আকাশগঙ্গা একটি ছায়াপথ। রাতের আকাশে দুধের মতো যে হালকা সাদা আলোর রেখা দেখা যায়, সেখান থেকেই এর নামকরণ। অসংখ্য নক্ষত্রের এই আলোকে খালি চোখে আলাদা করা যায় না বলেই এমন রেখার মতো দেখা যায়। আকাশগঙ্গা একটি সর্পিলাকার ছায়াপথ, যার কেন্দ্রে একটি দণ্ডের মতো অংশ আছে। এর ব্যাস প্রায় ২৬.৮ ± ১.১ কিলোপারসেক (৮৭,৪০০ ± ৩,৬০০ আলোকবর্ষ),[১৮] তবে সর্পিলাকার বাহুগুলোর বেধ মাত্র ১০০০ আলোকবর্ষের মতো। সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, অদৃশ্য ডার্ক ম্যাটার-সহ কিছু নক্ষত্রের সমন্বয়ে এর ব্যাস প্রায় ২০ লক্ষ আলোকবর্ষ (৬১৩ কিলোপারসেক) পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। আকাশগঙ্গার বেশ কয়েকটি ছোট উপছায়াপথ রয়েছে। এটি নিজেও স্থানীয় গোষ্ঠী নামক ছায়াপথ স্তবকের অংশ, যেটি আবার ভার্গো মহাস্তবকের একটি অংশ। পুরো সুপারক্লাস্টারটি আবার লানিয়াকেয়া মহাস্তবকের একটি উপাদান।[১৯][২০]
আকাশগঙ্গায় ১০০ থেকে ৪০০ বিলিয়ন নক্ষত্র আছে বলে ধারণা করা হয়[২১][২২] এবং অন্তত সমসংখ্যক গ্রহও রয়েছে।[২৩] আমাদের সৌরজগৎ গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে প্রায় ২৭,০০০ আলোকবর্ষ (৮.৩ কিলোপারসেক) দূরে অবস্থিত। আমরা ওরিয়ন বাহু নামক সর্পিলাকার বাহুর অভ্যন্তরীণ প্রান্তে অবস্থান করছি। গ্যালাক্সির কেন্দ্রের ১০,০০০ আলোকবর্ষের মধ্যে নক্ষত্রগুলো একটি বড় উঁচু অংশের (Bulge) সৃষ্টি করেছে এবং কেন্দ্র থেকে এক বা একাধিক দণ্ডাকৃতির অংশ ছড়িয়ে আছে। গ্যালাক্সির একেবারে কেন্দ্রে ধনু এ*নামে একটি রেডিও তরঙ্গের বড় উৎস আছে, যেটি আসলে প্রায় ৪১ লক্ষ সৌর ভরের একটি অতিবৃহৎ কৃষ্ণগহ্বর।[২৪][২৫] আকাশগঙ্গার প্রাচীনতম নক্ষত্রগুলো প্রায় বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমানই পুরনো, অর্থাৎ বিগ ব্যাং-এর অন্ধকার যুগের পরপরই এদের জন্ম হয়েছে।[৯]
১৬১০ সালে গ্যালিলিও গ্যালিলি প্রথম দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে আকাশগঙ্গার আলোর রেখাকে পৃথক নক্ষত্র হিসেবে শনাক্ত করেন। ১৯২০ সালের আগ পর্যন্ত বেশিরভাগ জ্যোতির্বিজ্ঞানী মনে করতেন আকাশগঙ্গার মধ্যেই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সকল নক্ষত্র রয়েছে।[২৬] ১৯২০ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী হারলো শেপলি এবং হিবার ডোস্ট কার্টিসের মধ্যকার একটি বিখ্যাত বিতর্কের পর এডউইন হাবলের পর্যবেক্ষণে প্রমাণিত হয় যে আকাশগঙ্গা অসংখ্য গ্যালাক্সির মধ্যে মাত্র একটি।
ব্যাবিলনীয় মহাকাব্য এনুমা এলিশে, মিল্কি ওয়ে (আকাশগঙ্গা) সৃষ্টি হয়েছে আদি-লবণাক্ত জলের ড্রাগন দেবী তিয়ামতের বিচ্ছিন্ন লেজ থেকে। ব্যাবিলনের জাতীয় দেবতা মারদুক তিয়ামতকে হত্যা করার পর তার লেজকে আকাশে স্থাপন করেন।[২৭][২৮] একসময় ধারণা করা হতো যে এই গল্পটি একটি প্রাচীন সুমেরীয় কাহিনীর উপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছিল যেখানে তিয়ামতকে নিপুরের দেবতা এনলিল হত্যা করেন।[২৯][৩০] তবে, বর্তমানে ধারণা করা হয় যে, সুমেরীয় দেবতাদের চেয়ে মারদুককে শ্রেষ্ঠ হিসাবে প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে ব্যাবিলনীয় প্রচারকদের দ্বারা এই কিংবদন্তিটি সম্পূর্ণভাবে রচিত হয়েছিল।[৩০]
