আমজাদ আলী খন্দকার ছিলেন বিটিভির ক্যামেরাম্যান। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণের মত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যচিত্র ধারণ করেন।[২] মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় তিনি ২০২২ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।[৩][৪]
জন্ম ও কর্মজীবন
আমজাদ আলীর জন্ম মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায়। বর্তমানে তিনি সাভার উপজেলার গেণ্ডা এলাকায় নিজ বাড়িতে বসবাস করেন।[১] ১৯৬৮ সালে তথ্য মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের ফিল্ম ডিভিশনে চাকরি পান তিনি।[৫] ১৯৭১ সালে তৎকালীন ফিল্ম ডিভিশনের পরিচালক আবুল খায়েরের নির্দেশে তিনি ৭ই মার্চের ভাষণ রেকর্ড করেন।[৬][৭] বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িতে গিয়ে চিত্র ধারণ করেন তিনি।[৫] তিনি বঙ্গবন্ধুর মায়ের মৃত্যুর দৃশ্যও ধারণ করেছিলেন।[৮] ২০০৪ সালের ২৯ জুন, বিটিভির নিয়ন্ত্রক-প্রধান ক্যামেরাম্যান হিসেবে অবসরে যান তিনি।[৫][৯]
৭ই মার্চের ভাষণ ধারণ
৭ মার্চ ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর কাঙ্খিত ভাষণ রেডিও এবং টেলিভিশনে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভাষণটি রেকর্ড ও সংরক্ষণ করেন কয়েকজন। তাদের মধ্যে একজন হলেন সাভারের আমজাদ আলী খন্দকার। ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন চলচ্চিত্র বিভাগের সহকারী ক্যামেরাম্যান। ১৯৭১ সালে তারা কয়েকজন ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ রেকর্ড করেন। রেকর্ড শেষে ওই রাতেই ভাষণের রেকর্ড করা ফিল্ম অফিসে রাখেন। সেসময় অফিসে কোনো ল্যাব না থাকায় এফডিসি থেকে ফিল্ম প্রিন্ট করে আনা হতো। ২৫ মার্চ পাকিস্তানিরা আক্রমণের পর ৯ এপ্রিল পরিচালক আবুল খায়ের তাকে ডেকে কালো রঙের ৪২ ইঞ্চির একটি ট্রাঙ্ক (বাক্স) দিয়ে ঢাকার বাইরে নিয়ে যেতে বলেন। সেই ট্রাঙ্কে ছিল বঙ্গবন্ধুর কিছু ছবি ও ৭ মার্চের ভাষণের ভিডিও ক্যাসেট। সেই ট্রাঙ্ক নিয়ে সচিবালয়ের দ্বিতীয় গেট দিয়ে এক বাঙালি অফিসারের সাহায্যে বের হন। নিজের জীবন বাজি রেখে পাক সেনাবাহিনীর সামনে দিয়েই সোয়ারীঘাটে পৌঁছান। ট্রাঙ্কটি নিয়ে নদী পার হন। এরপর জিনজিরা বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি বাসের ছাদে উঠে বক্সগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে নামেন।
সেখানে কোনো যানবাহন না থাকায় একটি ঘোড়ার পিঠে ট্রাঙ্ক তুলে নিজে হেঁটে প্রায় ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে দোহার থানার জয়পাড়া গ্রামের মজিদ দারোগার বাড়িতে নিয়ে ট্রাঙ্কটি রাখেন। এরইমধ্যে দোহার থানায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পৌঁছে যাওয়ায় নিরাপত্তার জন্য দোহার থেকে আরো ভেতরে চরকোষা গ্রামের অমেদ খাঁ এবং দানেশ খাঁ নামে দুই ভাইয়ের বাড়ির বড় ধানের গোলার ভেতরে ট্রাঙ্কটি লুকিয়ে রাখেন। পরে আবুল খায়ের ভারতে গিয়ে ভারতীয় হাইকমিশন এবং মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে সেই ধানের গোলা থেকে ট্রাঙ্কটি নিয়ে মুক্তিবাহিনীর মাধ্যমে ভারতে পাঠিয়ে দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ভিডিও ক্যাসেট ভারতেই ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবুল খায়ের দেশে ফিরে আসার সময় বঙ্গবন্ধুর সেই ৭ মার্চের ভাষণও সঙ্গে নিয়ে আসেন।[১০]
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