্য বৈধ নয় যে, তারা তাদের শিশুদেরকে কম বয়সে যৌন শিক্ষা গ্রহণে অনুমতি দেবে।[১২][১৩]
মুনাজ্জিদের মতে, ছেলে কিংবা মেয়ে যেই হোক, সকল শিশুকে অতি অল্প বয়স থেকেই আওরাহ বস্ত্রাবৃত করা, দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করা এবং ব্যক্তিগত স্থানে প্রবেশের আগে অনুমতি নেয়ার ইসলামিক আদব শেখানো উচিত, এবং পুনরায় তা শেখানো উচিত বিচারের উপযুক্ত বয়স হওয়ার সময় এবং বয়ঃসন্ধির বয়সে উপনীত হবার পূর্বে। তিনি “কুরআনের আয়াতসমূহে এর প্রমাণ” উল্লেখ করেন যা স্পষ্টভাবে এসকল বিষয় উল্লেখ করেছে, যার মধ্যে নিম্নোক্ত[১২]:
"হে মুমিনগণ! তোমাদের দাসদাসীরা এবং তোমাদের মধ্যে যারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি তারা যেন তিন সময়ে তোমাদের কাছে অনুমতি গ্রহণ করে, ফজরের নামাযের পূর্বে, দুপুরে যখন তোমরা বস্ত্র খুলে রাখ এবং এশার নামাযের পর। এই তিন সময় তোমাদের দেহ খোলার সময়। এ সময়ের পর তোমাদের ও তাদের জন্যে কোন দোষ নেই। তোমাদের একে অপরের কাছে তো যাতায়াত করতেই হয়, এমনি ভাবে আল্লাহ তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ সাক্ষাতের অনুমতি প্রভৃতির বৈধ বৈশিষ্ট্যের প্রমাণ প্রদর্শনকারী কুরআনের আয়াতসমুহ) বিবৃত করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।"
এখানে মহান আল্লাহ মুসলিমদেরকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, তারা যেন তাদের চাকরবাকর ও দাসদাসী, তাদের নাবালেগ শিশুদেরকে তিনটি সময়ে ঘরে প্রবেশের পূর্বে অনুমতি চাওয়া উচিত, ফজর আযানের পূর্বে, কারণ সাধারণত এ সময়ে লোকজন ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে। “আর যখন তোমরা মধ্যাহ্নে (বিশ্রামের সময়) পোশাক খুলে রাখো” হল, দুপুরের নিদ্রা বা মধ্যাহ্নের অল্প সময়ের নিদ্রাকালীন সময়, কারণ এ সময় হয়তো কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর সঙ্গে তার স্ত্রীর সঙ্গে খালি গায়ে অবস্থান করতে পারে। “আর ঈশার নামাজের পর” কারণ এই সময়টি হল ঘুমানর সময়। তাই চাকরবাকর ও শিশুদের শেখানো উচিত যেন এ সময়গুলোতে তারা আকস্মিক গৃহে প্রবেশ না করে, এই আশঙ্কায় যে, এ সময় তারা তাদের স্ত্রীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ অবস্থায় থাকতে পারে, অথবা অন্যান্য (দৃষ্টিকটু বা স্পর্শকাতরভাবে দৃশ্যমান) অবস্থায় থাকতে পারে।
যখন শিশুরা বয়ঃসন্ধিতে উপনীত হওয়ার পর, তাদের উচিত সবসময়ে গৃহে প্রবেশের আগে সর্বদা অনুমতি নেওয়া, যেভাবে কুরআনে উল্লেখিত হয়েছে[১২]:
তোমাদের সন্তান-সন্ততিরা যখন বয়ঃপ্রাপ্ত হয়, তারাও যেন তাদের পূর্ববর্তীদের ন্যায় অনুমতি চায়। এমনিভাবে আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ তোমাদের কাছে বর্ণনা করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
— আন-নুর ২৪:৫৯
মুনাজ্জিদ আরও বলেন হাদিস অনুযায়ী শিশুর বিছানা আলাদা করে দেয়ার জন্য[১২]:
আমর ইবনে শুয়াইবের দ্বারা তার পিতা হতে বর্ণিত, তার দাদা বলেছেনঃ আল্লাহর রাসূল বলেছেনঃ তোমাদের শিশুদেরকে সাত বছর বয়সে নামাজের নির্দেশ দাও, আর দশ বছর বয়স থেকে তাদের প্রহার কর যদি তারা তা না করে, আর তাদেরকে নিজ নিজ বিছানায় আলাদা করে দাও।"
আল-মানাবি ফাতহ-আল কাদির শারহ আল-জামি আস-সাঘিরে বলেছেন: শিশুদের দশ বছর বয়সে ঘুমানোর বিছানা আলাদা করে দেওয়া হল তাদের সম্ভাব্য কামনার বিরুদ্ধে একটি পূর্ব-সাবধানতাস্বরূপ, এমনকি বোনদের ক্ষেত্রেও। আত-তাবি বলেনঃ আল্লাহ (রাসুলের মাধ্যমে) তাদেরকে শৈশবেই নামাজ পড়া ও বিছানায় আলাদা করার-উভয় নির্দেশনা একসঙ্গে উল্লেখ করেছেন এই কারণে যে, যেন তারা শৃঙ্খলা বজায় রাখে এবং আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলে, আর তাদেরকে শিক্ষা দিতে, তাদেরকে মানুষের সাথে সঠিক আদব কীভাবে প্রদর্শন করতে হয় তা দেখাতে, এবং তাদেরকে শেখাতে, কীভাবে অনাস্থাকর পরিস্থিতিতে নিজেদেরকে পাপ হতে বাঁচিয়ে রাখা যায়।
— আউন আল মাবুদ (২/১১৫)
মুনাজ্জিদ দাবি করেন, এই আয়াত হতে প্রাপ্ত উক্ত উপদেশ ও নির্দেশনায়'’ আওরাহ গোপন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা ও সম্ভাব্য কামনা এড়িয়ে চলা, যা আমাদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, দশ বছর থেকে শুরু হয়, যা সেই বয়স যে বয়সে অধিকাংশ শিশু বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন হয়ে ওঠে।[১২].
যখন বয়ঃসন্ধি নিকটবর্তী হয়, তখন শিশুদেরকে বয়ঃসন্ধির লক্ষণ ও নারী-পুরুষ পৃথককারী বৈশিষ্ট্যগুলো শেখানো উচিত, এবং সে সকল নিঃসৃত বস্তুর ধরন শেখানো উচিত যেগুলো ছেলে বা মেয়ে - উভয় লিঙ্গের নির্গমনপথ হতে নিঃসৃত হতে পারে। তাদেরকে আরও শেখান উচিত কীভাবে অজু ও গোসল করতে হয়, তাদেরকে শেখানোর সময় ব্যবহৃত সবগুলোর প্রতি নজর দিতে হবে ও নিশ্চিত করতে হবে যে, শিশুর যা জানা প্রয়োজন সে অনুযায়ীই যেন তাকে এটি শেখানো হয়। মুনাজ্জিদ দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেছেন যা খুব অল্প বয়স থেকেই শুরু করা উচিত - তিন বছরের কাছাকাছি সময়ে - যার সঙ্গে যৌন শিক্ষার একটি মৌলিক যোগসূত্র রয়েছে। এগুলো হল[১২]:
ছেলে ও মেয়েরা যেন ছেলে ও মেয়ের মধ্যে পার্থক্য আলাদা করতে পারে। অল্প বয়স থেকেই ছেলে-মেয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলার প্রবণতা তাদেরকে সমস্যার মুখে ফেলতে পারে অথবা ছেলে বা মেয়ে - উভয় লিঙ্গের ক্ষেত্রে ধারণায়, বৈশিষ্ট্যে ও ক্রিয়ায় ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণে একটি ছেলেকে বুঝতে সাহায্য করা জরুরি যে, তারা তাদের বোনের পোশাক, কানের দুল কিংবা বালা পড়তে পারবে না, কারণ এগুলো মেয়েদের জন্য, ছেলেদের জন্য নয়। একইভাবে, একটি মেয়েকেও একই জিনিসগুলো বলতে হবে তার ভাইয়ের কাজ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে।
শিশুদেরকে শেখানো যে তাদের আওরাহ বা গুপ্তাঙ্গ হল গোপন, এবং তা কারো সামনে উন্মুক্ত করা উচিত নয়। তাদেরকে এটি শেখানো ও এই শিক্ষার সঙ্গে বড় করা হলে, তাদের মাঝে সতীত্ব ও শালীনতার ধারণা গ্রথিত হবে, এবং তা তাদেরকে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে।[১২]
তিনি আরও বলেন, সহবাস বিষয়ক বা দম্পতির মধ্যে সঙ্ঘটিত বিষয়বস্তুর যৌন শিক্ষা তখনই দেয়া উচিত , যখন তাদের তা প্রয়োজন হবে, যেমন যখন তাদের বিয়ের বয়সে উপনীত হয়, অথবা যদি তারা ফিকহের কিছু বিষয় বোঝার মত যথেষ্ট মানসিক যোগ্যতা ও স্থিরতা লাভ করে, যেমন জিনার নীতি, বা এর অনুরূপ কিছু, যার সঙ্গে সহবাস ও আওরাহ জড়িত।
মুনাজ্জিদের সর্বশেষ বক্তব্য, "এই জ্ঞানের ভিত্তি হল মূলত এমন কিছু যা প্রথমত প্রাকৃতিক ও সহজাত, এবং যা তাদেরকে বুঝতে সাহায্য করে এবং তা অবশ্যই তাদেরকে তাদের বয়স বৃদ্ধির ধাপ, ফিকহের অধ্যায়, পাঠচক্র ও শ্রেণী অনুযায়ী ধীরে ধীরে ও ধাপে ধাপে শেখাতে হবে। শব্দ ও বাগধারা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদেকে অবশ্যই রক্ষণশীল হতে হবে, এবং এই বিষয় আলোচনা করার জন্য উপযুক্ত বয়স সম্পর্কে মনযোগী হতে হবে। এবং অবশ্যই তাদেরকে অবিশ্বাসীদের অনৈতিক যৌন চর্চার সম্পর্কে সাবধান করতে হবে এবং সেগুলোর সঙ্গে ইসলামের সৌন্দর্যের পার্থক্য তুলে ধরতে হবে, যা মুসলিমদের পর্দা করতে ও শালীন হতে এবং সতীত্ব রক্ষা করতে এবং হারামকে এড়িয়ে চলতে সাহায্য করে।"[১২]
প্রাপ্তবয়স্ক
মুহাম্মাদের সময়ে, মুসলিম পুরুষ ও নারীগণ নবীকে সকল বিষয়ে প্রশ্ন করতে লজ্জাবোধ করতেন না, এমনকি যৌন জীবনের মত ব্যক্তিগত বিষয়েও, যেন তারা তাদের ধর্মে দেয়া তাদের জন্য নির্ধারিত শিক্ষা ও নিয়মনীতি জানতে পারেন। এ ব্যাপারে মুহাম্মাদের স্ত্রী আয়েশা বলেন, “আনসারি (মদিনার নাগরিক) নারীগণ কতই না আশীর্বাদপুষ্ট, লাজুকতা তাদের ধর্মের জ্ঞান অর্জনের পথে বাঁধা হয়ে দাড়ায় নি।" (তিরমিজি ব্যতীত সিহাহ সিত্তাহর সকল গ্রন্থে)।[১৪][১৫][১৬]
যে পদ্ধতিতে নারীরা নবীকে সরাসরি অথবা নবীর নিজ পত্নীদের মাধ্যমে প্রশ্ন করতেন তাতে প্রমাণ হয় যে, দৈনন্দিন যৌন সমস্যাগুলো অসামাজিক বিষয় ছিল না, বরং পূর্ণ জ্ঞাত ও সম্মানিত বিষয় ছিল। নবী শিখিয়েছেন, "লজ্জা ঈমানের অঙ্গ”, কিন্তু সাথে তিনি আরও শিখিয়েছেন “ধর্মীয় সমস্যার ব্যাপারে কোন লজ্জা নেই” এমনকি যৌন জীবনের বিভিন্ন বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রেও।[১৫][১৬]
খৎনা হল মুসলিম পুরুষ বা বালকদের জন্য একটি অবশ্য পালনীয় আচার। মুসলিম হিসেবে জন্মগ্রহণ করার জীবদ্দশার যে কোন সময় অথবা ধর্মান্তরিত হবার পর মুসলিম পুরুষদের খৎনা করতে হয়।[১৭][১৮][১৯][২০] কুরআনে উল্লেখ না হলেও বহু হাদিসে মুসলিমদের জন্য অন্যতম ফিতরাত বা সহজাত কর্ম হিসেবে খৎনার উল্লেখ রয়েছে।
ইসলামে বয়ঃসন্ধিকে বালাগাত, বুলুগ ও তাকলিফ বলে এবং বালিগ বা মুতাকাল্লাফ হল সেই ব্যক্তি যে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছেছে ও যার উপর ধর্মীয় আইন ও বিধিবিধান কার্যকর হয়েছে।[২১][২২] বিয়ে সম্পর্কিত প্রসঙ্গে, বালিগ শব্দটি হাত্তা তুতিকাল-রিযাল নামক আরবি আইনগত বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত, যার অর্থ একজন নারী যৌনসঙ্গমের জন্য শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তার বিয়ে দেয়া যাবে না। সে অর্থে, বালিগ বা বালাগাত বলতে যৌন বয়ঃপ্রাপ্তিতে পৌছানোকে বোঝায়, যা রজঃস্রাব শুরুর মাধ্যমে নিশ্চিত হয়। এই দুই মতবাদের সঙ্গে সম্পর্কিত বয়স মিলে যেতে পারে, কিন্তু তা মিলতেই হবে এমন কোন বাধকতা নেই। একমাত্র "রুশদ" নামক একটি পৃথক পর্যায়ে বা নিজস্ব সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণের জন্য বুদ্ধিমত্তাগত বয়ঃপ্রাপ্তি লাভের পর কোন নারী তার মোহর পাবে।[২১] ছেলেদের ক্ষেত্রে বয়ঃপ্রাপ্তির বয়স আনুমানিক প্রায় ১২ বছর এবং লক্ষণ না পেলে আনুমানিক ১৫ চন্দ্রবছর বা সাড়ে ১৪ বছর হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, বা ভৌগোলিক অঞ্চলভেদে ভিন্ন হতে পারে; ছেলেদের ক্ষেত্রে বয়ঃপ্রাপ্তির বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণগুলো হল বয়ঃসন্ধিক কেশোদ্গম, স্বপ্নদোষ ও স্ত্রী-নিষেকক্ষমতা লাভ। মেয়েদের ক্ষেত্রে বয়ঃপ্রাপ্তির বয়স আনুমানিক প্রায় ৯ বছর এবং লক্ষণ না-পেলে আনুমানিক ১৫ চন্দ্রবছর বা সাড়ে ১৪ বছর হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, বা ভৌগোলিক অঞ্চলভেদে ভিন্ন হতে পারে; মেয়েদের বয়ঃপ্রাপ্তির বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণগুলো হল রজঃচক্র, সিক্ত স্বপ্ন ও গর্ভধারণের ক্ষমতা লাভ।
ইসলামে নৈশকালীন নির্গমন বা স্বপ্নদোষ (আরবিঃ ইহতিলাম) পাপ নয়; অধিকন্তু, (রমজান বা অন্য সময়ে) উপবাসকারী কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে রাগমোচন ঘটান (স্বমেহন বা সঙ্গমের মাধ্যমে) তবে তার উপবাস ভঙ্গ বলে বিবেচিত হবে, কিন্তু নৈশকালীন নির্গমনের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। তবে সে ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিধিবিধান পালনের জন্য স্নান করার প্রয়োজনীয়তা বহাল থাকে। মুসলিম পণ্ডিতগণ রাগমোচনকে ধর্মীয় অপবিত্রতা সৃষ্টিকারী হিসেবে দেখেন, এমন একটি দশা যাকে জুনুব বলা হয়; যার অর্থ কোন মুসলিম যার রাগমোচন ঘটেছে তাকে অবশ্যই কুরআন পঠন বা সালাত আদায়ের পূর্বে একবার গোসল করতে হবে।[২৩]
রজঃস্রাব
আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে হায়েয (ঋতু) সম্পর্কে। বলে দাও, এটা অশুচি। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রীগমন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না, যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়। যখন উত্তম রূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, তখন গমন কর তাদের কাছে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন।