গ্রীক পুরাণে, জিউস তার মরণশীল প্রণয়ীর সন্তান হেরাক্লিসকে হেরার স্তনে রাখেন যখন হেরা ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন। এভাবে শিশু হেরাক্লিস হেরার অমরত্বদায়ী দুধ পান করে অমর হয়ে যাবে। কিন্তু স্তন্যপান করতে করতে হেরার ঘুম ভেঙে যায় এবং তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি একজন অজানা শিশুকে দুধ পান করাচ্ছেন। তিনি শিশুটিকে সরিয়ে ফেলেন এবং তার কিছু দুধ ছিটকে গিয়েই আকাশে মিল্কি ওয়ে নামক আলোর স্তরটির সৃষ্টি হয়। গ্রীকদের আরেকটি গল্পে, পরিত্যক্ত হেরাক্লিসকে অ্যাথিনা স্তন্যপানের জন্য হেরার কাছে নিয়ে যান। কিন্তু হেরাক্লিসের শক্তিমত্তার কারণে হেরা তাকে তার বুক থেকে ছিনিয়ে নেন।[৩১][৩২][৩৩]
ওয়েলশ সংস্কৃতিতে ক্যাসিওপিয়া নক্ষত্রের নাম Llys Dôn ("ডনের দরবার")। ডনের অন্তত তিন সন্তানও জ্যোতির্বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত: মিল্কি ওয়েকে বলা হয় Caer Gwydion ("Gwydion-এর দুর্গ")[৩৪][৩৫] এবং করোনা বোরেলিস নক্ষত্রপুঞ্জের নাম Caer Arianrhod ("Arianrhod-এর দুর্গ")।[৩৬][৩৭]
পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে "মিল্কি ওয়ে" নামটি এর চেহারার জন্যই হয়েছে – আকাশে ধূসর এবং অস্পষ্টভাবে জ্বলজ্বলে আলোর একটি পথ। এই নামটি ক্লাসিক্যাল ল্যাটিনের via lactea থেকে অনুবাদ করা হয়েছে যা হেলেনিস্টিক গ্রীক γαλαξίας থেকে উদ্ভূত, যার সংক্ষিপ্ত রূপ হল γαλαξίας κύκλος (galaxías kýklos), যার অর্থ "দুধের বৃত্ত"। প্রাচীন গ্রীক ভাষায় γαλαξίας (galaxias)– শব্দের মূল γαλακτ-, γάλα ("দুধ") + -ίας (বিশেষণ গঠনের প্রত্যয়) – এই মূল থেকেই "গ্যালাক্সি" শব্দটি এসেছে, যা আমাদের এবং পরবর্তীতে এই ধরনের সমস্ত নক্ষত্রপুঞ্জের জন্য ব্যবহৃত হতে থাকে।[৩৮][৩৯][৪০]
আকাশগঙ্গাকে গ্রীকরা আকাশে চিহ্নিত ১১টি "বৃত্তের" মধ্যে একটি হিসাবে গণ্য করত। অন্যান্য বৃত্তগুলো ছিল রাশিচক্র, দিগন্ত, মধ্যরেখা, বিষুবরেখা, কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি রেখা, আর্কটিক বৃত্ত, আন্টার্কটিক বৃত্ত এবং দুটি মেরুর মধ্য দিয়ে অতিক্রমকারী কলুর বৃত্ত।[৪১]
