আলবার্ট হলাম
আনুমানিক ১৯০৫ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে আলবার্ট হলাম |
|
পূর্ণ নাম | আলবার্ট উইলিয়াম হলাম |
---|
জন্ম | (১৮৬৯-১১-১২)১২ নভেম্বর ১৮৬৯ ইস্ট লিক, নটিংহ্যামশায়ার, ইংল্যান্ড |
---|
মৃত্যু | ২৪ জুলাই ১৯৪০(1940-07-24) (বয়স ৭০) লাফবোরা, ইংল্যান্ড |
---|
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি |
---|
বোলিংয়ের ধরন | অফ ব্রেক |
---|
ভূমিকা | বোলার |
---|
|
জাতীয় দল | |
---|
|
---|
|
|
|
---|
|
আলবার্ট উইলিয়াম হলাম (ইংরেজি: Albert Hallam; জন্ম: ১২ নভেম্বর, ১৮৬৯ - মৃত্যু: ২৪ জুলাই, ১৯৪০) নটিংহ্যামশায়ারের ইস্ট লিকে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ১৮৯৫ থেকে ১৯১০ সময়কালে দূর্দণ্ড প্রতাপে প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে রাজত্ব কায়েম করেছিলেন।
নটিংহ্যামশায়ারের পক্ষে কাউন্টি ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেন আলবার্ট হলাম। দলে তিনি মূলতঃ অফ স্পিন বোলার হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে কার্যকরী ব্যাটিং করতেন তিনি।
শৈশবকাল
নটিংহ্যামশায়ারে জন্মগ্রহণকারী অনেকের ন্যায় আলবার্ট হলামও শৈশবকাল থেকেই ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন। তবে, তার ক্রীড়াশৈলী নটিংহ্যামশায়ার একাদশের পক্ষে খেলার জন্যে সহায়ক ছিল না। ফলশ্রুতিতে লিচেস্টারশায়ারে বসবাস করতে থাকেন। ১৮৮০-এর দশকের শেষদিক থেকে ১৮৯০-এর দশকের সূচনাকাল পর্যন্ত লিচেস্টারশায়ারের পক্ষে খেলতে থাকেন। কিন্তু, অংশগ্রহণকৃত খেলাগুলো প্রথম-শ্রেণীর মর্যাদার অধিকারী ছিল না। আর্থার মোল্ড ও জনি ব্রিগসকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছিলেন তিনি। তিনি তার খেলার ধারা উন্নয়নে সচেষ্ট হন।
কাউন্টি ক্রিকেট
১৮৯৬ সালের মধ্যে আলবার্ট হলামের স্লো বোলিং দলের তৃতীয় বোলিং শক্তিতে পরিণত হয়। উইকেট লাভে গড়ের দিক দিয়ে জনি ব্রিগসের তুলনায় এগিয়ে ছিলেন ও আর্থার মোল্ডের চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন তিনি। এছাড়াও, দুজন প্রতিষ্ঠিত বোলারের তুলনায় অর্ধেকসংখ্যক ওভার বোলিং করেছিলেন। তাসত্ত্বেও, উইজডেন ও অন্যান্য ব্যাটসম্যান অন্য তিন বোলারের সাথে তুলনান্তে তাকে ভালোমানের আখ্যায়িত করতে নারাজ ছিল। শুষ্ক পিচে তিনি নিয়মিতভাবে খেলতেন ও ব্যাটসম্যানদেরকে তাদের খেলার প্রদর্শনের সুযোগ করে দিতেন।[১]
পরের বছর এ ত্রয়ী বোলারের সাথে দলে আগত নতুন বোলার উইলিস কাটেলকে নিয়ে একযোগে উইকেট উপযোগী পিচে ল্যাঙ্কাশায়ারের কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা জয়ে অনবদ্য ভূমিকা রাখেন। ধারাবাহিকভাবে তিনি সকল খেলায় বোলিং করে ১০০ উইকেট লাভের মাইলফলকে পৌঁছেন।
স্ব-গৃহে প্রত্যাবর্তন