রজঃস্রাবকে (হায়েজ/নিফাস) ইসলামে নারীর একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য বলা হয়েছে। রজঃস্রাব দশায় নারীদের সালাত ও ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা হতে অব্যহতি দেয়া হয়।[২৪] পাশাপাশি গোসলের মাধ্যমে নিয়মিত পবিত্র হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্ত্রীর রজ:স্রাব কালে যৌনসঙ্গম নিষিদ্ধ[২৫], তবে যৌনমিলন ব্যতীত শারীরিক মিলন নিষিদ্ধ নয়।[২৬] ইবনে কাসির, নামক একজন হাদিসবিদ একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন যাতে রজঃস্রাবী স্ত্রীদের সঙ্গে মুহাম্মাদের অন্তরঙ্গ সম্পর্কের বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। এই হাদিস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত যে, মুহাম্মাদ (সা) রজঃস্রাব চলাকালে জরায়ুজ সঙ্গম ছাড়া দাম্পত্য সম্পর্কের অন্য সব বৈধ আন্তরিক কর্মকাণ্ডকে অণুমোদন দিয়েছেন। রজচক্র শেষ হওয়ার পর ধর্মীয় কাজ ও দাম্পত্য সম্পর্কে অংশ নেয়ার পূর্বে নারীদেরকে স্নান (গোসল )করে পরিচ্ছন্ন হতে হয়।[২৭]
ইসলামে যৌনতার পাশাপাশি অন্যতম বিস্তৃত আলোচিত বিষয় হল রক্ষণশীল মূল্যবোধসমূহ অর্থাৎ শালীনতাবোধ, সতীত্ব, নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা। হাদিস সাহিত্যে, শালীনতাকে "ধর্মবিশ্বাসের অংশ" হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।[২৮]
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। একদা আল্লাহর রাসূল এক আনসারীর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি তাঁর ভাইকে তখন (অধিক) লজ্জা ত্যাগের জন্য নাসীহাত করছিলেন। আল্লাহর রাসূল তাকে বললেনঃ ওকে ছেড়ে দাও। কারণ হায়া (লজ্জা, শালীনতা, আত্মমর্যাদাবোধ) ঈমানের অঙ্গ।
"যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার-অশ্লীলতা প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।”
এছাড়া বহু হাদিসে হায়া ও ফাহিশার তুলনামূলকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং হায়ার উপকারিতা সম্পর্কে প্রশংসা ও ফাহিশার (অশ্লীলতা) অপকারিতা সম্পর্কে সতর্কবার্তা উল্লেখিত হয়েছে, একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, নবী মুহাম্মদ বলেছেন,
আবূ কুরায়ব... আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। মুহাম্মাদ বলেছেনঃ হায়া (লজ্জা) ঈমানের অঙ্গ; ঈমানের স্থান হল জান্নাতে। অশ্লীলতা হল অবাধ্যতা ও অন্যায়াচারের/অত্যাচারের (জুলুমের) অঙ্গ; অন্যায়াচারণের/অত্যাচারের (জুলুমের) স্থান হল জাহান্নামে।
আহমাদ ইবন মানী‘..... আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে মুহাম্মাদ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ হায়া (লজ্জাশীলতা) এবং রুদ্ধবাক হওয়া ঈমানের দু’টি শাখা। অশ্লীলতা (লজ্জাহীনতা) ও বাক্যবাগিশ হওয়া মুনাফেকীর দু’টি শাখা।
মুহাম্মদ ইবন আবদুল আ‘লা সানআনী প্রমুখ... আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাম্মাদ বলেছেন, অশ্লীলতা কোন বস্তর কেবল ক্লেদ বৃদ্ধিই করে আর হায়া (লজ্জা) কোন জিনিষের কেবল শ্রী বৃদ্ধি ঘটায়।
— ইবনু মাজাহ ৪১৮৫, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১৯৭৪
আহমদ ইবনু ইউনুস... আবূ মাসউদ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাম্মাদ বলেছেনঃ পুর্বেকার নাবীদের কর্তব্য থেকে মানুষ যা বর্জন করেছে তার একটি হল, যদি তুমি হায়াই (লজ্জাই) ছেড়ে দাও তবে তুমি যা চাও তা কর।
— বুখারী, ৫৬৯০
"যখন কোন জাতির মধ্যে ফাহিশা (যৌন অনৈতিকতা/অশ্লীলতা/ব্যভিচার) প্রকাশ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেখানে প্লেগ মহামারীর আকারে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব ঘটে, যা পূর্বেকার লোকেদের মাঝে দেখা যায় নি।"
মুয়াম্মাল ইবনু হিশাম আবু হিশাম... সামুরা ইবনু জুনদাব থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাম্মাদ প্রায়ই তার সাহাবীদেরকে বলতেন, তোমাদের কেউ কোন স্বপ্ন দেখেছ কি? রাবী বলেন, যাদের বেলায় আল্লাহর ইচ্ছা, তারা মুহাম্মাদের কাছে স্বপ্ন বর্ণনা করত। তিনি একদিন সকালে আমাদেরকে বললেনঃ গত রাতে আমার কাছে দু'জন আগন্তুক আসল। তারা আমাকে উঠাল। আর আমাকে বলল, চলুন। আমি তাদের সাথে চলতে লাগলাম। ... আমরা চললাম এবং চুনা সদৃশ একটি গর্তের কাছে পৌছলাম। রাবী বলেন, আমার মনে হয় যেন তিনি বলেছিলেন, আর তথায় শোরগোলের শব্দ হচ্ছিল। তিনি বলেনঃ আমরা তাতে উঁকি মারলাম, দেখলাম তাতে বেশ কিছু উলঙ্গ নারী ও পুরুষ রয়েছে। আর নিচ থেকে নির্গত আগুনের লেলিহান শিখা তাদেরকে স্পর্শ করছে যখনই লেলিহান শিখা তাদেরকে স্পর্শ করে, তখনই তারা উচ্চস্বরে চিৎকার করে উঠে। তিনি বলেনঃ আমি তাদেরকে বললাম, এরা কারা? তারা আমাকে বলল, চলুন , চলুন। ...তিনি বলেন আমি এ রাতে অনেক বিস্ময়কর ব্যাপার দেখতে পেলাম- এগুলোর তাৎপর্য কি?...তারা আমাকে বলল-...আর এ সকল উলঙ্গ নারী-পুরুষ যারা চুলা সদৃশ গর্তের অভ্যন্তরে রয়েছে তারা হল ব্যাভিচারী ও ব্যাভিচারিনার দল।
ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, মুহাম্মাদ ইরশাদ করেন- ‘যখন এলাকায় সুদ ও ব্যভিচার প্রকাশ পাবে তখন বুঝতে হবে তারা নিজেদের ওপর আল্লাহর শাস্তি হালাল করে নিয়েছে।’
ধর্মীয় পাণ্ডুলিপিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শালীনতাকে সম্পর্ক এবং পোশাকের সীমারেখা নির্ধারণের মাধ্যমে বিবৃত হয়েছে।[৩৪][৩৫] কুরআনে, শালীনতার সঙ্গে সম্পর্কিত বেশিরভাগ বিষয়ই সূরা নূরে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।[৩৬] উদাহরণস্বরূপ,
“বিশ্বাসী পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের যৌন আকাঙ্ক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটি তাদের জন্য পবিত্রতর। নিশ্চয়ই তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ অবগত। এবং বিশ্বাসী নারীদের বলুন, যে তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং যৌন আকাঙ্ক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সাধারণভাবে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতিরেকে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন তাদের মস্তকাবরনী(র একাংশ) তাদের বক্ষের উপর পরিধান করে। আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক, অধিকারভুক্ত বাদী, কামনামুক্ত অধীনস্থ পুরুষ ও নারীদের গোপনীয়তা সম্পর্কে অজ্ঞ শিশুবালক ব্যতীত অন্য কারো কাছে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন এমনভাবে পদচালনা না করে যাতে তাদের সৌন্দর্য যা লুকায়িত থাকে, তা প্রকাশ পায়। এবং হে সকল বিশ্বাসীগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যেন তোমরা সফল হতে পারো। এবং তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত তারা বিবাহ কর, এবং তোমাদের মধ্যে যে দাস ও দাসীরা উপযুক্ত তাদেরকেও বিবাহ দাও। তারা যদি, নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। আর যারা বিবাহে সামর্থ্যবান নয়, তারা যেন পবিত্রতা ও সংযম অবলম্বন করে, যে পর্যন্ত না আল্লাহ তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন।”
“হে মুমিনগণ! তোমাদের দাসদাসীরা এবং তোমাদের মধ্যে যারা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়নি তারা যেন তিন সময়ে তোমাদের কাছে অনুমতি গ্রহণ করে, ফজরের নামাযের পূর্বে, দুপুরে যখন তোমরা বস্ত্র খুলে রাখ এবং এশার নামাযের পর। এই তিন সময় তোমাদের জন্য গোপনীয়তার। এ সময়ে ছাড়া তোমাদের ও তাদের যোগাযোগে কোন দোষ নেই। তোমাদের একে অপরের কাছে তো যাতায়াত করতেই হয়, এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ বিবৃত করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। তোমাদের সন্তান-সন্ততিরা যখন বায়োপ্রাপ্ত হয়, তারাও যেন তাদের পূর্ববর্তীদের ন্যায় অনুমতি চায়। এমনিভাবে আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ তোমাদের কাছে বর্ণনা করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। বৃদ্ধা নারী, যারা বিবাহের আশা রাখে না, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তাদের বস্ত্র খুলে রাখে। তাদের জন্যে দোষ নেই, তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্যে উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। অন্ধের জন্যে দোষ নেই, খোড়ার জন্যে দোষ নেই, রোগীর জন্যে দোষ নেই, এবং তোমাদের নিজেদের জন্যেও দোষ নেই যে, তোমরা আহার করবে তোমাদের গৃহে অথবা তোমাদের পিতাদের গৃহে অথবা তোমাদের মাতাদের গৃহে অথবা তোমাদের ভ্রাতাদের গৃহে অথবা তোমাদের ভগিণীদের গৃহে অথবা তোমাদের পিতৃব্যদের গৃহে অথবা তোমাদের ফুফুদের গৃহে অথবা তোমাদের মামাদের গৃহে অথবা তোমাদের খালাদের গৃহে অথবা সেই গৃহে, যার চাবি আছে তোমাদের হাতে অথবা তোমাদের বন্ধুদের গৃহে। তোমরা একত্রে আহার কর অথবা পৃথকভবে আহার কর, তাতে তোমাদের কোন দোষ নেই। অতঃপর যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ কর, তখন তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এটা আল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র দোয়া। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্যে আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা বুঝে নাও।”
হাদিসেও শালীনতা সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। কুরআনের ন্যায় হাদিসেও শালীনতা ও সতীত্বের জন্য আবশ্যক হিসেবে বিবাহকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ,
আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ বর্ণিত, আল্লাহর নবী বলেন, "হে তরুণগণ, তোমাদের মধ্যে যাদের সামর্থ্য আছে তারা বিয়ে কর, কারণ এটি দৃষ্টিকে নত রাখে এবং যৌনাঙ্গকে সুরক্ষিত রাখে এবং যারা সামর্থ্যবান নয় তারা যেন সাওম (উপবাস) পালন করে, কারণ এটি তাদের জন্য ঢাল হিসেবে কাজ করবে।"
কুরআন ও হাদিসে নারী ও পুরুষের আওরাহর সীমারেখা উল্লেখিত হয়েছে। ইসলাম কঠোরভাবে নগ্নতা এবং জনসম্মুখে উলঙ্গতাকে নিরুৎসাহিত করেছে।[৩৯][৪০] পুরুষদের জন্য নিম্নরূপ,
মুয়াবিয়া ইবনে হায়যাহর সূত্র হতে আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা কর্তৃক বর্ণিত, “একবার আমি রাসুলুল্লাহ(সঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, “হে আল্লাহর রাসুল, আমরা আমাদের গুপ্তাঙ্গ কার কাছে গোপন রাখবো কাকে দেখাতে পারবো?” তিনি উত্তর দিলেন, “স্ত্রী এবং কৃতদাসী (উপপত্নী) ব্যতীত সকলের নিকট গোপন রাখবে।” আমি আবার প্রশ্ন করলাম, “হে আল্লাহর রাসুল (সঃ), যখন সবাই মিলেমিশে থাকবে?” তিনি উত্তর দিলেন, “যদি তোমার পক্ষে সম্ভব হয় কেও তোমার গুপ্তাঙ্গ দেখবে না, তবে এরূপ করবে কেও যেন তোমার গুপ্তাঙ্গ দেখতে না পারে।” আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম, “হে আল্লাহর রাসুল, যখন আমাদের কেউ নির্জনে থাকবে?” তিনি বললেন, “মানুষের চাইতেও আল্লাহকে বেশি লজ্জা করবে।”
আবূ হুরাইরাহ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাম্মাদ বলেছেনঃ (পুরুষের) ইযারের বা পরিধেয় বস্ত্রের যে অংশ পায়ের গোড়ালির নিচে থাকবে, সে অংশ জাহান্নামে যাবে।
— সহীহ বুখারী: ৫৭৮৭]
নারীদের ক্ষেত্রে নিম্নরূপ,
"আসমা, আবু বকরের কন্যা,পাতলা কাপড় পড়ে মুহাম্মাদের এর গৃহে প্রবেশ করলেন। মুহাম্মাদ তার মনোযোগ আকর্ষণ করে বললেন: হে আসমা, যখন কোন নারী হায়েযের (রজঃস্রাবের) বয়সে পৌঁছে যায়, তখন তার জন্য শোভন নয় সে তার শরীরের অংশ প্রদর্শন করবে এটা ও এটা ছাড়া, এই বলে তিনি তার হাত ও মুখের দিকে নির্দেশ করলেন।” আবু দাউদ[৪১]