আকাশগঙ্গা দেখতে ৩০ ডিগ্রি চওড়া সাদা আলোর একটি অস্পষ্ট ব্যান্ডের মতো, যা রাতের আকাশ জুড়ে বাঁকানো থাকে।[৪২] যদিও রাতের আকাশে খালি চোখে দেখা যায় এমন সমস্ত তারাই আসলে আকাশগঙ্গারই অংশ, "আকাশগঙ্গা" বলতে সাধারণত আলোর ওই বিশেষ ব্যান্ডটিকেই বোঝানো হয়ে থাকে।[৪৩][৪৪] এই আলো আসে অসংখ্য অনির্ণীত তারা এবং গ্যালাক্টিক সমতলে অবস্থিত অন্যান্য বস্তুসমূহ থেকে। ব্যান্ডের চারপাশে উজ্জ্বল অংশগুলি নরম দৃশ্যমান প্যাচ হিসাবে দেখা যায় যেগুলিকে তারামেঘ (star clouds) বলা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে লক্ষণীয় হলো ধনু রাশির তারামেঘ, যা আসলে গ্যালাক্সির কেন্দ্রীয় অংশ।[৪৫] ব্যান্ডের মধ্যে থাকা অন্ধকার অংশগুলি (যেমন গ্রেট রিফ্ট এবং কোলস্যাক) হলো এমন কিছু এলাকা যেখানে আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূলিকণা দূরবর্তী তারার আলোকে আটকে দেয়। ইনকা ও অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীদের মতো দক্ষিণ গোলার্ধের মানুষেরা এই অন্ধকার অঞ্চলগুলিকে কালো মেঘের নক্ষত্রমণ্ডল হিসাবে শনাক্ত করেছিল।[৪৬] আকাশগঙ্গা যে আকাশের অংশটিকে ঢেকে রাখে, তাকে 'জোন অফ এভয়েডেন্স' বলে।[৪৭]
আকাশগঙ্গার উজ্জ্বলতা তুলনামূলকভাবে কম। বাতি বা চাঁদের আলোর মতো আলোর দূষণের কারণে এর দৃশ্যমানতা অনেক কমে যেতে পারে। আকাশগঙ্গা দেখতে হলে আকাশের উজ্জ্বলতা প্রতি বর্গ আর্কসেকেন্ডে ২০.২ ম্যাগনিটিউডের চেয়ে কম হতে হবে।[৪৮] যদি লিমিটিং ম্যাগনিটিউড প্রায় +৫.১ বা উচ্চতর থাকে তবে আকাশগঙ্গা দৃশ্যমান হওয়া উচিত এবং +৬.১ হলে অনেক বিশদভাবেই দেখা যেতে পারে।[৪৯] এই কারণে শহুরে এলাকার আলোকোজ্জ্বল পরিবেশ থেকে আকাশগঙ্গা দেখা কঠিন। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে চাঁদ যখন দিগন্তের নিচে থাকে, তখন আকাশগঙ্গা অত্যন্ত স্পষ্টভাবেই দেখা যায়। কৃত্রিম রাতের আলোর বিশ্বব্যাপী মানচিত্রগুলি দেখায় যে পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ আলোর দূষণের কারণে তাদের বাড়ি থেকে আকাশগঙ্গা দেখতে পায় না।[৫০]
পৃথিবী থেকে দেখলে, আকাশগঙ্গার যে অংশটি দেখা যায় সেটি আকাশের ৩০টি নক্ষত্রমণ্ডলের সমন্বয়ে গঠিত একটি অঞ্চল দখল করে আছে। গ্যালাকটিক কেন্দ্রটি ধনু রাশির দিকে অবস্থিত, যেখানে আকাশগঙ্গা সবচেয়ে উজ্জ্বল। ধনু থেকে, সাদা আলোর অস্পষ্ট ব্যান্ডটি গ্যালাকটিক অ্যান্টিসেন্টারের (Auriga নক্ষত্রমন্ডলে) দিকে প্রসারিত হতে দেখা যায়। এরপর ব্যান্ডটি আকাশের বাকি অংশ জুড়ে চলতে থাকে এবং ধনুর দিকেই ফিরে আসে, যার ফলে আকাশটি মোটামুটি দুটি সমান অর্ধগোলকে বিভক্ত হয়ে যায়।[৫১]
গ্যালাকটিক সমতলটি ভূ-কক্ষতলের (পৃথিবীর কক্ষপথের সমতল) সাথে প্রায় ৬০ ডিগ্রী কোণে হেলানো। খ-গোলকের তুলনায়, এটি উত্তরে ক্যাসিওপিয়া এবং দক্ষিণে ক্রাক্স নক্ষত্রমণ্ডল পর্যন্ত বিস্তৃত, যা গ্যালাকটিক সমতলের তুলনায় পৃথিবীর নিরক্ষীয় সমতল এবং ভূ-কক্ষতলের উচ্চতা নির্দেশ করে। উত্তর গ্যালাকটিক মেরু β Comae Berenices এর কাছে রাইট এসেনশন ১২ ঘণ্টা ৪৯ মিনিট এবং ডেক্লিনেশন +২৭.৪ ° (B1950) এবং দক্ষিণ গ্যালাকটিক মেরু α Sculptoris এর কাছে অবস্থিত। এই উচ্চতার কারণে, রাতের সময় এবং বছরের সময়ের উপর নির্ভর করে, আকাশগঙ্গার তোরণ আকাশে তুলনামূলকভাবে নিচে বা তুলনামূলকভাবে উঁচুতে হাজির হতে পারে। উত্তর অক্ষাংশ ৬৫° থেকে দক্ষিণ অক্ষাংশ ৬৫° পর্যন্ত পর্যবেক্ষকদের জন্য, আকাশগঙ্গা দিনে দুবার সরাসরি ওভারহেড দিয়ে যায়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
