আলজারি শাহেইম জোসেফ (ইংরেজি: Alzarri Joseph; জন্ম: ২০ নভেম্বর, ১৯৯৬) অ্যান্টিগুয়া এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য তিনি। ২০১৬ সাল থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করছেন।
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে লিওয়ার্ড আইল্যান্ডস এবং সেন্ট কিট্স ও নেভিস প্যাট্রিয়টস এবং ভারতীয় ক্রিকেটে গুজরাত টাইটান্স দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট মিডিয়াম বোলার হিসেবে খেলছেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিং করে থাকেন আলজারি জোসেফ।
শৈশবকাল
নিজ পিতা অ্যালভা’র বিপক্ষে বোলিং করতেন। এর পরপরই পিতার পুরনো ক্লাবের সাথে যুক্ত হন ও খেলতে থাকেন। অ্যান্টিগুয়া ও লিওয়ার্ড আইল্যান্ডসের বয়সভিত্তিক দলে অংশ নেন।
ডিসেম্বর, ২০১৫ সালে আলজারি জোসেফকে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ২০১৬ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সদস্যরূপে মনোনীত করা হয়।
ফাস্ট বোলার আলজারি জোসেফ ২০ বছর বয়সের পূর্বেই নিজ দেশের পক্ষে খেলেন, বিশ্বকাপ জয় করেন ও বীর বনে যান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পক্ষে খেলেছেন তিনি। ২০১৬ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের শিরোপা বিজয়ে নেতৃত্ব দেন। অ্যান্ডি রবার্টস তার পেস বোলিংকে ভালোবাসেন, ইয়ান বিশপ তাকে টেস্ট ক্রিকেটের দ্রুতগতিসম্পন্ন বোলার হিসেবে দেখতে চান ও কার্টলি অ্যামব্রোস বলেন যে, আমি অ্যান্টিগুয়ীয়, তুমিও অ্যান্টিগুয়ীয় ও আমি গর্বিত।
ঐ প্রতিযোগিতায় ছয় খেলায় অংশ নিয়ে ১৩ উইকেট লাভ করেন। এরফলে দলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীসহ সামগ্রীকভাবে যৌথভাবে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক হন। তন্মধ্যে, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত গ্রুপ পর্বের খেলায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪/৩০ লাভ করে ম্যান অব দ্য ম্যাচেরপুরস্কার লাভ করেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক পেস বোলার উইনস্টন বেঞ্জামিনের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ডেল স্টেইনকে তার আদর্শ হিসেবে মানতেন। ২০১৬ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শীর্ষ পাঁচজন বোলারের অন্যতম ছিলেন। ১৩.৭৬ গড়ে ও ওভারপ্রতি ৩.৩১ রান দেন। এছাড়াও ঐ প্রতিযোগিতায় ১৪৩ কিলোমিটার গতিবেগে বোলিংয়ের দ্রুততম বল করেন। ঐ বলে জিম্বাবুয়ীয় ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন স্লাইয়ের স্ট্যাম্প উপড়ে যায়।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
২০১৪-১৫ মৌসুমে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের সাথে যুক্ত হন। নভেম্বর, ২০১৫ সালে উইন্ডওয়ার্ড আইল্যান্ডসের বিপক্ষে ৭/৪৬ পান। ২০১৪ সাল থেকে আলজারি জোসেফের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রয়েছে।
২০১৪-১৫ মৌসুমের রিজিওন্যাল ফোর ডে প্রতিযোগিতায় লিওয়ার্ডসের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে আলজারি জোসেফের অভিষেক ঘটে। পরবর্তীতে ২০১৫-১৬ মৌসুমে ঐ প্রতিযোগিতায় গায়ানার বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। গেভিন টঞ্জের সাথে বোলিং উদ্বোধনে নেমে ৫/৯৯ পান তিনি। পরের খেলায় উইন্ডওয়ার্ড আইল্যান্ডসের বিপক্ষে আরও একবার পাঁচ-উইকেট পান। ৭/৪৬ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন তিনি।
৬ এপ্রিল, ২০১৯ তারিখে আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে ৩.৪ ওভারে ৬/১২ পান। এরফলে, সোহেল তানভীরের গড়া এগারো বছরের পুরনো ৬/১৪ বোলিং পরিসংখ্যানের সেরা রেকর্ড ভেঙ্গে যায়।
জুলাই, ২০১৯ সালে ইউরো টি২০ স্ল্যাম ক্রিকেট প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী আসরে আমস্টারডাম নাইটসের পক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন। তবে, পরের মাসেই ঐ প্রতিযোগিতাটি বাতিল হয়ে যায়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে নয়টি টেস্ট ও ষোলটি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণ করেছেন আলজারি জোসেফ। ৯ আগস্ট, ২০১৬ তারিখে গ্রোস আইলেটে সফরকারী ভারত দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ তারিখে একই মাঠে সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।
জুলাই, ২০১৬ সালে সফরকারী ভারতের বিপক্ষে খেলার জন্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট দলে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ৯ আগস্ট, ২০১৬ তারিখে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে তার অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়।
২০১৬–১৭ মৌসুমে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গমন করেন। ঐ সফরে ২ অক্টোবর, ২০১৬ তারিখে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওডিআই অভিষেক ঘটে তার। অক্টোবর, ২০১৮ সালে ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ (সিডব্লিউআই) কর্তৃক ২০১৮-১৯ মৌসুমের সকল স্তরের ক্রিকেটে খেলার জন্যে তাকে চুক্তিতে নিয়ে আসা হয়।
২০১৮–১৯ মৌসুমে ইংরেজ দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমনে আসে। ২০১৯ সালের শুরুতে দ্বিতীয় টেস্ট চলাকালে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে মায়ের মৃত্যুসংবাদ শুনেন। তাসত্ত্বেও খেলা চালিয়ে যান ও সকলের কাছ থেকে প্রশংসিত হন।