”মুহাম্মাদ কুরআনে উল্লেখিত নারীদের পর্দার নির্দেশ জারি করার পর, নারীরা তাদের চাঁদর কেটে তা দিয়ে মুখমণ্ডল ঢেকে সেই নির্দেশ মানতে লাগলো।" বুখারি(৬০ঃ ২৮২)[৪২]
হযরত আয়েশা (রা.) হতে ইফ্কের হাদিসে বর্ণিত,আমি আমার স্থানে বসে ছিলাম একসময় আমার চোখ দুটি নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল এবং আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সফওয়ান ইবনে মুয়াত্তাল আসসুলামী ছিল বাহিনীর পিছনে আগমনকারী। সে যখন আমার অবস্থানস্থলের নিকট পৌছল তখন একজন ঘুমন্ত মানুষের আকৃতি দেখতে পেল। এরপর সে আমার নিকট এলে আমাকে চিনে ফেলল। কারণ পর্দা বিধান অবতীর্ণ হওয়ার আগে সে আমাকে দেখেছিল। সে তখন ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন বলে ওঠে, যার দরুণ আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি এবং ওড়না দিয়ে নিজেকে আবৃত করে ফেলি/আমি ওড়না দিয়ে আমার চেহারা ঢেকে ফেলি। [; (Narrated by সহিহ বুখারি ৫/৩২০ বা ৪১৪১;[৪২] Mসহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৭৭০;[৪৩] জামে তিরমিযি, হাদিস : ৩১৭৯)
সাফিয়্যাহ ইবনু আবূ উবাইদ সূত্রে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন যে, একদা নবী মুহম্মদের স্ত্রী উম্মু সালামাহকে প্রশ্ন করলেন, যখন তিনি পরিধেয় বস্ত্র সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন হে আল্লাহর রাসূল! নারীদের ইযার (লুঙ্গি) ব্যবহারের বিধান কি? তিনি বললেনঃ তারা (গোড়ালি হতে) এক বিঘত নিচে পর্যন্ত ঝুলিয়ে পড়তে পারে। উম্মু সালামাহ বলেন, এতেও তার কিছু অংশ খোলা থাকবে। তিনি বলেনঃ তবে এক হাত ঝুলিয়ে পড়বে; এর বেশি নয়।
— নাসায়ী, আবু দাউদ ৪১১৭
আরও অনেক হাদিসে বিভিন্নভাবে বিস্তৃত পরিসরে রক্ষণশীলতার নির্দেশাবলী দেয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ নিম্নরূপ,[৪৪]
আবূন নু’মান... ইবনু ‘আব্বাস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুহাম্মাদ ইরশাদ করেনঃ মেয়েরা মাহরাম (যার সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ) ব্যতীত অন্য কারো সাথে সফর করবে না। মাহরাম কাছে নেই এমতাস্থায় কোন পুরুষ কোন মহিলার নিকট গমন করতে পারবে না। এ সময় এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি অমুক অমুক সেনাদলের সাথে জিহাদ করার জন্য যেতে চাচ্ছি। কিন্তু আমার স্ত্রী হাজ্জ (হজ্জ) করতে যেতে চাচ্ছে। মুহাম্মাদ বললেনঃ তুমি তার সাথেই যাও।
— মুসলিম হাঃ ১৭৪০
‘উকবাহ ইবনু ‘আমির হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাম্মাদ বলেছেন, মহিলাদের নিকট একাকী যাওয়া থেকে বিরত থাক। এক আনসার জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! দেবরের ব্যাপারে কী হুকুম? তিনি উত্তর দিলেন, দেবর হচ্ছে মৃত্যুতুল্য।
আবু সাইদ খুদরী তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল বলেছেন, “কোন পুরুষ যেন অন্য কোন পুরুষের গুপ্তাঙ্গের দিকে দৃষ্টি না দেয়, এবং কোন স্ত্রীলোক যেন অন্য কোন স্ত্রীলোকের গুপ্তাঙ্গের দিকে দৃষ্টি না দেয়। আর কোন পুরুষ যেন অন্য কোন পুরুষের সঙ্গে নিম্নবাস ছাড়া একই চাদরের নিচে অবস্থান না করে এবং কোন স্ত্রীলোক যেন অন্য কোন স্ত্রীলোকের সঙ্গে নিম্নবাস ছাড়া একই চাদরের নিচে অবস্থান না করে।”
আল্লাহর রাসুল বলেন: বিচার দিবসে আল্লাহর দৃষ্টিতে মানুষের মধ্যে নিকৃষ্ট হবে সেই পুরুষ যে তার স্ত্রীর কাছে যায় এবং স্ত্রীও তার কাছে আসে, আর তারপর সেই পুরুষ তার স্ত্রীর গোপনীয়তা অপরদের কাছে প্রকাশ করে দেয়।
এছাড়াও জিনা সম্পর্কিত বিষয়েও রক্ষণশীলতার নির্দেশ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ আল-মুয়াত্তা নামক গ্রন্থের একটি হাদিস:
জায়িদ ইবনে আসলাম থেকে বর্ণিত, “আল্লাহ্র রাসূলের সময়ে এক লোক যখন স্বীকার করল যে, সে ব্যভিচার করেছে, তখন আল্লাহ্র রাসূল একটি চাবুক চাইলেন। যখন তাকে একটি ছেঁড়া/পুরানো চাবুক দেওয়া হল তিনি বললেন, “এটার চেয়ে ভাল নেই?” তখন একটি নতুন চাবুক আনা হলে তিনি বললেন, “এটার চাইতে একটু পুরাতন দেখে নিয়ে আস”। এরপর এমন একটা চাবুক আনা হল যেটা ছিল (ব্যবহারের ফলে) একটু পুরানো/নরম। তখন তিনি ওটা দিয়ে ওই ব্যক্তিকে একশো দোর্রা মারার নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি বললেন, “হে লোকেরা! তোমরা আল্লাহ্র সীমা অতিক্রম করোনা। কেউ এই ধরনের ঘৃণিত কোন অপরাধ করে বসলে, সে যেন তা গোপন রাখে, কারণ কেউ যদি তা প্রকাশ করে বসে, তবে আমরা তার ব্যাপারে বর্ণিত শাস্তি প্রয়োগের মাধ্যমে আল্লাহ্র কিতাবের বিধান কার্যকর করব”"
‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সময়ে কিছু ব্যক্তিকে ওয়াহীর ভিত্তিতে পাকড়াও করা হত। এখন যেহেতু ওয়াহী বন্ধ হয়ে গেছে, সেহেতু এখন আমাদের সামনে তোমাদের যে ধরনের ‘আমাল প্রকাশ পাবে, সেগুলোর ভিত্তিতেই তোমাদের বিচার করব। কাজেই যে ব্যক্তি আমাদের সামনে ভালো প্রকাশ করবে তাকে আমরা নিরাপত্তা দান করব এবং নিকটে আনবো, তার অন্তরের বিষয়ে আমাদের কিছু করণীয় নেই। আল্লাহই তার অন্তরের বিষয়ে হিসাব নিবেন। আর যে ব্যক্তি আমাদের সামনে মন্দ ‘আমাল প্রকাশ করবে, তার প্রতি আমরা তাদের নিরাপত্তা প্রদান করব না এবং সত্যবাদী বলে জানব না; যদিও সে বলে যে, তার অন্তর ভালো। সহিহ বুখারিঃ ২৬৪১,সহীহ বুখারী, ৩:৪৮:৮০৯(ইংরেজি)
ইসলামি আইন অনুসারে, বিবাহের মাধ্যমে স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যকার শারীরিক সম্পর্ক ও যৌনমিলন বৈধ করা হয়।[Ahlul Bayt Digital Islamic Library Project ১] এবং দৈহিক ও মানসিক যৌন চাহিদা পূরণের জন্য বিবাহের প্রতি ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। ইসলামে বৈবাহিক সম্পর্ককে আবেগীয় সম্পর্ক অথবা প্রজনন প্রক্রিয়ায় সীমিত রাখা হয় নি, বরং ইসলামে বিবাহকে এজন্য ব্যপকভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে যে, এটি কোন ব্যক্তির যৌন চাহিদা পূরণের জন্য বৈধ প্রতিষ্ঠানের জোগান দেয়।[১১][৪৭][৪৮][৪৯][৫০] ইসলামে যৌনতাকে কেন্দ্র করে বিস্তৃত পরিসরের নীতিমালা দেয়া হয়েছে; যাই হোক,কুরআন ও হাদিসে বিবাহের চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের মাঝে সীমাবদ্ধ যৌনতার বহু নীতিমালার সূত্র প্রদান করা হয়েছে, যেগুলো মানবজাতির কল্যাণ ও তাদের প্রাকৃতিক যৌন প্রবণতাকে উচ্চ মর্যাদা প্রদান করে। সূরা বাকারায় [৫১](২ঃ২২২) বৈবাহিক জীবনে যৌনতাকে সরাসরি অণুমোদন দেয়া হয়েছে:
"যখন তারা [স্ত্রীরা] তাদের নিজেদের রজঃস্রাব হতে পরিচ্ছন্ন করে নেয়, তখন তোমরা তাদের সাথে সম্মিলিত হও যেভাবে আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন।"
— (২ঃ২২২)
বলা হয়েছে যে:
"যারা তাদের সতীত্বকে (গোপন অঙ্গকে, অবৈধ যৌন কর্মকাণ্ড থেকে) নিরাপত্তা দেয় তাদের স্ত্রীর বা যা তাদের যা তাদের হাত ধারণ করে (যুদ্ধবন্দী ও দাসীগণ) তাদের হতে ব্যতীত, তারা দোষারোপ হতে মুক্ত।"
পাশাপাশি, হাদিসের উৎসও বিবাহের মাধ্যমে বৈধপন্থায় যৌন আকাঙ্ক্ষা পূরণের স্বীকৃত মর্যাদাকে অণুরূপভাবে ব্যাখ্যা করেছে। ওয়াসায়লুশ শিয়া নামক শিয়াদের হাদীস গ্রন্থে সাহাবীদেরদের বিবাহে উৎসাহিতকরণের উদ্দেশ্যে বলা মুহাম্মাদের বানীকে উদ্ধৃত করা হয়েছে, যা হল:
"হে যুবক পুরুষেরা, আমি তোমাদেরকে বিয়ে করার পরামর্শ দিচ্ছি।"
"হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যাদের বিয়ে করার সামর্থ আছে তাদের উচিত বিয়ে করা; এটি দৃষ্টিকে নত রাখে এবং যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। আর যাদের বিয়ে করার সামর্থ নেই তারা যেন রোজা রাখে, কেননা তা যৌন উত্তেজনাকে প্রশমিত করে।"
মুসলিম পুরুষগণ মুসলিম, ইহুদি ও খ্রিস্টান নারী বিয়ে করতে পারবে, তবে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ও বিধর্মী নারীর সঙ্গে বিবাহ (ও সঙ্গম) নিষিদ্ধ। তারা একই সময়ে সর্বোচ্চ চারটি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ থাকতে পারবে। অপরদিকে মুসলিম নারীগণ মুসলিম ব্যতিরেকে অন্য ধর্মের ও বিধর্মী পুরুষকে বিয়ে করতে পারবে না,এবং তারা একইসময়ে শুধু একটি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ থাকতে পারবে।[৫৪](২ঃ২২১)।[৫৫] পারিবারিক সম্পর্কের দিক থেকে একজন মুসলিম পুরুষ যাদেরকে বিয়ে করতে পারবে না তারা হলঃ পিতার স্ত্রীগণ ([৫৬] ৪ঃ২২), মাতা, কন্যা, বোন, পিতার বোন, মাতার বোন, ভাইয়ের কন্যা, বোনের কন্যা, দুধ-মাতা, দুধ-বোন, শাশুড়ি, পূর্বে বৈবাহিক বা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল এমন নারীর কন্যা, পালক পুত্রের মাতা, এবং একই পরিবারের দুই বোন [৫৭](৪ঃ২৩) ও নিজ ক্রয়কৃত দাসী ব্যতীত সকল বিবাহিত নারী (৩ঃ২৪)।[৫৫]
উপপত্নীত্ব (সুরাইয়া) হল কোন পুরুষের সাথে তার "অধিকৃত ক্রীতদাসী (জারিয়া) এবং অধিকৃত যুদ্ধবন্দী দাসী"র যৌন সম্পর্ক।[২৫] "সুরাইয়া" শব্দটি কুরআনে উল্লেখিত হয় নি, সেখানে মূলত দাসদাসী এবং উপপত্নীদের বোঝাতে মোট ১৫ বার "মা মালাকাত আইমানুকুম" (তোমার ডান হাত যার মালিকানা ধারণ করে) বাগধারাটি ব্যবহার করা হয়েছে। ইসলাম পূর্ব আরবে দাসপ্রথা চলাকালে উপপত্নীত্ব প্রচলিত ছিল এবং ইসলাম আগমনের পর এর উপর কিছু সীমারেখা ও নীতি নির্ধারণ করে একে বৈধতা দেয়া হয়।[৫৮] একজন মুসলিম পুরুষ তার ক্রয়কৃত মুসলিম বা অমুসলিম ক্রীতদাসী বা অধিকৃত মুসলিম বা অমুসলিম যুদ্ধবন্দিনীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়তে পারবে, গর্ভধারণ এড়াতে জন্মনিয়ন্ত্রণ (কয়শাস ইন্টারাপশাস) করতে পারবে এবং তার সন্তানের পিতা হতে পারবে, তবে যদি উক্ত দাসী তার সন্তানের মা হয় তবে সেই দাসী উম্মে ওয়ালাদ (সন্তানের মা) উপাধি পাবে, যার ফলে তার মালিক পর তাকে আর অন্য কোথাও বিক্রি করতে পারবে না। একজন মুসলিম পুরুষ তার নিজের মালিকানাধীন একাধিক দাসী এবং/অথবা যুদ্ধবন্দীনীর সাথে উপপত্নীত্বের সম্পর্ক করতে পারবে, কিন্তু সে তার স্ত্রীর অধিকৃত দাসীর সাথে এ ধরনের সম্পর্ক করতে পারবে না। একজন মুসলিম চাইলে তার অধিকৃত দাসী/বন্দীনীকে বিয়ে করতে পারবে, তবে বিয়ের পূর্বে তাকে দাসত্ব হতে মুক্তি দিতে হবে, এবং মুশরিক হলে ধর্মান্তরিত করতে হবে। হাদিসেও দাসীকে ধর্মান্তরিত ও মুক্ত করে বিয়ে করার প্রতি উৎসাহ দেয়া হয়েছে।[৫৯][৬০] উপপত্নীদের গর্ভে জন্ম নেয়া তার সন্তান বৈধ বলে বিবেচিত হবে এবং তার মৃত্যুর পর উপপত্নী ও তার সন্তানগণ স্বাধীন বলে বিবেচিত হবে[৫৮] এছাড়াও, বিবাহিত স্ত্রী ও তাদের সন্তানদের অণুরুপ তারাও একই পরিমাণে উক্ত মুসলিম পুরুষের সম্পত্তির ভাগ পাবে।
যৌনতার পদ্ধতি
ইসলামি যৌন ফিকহের অন্যতম ক্ষেত্র যাতে আলোচনায় খুব বেশি নিষেধাজ্ঞা নেই তা হল বৈবাহিক যৌন কর্মকাণ্ডের পন্থাসমূহ। ইসলামি আইনের অধীনে চর্চাকৃত যৌনসঙ্গম ও যৌনতার পদ্ধতিসমূহের সবগুলোই হাদিস থেকে এসেছে, যা প্রকৃতিগতভাবে নিষেধপ্রবণ নয়, কিন্তু পারস্পারিক শিষ্টাচার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যাকে সাধারণত পূর্বরাগ বলা হয়।
ইমাম দায়লামি আনাস ইবনে মালিক হতে বর্ণিত মুহাম্মাদের একটি হাদিস উদ্ধৃত করেন, তোমাদের কেউ যেন তাদের যৌন কামনা পূরণ করতে স্ত্রীর উপর পশুর ন্যায় পতিত না হয়, তারা যেন প্রথমে তোমাদের মাঝে একজন দূত উপস্থিত করে” “কি সেই দূত?” তারা জিজ্ঞেস করলেন, তিনি উত্তর দিলেন: “চুম্বন ও কথোপকথন”।”
— দায়লামি রচিত "মুসনাদ আল-ফেরদৌস", ২/৫৫
ইমাম আল-কায়িম জাবির ইবনে আবদুল্লাহ হতে তার গ্রন্থ তিব্ব আল-নববি” গ্রন্থে উদ্ধৃত করেন যে, মুহাম্মাদের শৃঙ্গারের পূর্বে সহবাসে অংশ নিতে নিষেধ করেছেন।
— আল তিব্ব আল নববি, ১৮৩