আকাশগঙ্গার ব্যাস আনুমানিকভাবে ১,০০,০০০ আলোকবর্ষ বা ৯×১০১৭ কিলোমিটার (৩০ কিলোপারসেক) এবং এর পুরুত্ব প্রায় ১,০০০ আলোকবর্ষ (০.৩ কিলোপারসেক)।[৪][৫] ধারণা করা হয় এই ছায়াপথে কমপক্ষে ২০০ বিলিয়ন থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ বিলিয়ন পর্যন্ত নক্ষত্র রয়েছে। এটি স্থানীয় ছায়াপথ সমষ্টির মধ্যে ভরের সাপক্ষে দ্বিতীয়। সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, আগের ধারণা থেকে আকাশগঙ্গার ভর অনেক বেশি, এর ভর আমাদের নিকটবর্তী সবচেয়ে বড় ছায়াপথ অ্যান্ড্রোমিডা এর কাছাকাছি। আগে ধারণা করা হত এর ঘূর্ণন গতি প্রায় ২২০ কিমি/সেকেন্ড, কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী তা প্রায় ২৫৪ কিমি/সেকেন্ড। ২০১৯ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আকাশগঙ্গার সর্বমোট ভর হিসাব করেছেন প্রায় ১.৫ ট্রিলিয়ন সৌর ভর, যা ১,২৯,০০০ আলোকবর্ষের ব্যাসার্ধের মধ্যে সীমাবদ্ধ।[৫২][৫৩] এই মান আগের ধারণার প্রায় দ্বিগুণ। আকাশগঙ্গার সকল তারার সর্বমোট আনুমানিক ভর ৪.৬×১০১০ সৌরভর। এছাড়াও রয়েছে আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস, যা ভরের দিক দিয়ে ৯০% হাইড্রোজেন এবং ১০% হিলিয়াম।[৫৪] মোট হাইড্রোজেনের দুই-তৃতীয়াংশ পারমাণাবিক এবং এক-তৃতীয়াংশ আণবিক।[৫৫] আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাসের ভরের ১% আন্তঃনাক্ষত্রিক ধুলিকণার কারণে।[৫৪] আকাশগঙ্গার ভরের ৯০% তমোপদার্থের কারণে।[৫২][৫৩] তমোপদার্থ এক পদার্থের এক অজানা ও অদৃশ্য রূপ যা সাধারণ পদার্থের সঙ্গে শুধুমাত্র মহাকর্ষের মাধ্যমেই আন্তক্রিয়া করে থাকে।
আকাশগঙ্গার বয়স নির্ধারণ করা অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। এই ছায়াপথের সবচেয়ে প্রাচীন নক্ষত্র হল HE 1523-0901, যার বয়স প্রায় ১৩.২ বিলিয়ন বছর, প্রায় মহাবিশ্বের বয়সের সমান। ধারণা করা হয়, আকাশগঙ্গার সুচনা হয়েছে প্রায় ৬.৫ থেকে ১০.১ বিলিয়ন বছর আগে।
আকাশগঙ্গার কেন্দ্র একটি দণ্ডাকার অংশ যা গ্যাস, ধুলি এবং তারা দ্বারা গঠিত একটি চাকতির ন্যায় অংশের দ্বারা বেষ্টিত । আকাশগঙ্গার বিভিন্ন স্থানে ভরের বণ্টন হাবল শ্রেণিবিন্যাসের Sbc শ্রেণীর সঙ্গে তুলনীয় । শিথিলভাবে বেষ্টিত সর্পিলাকার বাহুবিশিষ্ট সর্পিল ছায়াপথেরা এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ।[১] জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রথম আকাশগঙ্গার কেন্দ্রস্থ দণ্ডাকার গঠনের কথা বলেন ১৯৬০-এর দশকে[৫৬][৫৭][৫৮], এবং পরবর্তীকালে ২০০৫-এ স্পিৎজার মহাকাশ দূরবীক্ষণের পর্যবেক্ষণ তাঁদের এই ধারণাকে সমর্থন করে ।[৫৯]