১৮৯৬ ও ১৮৯৭ সালে ব্যাপক সফলতা লাভের পর আলবার্ট হলামের দূর্বলতা লক্ষ্য করা যায়। শীর্ণ শরীরে অসুস্থতা আঘাত হানে। ১৮৯৮ সালে ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে কোন খেলায় অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হননি তিনি। ১৮৯৯ সালে খেলায় অংশ নিলেও পুনরায় অসুস্থতার কবলে পড়েন তিনি। একপর্যায়ে ধারণা করা হয়েছিল যে, তার ক্রিকেট খেলোয়াড়ী জীবনের হয়তোবা পরিসমাপ্তি ঘটেছে। ১৯০০ সালে স্বীয় স্বাস্থ্য উদ্ধারে তৎপর হন। তাসত্ত্বেও, ল্যাঙ্কাশায়ারের বোলিং বিভাগ বেশ শক্তিশালী ছিল। প্রথম একাদশে তিনি মাত্র চারটি খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।[২] ঐ ফলাফলের প্রেক্ষিতে নটিংহ্যামশায়ার কর্তৃপক্ষ টমাস ওয়াস ও জন গানকে সহায়তাকল্পে জন্মসূত্রে কাউন্টিতে খেলার যোগ্যতালাভের অধিকারী আলবার্ট হলামের দিকে দৃষ্টি দেয়। পরের তিন বছরে তিনি খুব দ্রুত নিজেকে স্থিতিশীল বোলারে রূপান্তরিত করেন।
১৯০২ ও ১৯০৩ সালে স্লো বোলিং উপযোগী পিচে নিজেকে মৃত্যুদূতে পরিণত করেছিলেন। ১৯০৪ সালে চমৎকার আবহাওয়ার কারণে তার বোলিং প্রভাব ফেলতে পারেনি ও কোন ইনিংসেই পাঁচ-উইকেট পাননি তিনি। তবে, ১৯০৫ সালে পুনরায় খেলায় প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেন। লর্ডসে ৬/৪৬ পান ও সেপ্টেম্বরে উৎসবের খেলায় ইংল্যান্ড নর্থের সদস্যরূপে খেলোয়াড়ী জীবনের সেরা ৮/৬৩ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন তিনি।
স্বর্ণালী অধ্যায়
১৯০৬ সালে আলবার্ট হলামের বোলিংয়ের উত্তরণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ঘটে। পিচের সহায়তা নিয়ে সুদক্ষ ব্যাটসম্যানদেরকেও তার দর্শনীয় স্পিনে বোকা বানাতেন। লর্ডসের পিচে ভাঙ্গা হাতেও ৫৮ ওভার বোলিং করে তার বোলিং দক্ষতা প্রদর্শন করেন।[৩] এরফলে উপর্যুপরি দ্বিতীয় বছর মিডলসেক্সের বিপক্ষে জয়ী হয় তার দল।
পরের বছরগুলোয় কেউ তার বোলিং শক্তিমত্তার বিষয়ে কল্পনাও করতে পারেনি। ১৯০৭ সালে নটিংহ্যামশায়ারের বৈপ্লবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। শুরু থেকেই প্রায়শঃই বোলিং অপরিবর্তিত রেখে আলবার্ট হলাম ও টমাস ওয়াস কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা অধিক সময় ধরে বোলিং করেন। তারা একের পর এক জয় এনে দিতে থাকেন দলকে। অন্যদিকে, জন গান ১৭ খেলায় মাত্র ২৮১ ওভার বোলিং করতে পেরেছিলেন। নটিংহ্যামশায়ারের পতন করা ৩৪৮টি উইকেটের মধ্যে পঞ্চাশটি বাদে সবকটি উইকেট উভয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন। তাদের বলের বিপক্ষে কোন সেরা ব্যাটসম্যান রুখে দাঁড়াতে পারেননি। ধারণা করা হয়েছিল যে, আলবার্ট হলামকে হয়তোবা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট খেলার জন্যে মনোনীত করা হবে। তৃতীয়বারের মতো মনোনয়ন পেলেও ভাঙ্গা হাতের কারণে নটিংহ্যামশায়ারের সদস্যরূপে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশের বিপক্ষে খেলার সূবর্ণ সুযোগ লাভ করা থেকে বঞ্চিত হন তিনি। তাসত্ত্বেও শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড় শোফিল্ড হেইকে স্থানচ্যুত করে বোলিং গড়ে শীর্ষস্থানে অধিকার করেন। ফলশ্রুতিতে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন।