এই হাদিসগুলোর মধ্যকার মূল প্রবণতা হল শয়নকক্ষে মুসলিমদের অণুসরণের জন্য প্রদত্ত বানী, যেগুলো "স্পষ্টভাবে দেখায় যে, স্বামী ও স্ত্রীকে পূর্বরাগ নামে পরিচিত পারস্পারিক উদ্দীপনায় অংশ নেয়ার সময় সম্পূর্ণ স্বাধীনতা অনুভব করা উচিত। এই হাদিসগূলো পূর্বরাগের পরামর্শ দেয়, এবং পায়ুসঙ্গম ছাড়া পূর্বরাগের ও সঙ্গমের আর কোন পারস্পারিক পদ্ধতিতে সরাসরি কোন বিধিনিষেধ আরোপ করে না।উদ্ধৃতি ত্রুটি: শুরুর <ref> ট্যাগটি সঠিক নয় বা ভুল নামে রয়েছে[৬১][৬২][৬৩]
যৌন বাধ্যতা
ইসলামে, স্বামী তার স্ত্রীকে পূর্ণ পরিতৃপ্ত করে সহবাস করবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত স্বামী দৈহিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিংবা জীবিকা উপার্জনের কাজে সময় দেয়া থেকে বঞ্চিত না হয়। স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে সহমর্মী ও যৌক্তিক সৌজন্যতার সঙ্গে আচরণ করতে বাধ্য থাকবে। এই যৌক্তিক ও সৌজন্যমূলক আচরণের মধ্যে একটি অবশ্য করনীয় অংশ হল সহবাস। ইসলামি পণ্ডিতদের বেশিরভাগই স্বামীর জন্য চার মাসের সময়সীমা বেধে দিয়েছেন, যার চেয়ে অধিক সময় স্বামী স্ত্রীকে সহবাস হতে বঞ্চিত রাখতে পারবে না, কিন্ত কিছু পণ্ডিতের অভিমত এই যে, প্রকৃতপক্ষে এই অধিকার পূরণের জন্য কোন প্রকার সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নেই।[৬৪]
আবূ হুরায়রা সুত্রে মুহাম্মাদ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, স্বামীর বিছানা পরিহার করে কোন স্ত্রী রাত্রি যাপন করলে ফজর পর্যন্ত ফিরিশতাগণ তার প্রতি লানত করতে থাকে।"
— বুখারী, ৩০৬৫; মুসলিম, ১৪৩৬
কিন্তু কোন স্বামীর জন্য বৈধ নয় যে সে তার স্ত্রীকে তার সহ্যক্ষমতার চেয়ে বেশি সহবাসে বাধ্য করবে। স্ত্রী যদি এমন কারণ দেখায় যে সে অসুস্থ বা সহবাসের চাপ নিতে অসমর্থ, তবে সহবাসে অস্বীকৃতি জানানোতে তার কোন পাপ বা দোষ হবে না।[৬৫]
বিধিনিষেধসমূহ
যৌনসঙ্গমের একটি ক্ষেত্র যা সাধারণত নিষিদ্ধ তা হল পায়ুসঙ্গম।
সকল মুসলিম আইনবিদই একমত ষে, পায়ুকাম নিষিদ্ধ, যার ভিত্তি হল এই হাদিসগুলো :
"তোমরা (পুরুষেরা) নারীদের সাথে পায়ুপথে সহবাস কোরো না।"
— (আহমাদ, আত-তিরমিযি, আন-নাসায়ী, এবং ইবনে মাজাহে বর্ণিত)
নবী মুহাম্মাদ আরও বলেন,
"সে পুরুষ অভিশপ্ত, যে কোন নারীর সাথে পায়ুপথে সঙ্গম করে।"
"আল্লাহর রাসুল বলেছেন: আল্লাহ তোমাদেরকে সত্য কথা বলতে লজ্জাবোধ করেন না: তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সাথে পায়ুপথে সঙ্গম করো না।"
— (আহমাদ হতে বর্ণিত, ৫/২১৩)
ইবনে আবাস বর্ণনা করেন: "আল্লাহর রাসুল বলেছেন:
"আল্লাহ সেই পুরুষের দিকে তাকাবেন না যে তার স্ত্রীর পায়ুপথে সঙ্গম করেছে।"
— (ইবনে আবি শাইবা হতে বর্ণিত, ৩/৫২৯, আত-তিরমিযীতে এটিকে বিশুদ্ধ হাদিস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, ১১৬৫)
উপরন্তু, বলা আছে যে নবী মুহাম্মাদ একে ছোট "সডোমি(অজাচার)" বলে আখ্যায়িত করেছেন। (আন-নাসায়ী হতে বর্ণিত)
বর্ণিত আছে যে, মদিনার ইহুদিগণ বলতো যে, কেও যদি তার স্ত্রীর সাথে পেছন দিক থেকে জরায়ুপথে সঙ্গম করে তবে তার সন্তান ট্যাড়া চোখ নিয়ে জন্মাবে। সে সময়ে একদিন ওমর ইবনুল খাত্তাব নবী মুহাম্মাদের কাছে এসে বললেন, "হে আল্লাহর রাসুল! আমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছি!" মুহাম্মাদ প্রশ্ন করলেন, "কি তোমাকে ধ্বংস করেছে?" তিনি উত্তরে বললেন, "গত রাতে আমি আমার স্ত্রীকে পেছন দিকে ঘুরিয়ে ফেলেছিলাম।," অর্থাৎ তিনি পেছন দিক থেকে তার স্ত্রীর সাথে জরায়ুপথে সহবাস করেছিলেন।
নবী তাকে কিছু বললেন না। এরপর এ প্রসঙ্গে নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হলঃ
"তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের শস্যক্ষেত্র, অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা যেতে পার (তোমাদের স্ত্রীদের সাথে জরায়ুপথে যেকোনোভাবে সঙ্গম করতে পারো কিন্তু পায়ুপথে নয়)। আর তোমরা তোমাদের নিজেদের জন্য আগেই কিছু পাঠাও (ভালো কাজ করো অথবা আল্লাহর কাছে পুণ্যবান সন্তানসন্তদি প্রাপ্তির জন্য প্রার্থনা করো) ও আল্লাহ্কে ভয় করো। আর জেনে রাখো যে, আল্লাহ্র সাথে নিশ্চয়ই তোমাদের (পরকালে) দেখা করতে হবে। আর (হে মুহাম্মাদ,) বিশ্বাসীদেরকে সুখবর দাও।"কুরআন২:২২৩
উপরিউক্তে আয়াতে স্ত্রীর সাথে জরায়ুপথে সঙ্গমকে শস্যক্ষেত্রে বীজ বপনের সাথে তুলনা করে এটি নির্দেশ করা হয়েছে যে, ইসলামে ইচ্ছেমত যে কোন পন্থায় শুধুমাত্র জরায়ুপথেই সঙ্গম করাকে অণুমোদন দেয়া হয়েছে, কারণ শস্যক্ষেত্রে বীজ বপনের ফলে যেমন ফসল উৎপন্ন হয় ঠিক সেভাবে জরায়ুপথে সঙ্গমের ফলেই সন্তানের জন্ম হয়।
এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর নবী মুহাম্মাদ ওমর বিন খাত্তাবকে উত্তর দেন, "সামনে বা পেছনে যে কোন দিক থেকে [নিজের স্ত্রীর সাথে জরায়ুপথে সংগম কর], কিন্তু পায়ুপথকে পরিহার কর এবং রজস্রাবকালে সঙ্গম থেকে বিরত থাকো।" (আহমাদ এবং তিরমিজী হতে বর্ণিত)
চারটি ক্ষেত্রে বৈবাহিক সঙ্গমের ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এগুলো হলঃ
পায়ুমৈথুন
রজঃস্রাবকালীন সময়
সন্তান জন্মের পর প্রথম চল্লিশদিন,
রমজান মাসে রোজা রাখা অবস্থায় এবং হজ্জ ও ওমরাহ পালনের সময়। হজ্জ বা ওমরা চলাকালে বিবাহ হলে তা সক্রিয় বলে গণ্য হবে না।[৬৭]
বংশবৃদ্ধি
ইসলামি আইনশাস্ত্রে, বৈবাহিক যৌনতার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল বংশবিস্তার[৬৮] ইসলাম প্রজননের জন্য দৃঢ় যৌন আকাঙ্খাকে স্বীকৃতি দেয়, যা ইসলামে বিবাহের প্রধান উদ্দেশ্য।[৬৯] এর মাধ্যমে মানব প্রজাতির উৎপাদন ও সংরক্ষণ নিশ্চিত হয়। [৬৮] বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া সন্তান বৈধ বলে গৃহীত হয় এবং পিতামাতার সম্পত্তিতে সন্তানের পারস্পারিক মালিকানার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।[৭০] অধিকন্তু ইসলাম একটি বর্ধনশীল প্রজননবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করে যা বহু হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে।
মা‘কিল ইবনু ইয়াসার (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী মুহাম্মাদের খিদমাতে উপস্থিত হয়ে বললো, আমি এক সুন্দরী ও মর্যাদা সম্পন্ন নারীর সন্ধান পেয়েছি। কিন্তু সে বন্ধ্যা। আমি কি তাকে বিয়ে করবো? তিনি বললেনঃ না। অতঃপর লোকটি দ্বিতীয়বার এসেও তাঁকে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে নিষেধ করলেন। লোকটি তৃতীয়বার তাঁর নিকট এলে তিনি তাকে বললেনঃ এমন নারীকে বিয়ে করে যে, প্রেমময়ী এবং অধিক সন্তান প্রসবকারী। কেননা আমি অন্যান্য উম্মাতের কাছে তোমাদের সংখ্যাধিক্যের কারণে গর্ব করবো।
— আবু দাউদঃ ২০৫০
এই হাদিসে উর্বর নারীদের বিবাহে উৎসাহিত করা হয়েছে, যেন ইসলামের অনুসারিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, যাতে নবী মুহাম্মাদ অন্যান্য ধর্মীয় জাতির বিপরীতে নিজ অনুসারীর সংখ্যা নিয়ে গর্ব করতে পারেন। এতে প্রতীয়মান যে, ইসলামে অধিক সন্তান গ্রহণকে উৎসাহিত করা হয়েছে।[৭১]
কুতায়বা ইবনু সাঈদ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা মুহাম্মাদের সাথে জিহাদে অংশ নিতাম; কিন্তু আমাদের কোন কিছু ছিল না। সুতরাং আমরা মুহাম্মাদের কাছে বললাম, আমরা কী খাসি হয়ে যাব? তিনি আমাদেরকে খাসি হতে নিষেধ করলেন এবং কোন মহিলার সাথে একখানা কাপড়ের বিনিময়ে হলেও শাদী করার অনুমতি দিলেন এবং আমাদেরকে এই আয়াত পাঠ করে শোনালেনঃ হে মু’মিনগণ! আল্লাহ যে পবিত্র জিনিসগুলো তোমাদের জন্য হালাল করেছেন তোমরা তা হারাম করো না এবং সীমালংঘন করো না। আল্লাহ সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না।
— সহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ ৬২, হাদীসঃ ১১
আসবাগ... আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মুহাম্মাদের কাছে বললাম, ইয়া রাসূলল্লাহ! আমি একজন যুবক। আমার ভয় হয় যে, আমার দ্বারা না জানি কোন গুনাহর কাজ সংঘটিত হয়ে যায়; অথচ আমার শাদী করার মতো পর্যাপ্ত সম্পদ নেই। এই কথা শুনে মুহাম্মাদ চুপ রইলেন। আমি আমার প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলাম। তিনি চুপ রইলেন। আমি আবারও অনুরূপভাবে বললাম। তিনি চুপ থাকলেন। আবারও অনুরূপভাবে বললে তিনি উত্তর করলেন, হে আবূ হুরায়রা! যা কিছু তোমার ভাগ্যে আছে, তা লেখার পর কলমের কালি শুকিয়ে গেছে। তুমি খাসি হও বা না হও, তাতে কিছু আসে যায় না।
— সহীহ বুখারী, ৪৭০৫
আয়িশাহ্র থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাম্মাদ বলেছেনঃ বিবাহ করা আমার সুন্নাত। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত মোতাবেক কাজ করলো না সে আমার নয়। তোমরা বিবাহ করো, কেননা আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে অন্যান্য উম্মাতের সামনে গর্ব করবো। অতএব যার সামর্থ্য আছে সে যেন বিবাহ করে এবং যার সামর্থ্য নেই সে যেন রোযা রাখে। কারণ রোযা তার জন্য জৈবিক উত্তেজনা প্রশমনকারী।
— ইবনে মাজাহ ১৮৪৬
কাতাদাহ হতে বর্নিত, আল্লাহর রাসূল চিরকুমার থাকাকে নিষিদ্ধ করেছেন। ইবনে আখসাম বলেন: এরপর কাতাদাহ কুরআন হতে পাঠ করলেন, 'সূরা রা’দ: ৩৮ - আপনার পূর্বে আমি অনেক রসূল প্রেরণ করেছি এবং তাঁদেরকে পত্নী ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছি।"
— ইবনে মাজাহ, ১৮৪৯
টেস্ট টিউব বেবি
আইভিএফ বা টেস্ট টিউব বেবির ক্ষেত্রে, ইসলামি প্রতিক্রিয়া হল নিম্নোক্ত ফতোয়া:[৭২]
স্ত্রীর ডিম্বাণুর সঙ্গে স্বামীর শুক্রাণুর আইভিএফ এবং তা পুনরায় স্ত্রীর জরায়ুতে স্থাপন বৈধ, যদি তা অক্ষমতার কারণে করা হয় এবং অভিজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা পরিচালিত হয়।
যেহেতু বৈবাহিক সময়কাল জুড়ে বিবাহ স্বামী স্ত্রীর মাঝে একটি চুক্তি, কোন তৃতীয় পক্ষ যৌনতা ও প্রজননের বৈবাহিক প্রক্রিয়ায় অনধিকারপ্রবেশ করতে পারবে না। এর অর্থ হল কোন তৃতীয়পক্ষের শুক্রাণু, ডিম্বাণু, ভ্রুণ কিংবা গর্ভদাতা গ্রহণযোগ্য নয়। এক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের অংশগ্রহণ হল জিনা বা ব্যভিচারের সমতুল্য।
যৌনক্রিয়া বা সহবাসের সময় দম্পতির যৌনাঙ্গদ্বয়ের পারস্পারিক অণুপ্রবেশ অথবা অণুপ্রবেশের পর বীর্যস্খলন হলে সহবাসের পর স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের পূর্ণরুপে ধর্মীয় পরামর্শ অনুযায়ী পূর্ণ শরীর স্নান বা গোসল করা প্রয়োজন, যাতে তারা পরবর্তী উপাসনা বা সালাতের পূর্বে ধর্মীয় পবিত্রতাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে পারে।[৭৩]গোসলের জন্য প্রয়োজন এমন পরিষ্কার ও দুর্গণ্ধবিহীন পবিত্র পানি যা ইতিপূর্বে গোসল বা শৌচকাজে ব্যবহৃত হয় নি, এবং উপাসনার স্বার্থে পবিত্র হওয়ার মনসংকল্প বিবৃতকরণের মাধ্যমে স্নানকার্যের সূচনা করা হয়।[৭৪] এরপর দেহের কোন স্থান শুকনো না থাকে এমনভাবে সম্পূর্ণ শরীরে পানি ঢালার পর দেহের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পরিষ্কার করা হয়।[৭৪] এছাড়াও মুহাম্মাদের সুন্নতের উদ্ধৃতি রয়েছে যা যৌনাঙ্গের পারিপার্শের বয়ঃসন্ধিক চুল মুন্ডন করে কেটে ফেলার নির্দেশনা দেয়, তিনি এর জন্য চল্লিশ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, এবং তিনি বলেছেন এরচেয়ে বেশি সময় বয়ঃসন্ধিক চুল, বগলের নিচের চুল, গোঁফ ও হাতে পায়ের নখ অকর্তিত রাখা উচিত নয়।[৭৫]
উপবাস এবং রমজান