আকাশগঙ্গার কেন্দ্রস্থ অঞ্চলের অন্তর্বর্তী অংশ তুলনামূলকভাবে অধিক ঘন এবং এই অংশে মূলত প্রাচীন তারা রয়েছে । কেন্দ্র থেকে প্রায় কয়েক কিলোপারসেক (প্রায় ১০,০০০ আলোকবর্ষ) ব্যাসার্ধের মধ্যে অবস্থিত এই প্রায় গোলাকার অংশকে স্ফীতাংশ বলা হয়ে থাকে ।[৬০] বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে আকাশগঙ্গার কেন্দ্র প্রকৃতপক্ষে পূর্বে দুই ছায়াপথের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে সৃষ্টি হওয়া প্রকৃত স্ফীতাংশ নয় । বরং এর কেন্দ্রস্থ দন্ডাকার গঠন একটি ছদ্ম-স্ফীতাংশ তৈরী করেছে ।[৬১] আকাশগঙ্গার কেন্দ্রস্থ অঞ্চল রেডিও তরঙ্গের একটি প্রবল উৎস, যাকে বিজ্ঞানীরা ধনু এ* নামে চিহ্নিত করেছেন । এই কেন্দ্রস্থ অঞ্চলের নিকটস্থ পদার্থের গতি বিবেচনা করে দেখা গিয়েছে যে আকাশগঙ্গার কেন্দ্রে একটি অত্যধিক ভারবিশিষ্ট বস্তু রয়েছে ।[৬২] ভরের এরূপ বণ্টনের ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব যদি ধরে নেওয়া হয় যে এই বস্তুটি একটি অতিভারবিশিষ্ট কৃষ্ণগহ্বর ।[১৪][৬৩] এটির প্রস্তাবিত ভর সূর্যের ভরের ৪.১ থেকে ৪.৫ মিলিয়ন গুণ ।[৬৩]
আকাশগঙ্গার কেন্দ্রস্থ দণ্ডাকার অঞ্চলের প্রকৃতি বিতর্কের মধ্যে রয়েছে, যদিও এই অংশের অনুমেয় অর্ধ-দৈর্ঘ্য ১ থেকে ৫ kpc এবং পৃথিবী থেকে ছায়াপথের কেন্দ্রের দিকে তাকালে এটি দৃষ্টিপথের সঙ্গে ১০-৫০ কোণ করে রয়েছে ।[৬৪][৬৫][৬৬] এই দণ্ডাকার অঞ্চলটিকে ঘিরে একটি বলয়াকার গঠন রয়েছে যা "৫ kpc বলয়" নামে পরিচিত । এই বলয়ের মধ্যে ছায়াপথের অধিকাংশ আণবিক হাইড্রোজেন রয়েছে এবং আকাশগঙ্গার অধিকতর তারা এই অঞ্চলেই উৎপন্ন হয়ে থাকে । অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথ থেকে দেখলে এই অঞ্চলটিকে উজ্জ্বলতম দেখাবে ।
২০১০ -এ ফার্মি গামা-রশ্মি মহাকাশ দূরবীক্ষণের থেকে নেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে আকাশগঙ্গার কেন্দ্র থেকে উত্তর ও দক্ষিণে দুটি বৃহদাকার উচ্চ শক্তি বিকিরণের বুদবুদ ন্যায় গঠন লক্ষ করা গিয়েছে । এগুলির প্রত্যেকের ব্যাস প্রায় ৭.৭ কিলোপারসেক । দক্ষিণ গোলার্ধে রাত্রির আকাশে এগুলি সারস তারামণ্ডলী থেকে কন্যা তারামণ্ডলী পর্যন্ত বিস্তৃত । পরবর্তীকালে পার্কেস দূরবীক্ষণের মাধ্যমে এই গঠনগুলিতে সমাবর্তিত বিকিরণ দেখা গিয়েছে । তারার জন্মের কারণে উৎপন্ন চৌম্বকীয় বহিঃপ্রবাহ হিসেবে এগুলিকে ব্যাখ্যা করা হয় ।[৬৭]
<ref>
|s2cid=
The stars of the Corona Borealis, the Caer Arianrhod, as it is called in Welsh, whose shape is remembered in certain Bronze Age circles
eo_galaxy
jankowski2010
oxford
eratosthenes1997
উদ্ধৃতি ত্রুটি: <references>-এ সংজ্ঞায়িত "Gillessen2016" নামসহ <ref> ট্যাগ পূর্ববর্তী লেখায় ব্যবহৃত হয়নি। উদ্ধৃতি ত্রুটি: <references>-এ সংজ্ঞায়িত "youtube2014" নামসহ <ref> ট্যাগ পূর্ববর্তী লেখায় ব্যবহৃত হয়নি।
<references>