ফুটবল খেলাতে আক্রমণভাগের খেলোয়াড়, ফরওয়ার্ড বা স্ট্রাইকার হচ্ছে সে সমস্ত খেলোয়াড় যারা ফুটবলের বিপক্ষদলের দলের গোলপোস্টের সবচেয়ে কাছে থাকেন (আগে বা অ্যাটাকার বলতেও স্ট্রাইকার/ফরোয়ার্ড বোঝানো হত, তবে চলতি ধারা অনুযায়ী যার পায়ে বল থাকে তাকেই অ্যাটাকার বলা হয়)। তার প্রধান কাজ বিপক্ষ দলের জালে বল প্রবেশ করানো। অন্যান্য দায়িত্বের মধ্যে অন্য খেলোয়াড়কে গোল করার সুযোগ তৈরি করে দেয়া, আক্রমণের সময় বল ধরে রাখা অন্যতম। আধুনিক ফুটবলে একটি দলে একসাথে এক থেকে তিনজন স্ট্রাইকার খেলেন। তবে দুইজন স্ট্রাইকার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। যেহেতু অন্যান্য খেলোয়াড়দের তুলনায় স্ট্রাইকারগণ অনেক বেশি গোল করে থাকেন, তাই সাধারণত তাদের বাজারমূল্য সর্বোচ্চ হয়ে থাকে।
আধুনিক দল গঠনে সাধারণত এক থেকে তিনজন ফরোয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত থাকে; উদাহরণস্বরূপ, সাধারণ ৪-২-৩-১ গঠনের মধ্যে একজন ফরওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। [১] অপ্রচলিত গঠনে তিনজনেরও বেশি ফরওয়ার্ড , বা একজনও অন্তর্ভুক্ত নাও করতে পারে। [২][৩]
কেন্দ্রীয় আক্রমণকারী খেলোয়াড়ের (ইংরেজিতে "সেন্টার ফরোয়ার্ড") প্রধান কাজ একটাই, গোল করা। ফুটবল কোচেরা সাধারণত বিপক্ষ দলের রক্ষণভাগের ঘাড়ের ওপর দলের একজন স্ট্রাইকারকে অবস্থান নিতে বলেন এবং দলের অন্য আক্রমণাত্মক ফরোয়ার্ডকে গোলের উপযোগী পাস জোগাড়ের দায়িত্ব দেন, যিনি অপেক্ষাকৃত মধ্যমাঠে থাকেন। প্রথম স্ট্রাইকারকে সাধারনভাবে টার্গেট ম্যান নামে ডাকা হয়, যিনি বিপক্ষ দলকে অন্য দিকে ধাবিত করেন অথবা নিজে গোল করেন বা অন্য সতীর্থকে গোল করতে সাহায্য করেন।
একজন স্ট্রাইকার একজন সেন্টার ফরোয়ার্ডের তুলনায় কিছুটা আলাদা। স্ট্রাইকাররা বিপক্ষের রক্ষণ দেয়াল ভেদ করতে অধিক পারদর্শী। তারা দূর্দান্ত বল নিয়ন্ত্রণ, ড্রিবলিং ক্ষমতার অধিকারী হয়ে থাকেন। একজন ভাল মানের স্ট্রাইকার উভয় পায়েই নির্ভুল শট নিতে পারেন। যদিও অনেক স্ট্রাইকার ৯ নম্বর জার্সি পরিধান করেন, ঐতিহ্যগতভাবে ১০ নম্বর জার্সিই এর সাথে সম্পর্কিত। তবে কিছু স্ট্রাইকারদের ৭ এবং ১১ নম্বর জার্সি পরিহিত অবস্থায়ও দেখা যায়।
ফুটবলে ডিপ-লায়িং ফরোয়ার্ডদের একটি লম্বা ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু তাদেরকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিভাষায় প্রকাশ করা হয়েছে। বাস্তবে, এ ধরনের খেলোয়াড়দের ইনসাইড ফরোয়ার্ড বা ডিপ-লায়িং সেন্টার ফরোয়ার্ড বলা হয়ে থাকে। সাম্প্রতিককালে, এ ধরনের খেলোয়াড়দের আরও দুইটি প্রকরণ তৈরি হয়েছে: সেকেন্ড বা শ্যাডো বা সাপোর্ট বা অক্সিলিয়ারি স্ট্রাইকার।
সেকেন্ড স্ট্রাইকাররা সাধারণত মেইন স্ট্রাইকারদের পেছনে অবস্থান করে। এদের খেলার ধরন কিছুটা অ্যাটকিং মিডফিল্ডারদের মত, তবে পার্থকটা হল সেকেন্ড স্ট্রাইকারদের গোল করার দায়িত্ব একটু বেশিই। একজন সেকেন্ড স্ট্রাইকার বল নিয়ন্ত্রণ, ড্রিবলিং, ছোট পাস, দৃষ্টি এবং ফিনিশিং-এ দক্ষ হয়ে থাকেন। এই অবস্থানের খেলোয়াড়দের খুব জটিল এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হয়। ফুটবলে এই খেলোয়াডদেরকেই সাধারণত সবচেয়ে প্রতিভাবান মনে করা হয়। দিয়েগো মারাদোনা এই ধরনের খেলোয়াড়দের একটি বড় উদাহরণ।
ফলস ৯ হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আক্রমণ ভাগের কোনো খেলোয়াড়কে মাঠের মধভাগে খেলানো হয়। এতে করে প্রতিপক্ষ দলের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়েরা দ্বিধায় পড়ে যায় তাদের পুর্বপরিকল্পিত প্ল্যানিং নিয়ে। তখন হয়তো তারা ছোটোখাটো হাডলের মাধ্যমে নতুন করে পরিকল্পনা করে থাকে।