উপবাসের রাতে স্বামী-স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে; তারা তোমাদের জন্য একটি পরিচ্ছদস্বরূপ ও তোমরা তাদের জন্য একটি পরিচ্ছদস্বরূপ; আল্লাহ জানেন যে তোমরা তোমাদের প্রতি অবিচার করেছিলে, তাই তিনি তোমাদের দিকে (করুণার সাথে) মুখ তুলে তাকিয়েছেন এবং তোমাদেরকে (এই কষ্ট থেকে) মুক্তি দিয়েছেন; তাই এখন থেকে তোমাদের স্ত্রীর সংস্পর্শে বসবাস কর এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা নির্ধারণ করেছেন তা প্রার্থনা কর, ভোরবেলায় দিনের শুভ্রতা রাতের অন্ধকার থেকে পৃথক না হওয়া পর্যন্ত খাও ও পান কর, এরপর (পরবর্তী) রাতের আগ পর্যন্ত উপবাস পূর্ণ কর, এবং মসজিদে থাকা অবস্থায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থগিত রাখো; এগুলোই আল্লাহর নির্ধারিত সীমা, তাই এগুলোর কাছে যেয়ো না। এভাবেই আল্লাহ মানুষের জন্য তার বার্তাকে স্পষ্ট করেছেন যেন তারা (মন্দের বিরুদ্ধে) সুরক্ষিত থাকতে পারে।
রমজান মাসে ধর্মীয় উপবাস বা রোজার সময় যৌনসঙ্গম নিষিদ্ধ, এ সময় যৌনসঙ্গম করলে বা কোন কারণে বীর্যপাত ঘটালে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। যৌন উত্তেজনা বশত: বীর্য-তরল বা কামঃরস নির্গত হলে রোজা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।[৭৬] তবে রোজাবিহীন অবস্থায় রাত্রিকালীন সময়ে তা নিষিদ্ধ নয়।[৭৬][৭৭]
অবৈধ যৌনতা
ইসলাম কেবল স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অর্থাৎ বৈধভাবে বিবাহিত নারী ও পুরুষের মধ্যে এবং মুসলিম পুরুষ ও তার উপপত্নীর মধ্যে যৌনসঙ্গম অনুমোদন করে।[৫৮] এর বাইরে সকল যৌনাচার ইসলামে নিষিদ্ধ।[৫৮]
পর্নোগ্রাফি
পর্নোগ্রাফি ইসলামে হারাম ও সুস্পষ্ট পাপ হিসেবে বিবেচিত।[৭৮][৭৯]
কুরআনে বলা হয়েছে:
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।
— (কুরআন, ২৪:৩০-৩১)
"যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার-অশ্লীলতা প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।”
ইসলামে হস্তমৈথুন করা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ইসলামি আইনবিদ কারো কারো মতে, হস্তমৈথুন বা স্বমেহন হল মুসলিমদের জন্য হারাম আবার কারো কারো মতে হস্তমৈথুন হালাল। ইসলামি ধর্মগ্রন্থ কুরআনে বিশেষভাবে হস্তমৈথুনের কথা উল্লেখ করা হয়নি। কিছু হাদীসে এটির কথা উল্লেখ রয়েছে তবে সেগুলিকে অবিশ্বস্ত হাদিস হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়ে থাকে।[৮০]
অধিকাংশ ইসলামি আইনবিদদের মতে, হস্তমৈথুন বা স্বমেহন হল মুসলিমদের জন্য হারাম বা নিষিদ্ধ এবং এটি একটি বড় পাপ বা কবিরাহ গুনাহ।[৮১][৮২][৮৩] তারা হস্তমৈথুন নিষেধের ক্ষেত্রে কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতের উদ্ধৃতি দেন।[৮৪]
“এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না। অতঃপর কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালংঘনকারী হবে।...মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। ... যারা বিবাহে সামর্থ নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রএহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন।”
— আন-নূর ২৪: ৫-৭, ৩০-৩১, ৩৩
সালাফি ফেকাহবিদ সালিহ আল মুনাজ্জিদ বলেন, আলেমগণ এ ব্যাপারে সাহাবী আব্দুল্লাহ্ বিন মাসউদ এর নিম্নোক্ত হাদিস দিয়ে দলিল দেন:
নবী মুহাম্মাদের সাথে আমরা এমন কিছু যুবকে ছিলাম যাদের কিছু ছিল না। তখন মুহাম্মাদ বললেন: হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যকার যার باءة (বিয়ের খরচ বহন ও শারীরিক সামর্থ্য) রয়েছে সে যেন বিয়ে করে ফেলে। কেননা, তা তার দৃষ্টি নিম্নগামী রাখতে ও লজ্জাস্থানকে হেফাজত করায় সহায়ক হয়। আর যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে না, সে যেন রোজা রাখে। কারণ তা যৌন উত্তেজনা প্রশমনকারী।”
— [সহীহ বুখারী (৫০৬৬)]
উক্ত আলেমদের মতে, "উক্ত হাদিসে নবী বিয়ে করতে অক্ষম হলে কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও রোযা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন, হস্তমৈথুন করার পরামর্শ দেননি। যদিও হস্তমৈথুনের প্রতি আগ্রহ বেশি থাকে, হস্তমৈথুন করা রোযা রাখার চেয়ে সহজ; কিন্তু তদুপরি তিনি সে অনুমতি দেননি।"[১২] ফকিহগণ হস্তমৈথুন প্রতিরোধে বিবাহ অক্ষম মুসলিম ব্যক্তিকে আল্লাহভীতি বৃদ্ধি করা ও আল্লাহর আদেশনিষেধ অধিক মেনে চলা, দ্রত বিবাহ করা, দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ, জীবন্ত কিংবা আঁকা উভয়প্রকার অশ্লীল দৃশ্যতে দৃষ্টিপাত হতে বিরত থাকা, রোজা রাখা, গায়রে মাহরামের সঙ্গ ত্যাগ, অসৎসঙ্গ ত্যাগ ও সৎসঙ্গ বৃদ্ধি, একাকি রাত্রিযাপন ত্যাগ, যৌনচিন্তা ত্যাগ, ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণময় চিন্তা বৃদ্ধি, হস্তমৈথুনের স্বাস্থ্যগত ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন হওয়া, শয়নের ইসলামি আদব অনুসরণ ও আল্লাহর কাছে ধের্য্য, সংযম ও সতীত্ব রক্ষার প্রার্থনা এবং ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃতভাবে এ কাজ করে ফেললে তওবা, ইস্তিগফার ও অধিক ভালো কাজ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।[১২]
অন্যদিকে হস্তমৈথুন নিয়ে কিছু ইসলামি পণ্ডিতের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে।[৮৫] তাদের মতে, কুরআনে হস্তমৈথুন নিয়ে সরাসরি কিছু বলা হয় নি, এবং হস্তমৈথুন বিষয়ক বলে গণ্য হাদিসগুলোতে সরাসরি হস্তমৈথুনের কোন উল্লেখ না থাকায় তারা এ ব্যাপারে হাদিসগুলোর অবস্থান অনির্দিষ্ট ও অস্পষ্ট বলে মনে করেন, এ কারণে হস্তমৈথুন সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে তাদের অভিমতে পার্থক্য রয়েছে। আদদিন-তারবিয়াহ অবিবাহিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে সকল প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণের পরও আত্মনিয়ন্ত্রণে পূর্ণ অপারগ হয়ে ব্যভিচারের আশঙ্কা থাকলে ব্যাভিচারের বিকল্প হিসেবে এর অনুমতি দিয়েছেন।[৮৬] হানাফি ও হাম্বলি মাজহাব অনুসারে, বৈধ যৌনসঙ্গীর অভাবে সমস্যায় ভুগছেন এমন নারী পুরুষ, মুসাফির ও বন্দীদের জন্য ব্যভিচারের ন্যায় তুলনামুলক বড় পাপ থেকে বেঁচে থাকার প্রয়োজনের ক্ষেত্রে তা বৈধ।[৮৩] আবার শাফেয়ী, মালেকি মাজহাব ও শিয়া আইনে এটি সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ। সালাফি অভিমত অনুসারে তা সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ এবং সালাফি আলেমগণ ক্ষেত্রবিশেষে হস্তমৈথুন বৈধ হওয়া বিষয়ক মতবাদকে বিভ্রান্তিমূলক দাবি করে এর কঠোর বিরোধিতা করে থাকেন, তাদের মতে, হস্তমৈথুন ত্যাগে অন্যতম করণনীয় হল "ভুল দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি পরিতুষ্টি দূর করা। কারণ কিছু কিছু যুবক ব্যভিচার ও সমকামিতা থেকে নিজেকে রক্ষা করার ধুয়া তুলে এই কু-অভ্যাসকে জায়েয মনে করে। অথচ হতে পারে সে যুবক ব্যভিচার ও সমকামিতার নিকটবর্তী হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই"। [১২] পূর্ব থেকেই একটি অভিমত প্রচলিত ছিল যে, ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকলে বিকল্প হিসেবে হস্তমৈথুনের অনুমতি দেয়া যেতে পারে।[৮৭] প্রাথমিক ইসলামি যুগের কিছু ইসলামি পণ্ডিত সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধতার বিষয়ে একমত পোষণ করেন নি। যে সকল স্বল্পসংখ্যক ফিকহবিদগণ বিবেচনাস্বাপেক্ষে হস্তমৈথুনের অনুমোদন দাবি করেন, তারা হস্তমৈথুনকারীদের মধ্যে যারা নিজ সতীত্ব রক্ষার জন্য হস্তমৈথুন করে এবং যারা সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও আকাঙ্ক্ষাকে তৃপ্ত করতে হস্তমৈথুন করে, তাদের উভয়কে আলাদা দৃষ্টিতে বিচার করে থাকেন।[৮৫][৮৮]
মুখমৈথুন
ইসলামে বৈবাহিক মুখমৈথুনকে কিছু আইনবিদ মাকরুহ তাহরীমী[৮৯][৯০] বা কঠোরভাবে বর্জনীয় বলে স্বাব্যস্ত করেছেন।[৯১] এর পেছনে কারণটি কুরআন ও হাদিসে একে উৎসাহিত করা হয় নি সে কারণে নয়, বরং তা হল শালীনতা, পবিত্রতা (ইসলামে ধর্মীয় রীতিনীতিগত পবিত্রতা বা তাহারাত) ও পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক দ্বন্দ্ব।[৯২] এর পেছনে সবচেয়ে সাধারণ দাবিটি হল,[৯০] যে, মুখ এবং জিহ্বা কুরআন পঠন ও আল্লাহর স্মরণে ব্যবহৃত হয়, তাই তা অপবিত্রতায় ব্যবহার করা উচিত নয়।[৯৩] প্রথমত, মুসলিম পণ্ডিতগণ মুখের মাধ্যমে গুপ্তাঙ্গ স্পর্শকে বর্জনীয় বলে বিবেচনা করেন, যার কারণ, বাম হাতের পরিবর্তে ডান হাতে গুপ্তাঙ্গ স্পর্শ করতে নবী মুহাম্মাদ নিষেধ করেছেন; তাদের মতে যেহেতু মুখ ডান হাতের তুলনায় অধিক সম্মানিত, সেই হিসেবে মুখের মাধ্যমে গুপ্তাঙ্গ স্পর্শ অধিক ঘৃণ্য ও বর্জনীয়। দ্বিতীয়ত, চারটি সুন্নি মাজহাবের পণ্ডিতগণের মধ্যে বীর্য নিঃসরণ পবিত্র কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, কিছু পণ্ডিত একে অপবিত্র মনে করেন এবং কিছু পণ্ডিত করেন না।
ইসলামি আইনশাস্ত্রে যেমন বৈবাহিক যৌনতাকে উৎসাহিত করা হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে বিবাহবহির্ভূত যৌনতাকে কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করে কিছু আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। উপরন্তু, কুরআনে এই আইনগুলোর লিখিত নিশ্চয়তা রয়েছে।
কুরআনের ২৪ (সূরা নূর):২-৩ আয়াতে বলা হয়েছে যে[৯৪], ইসলামি আইনে বিয়ে এবং উপপত্নীত্ব ব্যতীত অন্যান্য যৌন সম্পর্কসমূহ জিনা (ব্যভিচার) হিসেবে নিষিদ্ধ। উক্ত আয়াতসমূহে আরও বলা হয়েছে, অবিবাহিত ব্যভিচারী পুরুষ বা নারীকে একশতটি বেত্রাঘাত প্রদান করতে হবে এবং উক্ত ব্যভিচারী নারী বা পুরুষ অপর ব্যভিচারী পুরুষ বা নারীকেই শুধুমাত্র বিয়ে করতে পারবে; পাশাপাশি বিবাহিত ব্যভিচারী পুরুষ বা নারীকে (পরকীয়া) পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদন্ড দিতে হবে।[৯৫] ব্যভিচারের অভিযোগ প্রমাণ প্রসঙ্গে সূরা নিসার ১৫-১৬ আয়াতে চার জন পুরুষ সাক্ষী হাজির করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, এবং সূরা নূরের ৪-৫ আয়াতের বলা হয়েছে যে, চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে অপারগ হলে অভিযোগকারীকে আশিটি বেত্রাঘাতের শাস্তি প্রদান করতে হবে।
উল্লেখ্য, ইসলামি আইনে উপপত্নীত্ব হল একমাত্র যৌনতা যা বিবাহবহির্ভূত হওয়া সত্ত্বেও বৈধ বলে স্বীকৃত। মালিক ইবনে আনাস একটি বর্ণনায় বলেন যে, "ওমর বিন খাত্তাব বলেছেন যে যখন কোন কৃতদাসী তার মনিবের সন্তান জন্ম দেবে তখন সেই দাসী একজন "উম্মে ওয়ালাদ"-এ পরিণত হবে (সন্তানের মা, উপপত্নী)।"[২৫]
বিবাহবহির্ভূত যৌনতা নিষিদ্ধকারী আইনের ন্যায়, কুরআন নারীদের কিছু শ্রেণীকে নির্ধারিত করেছে যাদের সাথে সঙ্গম করা পুরুষদের জন্য রহিত করা হয়েছে। সূরা নিসার ২২-২৪ নং আয়াতে মাতা, কন্যা, বোন, খালা, ফুফু, ভাগ্নি, ভাতিজি, দুধমাতা, দুধ্মাতার কন্যা, স্ত্রীর মাতা, স্ত্রীগণের অন্য স্বামীর কন্যাগণ, পুত্রদের স্ত্রীগণ এবং ইতোমধ্যে বিবাহিত নারীদেরকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
পাশাপাশি, সূরা বাকারার ২২২ আয়াতে ঋতুবর্তী নারীদের সঙ্গে সঙ্গম করতে নিষেধ করা হয়েছে।[২৫]
আর শুধু পার্থিব জীবনে তোমরা কিছু স্বার্থ লাভ করার উদ্দেশ্যে তোমাদের দাসীদেরকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করো না, যদি তারা সতীত্ব বজায় রাখতে চায়।কুরআন২৪:৩৩
কোন মুসলিম যদি এ কাজে সম্পৃক্ত হয় তবে তার শাস্তি ব্যভিচারের অনুরুপ, তা হল অবিবাহিতের জন্য একশত বেত্রাঘাত ও একবছরের নির্বাসন এবং বিবাহিতের জন্য একশত বেত্রাঘাত ও মৃত্যুদন্ড। ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে আরবে এর প্রচলন ছিল। ইসলাম আগমনের পর নবী মুহাম্মাদ(সঃ) সকল স্তরে পতিতাবৃত্তিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। আবু মাসুদ আল আনসারি বর্ণিত:
"আল্লাহর বার্তাবাহক কুকুরের মূল্য, পতিতাবৃত্তি থেকে অর্জিত অর্থ এবং জাদুকরের আয়করা অর্থ নিতে নিষেধ করেছেন।"।সহীহ বুখারী, ৩:৩৪:৪৩৯(ইংরেজি)