টমাস ওয়াসের সাথে স্মরণীয় জুটি গড়ে ১৯০৭ সালে নটিংহ্যামশায়ারকে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা জয়ে সবিশেষ ভূমিকা রাখেন। ঐ বছর দলটি কোন খেলাতেই পরাজয়বরণ করেনি। নির্ধারিত উনিশ খেলার মধ্যে পনেরোটিতে জয় পায় ও বাদ-বাকী খেলাগুলোয় ড্র করে। এটিই কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে অপরাজিত শিরোপাধারী কোন দলের জয়ের সর্বোচ্চ হার। এছাড়াও, সর্বোচ্চ জয়ের হারের ঘটনার দিক দিয়ে এটি তৃতীয়। বৃষ্টিবিহীন অবস্থায় দুইটি বিশাল সংখ্যার ইনিংস খেলে নটিংহ্যামশায়ার দল।
আলফ্রেড শ ও উইলিয়াম অ্যাটওয়েলের ন্যায় নটিংহ্যামশায়ারের বিখ্যাত খেলোয়াড়দের যোগ্য উত্তরসূরির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন আলবার্ট হলাম। পিচে নিখুঁতভাব বজায় রেখে ধীরগতিসম্পন্ন বোলিং করতেন ও উভয় দিকেই বলকে বাঁক খাওয়াতে পারতেন। তবে ব্যাট হাতে তেমন কিছুই করতে পারেননি তিনি। তাসত্ত্বেও, ওভালে সারে দলের বিপক্ষে তার দূর্দান্ত ৪৬ রানের ইনিংসের কল্যাণে ঐ মৌসুমে নটিংহ্যামশায়ার দলকে অপরাজিত অবস্থায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।[৪]
অবসর
অস্ট্রেলিয়ার নিষ্প্রাণ শক্ত পিচে আলবার্ট হলাম ও টমাস ওয়াসের বোলিংশৈলী অকার্যকরী হবার বিষয়টি স্পষ্টতর হয়ে গেলে শীতকালের ঐ অ্যাশেজ সফরে তাদেরকে মনোনীত করা হয়নি। তবে পরের বছরেই ডান কাঁধে বাতজনিত রোগে আক্রান্তের ফলে নাটকীয়ভাবে তার বোলিংশৈলী নিচের দিকে চলে যেতে শুরু করে।[৫] কাউন্টি ক্রিকেট মৌসুমে প্রাপ্ত ১৫৩ উইকেটের তুলনায় ঐ মৌসুমে ৭২ উইকেটে নেমে আসে। বোলিং গড়ও দ্বিগুণ হয়ে যায়। ১৯০৯ সালের গ্রীষ্মকালটি ১৯০৭ সালের অনুরূপ হলেও বোলিং উপযোগী পিচে দূর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে নিজেকে আর মেলে ধরতে পারেননি।
চল্লিশ বছর বয়সে ১৯১০ সালে জেমস আয়ারমঙ্গারের নেতৃত্বাধীন নটিংহ্যামশায়ারে একাদশের সদস্যরূপে শুরুরদিকের কয়েকটি খেলায় অংশগ্রহণের পর চলে আসেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার পূর্ব-পর্যন্ত ল্যাঙ্কাশায়ারে লীগে খেলতে থাকেন ও লিচেস্টারশায়ারে চলে যান। ২৪ জুলাই, ১৯৪০ তারিখে ৭১ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের লাফবোরায় আলবার্ট হলামের দেহাবসান ঘটে।
তথ্যসূত্র
- ↑ Pardon, Sydney H. (editor); John Wisden’s Cricketers’ Almanack; Thirty-Fifth edition (1898); Part II, pp.4–5
- ↑ Pardon, Sydney H. (editor) John Wisden’s Cricketers’ Almanack; Thirty-Eighth edition (1901); Part II, p. 29
- ↑ Pardon, Sydney H. (editor) John Wisden’s Cricketers’ Almanack; Forty-Fourth edition (1907); Part II, p. 207
- ↑ Wisden – Albert Hallam. ESPN Cricinfo
- ↑ Pardon, Sydney H. (editor) John Wisden’s Cricketer’s Almanack; Forty-Sixth edition (1909); p. 141
আরও দেখুন
বহিঃসংযোগ