জাবির হতে বর্ণিত, আব্দুল্লাহ বিন উবাই বিন সালুল তার দাসীদেরকে বলতেন, যাও এবং পতিতাবৃত্তির মমাধ্যমে আমাদের জন্য কিছু আয় করে আনো। এর পরপরই এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা উক্ত আায়াত নাজিল করেন:"আর তোমাদের অধীনস্থ দাসীদের পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করো না, যখন তারা ইহকালীন জীবনে ভালো কিছু পাবার আশায় নিজেদের সতীত্ব বজায় রাখতে চায়, আর কেউ যদি তাদেরকে বাধ্য করে, তবে নিশ্চই বাধ্য করার পর আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময়।" (২৪:৩৩)।
নবী বলেছেন: ইসলামে কোন পতিতাবৃত্তি নেই।কেউ যদি ইসলাম-পূর্ব সময়ে পতিতাবৃত্তির চর্চা করে থাকে, তাহলে তা হতে আগত সন্তান (দাসীর অর্থাৎ পতিতার) মালিকের সম্পত্তি হবে। যে ব্যক্তি বৈধ বিয়ে বা মালিকানা ছাড়া কাউকে সন্তান দাবি করে, তার কোন উত্তরাধিকারীও থাকবে না, এবং সে কারও উত্তরাধিকারও পাবে না।
তিনি বলেন, তাকে মুহম্মদের সহধর্মিনী আয়িশা বলেছেন, জাহিলী যুগে চার প্রকারের বিয়ে প্রচলিত ছিল। এক প্রকার হচ্ছে, বর্তমান যে ব্যবস্থা চলছে অর্থাৎ কোন ব্যক্তি কোন মহিলার অভিভাবকের নিকট তার অধীনস্থ মহিলা অথবা তার কন্যার জন্য বিবাহের প্রস্তাব দিবে এবং তার মোহর নির্ধারণের পর বিবাহ করবে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে মাসিক ঋতু থেকে মুক্ত হওয়ার পর এই কথা বলত যে, তুমি অমুক ব্যক্তির কাছে যাও এবং তার সাথে যৌন মিলন কর। এরপর তার স্বামী নিজ স্ত্রী থেকে পৃথক থাকত এবং কখনও এক বিছানায় ঘুমাত না, যতক্ষণ না সে অন্য ব্যক্তির দ্বারা গর্ভবতী হত, যার সাথে স্ত্রীর যৌন মিলন হত। যখন তার গর্ভ সুস্পষ্টবাবে প্রকাশ হত তখন ইচ্ছা করলে স্বামী তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করত। এটা ছিল তার স্বামীর অভ্যাস। এতে উদ্দেশ্য ছিল যাতে করে সে একটি উন্নত জাতের সন্তান লাভ করতে পারে। এ ধরনের বিবাহকে ‘নিকাহুল ইস্তিবদা’ বলা হত।
তৃতীয় প্রথা ছিল যে, দশ জনের কম কতিপয় ব্যক্তি একত্রিত হয়ে পালাক্রমে একই মহিলার সাথে যৌনমিলনে লিপ্ত হত। যদি মহিলা এর ফলে গর্ভবতী হত এবং কোন সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর কিছুদিন অতিবাহিত হত, সেই মহিলা এ সকল ব্যক্তিকে ডেকে পাঠাত এবং কেউই আসতে অস্বীকৃতি জানাতে পারত না। যখন সকলেই সেই মহিলার সামনে একত্রিত হত, তখন সে তাদেরকে বলত, তোমরা সকলেই জানো- তোমরা কি করেছ! এখন আমি সন্তান প্রসব করেছি, সুতরাং হে অমুক! এটা তোমারই সন্তান। ঐ মহিলা যাকে খুশি তার নাম ধরে ডাকত, তখন এ ব্যক্তি উক্ত শিশুটিকে গ্রহণ করতে বাধ্য থাকত এবং ঐ মহিলা তার স্ত্রীরূপে গণ্য হত।
চতুর্থ প্রকারের বিবাহ হচ্ছে, বহু পুরুষ একই মহিলার সাথে যৌন মিলনে লিপ্ত হত এবং ঐ মহিলা তার কাছে যত পুরুষ আসত, কাউকে শয্যা-শায়ী করতে অস্বীকার করত না। এরা ছিল বারবনিতা (পতিতা), যার চিহ্ন হিসাবে নিজ ঘরের সামনে পতাকা উড়িয়ে রাখত। যে কেউ ইচ্ছা করলে অবাধে এদের সাথে যৌন মিলনে লিপ্ত হতে পারত। যদি এ সকল মহিলাদের মধ্য থেকে কেউ গর্ভবতী হত এবং কোন সন্তান প্রসব করত তাহলে যৌন মিলনে লিপ্ত হওয়া সকল কাফাহ্ পুরুষ এবং একজন ‘কাফাহ্’ (এমন একজন বিশেষজ্ঞ, যারা সন্তানের মুখ অথবা শরীরের কোন অঙ্গ দেখে বলতে পারত- অমুকের ঔরসজাত সন্তান) কে ডেকে আনা হত সে সন্তানটির যে লোকটি সাথে এ সা’দৃশ্য দেখতে পেত তাকে বলত, এটি তোমার সন্তান। তখন ঐ লোকটি ঐ সন্তানকে নিজের হিসাবে অস্বীকার করতে পারত না। যখন রাসুলুল্লাহ (সা:) সত্য দ্বীনসহ পাঠানো হল তখন তিনি জাহেলী যুগের সমস্ত বিবাহ প্রথাকে বাতিল করে দিলেন এবং বর্তমানে প্রচলিত শাদী ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দিলেন।
শিয়া মুসলিমদের মতানুযায়ী, নবী মুহাম্মাদ নিকাহ মুতাহ নামক নির্দিষ্টকালের জন্য বিয়ের অণুমতি দিয়েছিলেন — যা ইরাক ও ইরানে বর্তমানে ইরান ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের শিয়া সমাজে নিষিদ্ধ পতিতাবৃত্তির বৈধ বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়।[৯৬] তবে সুন্নি মুসলিমগণের বক্তব্য হল, মুতাহ বিয়ের চর্চা নবী মুহাম্মাদ নিজেই বাতিল করেছিলেন এবং খলিফা আবু বকরের সময় তা পুনরাবির্ভাব ঘটার পর খলিফা ওমর পুনরায় এটি নিষিদ্ধ করেছিলেন।[৯৭][৯৮][৯৯]
“
" আয়াশ ইবনে সালামাহ তার পিতার সূত্রে বলেছেন, আল্লাহর রাসুল আওতাস যুদ্ধের বছর তিনদিনের (মুতাহ) বিবাহের অণুমতি দান করেছিলেন। তারপর তিনি তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে খলিফা ওমরও এই কাজ করতে নিষেধ করেন।"
ধর্ষণ বা যিনা-আল জিবর হল জোরপূর্বক বিবাহ বহির্ভূত জোরপূর্বক যৌনসঙ্গম, যা ইসলামে নিষিদ্ধ, ইসলামি আইন অনুযায়ী এটি হিরাবাহ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। তিরমিজি ও আবু দাউদের বর্ণিত একটি অভিন্ন হাদিসে নবী মুহাম্মাদ কর্তৃক কোন এক ধর্ষককে শাস্তিস্বরূপ পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করার কথা উল্লেখিত হয়েছে।[১০০]
আলকামা তার পিতা ওয়াযেল থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী মুহাম্মাদের যুগে জনৈক মহিলা সালাত আদায়ের জন্য গমনকালে পথিমধ্যে তার সাথে একজন পুরুষের দেখা হলে, সে ব্যক্তি জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করে। সে মহিলা চিৎকার দিলে, তার পাশ দিয়ে গমনকালে জনৈক ব্যক্তি এর কারণ জানতে চায়। তখন সে মহিলা বলে, অমুক ব্যক্তি আমার সাথে এরূপ অপকর্ম করেছে। পরে তার পাশ দিয়ে মুহাজিরদের একটি দল গমনকালে সে মহিলা তাদের বলে, অমুক ব্যক্তি আমার সাথে এরূপ কাজ করেছে। তারপর তারা গিয়ে এক ব্যক্তিকে ধরে আনে, যার সম্পর্কে তাদের ধারণা ছিল যে, সে-ই এরূপ করেছে। এরপর তারা সে ব্যক্তিকে উক্ত মহিলার কাছে উপস্থিত করলে, সেও বলে হ্যাঁ। এই ব্যক্তিই এ অপকর্ম করেছে। তখন তারা সে ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ এর নিকট নিয়ে যায়। মুহাম্মাদ যখন সে ব্যক্তির উপর শরীআতের নির্দেশ জারী করার মনস্থ করেন, তখন মহিলার সাথে অপকর্মকারী ব্যক্তি দাড়িয়ে যায় এবং বলে ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি -ই অপকর্ম করেছি। তখন মুহাম্মাদ সে মহিলাকে বলেন তুমি চলে যাও, আল্লাহ তোমার অপরাধ মাফ করে দিয়েছেন। এরপর তিনি ভুলভাবে ধরে আনা লোকটির সাথে উত্তম ব্যবহার করেন এবং ধর্ষক ব্যক্তিটির জন্য বলেন একে পাথর মেরে হত্যা কর। কিছু আইনবিদের মতে, তাকে পাথর মেরে হত্যা কর, এই অংশটুকু যঈফ বা দুর্বল, এই অংশ ব্যতীত হাদীসের বাকি অংশটুকু হাসান বা নির্ভরযোগ্য। হাসান, এ কথাটি বাদেঃ ‘‘তোমরা একে পাথর মারো।’’ অগ্রাধিকারযোগ্য কথা হলো, তাকে পাথর মারা হয়নি। তিনি আরও বলেন, অপর এক অনুবাদে বলা হয়েছে, সাহাবীগণ লোকটিকে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করার কথা বললে নবী বলেন: লোকটি এমন তাওবা করেছে যে, সমস্ত মদীনাবাসী এরূপ তাওবা করলে, তা কবূল হতো।
তাই হাদিসের বিবৃতি অনুযায়ী অধিকাংশ আইনবিদের বক্তব্য হল, ধর্ষকের শাস্তি হল মৃত্যুদণ্ড। তবে কিছু আধুনিক আইনবিদ মনে করেন, ধর্ষকের শাস্তি একজন জিনাকারীর মতই, অর্থাৎ ধর্ষক বিবাহিত হলে তার শাস্তি মৃত্যুদন্ড এবং অবিবাহিত হলে তাকে একশত বেত্রাঘাত প্রদান এবং এক বছরের জন্য নির্বাসন দিতে হবে এবং উভয় ক্ষেত্রেই শাস্তি জনসম্মুখে প্রদান করতে হবে। ধর্ষিতাকে কোন প্রকার শাস্তি দেয়া হবে না, কারণ ধর্ষিতাদের সাধারণত প্রতিরোধ ক্ষমতার দিক থেকে দুর্বল হয়ে থাকেন।[১০১]
নবী লূত-এর সাদুম সম্প্রদায়ের "সীমালঙ্ঘনমূলক" কাজগুলোকে "সডোমি" বলা হয়, বর্তমানে সডোমি বলতে পায়ুকাম (লিওয়াত) ও মুখমৈথুনকে বোঝানো হয়। কুরআনে লুতের সম্প্রদায়ের ঘটনার মাধ্যমে পুরুষ সমকামী পায়ুসঙ্গমের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।[১০২]। মুহাম্মাদ তার অনুসারীদের মাঝে লূত-এর অধীনস্থ সডোম ও গোমরাহ সম্প্রদায়ের এই সকল "সীমালঙ্ঘনমূলক কর্মকাণ্ড" ছড়িয়ে পড়ার ব্যপারে সতর্ক করেছেন এবং তার অনুসারীদের মাঝে এসব কর্মে জড়িত ব্যক্তিদের মৃত্যুদন্ড দেয়ার আদেশ দিয়েছেন। আবু বকর তার খিলাফতের সময় এ ধরনের ব্যক্তিদের উপর দেয়াল ধ্সিয়ে দিতেন এবং আলী তার খিলাফতের সময় এদের আগুনে পুড়িয়ে মারতেন। ইসলামি বিধান অনুযায়ী মানবদেহে পায়ূতে লিঙ্গ প্রবেশ হারাম।[১০৩] নিজ স্ত্রীর সঙ্গেও পায়ূমৈথুন হারাম বা নিষিদ্ধ।[১০৪][১০৫] কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে পায়ুসঙ্গমের প্রস্তাব স্ত্রীর কর্তব্য হল তা বাধা দেয়া, এবং স্বামী যদি জোর করে তবে স্ত্রী চাইলে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করতে পারে।[১০৬] স্বামী স্ত্রীর পায়ুসঙ্গমে বিবাহ বাতিল না হলেও স্ত্রী যদি চায় এ অভিযোগে তালাকের আবেদন করতে পারবে।[১০৭] ইসলামি বিধান অনুসারে, পায়ুসঙ্গম কবিরা গুনাহ বা সর্বোচ্চ পাপসমূহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।[১০৮]
সমলিঙ্গীয় যৌনাচার বা সমকামিতা ইসলামে নিষিদ্ধ[৫৮], এছাড়াও ইসলামের দৃষ্টিতে এটি একটি নিকৃষ্টতম পাপ বা কবীরা গুনাহ।[১০৯][১০৯][১১০][১১১][১১২][১১৩] ইসলামের দৃষ্টিতে এটি একটি বিকৃত যৌনাচার।[১১৪] সমলিঙ্গীয় যৌনাচারের কারণে অতীতে নবী লূত-এর সম্প্রদায়কে ঐশী বিপর্যয়ের ধ্বংস করে দেয়ার সাবধানকারী ঘটনা কুরআনের একাধিক সূরা[১১৫] ও হাদীসে উল্লেখ রয়েছে।[১১০][১১১][১১৬] এছাড়া নবী মুহাম্মদ সমকামীদের অভিসম্পাত করেছেন, নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্রস জেন্ডার বিহেভিয়ারকে (আন্তঃলিঙ্গীয় আচরণ, নারী কর্তৃক পুরূষের পোশাক বা আচরণ এবং পুরুষ কর্তৃক নারীর পোশাক বা আচরণ অণুকরণ) অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন, সমাজকে সমকামিতার প্রভাবমুক্ত রাখতে সমকামীদেরকে (পুরুষ
সমকামী জোড়দের[১১৭]) মৃত্যুদণ্ড প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন।[১১১][১১৮][১১৯]আল-নুয়ায়রি (১২৭২–১৩৩২) তার নিহায়া গ্রন্থে উদ্ধৃত করেন যে মুহাম্মাদ বলেছেন তিনি তার সম্প্রদায়ের জন্য লুতের জণগণের কর্মের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি ভয় করেন (মদ ও নারীর ছলনার ব্যাপারে তিনি সমতুল্য ধারণা পোষণ করেছেন বলে মনে করা হয়।)।[১২০] এছাড়া চারখলিফা সহ প্রাথমিক খলিফাগণও সমকামী জোড়কে বিভিন্নভাবে প্রাণদণ্ড প্রদানের মাধ্যমে এ ব্যাপারে ঐকমত্য প্রদর্শন করেছেন।[১০২] তবে সমকামিতা নিষিদ্ধ হলেও প্লেটোনিক সম্পর্ককে ইসলামে ব্যাপকভাবে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। ইসলামে সমকামিতা বিষয়ক আলোচনা মূলত পুরুষদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত; ফুকাহাগণ (ইসলামি আইনবিদ) এব্যাপারে সম্মত হয়েছেন যে "নারী সমকামিতার জন্য কোন হুদুদ শাস্তি নেই, কারণ এটি জিনা নয়। তবে একটি তাজির শাস্তি অবশ্যই প্রয়োগ করতে হবে, কারণ এটি একটি পাপ..'".[১২১] যদিও নারীদের সমকামিতার কথা ইসলামের ইতিহাসে পাওয়া যায় না বললেই চলে, আল-তাবারি আল হাদির শাসনকালে তার কার্যক্রম নিয়ে লোকমুখে প্রচলিত ও সমালোচিত কাহিনীর সংকলনে উক্ত খলিফার হেরেমে একজোড়া সমকামী দাসীর অপ্রচলিত শাস্তির কথা উদ্ধৃত করেন।[১২২] কিছু আইনবিদ মনে করেন যৌনসঙ্গম একমাত্র সে ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব যার শিশ্ন বা শিশ্নের ন্যায় নিম্নাঙ্গ আছে;[১০৮] তাই যৌনমিলনের উক্ত সংজ্ঞানুযায়ী এটি সঙ্গীর ছিদ্রপথে ন্যূনতম পরিমাণ হিসেবে অন্ততপক্ষে শিশ্নাঙ্গের অগ্রভাগ প্রবেশ করানোর উপর নির্ভরশীল।[১০৮] যেহেতু নারীদের শিশ্ন বা অণুরূপ কোন নিম্নাঙ্গ নেই এবং একে অপরের ছিদ্রপথে অঙ্গ সঞ্চালনে সক্ষম নয়, তাই উক্ত সংজ্ঞানুযায়ী তারা একে অপরের সঙ্গে শারীরিকভাবে জিনায় লিপ্ত হতে অক্ষম বলে গণ্য হয়।[১০৮]
অজাচার
অজাচার হলো মাহরাম বা এমন ব্যক্তির সঙ্গে যৌনসঙ্গম যার সঙ্গে রক্ত-সম্পর্ক থাকার দরুণ বিবাহ ইসলামে নিষিদ্ধ। যার সঙ্গে বিবাহ ইসলামে নিষিদ্ধ তার সঙ্গে যৌনসঙ্গম যিনার অন্তর্ভুক্ত। হাদিসে অজাচারকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং অজাচারীকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ইবনে আবাস হতে বর্ণিত: যে নবী বলেছেন: "যদি কোন লোক আরেক লোককে বলে: 'ওহে ইহুদী' তবে তাকে বিশটি বেত্রাঘাত করো। যদি সে বলে: 'ওহে হিজড়া' তাহলে তাকে বিশটি বেত্রাঘাত করো। আর কেও যদি মাহরাম (আপন পরিবারে সদস্য বা রক্ত সম্পর্কের অবিবাহযোগ্য আত্মীয়) ব্যক্তির সাথে যৌন সম্পর্ক করে তবে তাকে হত্যা কর।"
ইসলামে কোন পশুর সঙ্গে মানুষের বিবাহ হতে পারে না। তাই পশুসঙ্গম যিনার অন্তর্ভুক্ত। পশুর সঙ্গে যৌনসঙ্গম ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং এই কাজে লিপ্ত ব্যক্তি ও ব্যবহৃত পশু উভয়কে হাদিসে হত্যা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত: আল্লাহর রাসুল বলেছেন: "তোমরা যদি পশুর সাথে সঙ্গমরত কাওকে খুঁজে পাও তবে তাকে এবং ওই পশুকে হত্যা করবে।" ইবনে আব্বাসকে প্রশ্ন করা হল: "পশুটির কি দোষ?" তিনি বললেন: "আমি আল্লাহর রাসূলকে এ সম্পর্কে কিছু বলতে শুনিনি , কিন্তু আমার মতে ওই পশুর সাথে এরূপ জঘন্য অপকর্ম সঙ্ঘটিত হওয়ার কারণে আল্লাহর রাসুল উক্ত পশুর মাংস খেতে বা তা ব্যবহার করা পছন্দ করেননি।"
তবে, আবু দাউদের অপর একটি নির্ভরযোগ্য হাসান হাদীসে এর শাস্তি ব্যতিক্রমভাবে পাওয়া যায়,
ইবনু আব্বাস সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, পশুর সঙ্গে সঙ্গমকারী হাদ্দের (মৃত্যুদন্ডের) আওতাভুক্ত নয়। ইমাম আবূ দাঊদ বলেন, আতাও এরূপই বলেছেন। হাকাম বলেন, আমি মনে করি তাকে বেত্রাঘাত করা উচিত; কিন্তু তা হাদ্দের সীমা (একশো বেত্রাঘাত) পর্যন্ত পৌঁছা উচিত নয়। হাসান বাসরী বলেন, সে যেনাকারীর সমতুল্য। ইমাম আবূ দাঊদ বলেন, আসিম কর্তৃক বর্ণিত হাদীস আমর ইবনু আবূ আমরের হাদীসকে দুর্বল প্রমাণিত করে।
মুখান্নাসুন (مخنثون "মেয়েলী", "নারীর বেশধারী পুরুষ", একবচন মুখান্নাস) হল প্রাচীন আরবি ভাষায়, রূপান্তরিত নারীর বর্তমান ধারার একটি প্রাচীন উত্তরসূরি, যাকে জোরপূর্বক নপুংসক হতে বাধ্য করা হয়েছে। হাদিসে ও ইসলামি পণ্ডিতদের দ্বারা মুখান্নাতুন শব্দটি গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। শব্দটি দ্বারা এমন ব্যক্তিকে বোঝায় যে আচরণে, কথায়, বেশভূষায়, চলনে বলনে, এবং অন্যান্য বিষয়ে নারীর ন্যায় আচরণ করে। মুখান্নাত বা মেয়েলি পুরুষ হল সেই ব্যক্তি যে নিশ্চিতভাবে পুরুষ, খুন্তা (আন্তঃলিঙ্গ) দের মত জন্মগত সমস্যাধারী নয়। মেয়েলি আচরণকারী মানুষ দুই প্রকারের।
(i)যারা জন্মগতভাবে এরূপে সৃষ্ট (আন্তঃলিঙ্গ); ফলে তাদের এ ব্যাপারে কোন পাপ নেই।
(ii)যারা জন্মগতভাবে এরূপে সৃষ্ট নয়; বরং তারা চলন ও বলনে নারীদের অনুকরণ করতে পছন্দ করে। এ ধরনের লোকদের হাদিসে অভিশাপ দেয়া হয়েছে।[১২৩]
নিম্নোক্ত হাদিসটিতে ঐতিহ্যবাহী রূপান্তরকামী আচরণের প্রতি বলা হয়েছে:
আবদুল্লাহ বিন আব্বাস কর্তৃক বর্ণিত: নবী মেয়েলী পুরুষদের অভিশাপ দিয়েছেন; সেসব পুরুষদের যারা (নারীদের আচরণ) সমতুল্য আচরণ অনুকরণ করে এবং শেসব নারীদের যারা পুরুষদের আচরণ অনুকরণ করে, এবং তিনি বলেছেন, "এদেরকে তোমাদের বাড়ি থেকে বের করে দাও।" নবী এমন পুরুষদের বাড়ি থেকে বের করে দিতেন, এবং ওমরও এমন পুরুষদের বাড়ি থেকে বের করে দিতেন।সহীহ বুখারী, ৭:৭২:৭৭৪(ইংরেজি)
লিঙ্গ পরিবর্তন অস্ত্রপাচার অর্থ যে সকল সুস্থ পুরুষ ও নারী, যারা কোন প্রকার বিকলাঙ্গতায় ভুগছেন না, যারা বিয়ে ও প্রজনন করতে সক্ষম, তারা নিজেদেরকে বিপরীত লিঙ্গের দৈহিক আকারে রূপান্তরিত করার জন্য বাছাইকৃত অস্ত্রপাচার করার সিদ্ধান্ত নেন। এ ধরনের অস্ত্রপাচার ইসলামি আইনে নিষিদ্ধ কারণ এটি হল অপ্রয়োজনে এবং আত্ম-অহংকারবশত আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করা। কুরআনে উল্লেখিত হয়েছে শয়তান বলে:
“এবং আমি তাদের আদেশ দেবো যেন তারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করে।”
— [সূরা নিসা’:১১৯]
উপরন্তু এটি বিপরীত লিঙ্গকে অনুকরণ করার চরমতম পন্থা। ইসলামিক নবী মুহাম্মাদ বলেন: “আল্লাহ সে সকল পুরুষদের অভিশাপ দেন যারা নারীদের অনুকরণ করে এবং সে সকল নারীদেরকে যারা পুরুষদের অনুকরণ করে।” [১২৪]
আন্তঃলিঙ্গ
আন্তঃলিঙ্গ হল সেই ব্যক্তি যার দেহে নারী ও পুরুষ উভয়ের যৌনাঙ্গ উপস্থিত। ফিকহ শাস্ত্রে এ ধরনের ব্যক্তিকে খুনথা বা খুনসা বলা হয়ে থাকে।[১২৫] খুনথা মূলত তিন প্রকারের:
১. যদিও তার দেহে উভয় যৌনাঙ্গ উপস্থিত, কিন্তু সে পুরুষের যৌনাঙ্গ হতে মূত্রত্যাগ করে। এই ব্যক্তি পুরুষদের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং পুরুষদের উপর প্রযোজ্য নিয়মকানুন তার উপরও প্রযোজ্য হবে।
২. যে ব্যক্তি নারী যৌনাঙ্গের মাধ্যমে মূত্রত্যাগ করে তাকে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। নারীদের উপর প্রযোজ্য আইনকানুন তার উপরও প্রযোজ্য হবে। এই পদ্ধতি বয়ঃপ্রাপ্তির আগ পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে। বয়ঃপ্রাপ্তির পর, উক্ত ব্যক্তিকে আবার পরীক্ষা করতে হবে। যদি তার পুরুষের ন্যায় সিক্তস্বপ্ন ও বীর্যস্খলন হয় তাহলে শে পুরুষ হিসেবে গণ্য হবে। আর যদি তার নারীদের মত স্তন বৃদ্ধি ও অন্যান্য নারী বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটে তখন তাকে নারী হিসেবে গণ্য করা হবে।
৩. যখন নারী ও পুরুষ বৈশিষ্ট্য সমান হবে এবং তার মধ্যে পুরুষ কিংবা নারী বৈশিষ্ট্যের আধিক্য নির্ণয় করা সম্ভব হবে না তখন তাকে খুনথা মুশকিল হিসেবে আখ্যায়িত করা হবে। এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে আলাদা আইন প্রযোজ্য হবে। উদাহরণস্বরূপঃ খুনথা মুশকিলের জন্য রেশম ও অলংকার পরিধান বৈধ হবে না, এই দুটোই শুধুমাত্র নারীদের জন্য অনুমোদিত, কিন্তু যেহেতু উক্ত ব্যক্তির অবস্থা নিশ্চিত নয়, তাই সতর্কতা হিসেবে উক্ত ব্যক্তি রেশম ও অলংকার পড়তে পারবে না, কারণ তার মধ্যে অধিক পুরুষ হবার সম্ভাবনা এখনো বিদ্যমান আছে। এমন ব্যক্তি মাহরাম ছাড়া ভ্রমণ করতে পারবে না,কারণ তার মধ্যে অধিক নারী হবার সম্ভাবনা এখনো বিদ্যমান আছে। যখন এমন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে, তাকে গোসল দেয়া যাবে না কারণ প্রশ্ন উত্থাপিত হবে যে, কে তাকে গোসল করাবে, নারী নাকি পুরুষ। এমন ব্যক্তিকে তায়াম্মুম করিয়ে দিতে হবে। কোন গায়রে মাহরাম তার তায়াম্মুম করায় তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে দুই হাত কাপড় দিয়ে ঢেকে নিতে হবে। তবে মাহ্রাম ব্যক্তির হাত কাপড় দিয়ে ঢাকতে হবে না।[১২৫]
লিঙ্গ নিশ্চিত অবস্থায় বিবাহের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে, উক্ত ব্যক্তি তার বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিকে বিয়ে করতে পারবে। কিন্তু যদি লিঙ্গ নির্ধারণ অনিশ্চিত হয়, তবে সে ক্ষেত্রে তার বিবাহ বৈধ হবে না, কারণ যদি সে পুরুষ হয় তবে অপর পুরুষকে বিয়ে করতে পারবে না, আর যদি সে নারী হয় তবে অপর নারীকে বিয়ে করতে পারবে না। এমন ব্যক্তি যদি নারীদের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে এবং নিজেকে পুরুষ বলে দাবি করে, তবে সেটি তার অধিকহারে পুরুষ হওয়ার একটি লক্ষণ বলে বিবেচিত হবে; আর যদি সে পুরুষদের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে এবং নিজেকে নারী বলে দাবি করে, তবে সেটি তার অধিকহারে নারী হওয়ার একটি লক্ষণ বলে বিবেচিত হবে।[১২৩]
সংশোধনমূলক আন্তঃলিঙ্গ অস্ত্রপাচার আন্তলিঙ্গের জন্য বৈধ কারণ এটি যৌনাঙ্গের বিকলাঙ্গতা দুর করে এবং ব্যক্তির বাহ্যিক গঠন ও ক্রোমোজোমীয় লিঙ্গের সঙ্গে সামঞ্জস্য অর্জনে ভূমিকা রাখে; উপরন্তু তার অর্জিত যৌনাঙ্গ হল চিকিৎসা যা আল্লাহর সৃষ্টির বিকৃতি ঘটানো কিংবা বিপরীত লিঙ্গের অনুকরণ নয়।[১২৪]
জন্মনিয়ন্ত্রণ
কুরআনে জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে কিছু বলা হয় নি। তবে জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে মুসলিমগণ হাদিসকে নির্দেশ করে থাকেন। তাদের মতে, জন্মনিয়ন্ত্রণ অনুমোদিত, যখন তা যৌক্তিক কোন কারণে অস্থায়ীভাবে গ্রহণ করা হয়।[১২৬] এই প্রশ্নে মুহাম্মাদ সাহাবীদের ঘটনাকে উল্লেখ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ যাবির, মুহাম্মাদ একজন সাহাবী, একটি হাদিস বর্ণনা করেন যাতে একজন লোক মুহাম্মাদের কাছে এসে বলে
"আমার একজন দাসী আছে ... আমি তার সঙ্গে সঙ্গম করেছি, কিন্তু আমি আশঙ্কা করি সে সন্তানসম্ভবা না হয়ে পড়ে। নবী উত্তর দিলেন, তুমি যদি চাও তবে তার সঙ্গে আযল (কয়শাস ইন্টারাপশাস, সঙ্গমকালে বীর্যপাতের পূর্বে শিশ্ন প্রত্যাহার) চর্চা করো, ...″[১২৭]
এ কারণে, হাদিস অনুযায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণের "প্রত্যাহার পদ্ধতি" (কয়শাস ইন্টারাপশাস) অণুমোদিত। মুসলিম আইনবিদগণ এর অণুমতির ব্যাপারে সম্মতি দেন[১২৮] এবং এর সঙ্গে তুলনীয় জন্মনিয়ন্ত্রণের অন্যান্য পদ্ধতিগুলোকেও অণুমোদন দেন (উদাহরণ: কনডমের ব্যবহার)।[১২৯]
এর সমর্থনে অন্যান্য হাদিসগুলো হল:
কোন এক লোক বলল: "হে আল্লাহর রাসুল, আমার একজন দাসী আছে এবং আমি তার সঙ্গে আযল করি, আর সে সন্তানসম্ভবা হোক তা আমি চাই না।...ইহুদিরা বলে যে, আযল করা হল জীবিত কন্যাদের অল্প পরিমাণে দাফন করার মত।" নবী বললেন: "ইহুদিরা মিথ্যা বলে। আল্লাহ যদি তা সৃষ্টি করতে চায়, তবে তুমি চাইলেও কোনভাবেই তা ফেরাতে পারবে না।"[১৩০]
"হে আল্লাহর নবী! আমরা আমাদের গণিমতের অংশে নারী যুদ্ধবন্দী পেয়েছি, আযলেরর ব্যপারে আপনার মন্তব্য কি?" নবী বললেন, "তোমরা আসলেই কি তা কর? এটা না করাই তোমাদের জন্য ভালো। আল্লাহ যে সকল প্রাণ সৃষ্টি করার জন্য মনস্থির করেছেন, তা যেভাবেই হোক সৃষ্টি হবেই। "[১৩১]
ইসলামে এমন কোন অস্ত্রপাচারের অনুমতি নেই, যা স্থায়ীভাবে বন্ধ্যাকরণের সুচনা করে, যেমন ভ্যাসেকটমি (পুরুষের ভাস ডিফারেন্স বিচ্ছিন্নকরণ) বা লাইগেশন (নারীর ডিম্বনালী বিচ্ছিন্নকরণ), যদি না তা স্ত্রী প্রকৃতক্ষে অসুস্থ হয় বা নিশ্চিতভাবে সন্তানধারণে অক্ষম হয়।[১৩২][১৩৩] সাধারণ পরিস্থিতিতে, বন্ধ্যাকরণ শরিয়াহতে নিশ্চিতভাবে ও সার্বজনীন ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নিষিদ্ধ, যা বিয়ের প্রাথমিক উদ্দেশ্য সন্তান গ্রহণের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, যা ইমাম গাজ্জালী তার ইহইয়া উলুম আল-দীন গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন।
অধিকন্তু, বন্ধ্যাকরণ হল সশরীরের অঙ্গহানির একটি প্রকরণ (আরবিতে মুসলা), যা শরিয়াহতে পরিষ্কারভাবে নিষিদ্ধ। সূরা আল-নিসাতেশয়তানের উক্তি এভাবে উদ্ধৃত রয়েছে যে,:
“তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব, তাদেরকে আশ্বাস দেব; তাদেরকে পশুদের কর্ণ ছেদন করতে বলব এবং তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব। ”
তবে, নিশ্চিত প্রয়োজনের ক্ষেত্রে, বন্ধ্যাকরণ অনুমোদিত হয়। এটি কুরআন ও হাদিসের নির্দেশনাভিত্তিক ইসলামি আইনশাস্ত্রের প্রসিদ্ধ নীতি যাতে বলা হয়:[১৩৪]
“প্রয়োজনীয়তা নিষিদ্ধ বিষয়গুলোকেও বৈধ করে দেয়।”
— (ইবনে নুজাইম, আল-আশবাহ ওয়া আল-নাযাইর ৮৫)
স্থায়ীভাবে বন্ধ্যা হওয়ার অর্থ নিম্নোক্ত দুটির যে কোন একটি হতে পারে:
– যখন তা প্রয়োজনের খাতিরে করা হয়, যেমন কোন নির্ভরযোগ্য ডাক্তারি প্রমাণ দ্বারা যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, গর্ভধারণ মায়ের জীবনের জন্য বিপদের কারণ হবে, এবং এর নিরাময় চিকিৎসার আর কোন আশা নেই, তাই স্থায়ী বন্ধ্যাকরণের ফলে বিপদ কেটে যাবে। এমন সমস্যার ক্ষেত্রে বন্ধ্যাকরণ অনুমোদিত বলে গৃহীত হবে।
– যখন এর কোন প্রয়োজন নেই। নিঃসন্দেহে এমন ক্ষেত্রে এটি একটি অপরাধমূলক কাজ ও একটি বড় পাপ, কারণ এটি বিনা কারণে ঈশ্বরের প্রাকৃতিক সৃষ্টির বিরুদ্ধে সীমালঙ্ঘন, এবং সন্তান উৎপাদন প্ররতিরোধ করার পদক্ষেপ, যেখানে সন্তান উৎপাদনকে ইসলামে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে, এবং তা এককই সাথে তা ঈশ্বরের প্রতি তার দেওয়া সন্তানধারণ ক্ষমতার ক্ষেত্রে অকৃতজ্ঞতা প্রদর্শনের বহিঃপ্রকাশ, যা ঈশ্বর তার সৃষ্ট জীবকে নিজ অনুগ্রহস্বরূপ দিয়ে থাকেন। পাশাপাশি অন্যান্য প্রকারেও এমন কিছু করা অনুমোদিত নয় যা গর্ভধারণকে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়।[১৩৫]
খোজাকরণ
খোজাকরণ হল শুক্রাশয় অপসারণ। আরবি অনুবাদ অনুযায়ী তা শুক্রাশয় ও শিশ্ন অপসারণ উভয়কেই বোঝায়। কিছু পণ্ডিত এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য করে থাকেন এবং বলেন: যদি শুধু শুক্রাশয় কাটা হয় তবে সে খোজা আর যদি তার শিশ্নও কাটা হয় তখন সে অঙ্গহানিকৃত। হাদিস অনুযায়ী ইসলামে তা নিষিদ্ধ।[১৩৬] ইবনে হাজার আস্কালানী বলেন:
এটি নিষিদ্ধ, সুতরাং এটি হারাম, এবং আদমের পুত্র (যেমন, মানুষ) ক্ষেত্রে এ বিষয়ে কোন মতপার্থক্য নেই।
এই নিষেধাজ্ঞাটি নিশ্চিত হয় কিছু হাদীসের মাধ্যমে, নবী মুহাম্মদের যুগের নিম্নবর্ণিত কিছু হাদীসে বলা হয়েছে যে, কিছু অনুসারী তাদের স্ত্রীদের অভাবে খোজা হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু নবী মুহাম্মাদ তা নিষেধ করেছিলেন এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের তিন দিনের সামইকভাবে মুতাহ নামক অস্থায়ী বিয়ের অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের শেষে তিনি তা স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করেনঃ
‘আবদুল্লাহ ইব্নু মাস’উদ থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, মুহাম্মাদের সঙ্গে জিহাদে অংশ নিতাম; কিন্তু আমাদের কোন কিছু ছিল না। সুতরাং আমরা তার কাছে বললাম, আমরা কি খাসি হয়ে যাব? তিনি আমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করলেন এবং কোন মহিলার সঙ্গে একটি কাপড়ের বদলে হলেও চুক্তিভিত্তিক বিয়ে করার অনুমতি দিলেন এবং আমাদেরকে এই আয়াত পাঠ করে শোনালেনঃ অর্থাৎ, “ওহে ঈমানদারগণ! পবিত্র বস্তুরাজি যা আল্লাহ তোমাদের জন্য হালাল করে দিয়েছেন সেগুলোকে হারাম করে নিও না আর সীমালঙ্ঘন করো না, অবশ্যই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালবাসেন না।” (আল-মায়িদাহ ৫: ৮৭)
রাবী' ইবনু সাবরাহ আল জুহানী তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, মুহম্মদ মুত্'আহ নিষিদ্ধ করেছেন এবং বলেছেন, হে লোকসকল, আমি তোমাদেরকে মুতাহ বিয়ের অনুমতি দিয়েছিলাম কিন্তু এখন থেকে আল্লাহ তা নিষিদ্ধ করেছেন। সাবধান! আজকের এ দিন থেকে কিয়ামাত পর্যন্ত মুত'আহ হারাম। যে কেউ (ইতোপূর্বে) মুত্'আহ বাবদ যা কিছু দিয়েছে, সে যেন তা ফেরত না দেয়।
মুহাম্মাদ ইবনু রাফি' ..... সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব থেকে বর্ণিত। তিনি সা'দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস কে বলতে শুনেছেন, উসমান ইবনু মাযউন (রাযিঃ) কৌমাৰ্যব্রত অবলম্বনের প্রস্তাব করলে মুহাম্মাদ তাকে (তা করতে) নিষেধ করে দেন। তিনি যদি তাকে অনুমতি দিতেন তবে অবশ্যই আমরা নিজেদের খোজা করে নিতাম।
সালামা ইবনে রাওহ্ ইবনে যিনবা থেকে তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি তার এক গোলামকে নির্বীর্য (খোজা) করে মুহাম্মাদের নিকট এলেন। নবী তাকে এই অঙ্গহানির কারণে দাসত্বমুক্ত করে দিলেন।
কাতাদাহ সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাম্মাদ বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার গোলামকে নিবীর্য করবে (অন্ডকোষ কাটবে বা খোজা করবে) আমরাও তাকে নিবীর্য (খোজা) করবো। অতঃপর হাদীসের বাকি অংশ শু‘বাহ ও হাম্মাদের হাদীসের মতই।
গর্ভপাত নিয়ে বিভিন্ন মুসলিম আইনশাস্ত্রে বিভিন্ন মত রয়েছে, যদিও অধিকাংশ আইনবিদই একে নিষিদ্ধ বা নিরুৎসাহিত করে থাকেন।[১৩৮] সাধারণ অবস্থায়, ইসলামে গর্ভপাত নিষিদ্ধ। সকল আলেমই গর্ভে সন্তান আসার পর গর্ভপাত না করার অভিমত দিয়ে থাকেন। তবে কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে গর্ভপাতের অণুমতি দেয়া হয়, উদাহরণস্বরূপ মায়ের স্বাস্থ্য যদি (গুরুতরভাবে) হুমকির সম্মুখীন হয় এবং মায়ের জীবন বাঁচাতে যদি গর্ভপাতের প্রয়োজন হয় তবে। বিশ্বের সকল মুসলিম একমত যে, মায়ের জীবন ভ্রুনের জীবন হতে অধিক গুরুত্বের দাবি রাখে।[১৩৯] "গর্ভপাতের ছোট ক্ষতিকে গ্রহণ করে মাতৃমৃত্যুর বড়ক্ষতিকে রোধ করা উচিত" এই মূলনীতির উপর ভিত্তি করে মুসলিম আইনবিদগণ এমন পরিস্থিতিতে গর্ভপাতের অণুমতি দিয়ে থাকেন। এরকম ক্ষেত্রে, একজন চিকিৎসককে আলেমের তুলনায় অধিক উত্তম বিচারক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে কোন কারণ ব্যতিরেকে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাত সাধারণত হারাম (নিষিদ্ধ)। নবজাতক ভরণ-পোষণের অর্থের অভাবে হলেও ইসলামের দৃষ্টিতে গর্ভপাত নিষিদ্ধ। কোরআনে বলা হয়েছে,
... স্বীয় সন্তানদেরকে দারিদ্রের কারণে হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে ও তাদেরকে আহার দেই,
এছাড়াও অনেক আলেমের মতে, গর্ভপাতের অণুমতির ক্ষেত্রে ভ্রুনের বয়স চার মাসের কম হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। নবী মুহাম্মাদ মাতৃগর্ভে মানব শিশু জন্মের স্তর সম্পর্কে এভাবে বলেছেন,
তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপাদান আপন মাতৃগর্ভে বীর্যের আকারে ৪০ দিন, জমাট বাধা রক্তে পরিণত হয়ে ৪০ দিন, গোশত আকারে ৪০ দিন। এরপর আল্লাহ একজন ফেরেশতাকে পাঠান এবং চারটি বিষয়ে আদেশ দেন যে, তার (শিশুর) কর্ম, জীবিকা, আয়ুষ্কাল ও ভালো না মন্দ সব লিপিবদ্ধ কর। অতঃপর তার মধ্যে রূহ ফুঁকে দেয়া হয়’।
— সহিহ বুখারী, হাদিস নং- ৩২০৮
অর্থাৎ, হাদিসের বিবৃতি অনুযায়ী, ৪ মাস বয়সে সন্তান মাতৃগর্ভে জীবিত হয়ে ওঠে এবং এ কারণে অনেক আলেম ৪ মাসের বেশি বয়সের ভ্রুনের গর্ভপাত করতে নিষেধ করে থাকেন।[১৪০]
↑"He studies in a mixed school in a foreign country and is asking about attending "sex education" classes"। islamqa.info। https://islamqa.info/en/113970।|প্রকাশক= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য); |ইউআরএল= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
‘আয়িশা থেকে বর্ণিতঃ একদা আসমা রসূলুল্লাহর কাছে হায়িযের গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তিনি বললেন, তোমাদের কেউ পানি এবং বরইয়ের পাতা নিয়ে সুন্দর ভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে। তারপর মাথায় পানি ঢেলে দিয়ে দিয়ে ভালভাবে নাড়াচড়া করবে যাতে পানি সমস্ত চুলের গোড়া পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তারপর তার উপর পানি ঢেলে দিবে। তারপর সুগন্ধযুক্ত কাপড় নিয়ে তার দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে। আসমা বলল, তা দিয়ে সে কীভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে। অতঃপর ‘আয়িশা তাকে যেন চুপি চুপি বলে দিলেন, রক্ত বের হবার জায়গায় তা বুলিয়ে দিবে। সে অপবিত্রতার গোসল সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করল। তিনি বললেন, পানি নিয়ে তার দ্বারা সুন্দরভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে। তার মাথায় পানি ঢেলে দিয়ে ভাল করে নাড়াচড়া করবে যাতে চুলের গোঁড়ায় পানি পৌঁছে যায়। তারপর সমস্ত শরীরে পানি ঢেলে দিবে। ‘'আয়িশা বললেন, আনসারদের মহিলারা কত ভাল ! লজ্জা তাদেরকে দীন-এর জ্ঞান থেকে ফিরিয়ে রাখে না।’
↑"Male circumcision - the Islamic View"। web.archive.org। ২০১৫-১২-১৭। Archived from the original on ২০১৫-১২-১৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-০৭।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: বট: আসল-ইউআরএলের অবস্থা অজানা (link)
↑"Is Circumcision obligatory after conversion?"। web.archive.org। ২০১০-১২-২৭। Archived from the original on ২০১০-১২-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-০৭।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: বট: আসল-ইউআরএলের অবস্থা অজানা (link)
↑"Circumcision for Converts"। web.archive.org। ২০১২-০৭-১৬। Archived from the original on ২০১২-০৭-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-০৭।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: বট: আসল-ইউআরএলের অবস্থা অজানা (link)
↑ কখMasud, Islamic Legal Interpretation, Muftis and Their Fatwas, (ইংরেজি ভাষায়) Harvard University Press, 1996
↑ কখS.H. Rizvi, Syed Athar Husain। "Islamic Marriage" (ইংরেজি ভাষায়)। World Islamic Network। মে ৪, ২০১৩ তারিখে - _ftn8%5b8%5d মূল|ইউআরএল= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ২৮, ২০১৩।
↑Omar, Sara। "[Sexuality and Law]"। www.oxfordislamicstudies.com। অক্সফোর্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনলাইন। ২ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুলাই ২০১৯।
↑Rizvi, Muhammad (১৯৯৪)। "3. The Islamic Sexual Morality (2) Its Structure"। Marriage and Morals in Islam (ইংরেজি ভাষায়)। Scarborough, ON, Canada: Islamic Education and Information Center।
↑The Lawful And The Prohibited In Islam, Yusuf Al-Qardawi - 1997
↑ কখThe New Arab Man: Emergent Masculinities, Technologies, and Islam in the Middle East, p 168, Marcia C.: Inhorn - 2012
↑'Alî Abd-ur-Rahmân al-Hudhaifî (৪ মে ২০০১)। "Remembrance of Allaah"। Islamic Network. (ইংরেজি ভাষায়)। Islamic Network.। ১৫ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুলাই ২০১২।
↑ কখCamilla Adang (2003), Ibn Hazam on Homosexuality, Al Qantara, Vol. 25, No. 1, pp. 5-31 (ইংরেজি ভাষায়)
↑ কখগStephen O. Murray and Will Roscoe (1997), Islamic Homosexualities: Culture, History, and Literature, আইএসবিএন৯৭৮-০৮১৪৭৭৪৬৮৭, New York University Press, pp. 88-94 (ইংরেজি ভাষায়)
↑Michaelson, Jay (২০১১)। God Vs. Gay? The Religious Case for Equality (ইংরেজি ভাষায়)। Boston: Beacon Press। পৃষ্ঠা 68–69। আইএসবিএন9780807001592।
↑verses 7:80-84, 26:165-166, 11:69-83, 29:28-35 of the Qur'an
↑The sunnah and surah describe the Lot's people in context of homosexuality and sodomy such as any form of sex between a man and woman that does not involve penetration of man's penis in woman's vagina.
↑Sachedina, Zulie (১৯৯০)। "Islam, Procreation and the Law"। International Family Planning Perspectives (ইংরেজি ভাষায়)। 16 (3)।|সংগ্রহের-তারিখ= এর |ইউআরএল= প্রয়োজন (সাহায্য)
↑Ali, Kecia (২০০৬)। Sexual ethics and Islam: feminist reflections on Qur'an, hadith, and jurisprudence (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford: Oneworld।
↑S.H. Rizvi, Syed Athar Husain। "Islamic Marriage" (ইংরেজি ভাষায়)। World Islamic Network। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ২৮, ২০১৩।
↑S.H. Rizvi, Syed Athar Husain। "Islamic Marriage" (ইংরেজি ভাষায়)। World Islamic Network। মে ৪, ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ২৮, ২০১৩।